Wednesday, 6 February 2019

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাথে বিশ্ব ভালবাসা দিবস উদযাপন করতে যাচ্ছে অামাদের বর্ণিল সংগঠন-২০১৯

প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য কাঙ্ক্ষিত একটি দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি। ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’ শিরোনামের এ দিনটিতে প্রিয়জনের সঙ্গে ‘রক্ত লাল’ গোলাপ দিয়ে চলে ভালোবাসা বিনিময়।এই ভালবাসা দিবসে বসন্তের রঙ এসেছে প্রকৃতিতে। প্রিয়জনকে নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটবে সবার।এরই মাঝে এবারের বিশ্ব ভালোবাসা দিবসটি ব্যতীক্রমভাবে উদযাপন করতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে ভালোবাসার গল্প বিনিময়ের ও ভালোবাসা দিবস উদযাপন এর আয়োজন করতে যাচ্ছে অামাদের "#বর্ণিল" সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।অামরা বসন্তের রঙ ছড়িয়ে দিতে চাই সবার মাঝে।"সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাথে কাটুক আমার আপনার ভালবাসা দিবস" এই শ্লোগানকে সামনে রেখে অামরা ভালবাসা দিবস উদযাপন করতে যাচ্ছি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাথে।

আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কমলাপুর,রমন,শাহবাগ,সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সহ ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্পট ও পার্কগুলোতে অামাদের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য করা ব্যতিক্রমী এ আয়োজনে থাকছে,
- সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে খাবার বিতারণ।
-তাঁদেরকে বর্ণিল সাজে সাজিয়ে তোলা।
-প্রত্যেকের জন্যে অাকর্ষনীয় গিফট এর ব্যাবস্হা।
-শিশুদের বিনোদন দিতে থাকবে খেলাধুলা সহ নানান অায়োজন।
-সবশেষে,তাঁদের সঙ্গে ভালোবাসার গল্প বিনিময় এবং অানন্দঘন কিছু সময় কাটিয়ে ওদের মুখে হাসি ফুটানো।

এদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে এ অনুষ্ঠান।আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সমস্যাগুলোর কথা শুনতে চাই,জানতে চাই তাঁদের জীবনের গল্প।তাঁদের মাঝে ছড়াতে চাই ভালোবাসার ছোঁয়া।১৪ ফেব্রুয়ারীর একটি দিন অন্তত হাসি ফুটুক অবহেলিত শিশুর ঠোঁটে।এজন্যেই ব্যতিক্রমধর্মী অামাদের বর্ণিল সংগঠনের এই আয়োজন। 

বর্ণিল মেম্বাররা সংগঠন থেকে গৃহীত নির্ধারিত অর্থ,অামাদের অর্থ সম্পাদকের 
(০১৭২৪৬৩৯৬৭৪) পার্সোনাল বিকাশ উক্ত নম্বরে ১০/০৩/২০১৯ তারিখের ভিতরে পাঠানোর অনুরোধ রইল।

অার যারা নন মেম্বার তাঁরা অামাদের সাথে ১৪ ফেব্রুয়ারীর ইভেন্টে যোগদান করতে চাইলে এবং অামাদের বর্ণিল সংগঠন কিংবা উক্ত ইভেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে-০১৮১৫২৭৪৭২০ এই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।
অথবা https://www.facebook.com/mdkaher.khan.75 এই id এর ইনবক্সে নক করে জানতে পারেন।

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারীর ইভেন্টে অামাদের সাথে অংশগ্রহণ এবং অার্থিক সহায়তা করতে চাইলে -০১৭৬৬৪৮২৬৭০ পার্সোনাল বিকাশ এই নম্বরে টাকা পাঠাতে পারেন।

দ্বিতীয় কৈশোর(ওয়েব ফিল্ম)

পারসোনাল রেটিং-১০/৮.৩০
অামার মতে এটি কোনো নাটক কিংবা টেলিফিল্ম নয়।
এটি একটি ওয়েব ফিল্ম।
এটা নিয়ে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম বায়োস্কোপ বেশ ভাল প্রচার করেছে।তাছাড়া এটি অন্যতম হট টপিক কেননা এখানে যে তিন.....একসাথে।

অাচ্ছা যদি বলিউডে তিন... খান মিলে যদি কখনো কোন মুভি করে তাহলে সেটা কেমন চিত্তাকর্ষণ হতো!
বলতে পারেন বাংলার ছোট পর্দার মোদের গরীবের তিন খান,নাট্যজগতে এই প্রথম তাঁদের তিনজনের একসাথে করা ওয়েব সিনেমা বা নাটক।

গল্পে দেখা যাবে ৩০+ বছরের ৩বন্ধুর জীবন কাহিনী,যেখানে ফিল্মের একপর্যায়ে এসে তাদের তিনজনের জীবনেই নেমে আসে তিন ধরণের বিপদ এবং এই বিপদের মোকাবেলার ভেতর দিয়েই এই তিনজনের গভীর কিছু উপলব্ধি হয়।এ নিয়েই নির্মিত হয়েছে দ্বিতীয় কৈশোর।
এ ফিল্মে কার কি রোল বা চরিত্র তা নিম্নে সংক্ষেপে বলছি,
#আফরান_নিশো:তাঁর অভিনয় সম্পর্কে কিছু বলার নেই...।বরাবরের মতো অসাধারণ অভিনয় করেছেন দ্বীতীয় কৈশোর ওয়েব ফিল্মে।
হঠাৎ করেই ১৫বছরের একটা মেয়ে এ জাবৎ কালে চেনা নাই জানা নাই বিদেশ থেকে এসে বলে "আপনি আমার বাবা", ঠিক তখন নিশো ভাইয়ের মুভমেন্ট এ ওয়েব সিনেমার সবথেকে ফ্যানি অংশ।কতবার যে এ সিনটি দেখেছি হিসেব নেই।এছাড়াও বিজনেসের শেয়ার ক্রয় নিয়ে সমস্যা, টাকার সংকট গার্লফ্রেন্ড এর সাথে বিয়ে এভাবেই গল্পটা এগোয়।
#জিয়াউক_হক_অপূর্ব: প্লেবয় এর ক‍্যারেক্টার আজ দিনা কাল মিনা পরশু রিনা তরশু টিনা অনলি রুম ডেটিং এ বিশ্বাসী,বিয়ে না করে ডেটিং করে বিন্দাস লাইফ কাটানোর ইচ্ছে!! 
যদিও বয়স ৩৫!!! তাতে কি? বিয়ের কথা শুনলেই গায়ে আগুন জ্বলে যায় এবং ঐটার চ‍্যাপ্টার ক্লোজড।
#তাহসান_খান:সেও প্লেহাজব‍্যান্ড রোলে আছে।তাঁর ওয়াইফ বেবী নিতে চায় বলে সারাক্ষণ চেঁচালেও সে নানাভাবে এড়িয়ে যায় এবং কখনোই রাজি হয় না।বেবী কে একটা ঝামেলা মনে করে। 
তাঁর ওয়াইফ বেবী নিবে কি নিবে না তা ভাববার জন্যে ৫দিন সময় দিলেও কোন সিদ্ধান্ত না জানিয়ে ওল্টো পাঁচ বছর সময় চায় এরই একপর্যায়ে তাহসানের ওয়াইফ তাঁকে না বলে বাপের বাড়ি যায়।
#আবুল_হায়াত: অপূর্ব এর সকল কাজের মেনটর সেই গার্লফ্রেন্ড এর সাথে ডেটিং থেকে চায়ের দুধ চিনির পরিমাণ এমনকি বডির পারফিউম পর্যন্ত। [আবুল হায়াত আছে অথছ স্ট্রোক করবে না এটা বেসম্ভব!! স্ট্রোকও আছে]
৫. নায়িকা:নায়করা অত্যাধিক জনপ্রিয় হলেও নাইকারা তেমন একটা না।যেমন-অামিই তাঁদের একজনকেও চিনি না।যাই হোক এ সিনেমার নাইকারা যে যার যায়গায় ভালো করেছ👍
***সিনেমাটিতে দেখা যাবে অপূর্ব, তাহসান ও নিশো ৩বন্ধু তাদের প্রতিদিনের আড্ডা এবং যাবতীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনার স্থান নিশোর কফিশপ। ৩ বন্ধুর আড্ডার বিষয়গুলো চরম মাত্রায় ইন্টারেস্টিং বটে👌

#শিহাব_শাহীন(পরিচালক)ঃতাঁকে নিয়ে কিছু বলার নেই অসংখ্য মাস্টারপিস নাটক টেলিফিল্ম ও একটি সিনেমাও পরিচালনা করেছেন (ছুঁয়ে দিলে মন).

যাই হোক এখন অাসি তাঁর দ্বিতীয় কৈশর ওয়েব ফিল্ম নিয়ে,প্রথম থেকেই ছবিটার মেকিং খুবই উঁচু পর্যায়ের।পরিচালক শিহাব শাহীন তার চিত্রগ্রাহকের সাথে খুবই ফ্লুয়িড স্টাইলে ছবিটা শুট করেছেন যেটার কারনে প্রত্যেকটা সিকুয়েন্স আপনি পছন্দ করবেন।কোথাও মনে হবে না গল্প আটকে গেছে।এই শুটিং স্টাইল প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। শুটিং স্টাইল বাজে হওয়ার দরুন অনেক গল্প রুপালী পর্দায় মার খেয়ে যায়। দেখতে ভাল লাগে না। কিন্তু এই ব্যাপারে শিহাব শাহীন প্রচণ্ড পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। এছারা ছবির সংলাপ বেশ কার্যকারী ও মানানসই। এবং ছবির দুই তৃতীয়াংশ পরিচালক বেশ শক্তভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছেন। একদম শেষ পর্যায়ে গিয়ে কাহিনী যদিও একটু গুবলেট হয়ে গেলেও সবমিলিয়ে বেশ ভালো হইছে।

অামার মতে দ্বিতীয় কৈশোর ওয়েবফিল্মটি ৮০% মুভির মতো করে তৈরী হয়েছে এন্টারটেইনমেন্ট এর প্রচুর ইলিমেন্ট রয়েছে।
২০% কমতি বলতে কয়েকটা গান,ভিলেন নেই এবং অনলাইন রিলিজ (Bioscope).
পরিচালক ইচ্ছা করলেই আরেকটি মাস্টারপিস বাংলা মুভি উপহার দিতে পারতো "ছুঁয়ে দিলে মন" এর মতো।

সবশেষে বলবো,যারা আর্টফিল্ম এবং ব‍্যতিক্রমধর্মী মুভি দেখে তাদের জন‍্য রেটিং ১০/১০😇
অার যারা অবিবাহিত যুবক তাঁরা এ ওয়েবফিল্মটি দেখে বেশি মজা পাবেন বলে মনে হয়।

Monday, 1 October 2018

গানের জন্য বাবার সঙ্গে অভিমান করে ঘর ছেড়েছিল এক কিশোর। এরপর গানকে লালন করেছেন মনের মধ্যে। একসময় সাফল্য নিজে এসে ধরা দিয়েছে তার কাছে। আজ ২ অক্টোবর সেই কিশোরের ৫৪ তম জন্মদিন।

ফারুক মাহফুজ আনামের জন্ম কবে হয়েছিল জানা নেই, তবে জেমস(গুরুর)
জন্ম ১৯৬৪ নওগাঁয়, তবে তিনি বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে। সেখানে থাকা অবস্থায় জেমস ব্যান্ড সংগীতের প্রেমে পড়েন। কিন্তু সরকারি কর্মচারী বাবার ছেলের সেই প্রেমে সাড়া ছিল না। ক্লাস নাইনে পড়া অবস্থায় বাবা যখন বুঝলো ছেলের দ্বারা পড়াশোনা সম্ভব নয় তখন ঘর থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয় জেমসকে।

এই জেমসের নতুন ঠিকানা হয় চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিং। আর এই আজিজ বোর্ডিং হয়ে ওঠে তার গানের জগত। সেখানে থেকেই তার সঙ্গীতের ক্যারিয়ার শুরু হয়। কিছু বন্ধুদের নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ফিলিংস নামক একটি ব্যান্ড।

ছিলো ব্যাচেলর সংসার আমার,
আগাছালো জীবন,
রাত করে ঘরে ফেরা,
বাউন্ডুলে দিনভর....।

ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট ও ভোকাল হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেন। চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া ব্যান্ডদল ফিলিংস এর মাধ্যমে তিনি প্রথমে খ্যাতি অর্জন করেন। বাংলা ভাষায় তিনিই প্রথম সাইকিডেলিক রক শুরু করেন।

যান্ত্রিক শহরে, এখন মাঝরাত পেরিয়ে গেছে,

কিছু জেগে থাকা প্রজাপতি আর প্রহরীর হুশিয়ারী,

আমি এক নগর বাউল, জেগে আছি বড় একা।

পরবর্তীতে জেমস ফিলিংস ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেন নগর বাউল। আর সেই নগর বাউল থেকেই জেমস বাংলা ব্যান্ড সংগীতে সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস। জন্ম দিয়েছেন বহু জন্মপ্রিয় অনেক গান।

চায়ের কাপে ঝড় তুলি,তুড়ি দিয়ে কথা বলি,মোরা সুন্দরী মেয়ে দেখে,বাজাই সিটি,দুষ্টু ছেলের দল, ছন্ন ছাড়ার দল,দে দে তালি,
২০০৬ সালে সবাইকে চমক লাগিয়ে এল গ্যাংস্টার সিনেমায় হিন্দী গান - ভিগি ভিগি। তারপর, ও লামহে সিনেমায় চল চলে, লাইফ ইন আ --- মেট্রো সিনেমায় আল বিদা আর রিশতে। এশিয়ান জিম মরিসন - নামে ডাকাও হল। খুব শীঘ্রই আবারও ঝড় তুলবেন ওয়ার্নিং সিনেমায় 'বেবাসী' ট্র্যাকের মাধ্যমে। অপেক্ষা করতে হবে আর অল্প কটা দিন। হিন্দী গান শুধু নয়, বাংলা রক গানেও বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট চলেছে। রক গানের সাথে অপেরা শিল্পী, বাঁশী আর হারমোনিয়ামের ফিউশন ঘটিয়েছেন।
জেমস সংগীত শিল্প হলেও করেছেন মডেলিং। ফটোগ্রাফার হিসাবেও রয়েছে তার খ্যাতি।

এছাড়া জেমস রেড ডট এন্টারটেইনমেন্ট নামক একটি প্রডাকশন হাউস পরিচালনা করেন।

ভক্তরা যদি তার মত করে হাতা গুটানো পাঞ্জাবী পড়ে, লম্বা চুল রাখে - তবে তিনি অনুপ্রাণিত হন। এই ভক্তদেরকে বন্ধু আর ভাইয়ের মর্যাদা এর আগে বোধহয় কোন শিল্পী দেয় নি। শুধু তার গলাতেই মানায় -

আমি তোমাদেরই লোক, আমি তোমাদেরই ভাই,
আমার আর কিছু নাই, কেহ নাই।।

গানের মত তারায় তারায় রটিয়ে যাক জেমসের জীবনের সফলতা। সেই সাথে এ প্রজন্মের গুরুর হাত ধরে বাংলা ব্যান্ড গান রটিয়ে যাক বিশ্বজুড়ে। সেই শুভ কামনা অামাদের সকল গুরু ভক্তের পক্ষ থেকে শুভ জন্মদিন গুরু,শুভ জন্মদিন জেমস।

Friday, 21 September 2018

ব্রাজিলের_কালো_বাঘ(রিভিউ) সত্যজিৎ রায় অনুদিত।

সাহিত্যে সত্যজিৎ রায়ের জনপ্রিয়তা নিয়ে নতুন করে কিছুই বলার নেই ।তাঁর অনুবাদকৃত এই বইয়ের প্রত্যেকটা গল্পের প্লট এবং সিকোয়েন্স সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র।এ বইয়ে ৫ টি গল্প রয়েছে।প্রতিটা গল্পই যে সমভাবে ভাল,তা বলব না।অার সেটা সম্ভবও না।কিন্তু অধিকাংশ গল্পের শেষেই মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে আসে,সব মিলিয়ে উত্তেজনায় টানটান লোমহর্ষক গল্পের এক ক্ষুদ্র সম্ভার। পড়ে দেখতে পারেন। :) :)
এ বইয়ের গল্প ৫ টির মধ্যে অামার কাছে ভালো লাগা গল্পগুলোর পর্যায়ক্রমে তালিকা এবং এর সাথে যাদের বইটি সংগ্রহ করে পরার সুযোগ হবে না তাঁরা অামার এ বইয়ের সবথেকে বেশি ভালো লাগা গল্পদুটোর অডিও বুক নিম্নের লিংক থেকে শুনতে পারেন-
১.মঙ্গলই স্বর্গ।
-https://youtu.be/7-u7cqxqeXE
২.ব্রাজিলের কালো বাঘ।
-https://youtu.be/HDF25jzKYTg
৩.ইহুদির কবচ।
৪.ব্লু-জন গহ্বরের বিভীষিকা।
৫.ঈশ্বরের ন' লক্ষ কোটি নাম।

Friday, 14 September 2018

মূল্যায়ন

জীবনে কাউকে অাপনি কখনও এভাবে ভালোবেসেছেন যে তার কথা কম বেশি সবসময় মনে পড়ে।কথায় অাছে,"যাকে যার যতবেশি ভালো লাগে,তার কথাও তত বেশি মনে পড়ে।"ঠিক এরকম....

না রোমান্টিক ভালবাসা বলতে অামরা যেটা বুঝি সে ধরণের ভালবাসার কথা অামি বলছি না।
অামি যে ভালবাসার কথা বলতে চাচ্ছি সেটি এমন এক ধরণের ভালবাসা যেখানে থাকবে প্রচন্ড সম্মান,অাকুলতা এক ধরণের তীব্রতা যা অাপনার চোখ ভিজিয়ে দেয়।

অামরা অনেকেই টিভি বা ইউটিউবে দেখেছি একসময়ে মাইকেল জ্যাকসন বর্তমান সময়ে জাস্টিন বেইবার সহ এরকম জনপ্রিয় সেলিব্রেটি যখন স্টেজে পারফর্ম করে তখন তাকে দেখে তার ফ্যানরা পাগলের মতো হয়ে যায়,খুশিতে চিৎকার করে,কেউ কেউ অাবার অাবেগে কেঁদেও ফেলে।অার যদি কোন ক্রমে এই পছন্দের তারকাদের একটু জড়িয়ে ধরতে পারতো তাহলে সে তাঁকে অাকড়েই থাকতো।
অাবার অামরা ফুটবল ফ্যানরা অামাদের প্রিয় খেলোয়াড় মেসি,ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোকে যদি সমনাসামনি দেখতাম, একটু জড়িয়ে ধরে একটা সেলফি তুলতে পারলে,ঐ সময়টা মনে হয় অামাদের অনেকের জীবনের সবচেয়ে দামী মুহুর্ত হবে।
কি অসাধারণ ভালবাসা যার কারণে অামাদের অনেকেই অদ্ভুত সব অাচরণ করে বসি।
অামরা অামাদের পছন্দের প্লেয়ারের জার্সি পড়ি,তার মতো হেয়ার কাট দেই,প্রিয় ব্যক্তিত্ত্বের পার্সোনালিটি ফলো করি।
কিন্তু এসব উদাহরণের মাঝে কিছু একটা নিষ্ক্রিয় রয়েছে....
অামরা অামাদের পছন্দের যে সকল সেলিব্রেটিদের জন্যে বিভিন্ন কারণে অাবেগে অাপ্লুত হয়ে যাই,যেমন-কিছুদিন অাগে চেস্টার এর মৃত্যুতে হাজারো লিংকিং পার্কের ফ্যানরা কেঁদেছিলো।২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ মিস করে মেসির চোখে পানি দেখে অামরা মেসি ভক্তরা কাঁদি।
অাচ্ছা অামাদের জন্যে তারা কখনও কি কেঁদেছে উত্তর অবশ্যই না।
অার এ ব্যাপারটা অামরা ফ্যানরাও অস্বিকার করতে পারবো না।
অামাদের জিজ্ঞেস করলে অামরাি বলবো অামাদের পছন্দের সেলিব্রেটিরা কেন অামার জন্যে কাঁদবে,মনে করবে।অামি এমন কে...!
অার যদি বলি এমন একজন মানুষ ছিলেন যে সত্যি সত্যিই অামাদের জন্যে কাঁদতেন।

যে ব্যক্তির মর্যাদা,সম্মান ও খ্যাতির দিক থেকে যেকোন সেলিব্রেটির থেকে অনেক অনেক উপরে।
সে হলো অামাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)।
তিনি রাত জেগে নামাজ পড়তো,তার নামাজ পড়তে পড়তে পা ফুলে যেতো।
অার এ নামাজের মধ্যেও সে শুধু অামাদের জন্যেই দোয়া করতেন যাতে অামরা ভালো থাকি,পরকালে শান্তি পাই।

অার এ কথা ভেবেই তার চোখে পানি অাসতো যে তার মৃত্যুর পরে অারও অনেক মানুষ অাসবে যারা তাঁকে দেখবে না কিন্তু তার দেখানো পথে চলবে।

প্রত্যেক নবীকেই একটা দোয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো যেটা অবশ্যই কবুল হবে।
অামাদের উম্নাতের দরদী,মায়ার নবী  হযরর মুহাম্মাদ (সঃ) সে দোয়াটিও রেখে গিয়েছিলেন অামাদের জন্যে।

একটু ভেবে দেখুন যে মানুষটি অামাদের জন্মেরও হাজার বছর পূর্বে অামাদের জন্যে কাঁদতো।
কিন্তু অামরা সেই মানুষটির চোখের জলের কতটুকু মূল্যায়ন করছি.....

এ প্রসঙ্গে অাল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِٱلْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ

অর্থঃ তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়।(সূরা আত-তাওবাহ্‌ (التوبة), আয়াত: ১২৮)

সবশেষে অামার চৈতা পীরসাহেব দাদুর মুখ থেকে শোনা ৩টি লাইন বলে শেষ করছি,
"বাবার চেয়েও যিনি অতি দরদী,
মায়ের চেয়েও যিনি অতি মায়াবী,
সে যে হলো মোদের উম্মাতের দরদী নবী"।

[এ লেখাটির কনসেপ্ট বা ভাবনাটা অাসে Be better production এর একটি ইউটিউব ভিডিও দেখে।]

Saturday, 1 September 2018

দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের মজিদবাড়িয়া শাহী জামে মসজিদ

ঘুরে এলাম দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের মজিদবাড়িয়া শাহী জামে মসজিদ।যদিও অামাদের বাসা থেকে এটি ৭-৮ কিলোমিটার পথ।

সাড়ে ৫শ বছর পূর্বে সুলতানি শাসন আমলে স্থাপিত এ মসজিদটি,যা অাজও স্মরণ করিয়ে দেয় মুসলিম স্হাপত্য ও ঐতিহ্যের কথা।পরে মজিদ নামে এক ইউপি চেয়ারম্যান মসজিদবাড়িয়ার পরিবর্তে ইউনিয়নের নাম মজিদবাড়িয়া করেন বলে জানা যায়। দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাবে মসজিদটির সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের কিছুটা হারলেও সম্প্রতিক নতুন সংস্কার হয়েছে।তা অামি নিজেই প্রত্যক্ষ করি কেননা এর অাগে ৩ বছর অাগে এসে যে অবস্হা দেখি তার থেকে এখন সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও কিছুটা নতুনত্ব পায়।
কোটি টাকা ব্যায়ে অাধুনিক চাকচিক্য মসজিদের মাঝেও এই পুরানো প্রত্যান্ত অঞ্চলে ছোট্ট করে ঐতিহাসিক এ মসজিদটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে শত শত নারী-পুরুষ আসেন এখানে। পটুয়াখালী শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও বরগুনা জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার পূর্বে মসজিদবাড়িয়া মসজিদ অবস্থিত।

স্হানীয় প্রবীন ও খাদেম এবং তার দেওয়া লিপিটি থেকে যা জানতে পারি তা হলো,ইলিয়াছ শাহী বংশের এক স্বাধীন সুলতান রুকনুদ্দীন শাহ বাকলা দখল করে ১৪৬৫ সালে মির্জাগঞ্জ থানার মজিদবাড়িয়া গ্রামে এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ করেন। এ মসজিদই চন্দ্রদ্বীপের (বর্তমান বরিশাল বিভাগের) প্রথম ইটের নির্মিত কীর্তি আর উজিয়ল নামে এক মিস্ত্রি মসজিদটির নির্মাণকাজ করেন। মসজিদে তিনটি দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যখচিত মেহরাব। পূর্ব দিকে তিনটি খিলান পথ, ছয়টি আট কোণার মিনার ও সুদৃশ্য পিলার রয়েছে। একটি বারান্দাযুক্ত মসজিসটির পূর্ব-উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দু’টি করে জানালা রয়েছে।
সবথেকে অাশ্চর্যের বিষয় হলো,
বিশাল এক গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটি রড ও সিমেন্ট ছাড়াই চুনা সুরকি ও পোড়ামাটির ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের দেয়াল প্রায় ৭৫ ইঞ্চি পুরো। আর মসজিদের ভেতরের দিকে রয়েছে বিভিন্ন কারুকার্যখচিত মুসলিম স্থাপত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন।
১৫৮৪ সালে ঘূর্ণিঝড়ে বাকলা চন্দ্রদ্বীপ বিশেষ করে বর্তমান পটুয়াখালী জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এরপর শুরু হয় মগ ও পর্তুগিজদের আক্রমণ। ফলে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের প্রায় অর্ধেক এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়ে এবং আস্তে আস্তে জনপদগুলো জঙ্গলে পরিণত হয়। প্রত্যন্ত ওই এলাকায় দীর্ঘ দিন জনবসতি না থাকায় মসজিদবাড়িয়া মসজিদটি অব্যবহৃত হয়ে পড়ে। বন জঙ্গল ঘিরে হয়ে যায় এক ভুতুড়ে এলাকা।
১৮৬০ সালে এ অঞ্চল জমিদারের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করে পরিষ্কার করে আবাদ করার সময় এ মসজিদটির সন্ধান পাওয়া যায়।
অাশা করি সময় পেলে অাপনারাও এরকম একটি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্হান ভ্রমণ করে অাসবেন।

বাংলাদেশের সম্পদ বরগুনার বিবিচিনি শাহী মসজিদ।

ইদের ছুটিতে ঘুরে এলাম,অামাদের বাসা থেকে ১৮-২০ কিলোমিটার দূরে বরগুনা জেলা,বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি শাহী মসজিদ এ,এটি দিগন্তজোড়া সবুজের বর্ণিল আতিথেয়তায় উদ্ভাসিত ভিন্ন এক ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যে উঁচু টিলার ওপর দাঁড়িয়ে আছে মোগল স্থাপত্যকর্ম এই ঐতিহাসিক মসজিদ। এ এক হূদয়ছোঁয়া পরিবেশ, যা ভুলবার নয়, নয় প্রকাশের।তাই তো তৃতীয়বারের মতো গেলাম।নিঃসন্দেহে দেশের অসংখ্য দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে বিবিচিনি মসজিদ অন্যতম।

বিকাল দুপুর ৩:০০ দিকে অামি ও অামার বন্ধু সাইফুল দুজনে বিবিচিনির উদ্দেশ্যে রয়না হই,পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকাল হয়ে যায়।শেষ বিকালের সোনালি আলো জড়িয়ে নতুন কংক্রিটের পথ পেরিয়ে মসজিদের ঠিক পাদদেশে দাঁড়ালাম। কালো কাঠ কয়লার আবরণে ঢাকা মেঘ আকাশে উঁকিঝুঁকি মারছে। এরই মধ্যে সূর্যের সোনালি আলো মেঘের ফাঁকফোকর দিয়ে মাঝে মধ্যে বেরিয়ে এসে আলোর ‘প্রকৃতি’ ছড়াচ্ছে। আমি সফরসঙ্গী সাইফুল দুজনে মিলে স্থানটি ঘুরে দেখলাম।এর অাগেও অামি এখানে অারও দুবার এলেও সাইফুলকে এই প্রথমবার নিয়ে এলাম।দুজনে অাসরের নামাজ অাদায় করে,বিবিচিনি মসজিদের বয়জেষ্ঠ  ইমাম ও খাদেম এর কাছ থেকে এ মসজিদের ইতিহাস সহ অনন্য বিষয়ে যা জানতে পারলাম তা হলো,
 এ মসজিদটি হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ (রঃ) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এসে বিবিচিনিতে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন ১৬৫৯ সালে।এবং তাঁর কন্যাদ্বয়ের নামানুসারে গ্রামের এবং মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে।মসজিদের এর পাশে রয়েছে ব্যতিক্রম ধর্মী তিনটি কবর। স্থানীয় ভাবে জানা যায় মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা এবং তার কন্যা চিনিবিবি এবং ইসাবিবির কবর।

ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এ মসজিদকে গোটা দক্ষিণ বাংলার ইসলাম প্রচারের কেন্দ্র হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই উজ্জ্বল নিদর্শনটি টিকে থাকলেও কালের বিবর্তনে আজ এর ঐতিহ্য অনেকটাই হারিয়ে গেছে। তবু এর ধ্বংসাবশেষ পুরনো ঐতিহ্য ও শৌর্য বীর্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
-মসজিদটিকে ঘিরে রয়েছে অনেক অলৌকিক ঘটনা ও নানা ইতিহাসঃ

জানা যায়, তখনকার সময় বিষখালী নদীর পানি ছিল লবণাক্ত। সুপেয় পানির অভাবে জনগণ বহু কষ্ট পেত। নেয়ামত শাহ মানুষের এই কষ্টের কথা অনুভব করে তার সাধকতার আশ্চর্য তসবিহটি বিষখালী নদীতে ধুয়ে দিলে পানি হয়ে যায় সুপেয়। আজো সেই পানি একই অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া সে যুগে সুন্দরবন-সংলগ্ন বিষখালী নদীতে অসংখ্য কুমির ছিল। তার অলৌকিক প্রচেষ্টায় বিবিচিনি-সংলগ্ন বিষখালী নদী এলাকায় কোনো কুমির আসত না। এ কাহিনী এখনো এ এলাকায় প্রচলিত।এছাড়াও কেউ কেউ মনে করেন এ মসজিদ জ্বিন পরীদের দ্বারা হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ রঃ নির্মাণ করেছেন,এ প্রসঙ্গে অামি মসজিদের খাদেমকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন-
এ মসজিদ পাঁচশ সাড়ে পাঁচশ বছর অাগে যখন নির্মিত হয় তখন এখনকার মতো রাস্তাঘাট তো ছিলই না এমনকি নদীপথেও কোন জাহাজ চলাচলও ছিলো না।ইটের ভাঁটা তো দূরের কথা।এ দিকে এ মসজিদের দেয়াল ৬ ফুট পুরো যার জন্যে অসংখ্য ইট ব্যাবহৃত হয়েছে,যা দিয়ে তিন-চারটি মসজিদ নির্মাণ করা যায়।এখন প্রশ্ন হলো এত ইট কোথা থেকে অাসল,অাবার ধরলাম হয়তো ঢাকা চট্টগ্রাম থেকে অাসলো,কিন্তু তখন তো কোন স্হল ও নদীবন্দরে কোন যানচলাচল ছিলো না।এ থেকে ধারণা করা হয় এ ইটগুলো হয়তো হযরত নেয়ামত উল্লাহ রঃ জ্বিন দ্বারা অানিয়েছেন।এটি হয়তো অাল্লাহর ওলী হিসেবে তাঁর কারামত।

মসজিদটি নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক বিস্ময়কর স্থান হিসেবে গুরুত্ব বহন করে আসছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বাংলার অন্যতম মোগল স্থাপত্যশিল্প এবং এলাকার পুরনো দিনের অতীত স্মৃতি ও ঐতিহ্য। সম্রাট শাহজাহানের সময় পারস্য থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে শাহ নেয়ামতউল্লাহ দিল্লিতে আসেন। এ সময় দিল্লির সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র বঙ্গদেশের সুবাদার শাহ সুজা তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং কতিপয় শিষ্যসহ বজরায় চড়ে তিনি ইসলাম প্রচার ও ইবাদতের জন্য ভাটির মুলুকে প্রবেশ করেন। শাহ নেয়ামতউল্লাহ বজরায় চড়ে দিল্লি থেকে রওনা হয়ে গঙ্গা নদী অতিক্রম করে বিষখালী নদীতে এসে পৌঁছলে বিবিচিনিতে শাহজাদা বাংলার সুবেদার মোহাম্মদ শাহ সুজার অনুরোধে একই গ্রামে এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। বিবিচিনি গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম নেয়ামতি। গ্রামটির নেয়ামত শাহের নামেই রাখা হয়েছে বলে জানা যায়।

দর্শনীয় ও শোভা বর্ধনকারী এ মসজিদ ঘিরে রয়েছে নানা ধরনের ঘটনা,যা মানুষের মনে কৌতূহল সৃষ্টি করে। শোনা যায়, পূর্বেকার সময় স্বপ্নে প্রাপ্ত দূরবর্তী অনেক লোকজন এ মসজিদ থেকে গুপ্তধন নিয়ে যেত। শুধু তাই নয়, যে যে ধরনের প্রত্যাশা নিয়ে এখানে আসে, তার অধিকাংশের আশাই নাকি পূর্ণ হয় বলে অসংখ্য মানুষের কাছে শোনা যায়।এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম যে মাজারের কোন অলৌকিক ঘটনা অাছে কি না,
-তিনি বলেন,অামরা ইতিহাস থেকে জানতে পেরেছি প্রথমদিকে মসজিদ সংস্কার করতে গিয়ে চারদিক খোঁজাখুঁজি করে একটা নলা পাওয়া গেছে যারা পুরত্ব সাড়ে তিন হাত তাহলে মানুষটি ১৫-২০ হাত হবে।সে অনুমানে মাটিতে খুড়াটি কবর দেওয়া হয়।এছাড়া অন্য কোন ইতিহাস তারা পায় নি।তবে এ মাজারকে ওসীলা করে মানত করে না কি কিছু মানুষের অাশা পূরণ হয়েছে বলে শুনেছেন তারা।

এছাড়াও মসজিদের কাছেই রয়েছে ছোট-বড় তিনটি পুরনো দীঘি। মোগল আমলের এ দীঘি থেকে মানুষ যা চাইত, তা পাওয়া যেত বলে শোনা যায়। মসজিদের নিকটবর্তী বড় দীঘিটি ইছাবিবির দীঘি নামে পরিচিত। তবে বর্তমানে এসব দীঘি বিপন্নপ্রায়।এর সত্যতা সঠিক জানতে পারি নি।

স্থাপত্যশৈলীঃ
সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৩৩ ফুট, প্রস্থ ৩৩ ফুট। দেয়ালগুলো ছয় ফুট চওড়া। দক্ষিণ ও উত্তর দিকে তিন-তিনটি দরজা রয়েছে। মসজিদের ইটগুলো বর্তমানের মতো নয়। ইটগুলো মোগল আমলের তৈরি ইটের মাপের ন্যায়। যার দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১০ ইঞ্চি এবং চওড়া ২ ইঞ্চি। সমতল ভূমি হতে মসজিদ নির্মিত স্থানটি আনুমানিক কমপক্ষে ৩০ ফুট সুউচ্চ টিলার ওপর অবস্থিত। তার ওপরে প্রায় ২৫ ফুট মসজিদ গৃহ।

বিবিচিনির ইতিহাসসমৃদ্ধ মসজিদটির ধ্বংসাবশেষ দীর্ঘদিন সংস্কারবিহীন থাকার পর প্রায় ১২ বছর পূর্বে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। যদিও সংস্কারের এই উদ্যোগ যথেষ্ট ছিল না। শুধু তাই নয়, নির্দশনটি দেখতে আসার জন্য উপযোগী রাস্তার অভাবে দর্শনার্থীদের ভোগান্তি হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি, অজু ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের ব্যবহারের ব্যবস্থা নেই।
এসব ব্যাপারে উক্ত মসজিদের খাদেমকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন-
সাম্প্রতিক পটুয়াখালী জেলার কৃতীসন্তান সচিব মালেক এ মসজিদের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষণ করবেন বলে অাশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান...

তারপরও অামি মনে করি,বিবিচিনি শাহী মসজিদের উন্নয়নে সরকারের আরো নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং অন্য সবার সচেষ্ট ও উদ্যোগী হওয়া দরকার।

সবশেষে বলবো বিবিচিনি মসজিদের সুন্দর মনোরম পরিবেশ সত্যি আকুল করে দেয়।টিলার উপরে উঠলে মনে হয় নদী বেষ্টিত এই জনপদের ছোটখাটো একটি পাহাড়ে উঠেছি, এমন পরিবেশ থেকে মন চায় না চলে যাই কিন্তু সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে তাই বাড়ি ফেরার তাড়া। এগিয়ে যাচ্ছি সাধনার তীর্থস্থান পেছনে ফেলে গুডবাই জানিয়ে, তবে মনেমনে ভাবে গেলাম আবার চতুর্থ বারের মতো এখানে অাবার আসব তখন তোমায় দেখব নতুন রূপে অন্য কোনোভাবে।

যেভাবে যাওয়া যায়ঃ

ঢাকা থেকে যেতে হলে আপনাকে বরগুনার বাসে করে আগে বরগুনা সদরে যেতে হবে। ঢাকা থেকে বরগুনায় চলাচলকারি বাসগুলোর মধ্যে আছেঃ

১। আবদুল্লাহ পরিবহন, ফোনঃ ০১৭০০৬২৫৮০৯, ০১৯১২৪২৮৭৯০, ০১৯২৮১৩৭১৪২, ০১৭১৪৬৬২৭৩২ (সায়েদাবাদ কাউনটার), ০১৯১৫৮৪৪৫২৬, ০১৯১৪৪২৪৬৮৭ (বরগুনা সদর কাউনটার)
২। শাকুরা পরিবহন, ফোনঃ ০১১৯০৬৫৮৭৭২ (গাবতলি কাউনটার), ০১৭২৫০৬০০৩৩ (সায়েদাবাদ কাউনটার)

এই বাসগুলোর ভাড়া ৩৫০/- টাকা থেকে ৬০০/- টাকার মধ্যে।

অথবা আপনি সরাসরি বেতাগীর / বরগুনার লঞ্চে করে বেতাগী / বরগুনা যেতে পারেন। প্রতিদিন বিকেল ৫-৬টার মধ্যে এসব লঞ্চ ছেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে আপনাকে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে চড়তে হবে।

বরগুনা পৌছানোর পরে বাসযোগে বেতাগি যাওয়ার পর মোটরসাইকেল অথবা রিক্সাযোগে গন্তব্যস্থলে পৌছে যেতে পারবেন। এমনকি বরিশাল হতে বাস যোগে সরাসরি এই দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন।
যেহেতু এ মসজিদটি অামাদের এলাকার সেহেতু যেকোন সমস্যা বা যেকোন প্রয়োজনে ফোন করতে পারেন-#01766482670 এই নাম্বারে।

#যেখানে থাকতে পারেনঃ

থাকার জন্যে আপনাকে বরগুনা সদরে ফিরতে হবে। বরগুনায় থাকার জন্য বেশকিছু আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউজ রয়েছে। আপনার সুবিধার্থে কিছু হোটেল ও রেস্ট হাউজের তথ্য সংগ্রহ করে নিম্নে দেওয়া হলঃ

১। জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৪১০)
২। খামারবাড়ি রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৪৪৯)
৩। পানি উন্নয়ন বোর্ড রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৫৫১)
৪। এভাগ্র সার্ভিস সেন্টার (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৭০৮)
৫। গণপূর্ত অধিদফতর (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৫০৫)
৬। ইলাজি ডি রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬০৫৪)
৭। সিয়ারাপি রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬০৫১)
৮। হোটেল আলম, ফোনঃ ০৪৪৮-৬২২৩৪
৯। বরগুনা রেস্ট হাউজ, ফোনঃ ০১৭১৮৫৮৮৮৫৬
১০। হোটেল তাজবিন, ফোনঃ ০৪৪৮-৬২৫০৩

এই মসজদটিকে কেন্দ্র করে অামরা একটি ভিডিও বা ব্লগও তৈরি করেছি,এডিটের কাজ চলছে খুব শিগ্রই ভিডিওটি অাপলোড দিবো,ইনশাআল্লাহ।