ঘুরে এলাম দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের মজিদবাড়িয়া শাহী জামে মসজিদ।যদিও অামাদের বাসা থেকে এটি ৭-৮ কিলোমিটার পথ।
সাড়ে ৫শ বছর পূর্বে সুলতানি শাসন আমলে স্থাপিত এ মসজিদটি,যা অাজও স্মরণ করিয়ে দেয় মুসলিম স্হাপত্য ও ঐতিহ্যের কথা।পরে মজিদ নামে এক ইউপি চেয়ারম্যান মসজিদবাড়িয়ার পরিবর্তে ইউনিয়নের নাম মজিদবাড়িয়া করেন বলে জানা যায়। দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাবে মসজিদটির সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের কিছুটা হারলেও সম্প্রতিক নতুন সংস্কার হয়েছে।তা অামি নিজেই প্রত্যক্ষ করি কেননা এর অাগে ৩ বছর অাগে এসে যে অবস্হা দেখি তার থেকে এখন সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও কিছুটা নতুনত্ব পায়।
কোটি টাকা ব্যায়ে অাধুনিক চাকচিক্য মসজিদের মাঝেও এই পুরানো প্রত্যান্ত অঞ্চলে ছোট্ট করে ঐতিহাসিক এ মসজিদটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে শত শত নারী-পুরুষ আসেন এখানে। পটুয়াখালী শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও বরগুনা জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার পূর্বে মসজিদবাড়িয়া মসজিদ অবস্থিত।
স্হানীয় প্রবীন ও খাদেম এবং তার দেওয়া লিপিটি থেকে যা জানতে পারি তা হলো,ইলিয়াছ শাহী বংশের এক স্বাধীন সুলতান রুকনুদ্দীন শাহ বাকলা দখল করে ১৪৬৫ সালে মির্জাগঞ্জ থানার মজিদবাড়িয়া গ্রামে এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ করেন। এ মসজিদই চন্দ্রদ্বীপের (বর্তমান বরিশাল বিভাগের) প্রথম ইটের নির্মিত কীর্তি আর উজিয়ল নামে এক মিস্ত্রি মসজিদটির নির্মাণকাজ করেন। মসজিদে তিনটি দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যখচিত মেহরাব। পূর্ব দিকে তিনটি খিলান পথ, ছয়টি আট কোণার মিনার ও সুদৃশ্য পিলার রয়েছে। একটি বারান্দাযুক্ত মসজিসটির পূর্ব-উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দু’টি করে জানালা রয়েছে।
সবথেকে অাশ্চর্যের বিষয় হলো,
বিশাল এক গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটি রড ও সিমেন্ট ছাড়াই চুনা সুরকি ও পোড়ামাটির ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের দেয়াল প্রায় ৭৫ ইঞ্চি পুরো। আর মসজিদের ভেতরের দিকে রয়েছে বিভিন্ন কারুকার্যখচিত মুসলিম স্থাপত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন।
১৫৮৪ সালে ঘূর্ণিঝড়ে বাকলা চন্দ্রদ্বীপ বিশেষ করে বর্তমান পটুয়াখালী জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এরপর শুরু হয় মগ ও পর্তুগিজদের আক্রমণ। ফলে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের প্রায় অর্ধেক এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়ে এবং আস্তে আস্তে জনপদগুলো জঙ্গলে পরিণত হয়। প্রত্যন্ত ওই এলাকায় দীর্ঘ দিন জনবসতি না থাকায় মসজিদবাড়িয়া মসজিদটি অব্যবহৃত হয়ে পড়ে। বন জঙ্গল ঘিরে হয়ে যায় এক ভুতুড়ে এলাকা।
১৮৬০ সালে এ অঞ্চল জমিদারের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করে পরিষ্কার করে আবাদ করার সময় এ মসজিদটির সন্ধান পাওয়া যায়।
অাশা করি সময় পেলে অাপনারাও এরকম একটি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্হান ভ্রমণ করে অাসবেন।
No comments:
Post a Comment