Friday, 21 September 2018

ব্রাজিলের_কালো_বাঘ(রিভিউ) সত্যজিৎ রায় অনুদিত।

সাহিত্যে সত্যজিৎ রায়ের জনপ্রিয়তা নিয়ে নতুন করে কিছুই বলার নেই ।তাঁর অনুবাদকৃত এই বইয়ের প্রত্যেকটা গল্পের প্লট এবং সিকোয়েন্স সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র।এ বইয়ে ৫ টি গল্প রয়েছে।প্রতিটা গল্পই যে সমভাবে ভাল,তা বলব না।অার সেটা সম্ভবও না।কিন্তু অধিকাংশ গল্পের শেষেই মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে আসে,সব মিলিয়ে উত্তেজনায় টানটান লোমহর্ষক গল্পের এক ক্ষুদ্র সম্ভার। পড়ে দেখতে পারেন। :) :)
এ বইয়ের গল্প ৫ টির মধ্যে অামার কাছে ভালো লাগা গল্পগুলোর পর্যায়ক্রমে তালিকা এবং এর সাথে যাদের বইটি সংগ্রহ করে পরার সুযোগ হবে না তাঁরা অামার এ বইয়ের সবথেকে বেশি ভালো লাগা গল্পদুটোর অডিও বুক নিম্নের লিংক থেকে শুনতে পারেন-
১.মঙ্গলই স্বর্গ।
-https://youtu.be/7-u7cqxqeXE
২.ব্রাজিলের কালো বাঘ।
-https://youtu.be/HDF25jzKYTg
৩.ইহুদির কবচ।
৪.ব্লু-জন গহ্বরের বিভীষিকা।
৫.ঈশ্বরের ন' লক্ষ কোটি নাম।

Friday, 14 September 2018

মূল্যায়ন

জীবনে কাউকে অাপনি কখনও এভাবে ভালোবেসেছেন যে তার কথা কম বেশি সবসময় মনে পড়ে।কথায় অাছে,"যাকে যার যতবেশি ভালো লাগে,তার কথাও তত বেশি মনে পড়ে।"ঠিক এরকম....

না রোমান্টিক ভালবাসা বলতে অামরা যেটা বুঝি সে ধরণের ভালবাসার কথা অামি বলছি না।
অামি যে ভালবাসার কথা বলতে চাচ্ছি সেটি এমন এক ধরণের ভালবাসা যেখানে থাকবে প্রচন্ড সম্মান,অাকুলতা এক ধরণের তীব্রতা যা অাপনার চোখ ভিজিয়ে দেয়।

অামরা অনেকেই টিভি বা ইউটিউবে দেখেছি একসময়ে মাইকেল জ্যাকসন বর্তমান সময়ে জাস্টিন বেইবার সহ এরকম জনপ্রিয় সেলিব্রেটি যখন স্টেজে পারফর্ম করে তখন তাকে দেখে তার ফ্যানরা পাগলের মতো হয়ে যায়,খুশিতে চিৎকার করে,কেউ কেউ অাবার অাবেগে কেঁদেও ফেলে।অার যদি কোন ক্রমে এই পছন্দের তারকাদের একটু জড়িয়ে ধরতে পারতো তাহলে সে তাঁকে অাকড়েই থাকতো।
অাবার অামরা ফুটবল ফ্যানরা অামাদের প্রিয় খেলোয়াড় মেসি,ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোকে যদি সমনাসামনি দেখতাম, একটু জড়িয়ে ধরে একটা সেলফি তুলতে পারলে,ঐ সময়টা মনে হয় অামাদের অনেকের জীবনের সবচেয়ে দামী মুহুর্ত হবে।
কি অসাধারণ ভালবাসা যার কারণে অামাদের অনেকেই অদ্ভুত সব অাচরণ করে বসি।
অামরা অামাদের পছন্দের প্লেয়ারের জার্সি পড়ি,তার মতো হেয়ার কাট দেই,প্রিয় ব্যক্তিত্ত্বের পার্সোনালিটি ফলো করি।
কিন্তু এসব উদাহরণের মাঝে কিছু একটা নিষ্ক্রিয় রয়েছে....
অামরা অামাদের পছন্দের যে সকল সেলিব্রেটিদের জন্যে বিভিন্ন কারণে অাবেগে অাপ্লুত হয়ে যাই,যেমন-কিছুদিন অাগে চেস্টার এর মৃত্যুতে হাজারো লিংকিং পার্কের ফ্যানরা কেঁদেছিলো।২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ মিস করে মেসির চোখে পানি দেখে অামরা মেসি ভক্তরা কাঁদি।
অাচ্ছা অামাদের জন্যে তারা কখনও কি কেঁদেছে উত্তর অবশ্যই না।
অার এ ব্যাপারটা অামরা ফ্যানরাও অস্বিকার করতে পারবো না।
অামাদের জিজ্ঞেস করলে অামরাি বলবো অামাদের পছন্দের সেলিব্রেটিরা কেন অামার জন্যে কাঁদবে,মনে করবে।অামি এমন কে...!
অার যদি বলি এমন একজন মানুষ ছিলেন যে সত্যি সত্যিই অামাদের জন্যে কাঁদতেন।

যে ব্যক্তির মর্যাদা,সম্মান ও খ্যাতির দিক থেকে যেকোন সেলিব্রেটির থেকে অনেক অনেক উপরে।
সে হলো অামাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)।
তিনি রাত জেগে নামাজ পড়তো,তার নামাজ পড়তে পড়তে পা ফুলে যেতো।
অার এ নামাজের মধ্যেও সে শুধু অামাদের জন্যেই দোয়া করতেন যাতে অামরা ভালো থাকি,পরকালে শান্তি পাই।

অার এ কথা ভেবেই তার চোখে পানি অাসতো যে তার মৃত্যুর পরে অারও অনেক মানুষ অাসবে যারা তাঁকে দেখবে না কিন্তু তার দেখানো পথে চলবে।

প্রত্যেক নবীকেই একটা দোয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো যেটা অবশ্যই কবুল হবে।
অামাদের উম্নাতের দরদী,মায়ার নবী  হযরর মুহাম্মাদ (সঃ) সে দোয়াটিও রেখে গিয়েছিলেন অামাদের জন্যে।

একটু ভেবে দেখুন যে মানুষটি অামাদের জন্মেরও হাজার বছর পূর্বে অামাদের জন্যে কাঁদতো।
কিন্তু অামরা সেই মানুষটির চোখের জলের কতটুকু মূল্যায়ন করছি.....

এ প্রসঙ্গে অাল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِٱلْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ

অর্থঃ তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়।(সূরা আত-তাওবাহ্‌ (التوبة), আয়াত: ১২৮)

সবশেষে অামার চৈতা পীরসাহেব দাদুর মুখ থেকে শোনা ৩টি লাইন বলে শেষ করছি,
"বাবার চেয়েও যিনি অতি দরদী,
মায়ের চেয়েও যিনি অতি মায়াবী,
সে যে হলো মোদের উম্মাতের দরদী নবী"।

[এ লেখাটির কনসেপ্ট বা ভাবনাটা অাসে Be better production এর একটি ইউটিউব ভিডিও দেখে।]

Saturday, 1 September 2018

দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের মজিদবাড়িয়া শাহী জামে মসজিদ

ঘুরে এলাম দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের মজিদবাড়িয়া শাহী জামে মসজিদ।যদিও অামাদের বাসা থেকে এটি ৭-৮ কিলোমিটার পথ।

সাড়ে ৫শ বছর পূর্বে সুলতানি শাসন আমলে স্থাপিত এ মসজিদটি,যা অাজও স্মরণ করিয়ে দেয় মুসলিম স্হাপত্য ও ঐতিহ্যের কথা।পরে মজিদ নামে এক ইউপি চেয়ারম্যান মসজিদবাড়িয়ার পরিবর্তে ইউনিয়নের নাম মজিদবাড়িয়া করেন বলে জানা যায়। দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাবে মসজিদটির সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের কিছুটা হারলেও সম্প্রতিক নতুন সংস্কার হয়েছে।তা অামি নিজেই প্রত্যক্ষ করি কেননা এর অাগে ৩ বছর অাগে এসে যে অবস্হা দেখি তার থেকে এখন সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও কিছুটা নতুনত্ব পায়।
কোটি টাকা ব্যায়ে অাধুনিক চাকচিক্য মসজিদের মাঝেও এই পুরানো প্রত্যান্ত অঞ্চলে ছোট্ট করে ঐতিহাসিক এ মসজিদটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে শত শত নারী-পুরুষ আসেন এখানে। পটুয়াখালী শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও বরগুনা জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার পূর্বে মসজিদবাড়িয়া মসজিদ অবস্থিত।

স্হানীয় প্রবীন ও খাদেম এবং তার দেওয়া লিপিটি থেকে যা জানতে পারি তা হলো,ইলিয়াছ শাহী বংশের এক স্বাধীন সুলতান রুকনুদ্দীন শাহ বাকলা দখল করে ১৪৬৫ সালে মির্জাগঞ্জ থানার মজিদবাড়িয়া গ্রামে এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ করেন। এ মসজিদই চন্দ্রদ্বীপের (বর্তমান বরিশাল বিভাগের) প্রথম ইটের নির্মিত কীর্তি আর উজিয়ল নামে এক মিস্ত্রি মসজিদটির নির্মাণকাজ করেন। মসজিদে তিনটি দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যখচিত মেহরাব। পূর্ব দিকে তিনটি খিলান পথ, ছয়টি আট কোণার মিনার ও সুদৃশ্য পিলার রয়েছে। একটি বারান্দাযুক্ত মসজিসটির পূর্ব-উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দু’টি করে জানালা রয়েছে।
সবথেকে অাশ্চর্যের বিষয় হলো,
বিশাল এক গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটি রড ও সিমেন্ট ছাড়াই চুনা সুরকি ও পোড়ামাটির ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের দেয়াল প্রায় ৭৫ ইঞ্চি পুরো। আর মসজিদের ভেতরের দিকে রয়েছে বিভিন্ন কারুকার্যখচিত মুসলিম স্থাপত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন।
১৫৮৪ সালে ঘূর্ণিঝড়ে বাকলা চন্দ্রদ্বীপ বিশেষ করে বর্তমান পটুয়াখালী জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এরপর শুরু হয় মগ ও পর্তুগিজদের আক্রমণ। ফলে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের প্রায় অর্ধেক এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়ে এবং আস্তে আস্তে জনপদগুলো জঙ্গলে পরিণত হয়। প্রত্যন্ত ওই এলাকায় দীর্ঘ দিন জনবসতি না থাকায় মসজিদবাড়িয়া মসজিদটি অব্যবহৃত হয়ে পড়ে। বন জঙ্গল ঘিরে হয়ে যায় এক ভুতুড়ে এলাকা।
১৮৬০ সালে এ অঞ্চল জমিদারের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করে পরিষ্কার করে আবাদ করার সময় এ মসজিদটির সন্ধান পাওয়া যায়।
অাশা করি সময় পেলে অাপনারাও এরকম একটি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্হান ভ্রমণ করে অাসবেন।

বাংলাদেশের সম্পদ বরগুনার বিবিচিনি শাহী মসজিদ।

ইদের ছুটিতে ঘুরে এলাম,অামাদের বাসা থেকে ১৮-২০ কিলোমিটার দূরে বরগুনা জেলা,বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি শাহী মসজিদ এ,এটি দিগন্তজোড়া সবুজের বর্ণিল আতিথেয়তায় উদ্ভাসিত ভিন্ন এক ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যে উঁচু টিলার ওপর দাঁড়িয়ে আছে মোগল স্থাপত্যকর্ম এই ঐতিহাসিক মসজিদ। এ এক হূদয়ছোঁয়া পরিবেশ, যা ভুলবার নয়, নয় প্রকাশের।তাই তো তৃতীয়বারের মতো গেলাম।নিঃসন্দেহে দেশের অসংখ্য দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে বিবিচিনি মসজিদ অন্যতম।

বিকাল দুপুর ৩:০০ দিকে অামি ও অামার বন্ধু সাইফুল দুজনে বিবিচিনির উদ্দেশ্যে রয়না হই,পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকাল হয়ে যায়।শেষ বিকালের সোনালি আলো জড়িয়ে নতুন কংক্রিটের পথ পেরিয়ে মসজিদের ঠিক পাদদেশে দাঁড়ালাম। কালো কাঠ কয়লার আবরণে ঢাকা মেঘ আকাশে উঁকিঝুঁকি মারছে। এরই মধ্যে সূর্যের সোনালি আলো মেঘের ফাঁকফোকর দিয়ে মাঝে মধ্যে বেরিয়ে এসে আলোর ‘প্রকৃতি’ ছড়াচ্ছে। আমি সফরসঙ্গী সাইফুল দুজনে মিলে স্থানটি ঘুরে দেখলাম।এর অাগেও অামি এখানে অারও দুবার এলেও সাইফুলকে এই প্রথমবার নিয়ে এলাম।দুজনে অাসরের নামাজ অাদায় করে,বিবিচিনি মসজিদের বয়জেষ্ঠ  ইমাম ও খাদেম এর কাছ থেকে এ মসজিদের ইতিহাস সহ অনন্য বিষয়ে যা জানতে পারলাম তা হলো,
 এ মসজিদটি হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ (রঃ) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এসে বিবিচিনিতে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন ১৬৫৯ সালে।এবং তাঁর কন্যাদ্বয়ের নামানুসারে গ্রামের এবং মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে।মসজিদের এর পাশে রয়েছে ব্যতিক্রম ধর্মী তিনটি কবর। স্থানীয় ভাবে জানা যায় মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা এবং তার কন্যা চিনিবিবি এবং ইসাবিবির কবর।

ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এ মসজিদকে গোটা দক্ষিণ বাংলার ইসলাম প্রচারের কেন্দ্র হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই উজ্জ্বল নিদর্শনটি টিকে থাকলেও কালের বিবর্তনে আজ এর ঐতিহ্য অনেকটাই হারিয়ে গেছে। তবু এর ধ্বংসাবশেষ পুরনো ঐতিহ্য ও শৌর্য বীর্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
-মসজিদটিকে ঘিরে রয়েছে অনেক অলৌকিক ঘটনা ও নানা ইতিহাসঃ

জানা যায়, তখনকার সময় বিষখালী নদীর পানি ছিল লবণাক্ত। সুপেয় পানির অভাবে জনগণ বহু কষ্ট পেত। নেয়ামত শাহ মানুষের এই কষ্টের কথা অনুভব করে তার সাধকতার আশ্চর্য তসবিহটি বিষখালী নদীতে ধুয়ে দিলে পানি হয়ে যায় সুপেয়। আজো সেই পানি একই অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া সে যুগে সুন্দরবন-সংলগ্ন বিষখালী নদীতে অসংখ্য কুমির ছিল। তার অলৌকিক প্রচেষ্টায় বিবিচিনি-সংলগ্ন বিষখালী নদী এলাকায় কোনো কুমির আসত না। এ কাহিনী এখনো এ এলাকায় প্রচলিত।এছাড়াও কেউ কেউ মনে করেন এ মসজিদ জ্বিন পরীদের দ্বারা হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ রঃ নির্মাণ করেছেন,এ প্রসঙ্গে অামি মসজিদের খাদেমকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন-
এ মসজিদ পাঁচশ সাড়ে পাঁচশ বছর অাগে যখন নির্মিত হয় তখন এখনকার মতো রাস্তাঘাট তো ছিলই না এমনকি নদীপথেও কোন জাহাজ চলাচলও ছিলো না।ইটের ভাঁটা তো দূরের কথা।এ দিকে এ মসজিদের দেয়াল ৬ ফুট পুরো যার জন্যে অসংখ্য ইট ব্যাবহৃত হয়েছে,যা দিয়ে তিন-চারটি মসজিদ নির্মাণ করা যায়।এখন প্রশ্ন হলো এত ইট কোথা থেকে অাসল,অাবার ধরলাম হয়তো ঢাকা চট্টগ্রাম থেকে অাসলো,কিন্তু তখন তো কোন স্হল ও নদীবন্দরে কোন যানচলাচল ছিলো না।এ থেকে ধারণা করা হয় এ ইটগুলো হয়তো হযরত নেয়ামত উল্লাহ রঃ জ্বিন দ্বারা অানিয়েছেন।এটি হয়তো অাল্লাহর ওলী হিসেবে তাঁর কারামত।

মসজিদটি নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক বিস্ময়কর স্থান হিসেবে গুরুত্ব বহন করে আসছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বাংলার অন্যতম মোগল স্থাপত্যশিল্প এবং এলাকার পুরনো দিনের অতীত স্মৃতি ও ঐতিহ্য। সম্রাট শাহজাহানের সময় পারস্য থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে শাহ নেয়ামতউল্লাহ দিল্লিতে আসেন। এ সময় দিল্লির সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র বঙ্গদেশের সুবাদার শাহ সুজা তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং কতিপয় শিষ্যসহ বজরায় চড়ে তিনি ইসলাম প্রচার ও ইবাদতের জন্য ভাটির মুলুকে প্রবেশ করেন। শাহ নেয়ামতউল্লাহ বজরায় চড়ে দিল্লি থেকে রওনা হয়ে গঙ্গা নদী অতিক্রম করে বিষখালী নদীতে এসে পৌঁছলে বিবিচিনিতে শাহজাদা বাংলার সুবেদার মোহাম্মদ শাহ সুজার অনুরোধে একই গ্রামে এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। বিবিচিনি গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম নেয়ামতি। গ্রামটির নেয়ামত শাহের নামেই রাখা হয়েছে বলে জানা যায়।

দর্শনীয় ও শোভা বর্ধনকারী এ মসজিদ ঘিরে রয়েছে নানা ধরনের ঘটনা,যা মানুষের মনে কৌতূহল সৃষ্টি করে। শোনা যায়, পূর্বেকার সময় স্বপ্নে প্রাপ্ত দূরবর্তী অনেক লোকজন এ মসজিদ থেকে গুপ্তধন নিয়ে যেত। শুধু তাই নয়, যে যে ধরনের প্রত্যাশা নিয়ে এখানে আসে, তার অধিকাংশের আশাই নাকি পূর্ণ হয় বলে অসংখ্য মানুষের কাছে শোনা যায়।এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম যে মাজারের কোন অলৌকিক ঘটনা অাছে কি না,
-তিনি বলেন,অামরা ইতিহাস থেকে জানতে পেরেছি প্রথমদিকে মসজিদ সংস্কার করতে গিয়ে চারদিক খোঁজাখুঁজি করে একটা নলা পাওয়া গেছে যারা পুরত্ব সাড়ে তিন হাত তাহলে মানুষটি ১৫-২০ হাত হবে।সে অনুমানে মাটিতে খুড়াটি কবর দেওয়া হয়।এছাড়া অন্য কোন ইতিহাস তারা পায় নি।তবে এ মাজারকে ওসীলা করে মানত করে না কি কিছু মানুষের অাশা পূরণ হয়েছে বলে শুনেছেন তারা।

এছাড়াও মসজিদের কাছেই রয়েছে ছোট-বড় তিনটি পুরনো দীঘি। মোগল আমলের এ দীঘি থেকে মানুষ যা চাইত, তা পাওয়া যেত বলে শোনা যায়। মসজিদের নিকটবর্তী বড় দীঘিটি ইছাবিবির দীঘি নামে পরিচিত। তবে বর্তমানে এসব দীঘি বিপন্নপ্রায়।এর সত্যতা সঠিক জানতে পারি নি।

স্থাপত্যশৈলীঃ
সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৩৩ ফুট, প্রস্থ ৩৩ ফুট। দেয়ালগুলো ছয় ফুট চওড়া। দক্ষিণ ও উত্তর দিকে তিন-তিনটি দরজা রয়েছে। মসজিদের ইটগুলো বর্তমানের মতো নয়। ইটগুলো মোগল আমলের তৈরি ইটের মাপের ন্যায়। যার দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১০ ইঞ্চি এবং চওড়া ২ ইঞ্চি। সমতল ভূমি হতে মসজিদ নির্মিত স্থানটি আনুমানিক কমপক্ষে ৩০ ফুট সুউচ্চ টিলার ওপর অবস্থিত। তার ওপরে প্রায় ২৫ ফুট মসজিদ গৃহ।

বিবিচিনির ইতিহাসসমৃদ্ধ মসজিদটির ধ্বংসাবশেষ দীর্ঘদিন সংস্কারবিহীন থাকার পর প্রায় ১২ বছর পূর্বে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। যদিও সংস্কারের এই উদ্যোগ যথেষ্ট ছিল না। শুধু তাই নয়, নির্দশনটি দেখতে আসার জন্য উপযোগী রাস্তার অভাবে দর্শনার্থীদের ভোগান্তি হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি, অজু ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের ব্যবহারের ব্যবস্থা নেই।
এসব ব্যাপারে উক্ত মসজিদের খাদেমকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন-
সাম্প্রতিক পটুয়াখালী জেলার কৃতীসন্তান সচিব মালেক এ মসজিদের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষণ করবেন বলে অাশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান...

তারপরও অামি মনে করি,বিবিচিনি শাহী মসজিদের উন্নয়নে সরকারের আরো নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং অন্য সবার সচেষ্ট ও উদ্যোগী হওয়া দরকার।

সবশেষে বলবো বিবিচিনি মসজিদের সুন্দর মনোরম পরিবেশ সত্যি আকুল করে দেয়।টিলার উপরে উঠলে মনে হয় নদী বেষ্টিত এই জনপদের ছোটখাটো একটি পাহাড়ে উঠেছি, এমন পরিবেশ থেকে মন চায় না চলে যাই কিন্তু সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে তাই বাড়ি ফেরার তাড়া। এগিয়ে যাচ্ছি সাধনার তীর্থস্থান পেছনে ফেলে গুডবাই জানিয়ে, তবে মনেমনে ভাবে গেলাম আবার চতুর্থ বারের মতো এখানে অাবার আসব তখন তোমায় দেখব নতুন রূপে অন্য কোনোভাবে।

যেভাবে যাওয়া যায়ঃ

ঢাকা থেকে যেতে হলে আপনাকে বরগুনার বাসে করে আগে বরগুনা সদরে যেতে হবে। ঢাকা থেকে বরগুনায় চলাচলকারি বাসগুলোর মধ্যে আছেঃ

১। আবদুল্লাহ পরিবহন, ফোনঃ ০১৭০০৬২৫৮০৯, ০১৯১২৪২৮৭৯০, ০১৯২৮১৩৭১৪২, ০১৭১৪৬৬২৭৩২ (সায়েদাবাদ কাউনটার), ০১৯১৫৮৪৪৫২৬, ০১৯১৪৪২৪৬৮৭ (বরগুনা সদর কাউনটার)
২। শাকুরা পরিবহন, ফোনঃ ০১১৯০৬৫৮৭৭২ (গাবতলি কাউনটার), ০১৭২৫০৬০০৩৩ (সায়েদাবাদ কাউনটার)

এই বাসগুলোর ভাড়া ৩৫০/- টাকা থেকে ৬০০/- টাকার মধ্যে।

অথবা আপনি সরাসরি বেতাগীর / বরগুনার লঞ্চে করে বেতাগী / বরগুনা যেতে পারেন। প্রতিদিন বিকেল ৫-৬টার মধ্যে এসব লঞ্চ ছেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে আপনাকে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে চড়তে হবে।

বরগুনা পৌছানোর পরে বাসযোগে বেতাগি যাওয়ার পর মোটরসাইকেল অথবা রিক্সাযোগে গন্তব্যস্থলে পৌছে যেতে পারবেন। এমনকি বরিশাল হতে বাস যোগে সরাসরি এই দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন।
যেহেতু এ মসজিদটি অামাদের এলাকার সেহেতু যেকোন সমস্যা বা যেকোন প্রয়োজনে ফোন করতে পারেন-#01766482670 এই নাম্বারে।

#যেখানে থাকতে পারেনঃ

থাকার জন্যে আপনাকে বরগুনা সদরে ফিরতে হবে। বরগুনায় থাকার জন্য বেশকিছু আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউজ রয়েছে। আপনার সুবিধার্থে কিছু হোটেল ও রেস্ট হাউজের তথ্য সংগ্রহ করে নিম্নে দেওয়া হলঃ

১। জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৪১০)
২। খামারবাড়ি রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৪৪৯)
৩। পানি উন্নয়ন বোর্ড রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৫৫১)
৪। এভাগ্র সার্ভিস সেন্টার (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৭০৮)
৫। গণপূর্ত অধিদফতর (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৫০৫)
৬। ইলাজি ডি রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬০৫৪)
৭। সিয়ারাপি রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬০৫১)
৮। হোটেল আলম, ফোনঃ ০৪৪৮-৬২২৩৪
৯। বরগুনা রেস্ট হাউজ, ফোনঃ ০১৭১৮৫৮৮৮৫৬
১০। হোটেল তাজবিন, ফোনঃ ০৪৪৮-৬২৫০৩

এই মসজদটিকে কেন্দ্র করে অামরা একটি ভিডিও বা ব্লগও তৈরি করেছি,এডিটের কাজ চলছে খুব শিগ্রই ভিডিওটি অাপলোড দিবো,ইনশাআল্লাহ।

ক্রীতদাসের হাসি,শওকত ওসমান (রিভিউ-৭)

"হাসি মানুষের অাত্নারই প্রতিধ্বনি।যারা ভালো কথা বলতে পারে,তারা ভাল হাসতে ও পারে।"
আমরা বেশির ভাগ সময় মেকি হাসি মুখে লেপটে রাখি। কিন্তু অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে যে হাসি বা যে খুশি আসবে সেটা মহা মূল্যবান। আপনি পার্থিব সম্পদ দিয়ে সে হাসি কিনতে পারবেন না। যেমন পারেননি অামার অাজকের রিভিউ ক্রীতদাসের হাসি উপন্যাসের খলিফা হারুনুর রশীদ ক্রীতদাস তাতারীর থেকে।

এ বইটি কলেজের বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য হওয়ার পর অামার প্রথম পাঠিত বই।এ বইটি শেষ করার পর যে ভালোলাগা কাজ করে তারই তাড়নায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অন্যান্য বই পাঠ করার উৎসাহ পেয়েছিলাম।যাই হোক অার কথা না বাড়িয়ে এ বইটি নিয়ে সংক্ষিপ্ত রিভিউতে চলে যাই..

ক্রীতদাসের হাসি বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান রচিত একটি উপন্যাস। ১৯৬২ সালে তিনি এ উপন্যাসটি রচনা করেন। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন পাকিস্তানকে বর্বর স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে আবদ্ধ করলো। এ সময় সব ধরনের-বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল। তৎকালীন পাকিস্থানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের শাসন ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করে এ উপন্যাস রচিত হয়। এ উপন্যাসের মূল চরিত্র তাতারী। গণতান্ত্রিক চেতনাকে ভয় পায় স্বৈরাচারী শাসক। এই চেতনাকে দমন করার জন্যই আবার নেমে আসে সামরিক শাসন তবুও লেখকের প্রতিবাদ স্তব্ধ থাকেনি। রূপকের মধ্য দিয়ে তীব্র হয়ে উঠেছে এই প্রতিবাদ। প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে শওকত ওসমানের ‘ক্রীতদাসের হাসি’র তাতারী। খলিফা হারুনর রশীদ কোনো কিছুর বিনিময়েই তাতারীর হাসি শুনতে পান না। খলিফার নির্দেশে হাসার চেয়ে মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করেছে তাতারী।
অাপনাদের অারও ভালোভাবে ও স্পষ্টকরে বোঝার সুবিধার্থে এ উপন্যাসের কিছু ঘটনা সংক্ষেপে তুলে ধরছি।

ঘটনাটি মুসলিম খলিফা হারুন অর রশিদের অন্দর মহলের। খলিফার হাবসী ক্রীতদাস #তাতারী ও আরমেনীয় দাসী #মেহেরজান পরষ্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রেমে পড়ে। তাদের ভালবাসাকে স্বীকৃতি দেন রাজমহিষী। খলিফার অজান্তেই রাজমহিষী দুজনের বিয়ে দিয়ে দেন। তারা খলিফার স্ত্রীর অনুমতিক্রমে প্রতিরাতেই দাসদের বসবাসের নির্ধারিত স্থানে মিলিত হত। এ দুই প্রেমিক-প্রেমিকা মিলিত হয়ে প্রাণখোলা হাসি হাসত।এদিকে খলিফার মনে শান্তি নাই,তার ধন সম্পদ রাজ-ক্ষমতা সবই রয়েছে। কিন্তু তিনি মনের মধ্যে সব সময় একটি অস্থিরতাবোধ করেন। তিনি যেন হাসতেই ভুলে গেছেন। একদিন রাতের বেলায় বাগানে তার জল্লাদ-কাম সহচর মাশরুরসহ বেড়াতে গেলে সেখান থেকে ক্রীতদাসের হাসি শুনতে পান।খলিফা মাশরুরকে আদেশ দেন যে কে এমন প্রান খোলা হাসি হাসে তাকে খুজে বের করতে।মাশরুর সেই হাসির উৎস খুজে বার করে এবং খলিফাকে জানায়।পরের দিন তিনি গোপনে তাতারি ও মেহেরজান এর প্রেমলীলা প্রতক্ষ করেন। কিন্তু খলিফার অদ্ভূত খেয়াল হয় তিনি ক্রীতদাসকে মুক্ত করে দিয়ে তাকে প্রয়োজনীয় শানসাওকাত দিয়ে তার প্রাণখোলা হাসি শুনবেন।

ক্রীতদাস তাতারির প্রাণোচ্ছল হাসি শুনে বিমোহিত খলিফা হারুনুর রশীদ ভেবেছিল তিনি তাতারির হাসি কিনে নিতে পারবেন। যখন ইচ্ছে সেই হাঁসি শুনতে পাবেন যেন তাতারি চাবি দেওয়া পুতুল। যখন চাবিতে মোচড় দেবেন তখনি সে হাসতে শুরু করবে। সেই চেষ্টায় খলিফা তাতারি কে দাস থেকে মুক্ত করে অঢেল সম্পত্তি প্রদান করলেও কেড়ে নেন তাতারির হাসির মূল উৎস মেহেরজান কে। মেহেরজান থেকে আলাদা হয়ে তাতারি কি হাসতে পারে! না পারেনি তাতারি। ক্রুদ্ধ খলিফার নির্দেশে চাবুকের আঘাত তাতারির কালো চামড়া ফালি ফালি হয়েছে, রক্তাক্ত হয়েছে। কিন্তু হাসি ফিরে আসেনি। না আর দশটা মানুষের মতো তাতারি পারেনি মেকি হাসি মুখে লেপটে রাখতে। পারেনি অঢেল সম্পত্তি পেয়ে নিজের অস্তিত্ব ভুলে যেতে। "ক্রীতদাসের হাসি" দারুণ একটা উপন্যাস। সাইজে বেশ ছোট হলেও গভীরতায় সমুদ্রসম।অাশা করি বইটি পড়ে অাপনাদের সকলের ভালো লাগবে। তবে শেষাংশে তাতারীর কণ্ঠে "দিরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস কেনা যায়। বান্দি কেনা সম্ভব । কিন্তু-কিন্তু এ ক্রীতদাসের হাসি না-না-না। .... হাসি মানুষের আত্মারই প্রতিধ্বনি।" কথাগুলো পড়ে অামার মনে প্রতীবাদের তীব্র ধ্বনি বেজে উঠে।
এ বইটির ভিতরে অামায় অাকর্ষিত ও ভালোলাগা কিছু লাইন নিম্নে তুলে ধরছি,

*হাসি মানুষের অাত্নারই প্রতিধ্বনি।

*"যারা ভালো কথা বলতে পারে,তারা ভাল হাসতে ও পারে।"
ব্যাখ্যা:ভাল কথা হচ্ছে রুহের প্রতিধ্বনি-সেখানেই জমে থাকে,তারপর ঝর্ণার মত বেরোয়।অনাবিল হাসি হচ্ছে ভাল কথারই শারীরিক রুপ।হাসি অার কথার মূল উৎস এক জায়গায়।তাই যারা ভালো কথা বলতে পারে,তারা ভাল হাসতে ও পারে।

*      ইরানী মেয়ের সীনা ভাল,
           মিশরী মেয়ের উরু।
      অারবী মেয়ের নাভীর নিচে
               স্বর্গ ঠারে ভুরু।
-অাচ্ছা পাঠক বাঙালি মেয়ের কোন অঙ্গটি বেশি সুদর্শন ও ভালো সেটা জানা থাকলে কমেন্টে জানিয়েন...

*অনেক মানুষ অাছে যারা সুখ পায় না কিন্তু সুখের মর্ম বোঝে।মনুষ্যত্বহীন,কিন্ত মনুষ্যত্বের অাস্বাদ পায়।( ওরা হাসে)

ক্রীতদাসের হাসি গল্পটি অবলম্বনে বাংলায় রিয়াজ,হিমির একটা মুভিও রয়েছে,চাইলে দেখতে পারেন।মুভিটির লিংক-
https://youtu.be/_dP-b6UVbQA

কপালকুন্ডলা,বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (রিভিউ-৬)

“তুমি অধম — তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?”

“পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ?”

দুটো লাইনই অবিস্মরণীয় উক্তি যা বাংলা ভাষায় সুভাষিত উক্তি রূপে বহুল ব্যবহৃত ও চর্চিত হয়।
প্রথম লাইনটা শোনেনি,এমন বাঙালি বোধহয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল।আর দ্বিতীয় লাইনটাকে বাংলা সাহিত্যে সর্বপ্রথম ও শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক ডায়লগের স্বীকৃতি দেয়া হয়।দুটো লাইনই বঙ্কিমচন্দ্রের এক উপন্যাসের অংশ — কপালকুণ্ডলা।
ছোটবেলা থেকেই বাংলা পঠ্যবইয়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর গদ্যগুলো পড়ার সময় কবিপরিচিতিতে কপালকুন্ডলা,বিষবৃক্ষ,কৃষ্ণকান্তের উইল পরীক্ষায় জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অবজেক্টটিভ এর জন্যে এসব উপন্যাসের নাম পড়ে পড়ে এবং প্রথম লাইনটি শুনে শুনে বড় হয়েছি।অবশেষে অাজ সাহিত্য সম্রাট এর রচিত বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক রোমান্টিক উপন্যাস কপালকুন্ডলা পড়ে শেষ করলাম এবং সাথে সাথেই রিভিউ লিখতে শুরু করলাম,অাশা করি সময় হলে ধৈর্য ধরে পুরো লেখাটি পড়লে যারা কপালকুন্ডলা বইটি পড়েন নি তাদের হয়তো এ বইটি পড়ার ইচ্ছে জাগবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। স্থানীয় মন্দিরের অধিকারীর সহায়তায় নবকুমার কপালকুণ্ডলাকে বিয়ে করে নিজের বাড়ি সপ্তগ্রামে ফিরে আসেন। পথে মতিবিবি বা লুৎফউন্নিসা নামে এক বিদেশী রমণীর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয়।

কপালকুণ্ডলা বাল্যকাল থেকে জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে কাপালিকের কাছে বড় হওয়ায় স্বাভাবিক সামাজিক রীতিনীতির সঙ্গে অপরিচিত ছিলেন। নবকুমারের বাড়িতে তিনি ধীরে ধীরে সমাজের মানুষজন ও তাদের আচারআচরণ সম্পর্কে ধারণা পেলেন। কপালাকুণ্ডলা নাম বদলে তার নাম রাখা হল মৃন্ময়ী।

মতিবিবি বা লুৎফউন্নিসা আসলে নবকুমারের প্রথমা স্ত্রী পদ্মাবতী ছিলেন। পরে সপরিবারে মুসলমান হয়ে আগ্রা চলে যান। পথে নবকুমারকে দেখে তিনি পুনরায় তাকে স্বামীরূপে লাভ করতে উৎসুক হন এবং সপ্তগ্রাম চলে আসেন। পদ্মাবতীর পরিচয় জানার পর নবকুমার তাকে প্রত্যাখ্যান করেন।

এদিকে কাপালিক কপালকুণ্ডলাকে বধ করতে সপ্তগ্রাম চলে আসে। তার হাত ভেঙে যাওয়ায় সে পদ্মাবতীর সাহায্য চায়।

পদ্মাবতী ব্রাহ্মণবেশ ধারণ করে কপালকুণ্ডলাকে সব খুলে বলে এবং নবকুমারকে ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করে। ব্রাহ্মণবেশী পদ্মাবতীর সাথে কপালকুণ্ডলাকে দেখতে পেয়ে নবকুমার তাকে ভুল বুঝে খুব কষ্ট পান। আর কাপালিক সুযোগ বুঝে সুরাপান করিয়ে নবকুমারকে উস্কে দিতে থাকেন।

শেষপর্যন্ত নবকুমার আর কপালকুণ্ডলার মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব সংঘাতের মধ্য দিয়ে উভয়েই জীবনের চরম উপসংহারে উপনীত হয়।

হুমায়ূন অাহমেদ এর বই যেরকম চোখবুলিয়ে এক বসায় পড়ে উঠে যায়,কিন্তু বঙ্কিম এর লেখা বিশেষ করে কপালকুন্ডলা বইটি পড়তে অাপনার মনোযোগ ধরে রাখতে হবে।

অধিকাংশ পাঠকই পড়তে গিয়ে অামার মতো—চন্দ্ররশ্মিবর্ণাভা বা বারিধারাপরিসিঞ্চিত ঘরানার মতো বেশ কিছু শব্দের অর্থ বুঝতে সমস্যায় পড়বেন হয়তো।আবার বাটী অর্থ যে বাড়ি —সেটা আমার জানা থাকলেও আগে বাটির কথাই মনে আসে।

বানানের ক্ষেত্রেও কিছুটা সমস্যায় পড়েছি যেমন ধরুণ ধর্ম্ম বা কর্ত্তার মত বানান দেখলে একটু ভিরমি খেতে হয় বৈ কি! তবে বিশ শতকে কলকাতা আর অামাদের ঢাকার উচ্চারণ পার্থক্যহেতু পেয়েছে এর মাধ্যমেই।ওরা কালের বিবর্তনে পরের অংশ নিয়ে উচ্চারণ করেছে — ধম্ম বা কত্তা। আর আমরা শুরুর অংশ নিয়ে ধর্ম বা কর্তা এসবই ব্যাবহার করছি।

অার হ্যাঁ,এসব শব্দ ও বানানের সমস্যার কথা শুনে ভয় পাইয়েন না,বইটি সংগ্রহ করে অথবা গুগল থেকে পিডিএফ ফাইল নামিয়ে ধৈর্য ধরে প্রথম কয়েকটা পাতা পড়ুন এবং পুরো বই পড়ার সময়ে মনোযোগ ধরে রাখুন,যেসব শব্দের অর্থ না বুঝবেন সেগুলো রেখেই পড়ুন,অাশা করি গল্পের কাহিনী বুঝতে পারবেন।
সবশেষে,বঙ্কিমের মত হয়তো অাপনাদেরও প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করবে — আকাশে চন্দ্রসূর্য্য থাকিতে জল অধোগামী কেন?

যদি কপালকুন্ডলা বইটি সংগ্রহ করে পড়ার সময় না হয় অথবা গল্পটি পড়েও কাহিনী বুঝতে অসুবিধে হয় তাহলে এ গল্পটি অবলম্বনে ১৯৩৩ সনে প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর পরিচালনায় কপালকুণ্ডলা চলচ্চিত্রটি নিম্নের লিংক এ দেখতে পারেন। এতে অভিনয় করেন উমাশশী, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, মলিনা দেবী, নিভাননা দেবী, অমর মল্লিক, অমূল্য মিত্র প্রমুখ।
https://youtu.be/EUvScRPVpUM

জনম জনম,হুমায়ূন অাহমেদ (রিভিউ-৫)

"অন্ধকারে তুমি সখী চলে গেলে কেন তবু হৃদয়ের গভীর বিশ্বাসে অশ্বত্থের শাখা ঐ দুলিতেছেঃঅালো অাসে ভোর হয়ে অাসে।"

ইদানিং কেমন যেন হুমায়ূন অাহমেদ এর লেখা বইগুলো পড়ার নেশা হয়ে গেছে,পড়ে ফেললাম তাঁর লেখা ‘জনম জনম’ বইটি।এটি তাঁর একটি ব্যতিক্রমধর্মী বই।

নিশিকন্যা চেনেন? এই গল্পের নায়িকা তিথি হচ্ছে নিশিকন্যা।
এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবনকাহিনী নিয়ে এই উপন্যাস এর মূল কাহিনী।তিথি তার দরিদ্র পরিবারকে সাহায্যের জন্যে নিজের সর্বস্ব বিসর্জন দিয়ে নামে পতিতাবৃত্তিতে। তার রোজগারেই সংসার চলে, কিন্তু তবু তাকে জীবনের পদে পদে হীনতার স্বীকার হতে হয়। তার পরিবারের সদস্যরা জানে সে কিভাবে উপার্জন করে, কিন্তু তবু পেটের দায়ে তাকে কেউ এই পথ থেকে সরে আসার জন্য অনুরোধ করে না। কারণ যেই পথেই উপার্জন করুক না কেন, তার আয়েই মূলত ছয় জনের সংসার চলে। অন্ধ বাবার চিকিৎসা, সংসার খরচ, ভাইবোনের খরচ, সব এই একা তিথিকেই সামলাতে হয়।

এই তিথি শুধু একাই নয়, আমাদের সমাজে আজও অনেক অসহায় নারীরা আছে, যারা অভাবের তাড়নায় নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু তাদের এই ভুমিকাকে অামরা মূল্যায়নতো করিই না, বরং সমাজের ঘৃণিত শ্রেণীর নাম উচ্চারণ করতে হলে তাদের নামই বোধহয় আগে আসে।
তিথিদের মতো মেয়েদের পতিতা,বেইশ্যা বলার আগে তাদের এ পথে অাসার গল্পটা শুনুন এবং বোন বলুন,দেখবেন সমাজ_বদলে_যাবে।

জনম জনম গল্পের অারও কিছু চরিত্র সম্পর্কে সংক্ষেপে বলছি,
তিথির মা #মিনুর চরিত্র দারিদ্রের তীব্র কষাঘাতে ভয়াবহ রকমের রুঢ় ও খিটিখিটে হয়ে পড়েছে। পরিবারের ছোট মেয়ে #অরু স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেড়ে শ্বশুরবাড়ি দুই সন্তানকে ফেলে, আরেক সন্তানকে গর্ভে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে এসেছে। জালালুদ্দিন সাহেবের বড় ছেলে #হীরু কোন কাজকর্ম করে না কিন্তু সারাদিন হয় #অ্যানা নামের এক মেয়ের পেছনে পেছনে ঘোরে নয়ত এক পীরের শিষ্যত্ব নিয়ে ভক্তিভরে তার কথা মত কাজ করে। আর ছোট ছেলে #টুকু পরিবারের অন্যতম অবহেলিত সন্তান যাকে নিয়ে কারো ভাবার কোন অবকাশ নেই। মাত্র ১৩ বছর বয়সের টুকুর জ্বর হলেও তাকে তার মা শাস্তিস্বরূপ অভুক্ত রাখে আবার টুকু বাড়ি না ফিরলেও তার পরিবারের কেউ খুব একটা চিন্তা করে না। অথচ তার যে একটা শিল্পী মন আছে সে খবর কেউ রাখে না। . তিথির এক চেনাজানা বড়ভাই আছে নাসিম নামে। তিনিই তিথির খদ্দের ঠিক করে দেন।এই নাসিম ভাইয়ের মাধ্যমেই তিথির সাথে দেখা হয় দবির সাহেবের। . #দবির সাহেবঃ একটি ছোটখাট কারখানার মালিক এক মেয়ে নাম অজান্তা ক্লাস সেভেনে পড়ে আর দবির  সাহেবের স্ত্রী ফরিদা অসুস্থ হয়ে বিছানায় পরে আছেন। এই দবির সাহেব আর তার অসুস্থ স্ত্রী ফরিদাকে নিয়ে উপন্যাসের বাকি ঘটনা। .

#পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে গল্পে সাজানো এই উপন্যাস। হুমায়ুন আহমেদের অন্যান্য উপন্যাসের মত "জনম জনম"-ও খুবই সুখপাঠ্য। উপন্যাসের কাহিনীতে একাধিকবার বাঁকবদল ঘটবে। তাই যেকোন পাঠককেই  উপন্যাসটি শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে সক্ষম হবে বলে আমার মনে হয়।
বইটা আমার পড়ে কেন জানি খুব ভাল্লাগলো। একজন বেশ্যার জীবন তিনি এতো সুন্দর করে গুছিয়ে বর্ণনা করেছেন যে আপনি একবারও তিথি কে খারাপ মেয়ে মনে করতে পারবেন না।অামি তো তিথির কিছুটা প্রেমেও পড়ে গেছি।এই জনম জনম গল্পটি নিয়ে #নিরন্তর নামে একটা সিনেমাও হয়েছে, শাবনূর অভিনয় করেছিল তিথির চরিত্রে, সিনেমাটিও ভাল লেগেছে।বইটি পড়ে সিনেমাটি দেখুন দেখবেন বইটি পড়ে অাপনার কল্পনায় অাঁকা চরিত্রগুলো ছবিটি দেখার সময় মনটা কেমন ব্যাকুল হয়ে দৃশ্য ও চরিত্রগুলো খুঁজে খুঁজে দেখতে ইচ্ছে হয়।
নিরন্তর ছবির লিংক-https://youtu.be/89i44WRBVwI

প্রীয়তমেষু,হুমায়ূন অাহমেদ (রিভিউ-৪)

ফাগুণের ফুল যায় ঝরিয়া ফাগুণের অবসানে,
ক্ষণিকের মুঠি দেয় ভরিয়া অার কিছু নাহি জানে!

অামি আমার খুব প্রিয় একজন লেখকের বই হাতে নিয়ে বসলাম এবং বইটি পড়া শেষ করে মনে হয়েছে এটি আমি এতদিন চোখের সামনে থাকতেও কেন ফেলে রেখেছি,পড়িনি কেন?দুদিন ধরে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে ও টিফিন টাইমে পড়ে ফেললাম হুমায়ূন আহমেদের প্রিয়তমেষু বইটি এবং এ বইটি পড়ে অামার অনুভূতি,চিন্তাগুলো এবং বইটির সারমর্ম অাপনাদের সাথে শেয়ার করতে অাজকের এ লেখা-

প্রিয়তমেষু বইটির প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা খানিকটা কষ্ট করে পড়ে যাবার পর রীতিমত গোগ্রাসে গিলেছি বলা চলে।বিশেষ করে বইয়ের একদম শেষ প্যারাটা পড়ে মনে হয়েছে আসলেই পুরা কাহিনীর মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য বা কারো মনে আজীবন ছাপ রেখে যাওয়ার জন্য খুব অল্প কিছু শব্দের প্রয়োজনীয়তাই যথেষ্ট, তার জন্য আবার আলাদা করে আরেকটা উপন্যাস লিখবার দরকার হয়না।

প্রীয়তমেষু গল্পে নিশাত জহির, পুষ্প রকিবকে নিয়ে লেখা উপন্যাসে ব্যাক্তিগত সুখ এর সাথে সাথে প্রধান বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে বর্তমানে ডালভাতের মতো গা সয়ে যাওয়া ধর্ষণ নামক অত্যাচারের কথা।ধর্ষিতার লড়াই, তার নিজস্ব অনুভূতি, ফাটল ধরা সংসারে মোমের প্রলেপ লাগিয়ে সারিয়ে তোলার চেষ্টা, মানসিক অস্থিরতার মতো জটিল ব্যাপারগুলোকে এত সহজে প্রকাশ করার ক্ষমতা যে হুমায়ূন আহমেদের লেখনীতেই প্রকাশ পাওয়া সম্ভব তাতো জানা কথাই।

তবে যাদের আমার মতো খানিকটা মনে অশান্তি লেগে থাকেই এই ভেবে যে হুমায়ূন আহমেদ তার বেশিরভাগ লেখায় স্পষ্ট সমাপ্তি আঁকেন না তাদের জন্য এই বইটা ম্যাজিকের মতো কাজ করবে সেই ক্ষোভ দূর করতে। বিশেষ করে নিশাত কে নিয়ে লেখা বইটির শেষের প্যারাগ্রাফ পড়ে পাঠকের মনে আবারও ফিরে আসবে সেই একি প্রশ্ন যে স্বাধীনতার যুগেও কেন একটা মেয়েকে মুখ বুজে সব অত্যাচার সহ্য করে যেতে হবে, আর কবেই বা মেয়েরা নিজেদের গলা খুলে নিজেদের সব কথাগুলো কোন লোকলজ্জা-অপমান এর তোয়াক্কা না করে বলতে পারবে।

সংকীর্ণমনারা যদি শুধু মাত্র ধর্ষণকেই যৌননিপীড়ন মনে করে এবং ধর্ষণের পিছনে মেয়েদের পোষাককেই দায়ী করে তবে অামি বলবো এটা তাদের একটা বড় ভুল।অাচ্ছা বোরকা পড়া পর্দাশীল মেয়েরাও কি ধর্ষণের হাত থকে রেহাই পায়।এখনে যুক্তিবাদীরা বলবে পর্দাশীল নারীরা কম হয় এক্ষেত্রে অামিও একমত।কিন্তু বাবা-দাদার বয়সী যে লোকটা আদর করার ছলে কোন অবুঝ পাঁচ-সাত বছরের শিশুর গায়ে হাত বুলিয়ে দেয় সেটা কি নিপীড়ন না?
খবরের কাগজ খুললে প্রায়ই দেখা যায় বড় ভাই তার বোনকে,দুলাভাই তার শালিকে,শিক্ষক তার ছাত্রীকে এমনকি জন্মদাতা পিতাও তার নিজ মেয়েকে ধর্ষণ করে।ভাবুন তো একবার কতটা বর্বর,অবাক করা ঘটনা।যুক্তিবাদীরা এ ক্ষেত্রেও কি পর্দা বা এরূপ কিছু টেনে অানবেন?
যখন এরূপ অপ্রত্যাশিত কারও কাছ থেকে কোন নারী ধর্ষিত হয় তখন এরকম লজ্জা,অপমান ও কষ্টের কথা অধিকাংশ নারীই তাঁর অাশেপাশের কাউকে বলার মুখ থাকে না,কাছের বান্ধবী এমনকি নারির সম্পর্কের মায়ের কাছেও সেসব কথা বলতে গিয়ে মেয়েরা আটকে যায়।ভোগে মানসিক অশান্তিতে যা বছরের পর বছর মনের মধ্যেই লুকিয়ে রাখে।প্রীয়তমেষু গল্পেও শেষ প্যারাতে এরূপ ঘটনা অাপনারা নিশাতের মধ্যে দেখতে পাবেন।
এই যে বাঁধাটা, এই বাঁধাটা দূর করে দাঁড়ানোর স্বপ্ন,হাতে গোনা কয়েকজন পুষ্প দেখতে পারে এবং নিশাত এর মতো অল্প কয়েকজন সেই স্বপ্ন পূরণ করার সময় পুষ্পদের হাত ধরে দাঁড়ায়।কিন্তু নিশাত- পুষ্পদের বিরুদ্ধেও যে কতজন হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে আছে তাঁদেরও তো দেখতে হবে নাকি?পুষ্পরা কি পারে নিজেদের কথা সবার মাঝখানে তুলে ধরতে? পুষ্পদের প্রিয়তমেষুরা কি তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হলে বইটি অাপনাকে পড়তে হবে এবং পড়া শেষ হলে হয়তো অাপনিও অামাদের সমাজ ব্যাবস্হা এবং সেখানে নারীদের অবস্হা নিয়ে ভাবনায় পড়ে যাবেন,মনটা কেমন কেমন.... করা নিয়ে বসে থাকতে হবে ক্ষানিকক্ষন।
হুমায়ূন অাহমেদ এর এ গল্পটি অবলম্বনে একটি নাটকও নির্মিত হয়েছে,এটির লিংক-https://youtu.be/uvr3J_7VihE

ফেরা (সিহিন্তা শরীফা,নাইলাহ অামাতুল্লাহ)রিভিউ-৩

বইটি ২০১৮ এবারের একুশে বই মেলা থেকে কিনে রেখেছি এবং ঈদের পর ৬ জুন পড়ে শেষ করি।
-ফেরা বইটিতে দুই বোনের দুটি গল্প,তাদের ফিরে অাসার গল্প।সত্যি গল্প।এ গল্পদুটো পড়ে অানন্দের পাশাপাশি পাওয়া যাবে ভাবনার খোরাক।

দু-বোন কি কষ্ট করে ধর্ম পালন করতে তা পড়লে বিবেক থাকলে যেকেউ ইসলাম ধর্মের প্রতি অারও বেশি অণুরাগী এবং অাল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বাড়বে..

অামি এ বইটি পড়তে বেশি অনুরোধ করবো প্রথমে-ক্রিস্টানদের,দ্বিতীয়ত-অামার তরুণী বোনদের এরপর সবাইকে।

এ বইটি পড়ে যেসকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা ইনফরমেশন পেয়েছি তা নিম্নে উল্লেখ করলাম-

-ইসলামের দৃষ্টিতে পরকালে দেহ ও অাত্না উভয়ের ওপরেই শাস্তি অথবা শান্তি অাপতিত হবে।'অাত্নার শান্তি' বা রুহের মাগফিরাত' কথাগুলো মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত একটু ভুল।
-খোদা শব্দটাকে মুসলিমরা ব্যবহার করলেও কুরঅান এবং সুন্নাহর কোথাও এ শব্দটির অস্তিত্ব নেই।ইংরেজি গড কিংবা বাংলা ইশ্বর/ভগবান এর মতো খোদা শব্দটা ফরাসি ভাষার একটি শব্দমাত্র।শব্দটির উৎস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে,যে খুদ অর্থাৎ নিজ থেকে এসেছে তাকে খুদা বা খোদা বলে।ইসলামী বিশ্বাস মতে অাল্লাহর কোন শুরু নেই,তিনি অাল-অাউয়াল।অাল্লাহ সময়ের বাঁধনে বাধ্য নন বরং সব কিছুর মতো তিনি সময়কে সৃষ্টি করেছেন।তাই কোন একটি সময়ে তিনি ছিলেন না,তারপর নিজে নিজে অাসলেন,খুদা শব্দটির অর্থের এই দিকটিকে ইসলাম অস্বীকার করে।এজন্য মুসলিমদের উচিৎ অাল্লাহ নিজে যে নামগুলো নিজের জন্য ব্যবহার করেছেন সেগুলো দিয়েই তাঁকে ডাকা।
(অতএব এখন থেকে অামরা নিজেরাও অাল্লাহকে খোদা বলে ডাকবো না অন্যকেও নিষেধ করবো)
-মুসলিমদের শুক্রবারের নামাজের মতো রোববার গির্জার জামায়েতকে মিশা বলে।

-ডেথ মেটাল টাইপের স্যাটানিক গান যা ইসলামের সাথে সংঘর্ষিক এবং নাস্তিকদের কাছে জনপ্রিয়।(এ ধরণের গানশোনা থেকে অামরা অবশ্যই বিরত থাকবো,অামরা অবশ্যই বুঝে শুনে নাস্তিকদের অনুরূপ কোন কার্যকলাপ করবো না।)
-নাস্তিক মনোভাবের একটি বই, দি দ্য ভিঞ্চি কোড।(এ ধরণের বই থেকে যেন   প্রভাবিত না হন সেদিকে খেয়াল রাখবেন)

-নামাজ শব্দটির চেয়ে সালাত শব্দটি উত্তম কারণ এটি ইসলামি পরিভাষা।

-অনেক অালিম তসবীহ ব্যবহার মুসলিমদের জন্য নিরুৎসাহিত করে বলেছেন অাঙুলের করে তসবিহ গণনা করা উত্তম।(কেউ ভুল বুঝবেন না কোন অালেম তসবীহ ব্যাবহার করতে নিষেধ করেন নি বরং কিছু অালেম নিরুৎসাহিত করেছেন,তবে অামরা পীর বুজুর্গদের হাতে সর্বদাই সচারচর তসবীহ দেখে থাকি।)

#ফেরা বইয়ে সিহিন্তার মুসলিম হওয়ার পিছনে অবদান ও তখনকার কিছু ঘটনা ও তথ্য নিম্নে তুলে ধরলাম-

-সিহিন্তার মুসলিম হওয়ার পিছনে ও ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জনে ডাঃ জাকির নায়েক ও তাঁর  PC Tv bangla এর অবদান রয়েছে,যা সিহিন্তা তার ফেরা বইতে উল্লেখ করেছে।(যার টিভি চ্যানেল পিস টিভি দ্বারা হাজার হাজার পরিবারের নারীরা ঘরে বসে ইসলাম সম্পর্কে জানতে ও জ্ঞান অর্জন করছে,সিহিন্তার মতো অাড়ালে কত বিধর্মি মেয়ে ইসলাম সম্পর্কে জানছে সঠিক জ্ঞান পেয়ে হয়তো এরূপ অারও মুসলিম হচ্ছিলো যা অাল্লাহই ভালো জানে।কিন্তু পরিতাপের বিষয় এ ডাঃ জাকির নায়েককে অপবাদ দিয়ে এ Pc tv কে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে,অারও খারাপ লাগে যখন এদেশের কিছু মৌলভী অালেমরা একে সমার্থনও করছে,এ বিষয়ে বলতে গেলে অনেক কথা চলে অাসবে যারা জানতে চান তাঁরা কমেন্টে অথবা অামার ইনবক্সে নক করতে পারেন।)
-Opera Notes নামের একটা plug-in এখানে লেখা নোট করে রাখা যায়।
-Kalamullah.com বই,লেকচার ইত্যাদি ডাউলোড করার সাইট।(এখান থেকে সিহিন্তা ইসলামিক বই ডাউনলোড করে নিজে নিজে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছিলো।)
-মাউন্টহীরা এটি থেকে খুব সহজেই শুনে শুনে সূরাহ শেখা যায়।(সিহিন্তা পরিবার সহ কাউকে না হানিয়ে মুসলিম হওয়ার পরে সালাত অাদায় করতে সূরাগুলো এখান থেকে শিখে নায় এবং চুপুসাড়ে অাল্লাহর ইবাদত করতো।)
সিহিন্তা ইসলাম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ যা শিখতো তা-
--Opera Notes নামের একটা plug-in এখানে লিখে রাখতো।(অামরাও দৈনন্দিন ফেবু সহ অনলাইনের লেখা ও বাস্তবে বই পড়ে গুরুত্বপূর্ণ যেসব অামাদের কাজে লাগবে সেগুলো play store  থেকে পছন্দ মতো যেকোন note download করে তাতে লিখে রাখতে পারি।
-IloveAllaah.com ফেরা গল্পের সিন্তিহার ইসলামিক পেইজ।যে পেইজে অনেক অমুসলিম এসে ইসলাম গ্রহণ করেছে।
-www.quraneralo.com বাঙালি মুসলিমদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় ওয়েবসাইট।(এখান থেকে সিহিন্তা অনেক দ্বিনি শিক্ষা লাভ করেছিলো।)

তুমি অামায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে,হুমায়ূন অাহমেদ।(রিভিউ-২)

"বনের ছায়া মনের সাথি,বাসনা নাহি কিছু
পথের ধারে অাসন পাতি,না চাহি ফিরে পিছু।"

২১ তারিখ রাত ৩:০০ দিকে হুমায়ূন অাহমেদ এর "তুমি অামায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে" বইটি পড়ে শেষ করলাম,তাই বইটির সংক্ষিপ্ত রিভিউ অাপনাদের পাঠকদের সাথে নিম্নে শেয়ার করলাম,রিভিউ পড়ে ভালো লাগলে বইটি সংগ্রহ করে অাপনিও পড়তে পারেন।

মন্ত্রীর মেয়ে দুই মেয়ে,বড় মেয়ের নাম নবনী সে দেখতে খুবই রূপসী,কিন্তু বুদ্ধিকম।অন্যদিকে ছোট মেয়ে  শ্রাবণী শ্যামবর্ণের হলেও,সে খুবই বুদ্ধিমান মেয়ে।

এই শ্রাবণীর বুদ্ধির পরিচয় পাবেন গল্পের শেষ অংশে,যা অাপনাকে তাক লাগিয়ে দিবে।গল্পের শেষ ভাগে মন্ত্রী মহাশয়কে নিয়ে এমন একটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে যেটি উক্ত ঘটনা পড়ার অাগ অবধি অাপনার মাথায়ও অাসবে না।তবে গল্পের শেষ ভাগে এসে জাহানারা নামে এক মহিলার জন্যে খারাপ লাগবে।

গল্পটি পড়ার ফাঁকে ফাঁকে মন চাইবে সকল ব্যাস্ততা ফেলে কোন নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে গিয়ে কিছুদিন অবসর সময় কাটিয়ে অাসি এবং এরূপ কিছু গল্পের বই পড়ি অার উপভোগ করি প্রকৃতির অদ্ভত সুন্দর্যগুলো অস্বাভাবিক ভাবে।

গল্পটির ভিতরে অামার কাছে ভালোলাগা কিছু লেখা বা লাইন-

'The bells will ring
The birds will sing.'
['রিং-এর সাঙ্গে সিং-এর সহজ মিল'।

#অরুন্ধতী হোমের গলায় এক অপূর্ব গান-
ওকে ধরিলে তো ধরা দিবে না-
ওকে দাও ছেড়ে দাও ছেড়ে
একি খেলা মোরা খেলেছি,শুধু নয়নের জল ফেলেছি-

কবি,তারাশঙ্কর বন্ধোপাধ্যায়(রিভিউ-১)

আমার পড়া বইয়ের তালিকায় সেরা এবং সবথেকে ভালো লাগা বই #কবি,এ বইটি অামি কলেজের বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করে পড়েছি।
এ বইটি পড়ার পর আমার ব্রেনে,মনের গহীনে অন্য পৃথিবীর এক দুঃখের জন্ম হয়েছিল।বইটা পড়ার পর কয়েকদিন যে ভয়াবহ বিষাদের অনুভূতি আমার পৃথিবী নীল করে রেখেছিল, আজকেও সেই কথা মনে পড়লে মন খারাপ হয়ে যায়।অার এ সর্বপ্রথম এ বইটি পড়েই তারাশঙ্করের লেখার প্রেমে পড়ে গেলাম।

যাই হোক,শুধুমাত্র আমার এ বইটি পড়ার গল্প জানাতে এই লেখা না,বরং জানাতে এসেছি নিতাই চরণের গল্প বলতে।নিতাই চরণের কবি হওয়ার গল্প বলতে।

তারাশঙ্করের কবি গল্পের বেশ কিছু লাইন যা যে কাউকে গল্পের সাথে আটকে থাকতে বাধ্য করবে যেমনটা অামাকে করেছে। গল্পের শুরুতেই লেখক বলেছেন...

“শুধু দুস্তরমত একটা বিস্ময়কর ঘটনাই নয়, রীতিমত এক সংঘটন। চোর ডাকাতের বংশের ছেলে হঠাৎ কবি হইয়া উঠিলো”।
উপরোক্ত লাইনে পাঠক ভাবানায় ঠেই হারাতে বাধ্য। চরিত্রের ঘাত প্রতি ঘাত এখানে বাধ্যতামূলক।

নিচু বংশে জন্মানো নিতাইচরণ গ্রামের সবাইকে চমকে দিয়ে কবি হয়ে ওঠে। সে কবিয়ালদের দোহার হিসেবে কাজ করছিল। কিন্তু গ্রামের পালাগানের আসরে এক প্রতিষ্ঠিত কবিয়ালের অনুপুস্থিতিতে তার সামনে সুযোগ খুলে যায় নিজের কবিয়াল পরিচয় গ্রামবাসীকে জানিয়ে দেয়ার। অভিজ্ঞ কবিয়াল মহাদেবের কাছে সেই দফায় হেরে গেলেও তার উদ্দেশ্য সফল হয়। বাবুরা রীতিমত অবাক- 'ডোমের ছেলে পোয়েট!' নিতাইচরণের পারিবারিক পেশা ছিল ডাকাতি; কিন্তু সে হল অন্যরকম। এমনকি মায়ের অনুরোধ বা মামার শাসনের পরেও সে পড়াশুনো ছেড়ে ডাকাতির দলে নাম লেখায়নি। ঘরবাড়ি ছেড়ে স্টেশনে গিয়ে থাকে। এখানেই তার সাথে বন্ধুত্ব হয় স্টেশনের মুটে রাজার সাথে। নিতাইয়ের ওপর রাজা'র ভক্তি ও বিশ্বাস ছিল অগাধ। নিতাইকে সে ডাকত 'ওস্তাদ' বলে। এদিকে রাজারই এক আত্মীয়কে ঠাকুরঝি বলে ডাকত সে। বিবাহিত ঠাকুরঝি রোজ এসে দুধ বিক্রি করে যেত। মেয়েটার গায়ের রং কাল ছিল বলে গ্রামের লোকজন তো বটেই, রাজা-ও নানা কথা শোনাত। কিন্তু এই মেয়েটার জন্যই নিতাই এর মাথায় একটা পদ তৈরি হয়- 'কাল যদি মন্দ তবে চুল পাকিলে কান্দ কেনে?' জীবনের সব জায়গায় অপমান পাওয়া ঠাকুরঝি এই পদ শুনে আন্দোলিত হয়। আর নিতাই এর মনে, অসম্ভব জেনেও, ঠাকুরঝির জন্য গভীর প্রেম জন্মায়। একপর্যায়ে বিষয়টা জানাজানি হলে নিতাই গ্রামছেড়ে চলে যায়।

নিতাই যুক্ত হয় ঝুমুরদলের সাথে। এই দল অশ্লীল গান-বাজনা করে এবং নারীরা গানের গানের সাথে নাচ করলেও তারা মূলত দেহোপজীবিনী। সে ক্রমশ তার নিজের ভিতরকার কবিয়ালের সত্ত্বাকে চেপে রেখে এই দলের মত করেই গান রচনা করে। এখানে সে বেশ জনপ্রিয় হয়ে যায়। সেখানে তার সাথে পরিচয় হয় বসন্ত (বা বসন) এর সাথে। বসনের মধ্যে সে ঠাকুরঝির ছায়া দেখতে পায়। দুজনের মাঝে সখ্যতা গড়ে ওঠে।

এই ব্যবসায় থাকলে নানা ধরণের রোগ হয়ে থাকে, এবং তারই এক রোগে রোগাক্রান্ত হয়ে একসময়ে বসন্তও মারা যায়। শোকে কাতর হয়ে ঝুমুরদল ছেড়ে দে নিতাই। সে কাশীসহ অন্যান্য স্থান ঘোরে। কিন্তু তার মন না টেকায় একসময় আবারও সে নিজের আগের গ্রামে ফিরে আসে।

রাজা'র কাছ থেকে জানতে পারে ঠাকুরঝি আর বেঁচে নেই, নিতাই গ্রামছাড়ার পরে সে উন্মাদ হয়ে মারা যায়। গভীর হতাশায় নিতাই প্রশ্ন করে- 'জীবন এত ছোট ক্যানে?'

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,"অলৌকিক আনন্দের ভার বিধাতা যাহারে দেন,তার বক্ষে বেদনা অপার।"
নিতাইয়ের ক্ষেত্রেও তাই ঘটল।

ভাবতে পারেন,কি ঘটেছিল নিতাইয়ের জীবনে?
যদিও অামি কবি গল্পের মূল থিম বলেছি,তবুও যদি পারেন তাহলে সংগ্রহ করে পড়তে পারেন বাংলা সাহিত্যের এই অমূল্য রত্নটি।অার পড়ার সময় বা সংগ্রহ করতে না পারলে দেখতে পারেন নিম্নের লিংক থেকে উনিশ দশকের সাদাকালো পর্দায় তারাশঙ্করের কবি গল্পের সিনেমাটি,
https://youtu.be/BhRJYI-cuLI
পড়া বা দেখা শেষ হলে যা আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক ভূবনে, হয়তো আপনার মনেও বেজে উঠবে,জীবন এত ছোট কেনে?এ ভুবনে?'

এছাড়াও তারাশঙ্করের “কবি” গল্পের ভিতরে অাপনি পাবেন দু-চার লাইনের ছন্দ অাকারে কবিতার লাইন যা অাপনাকে ভাবনার জগৎ এ নিমজ্জিত করবে এমন কিছু লাইন নিম্নে তুলে ধরছি।
*“আমি ভালোবেসে এই বুঝেছি
সুখের সার সে চোখের জল রে”।
*“কালো যদি মন্দ হবে কেশ পাকিলে কাঁদ কেন?? কেন কাঁদ”?
*“চাঁদ দেখে কলঙ্ক হবে বলে কে দেখেনা চাঁদ?
তার চেয়ে যাওয়াই ভালো ঘুচুক আমার দেখার সাধ।
ওগো চাঁদ তোমার নাগি-
ওগো চাঁদ তোমার নাগি-না হয় আমি হব বৈরাগী
পথ চলিব রাত্রি জাগি সাধবে না কেউ আর তো বাদ”।
*‘এই খেদ আমার মনে
ভালোবেসে মিটল না এ সাধ, কুলাল না এ জীবনে!
হায়- জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে?'
এ লাইনগুলোর প্রেক্ষাপট জানতে যে অাপনাকে গল্পটি পড়তেই হবে-
অামার পড়া বইগুলোর রিভিউ নিয়ে পেইজে ধারাবাহিক পোস্ট ছাড়ার চেষ্টা করবো,ইনশাঅাল্লাহ।

অামার পাঠিত অনন্য বইয়ের রিভিউগুলো পড়তে ভিজিট করতে পারেন এখানে