আমার পড়া বইয়ের তালিকায় সেরা এবং সবথেকে ভালো লাগা বই #কবি,এ বইটি অামি কলেজের বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করে পড়েছি।
এ বইটি পড়ার পর আমার ব্রেনে,মনের গহীনে অন্য পৃথিবীর এক দুঃখের জন্ম হয়েছিল।বইটা পড়ার পর কয়েকদিন যে ভয়াবহ বিষাদের অনুভূতি আমার পৃথিবী নীল করে রেখেছিল, আজকেও সেই কথা মনে পড়লে মন খারাপ হয়ে যায়।অার এ সর্বপ্রথম এ বইটি পড়েই তারাশঙ্করের লেখার প্রেমে পড়ে গেলাম।
যাই হোক,শুধুমাত্র আমার এ বইটি পড়ার গল্প জানাতে এই লেখা না,বরং জানাতে এসেছি নিতাই চরণের গল্প বলতে।নিতাই চরণের কবি হওয়ার গল্প বলতে।
তারাশঙ্করের কবি গল্পের বেশ কিছু লাইন যা যে কাউকে গল্পের সাথে আটকে থাকতে বাধ্য করবে যেমনটা অামাকে করেছে। গল্পের শুরুতেই লেখক বলেছেন...
“শুধু দুস্তরমত একটা বিস্ময়কর ঘটনাই নয়, রীতিমত এক সংঘটন। চোর ডাকাতের বংশের ছেলে হঠাৎ কবি হইয়া উঠিলো”।
উপরোক্ত লাইনে পাঠক ভাবানায় ঠেই হারাতে বাধ্য। চরিত্রের ঘাত প্রতি ঘাত এখানে বাধ্যতামূলক।
নিচু বংশে জন্মানো নিতাইচরণ গ্রামের সবাইকে চমকে দিয়ে কবি হয়ে ওঠে। সে কবিয়ালদের দোহার হিসেবে কাজ করছিল। কিন্তু গ্রামের পালাগানের আসরে এক প্রতিষ্ঠিত কবিয়ালের অনুপুস্থিতিতে তার সামনে সুযোগ খুলে যায় নিজের কবিয়াল পরিচয় গ্রামবাসীকে জানিয়ে দেয়ার। অভিজ্ঞ কবিয়াল মহাদেবের কাছে সেই দফায় হেরে গেলেও তার উদ্দেশ্য সফল হয়। বাবুরা রীতিমত অবাক- 'ডোমের ছেলে পোয়েট!' নিতাইচরণের পারিবারিক পেশা ছিল ডাকাতি; কিন্তু সে হল অন্যরকম। এমনকি মায়ের অনুরোধ বা মামার শাসনের পরেও সে পড়াশুনো ছেড়ে ডাকাতির দলে নাম লেখায়নি। ঘরবাড়ি ছেড়ে স্টেশনে গিয়ে থাকে। এখানেই তার সাথে বন্ধুত্ব হয় স্টেশনের মুটে রাজার সাথে। নিতাইয়ের ওপর রাজা'র ভক্তি ও বিশ্বাস ছিল অগাধ। নিতাইকে সে ডাকত 'ওস্তাদ' বলে। এদিকে রাজারই এক আত্মীয়কে ঠাকুরঝি বলে ডাকত সে। বিবাহিত ঠাকুরঝি রোজ এসে দুধ বিক্রি করে যেত। মেয়েটার গায়ের রং কাল ছিল বলে গ্রামের লোকজন তো বটেই, রাজা-ও নানা কথা শোনাত। কিন্তু এই মেয়েটার জন্যই নিতাই এর মাথায় একটা পদ তৈরি হয়- 'কাল যদি মন্দ তবে চুল পাকিলে কান্দ কেনে?' জীবনের সব জায়গায় অপমান পাওয়া ঠাকুরঝি এই পদ শুনে আন্দোলিত হয়। আর নিতাই এর মনে, অসম্ভব জেনেও, ঠাকুরঝির জন্য গভীর প্রেম জন্মায়। একপর্যায়ে বিষয়টা জানাজানি হলে নিতাই গ্রামছেড়ে চলে যায়।
নিতাই যুক্ত হয় ঝুমুরদলের সাথে। এই দল অশ্লীল গান-বাজনা করে এবং নারীরা গানের গানের সাথে নাচ করলেও তারা মূলত দেহোপজীবিনী। সে ক্রমশ তার নিজের ভিতরকার কবিয়ালের সত্ত্বাকে চেপে রেখে এই দলের মত করেই গান রচনা করে। এখানে সে বেশ জনপ্রিয় হয়ে যায়। সেখানে তার সাথে পরিচয় হয় বসন্ত (বা বসন) এর সাথে। বসনের মধ্যে সে ঠাকুরঝির ছায়া দেখতে পায়। দুজনের মাঝে সখ্যতা গড়ে ওঠে।
এই ব্যবসায় থাকলে নানা ধরণের রোগ হয়ে থাকে, এবং তারই এক রোগে রোগাক্রান্ত হয়ে একসময়ে বসন্তও মারা যায়। শোকে কাতর হয়ে ঝুমুরদল ছেড়ে দে নিতাই। সে কাশীসহ অন্যান্য স্থান ঘোরে। কিন্তু তার মন না টেকায় একসময় আবারও সে নিজের আগের গ্রামে ফিরে আসে।
রাজা'র কাছ থেকে জানতে পারে ঠাকুরঝি আর বেঁচে নেই, নিতাই গ্রামছাড়ার পরে সে উন্মাদ হয়ে মারা যায়। গভীর হতাশায় নিতাই প্রশ্ন করে- 'জীবন এত ছোট ক্যানে?'
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,"অলৌকিক আনন্দের ভার বিধাতা যাহারে দেন,তার বক্ষে বেদনা অপার।"
নিতাইয়ের ক্ষেত্রেও তাই ঘটল।
ভাবতে পারেন,কি ঘটেছিল নিতাইয়ের জীবনে?
যদিও অামি কবি গল্পের মূল থিম বলেছি,তবুও যদি পারেন তাহলে সংগ্রহ করে পড়তে পারেন বাংলা সাহিত্যের এই অমূল্য রত্নটি।অার পড়ার সময় বা সংগ্রহ করতে না পারলে দেখতে পারেন নিম্নের লিংক থেকে উনিশ দশকের সাদাকালো পর্দায় তারাশঙ্করের কবি গল্পের সিনেমাটি,
https://youtu.be/BhRJYI-cuLI
পড়া বা দেখা শেষ হলে যা আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক ভূবনে, হয়তো আপনার মনেও বেজে উঠবে,জীবন এত ছোট কেনে?এ ভুবনে?'
এছাড়াও তারাশঙ্করের “কবি” গল্পের ভিতরে অাপনি পাবেন দু-চার লাইনের ছন্দ অাকারে কবিতার লাইন যা অাপনাকে ভাবনার জগৎ এ নিমজ্জিত করবে এমন কিছু লাইন নিম্নে তুলে ধরছি।
*“আমি ভালোবেসে এই বুঝেছি
সুখের সার সে চোখের জল রে”।
*“কালো যদি মন্দ হবে কেশ পাকিলে কাঁদ কেন?? কেন কাঁদ”?
*“চাঁদ দেখে কলঙ্ক হবে বলে কে দেখেনা চাঁদ?
তার চেয়ে যাওয়াই ভালো ঘুচুক আমার দেখার সাধ।
ওগো চাঁদ তোমার নাগি-
ওগো চাঁদ তোমার নাগি-না হয় আমি হব বৈরাগী
পথ চলিব রাত্রি জাগি সাধবে না কেউ আর তো বাদ”।
*‘এই খেদ আমার মনে
ভালোবেসে মিটল না এ সাধ, কুলাল না এ জীবনে!
হায়- জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে?'
এ লাইনগুলোর প্রেক্ষাপট জানতে যে অাপনাকে গল্পটি পড়তেই হবে-
অামার পড়া বইগুলোর রিভিউ নিয়ে পেইজে ধারাবাহিক পোস্ট ছাড়ার চেষ্টা করবো,ইনশাঅাল্লাহ।
অামার পাঠিত অনন্য বইয়ের রিভিউগুলো পড়তে ভিজিট করতে পারেন এখানে
No comments:
Post a Comment