Saturday, 1 September 2018

প্রীয়তমেষু,হুমায়ূন অাহমেদ (রিভিউ-৪)

ফাগুণের ফুল যায় ঝরিয়া ফাগুণের অবসানে,
ক্ষণিকের মুঠি দেয় ভরিয়া অার কিছু নাহি জানে!

অামি আমার খুব প্রিয় একজন লেখকের বই হাতে নিয়ে বসলাম এবং বইটি পড়া শেষ করে মনে হয়েছে এটি আমি এতদিন চোখের সামনে থাকতেও কেন ফেলে রেখেছি,পড়িনি কেন?দুদিন ধরে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে ও টিফিন টাইমে পড়ে ফেললাম হুমায়ূন আহমেদের প্রিয়তমেষু বইটি এবং এ বইটি পড়ে অামার অনুভূতি,চিন্তাগুলো এবং বইটির সারমর্ম অাপনাদের সাথে শেয়ার করতে অাজকের এ লেখা-

প্রিয়তমেষু বইটির প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা খানিকটা কষ্ট করে পড়ে যাবার পর রীতিমত গোগ্রাসে গিলেছি বলা চলে।বিশেষ করে বইয়ের একদম শেষ প্যারাটা পড়ে মনে হয়েছে আসলেই পুরা কাহিনীর মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য বা কারো মনে আজীবন ছাপ রেখে যাওয়ার জন্য খুব অল্প কিছু শব্দের প্রয়োজনীয়তাই যথেষ্ট, তার জন্য আবার আলাদা করে আরেকটা উপন্যাস লিখবার দরকার হয়না।

প্রীয়তমেষু গল্পে নিশাত জহির, পুষ্প রকিবকে নিয়ে লেখা উপন্যাসে ব্যাক্তিগত সুখ এর সাথে সাথে প্রধান বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে বর্তমানে ডালভাতের মতো গা সয়ে যাওয়া ধর্ষণ নামক অত্যাচারের কথা।ধর্ষিতার লড়াই, তার নিজস্ব অনুভূতি, ফাটল ধরা সংসারে মোমের প্রলেপ লাগিয়ে সারিয়ে তোলার চেষ্টা, মানসিক অস্থিরতার মতো জটিল ব্যাপারগুলোকে এত সহজে প্রকাশ করার ক্ষমতা যে হুমায়ূন আহমেদের লেখনীতেই প্রকাশ পাওয়া সম্ভব তাতো জানা কথাই।

তবে যাদের আমার মতো খানিকটা মনে অশান্তি লেগে থাকেই এই ভেবে যে হুমায়ূন আহমেদ তার বেশিরভাগ লেখায় স্পষ্ট সমাপ্তি আঁকেন না তাদের জন্য এই বইটা ম্যাজিকের মতো কাজ করবে সেই ক্ষোভ দূর করতে। বিশেষ করে নিশাত কে নিয়ে লেখা বইটির শেষের প্যারাগ্রাফ পড়ে পাঠকের মনে আবারও ফিরে আসবে সেই একি প্রশ্ন যে স্বাধীনতার যুগেও কেন একটা মেয়েকে মুখ বুজে সব অত্যাচার সহ্য করে যেতে হবে, আর কবেই বা মেয়েরা নিজেদের গলা খুলে নিজেদের সব কথাগুলো কোন লোকলজ্জা-অপমান এর তোয়াক্কা না করে বলতে পারবে।

সংকীর্ণমনারা যদি শুধু মাত্র ধর্ষণকেই যৌননিপীড়ন মনে করে এবং ধর্ষণের পিছনে মেয়েদের পোষাককেই দায়ী করে তবে অামি বলবো এটা তাদের একটা বড় ভুল।অাচ্ছা বোরকা পড়া পর্দাশীল মেয়েরাও কি ধর্ষণের হাত থকে রেহাই পায়।এখনে যুক্তিবাদীরা বলবে পর্দাশীল নারীরা কম হয় এক্ষেত্রে অামিও একমত।কিন্তু বাবা-দাদার বয়সী যে লোকটা আদর করার ছলে কোন অবুঝ পাঁচ-সাত বছরের শিশুর গায়ে হাত বুলিয়ে দেয় সেটা কি নিপীড়ন না?
খবরের কাগজ খুললে প্রায়ই দেখা যায় বড় ভাই তার বোনকে,দুলাভাই তার শালিকে,শিক্ষক তার ছাত্রীকে এমনকি জন্মদাতা পিতাও তার নিজ মেয়েকে ধর্ষণ করে।ভাবুন তো একবার কতটা বর্বর,অবাক করা ঘটনা।যুক্তিবাদীরা এ ক্ষেত্রেও কি পর্দা বা এরূপ কিছু টেনে অানবেন?
যখন এরূপ অপ্রত্যাশিত কারও কাছ থেকে কোন নারী ধর্ষিত হয় তখন এরকম লজ্জা,অপমান ও কষ্টের কথা অধিকাংশ নারীই তাঁর অাশেপাশের কাউকে বলার মুখ থাকে না,কাছের বান্ধবী এমনকি নারির সম্পর্কের মায়ের কাছেও সেসব কথা বলতে গিয়ে মেয়েরা আটকে যায়।ভোগে মানসিক অশান্তিতে যা বছরের পর বছর মনের মধ্যেই লুকিয়ে রাখে।প্রীয়তমেষু গল্পেও শেষ প্যারাতে এরূপ ঘটনা অাপনারা নিশাতের মধ্যে দেখতে পাবেন।
এই যে বাঁধাটা, এই বাঁধাটা দূর করে দাঁড়ানোর স্বপ্ন,হাতে গোনা কয়েকজন পুষ্প দেখতে পারে এবং নিশাত এর মতো অল্প কয়েকজন সেই স্বপ্ন পূরণ করার সময় পুষ্পদের হাত ধরে দাঁড়ায়।কিন্তু নিশাত- পুষ্পদের বিরুদ্ধেও যে কতজন হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে আছে তাঁদেরও তো দেখতে হবে নাকি?পুষ্পরা কি পারে নিজেদের কথা সবার মাঝখানে তুলে ধরতে? পুষ্পদের প্রিয়তমেষুরা কি তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হলে বইটি অাপনাকে পড়তে হবে এবং পড়া শেষ হলে হয়তো অাপনিও অামাদের সমাজ ব্যাবস্হা এবং সেখানে নারীদের অবস্হা নিয়ে ভাবনায় পড়ে যাবেন,মনটা কেমন কেমন.... করা নিয়ে বসে থাকতে হবে ক্ষানিকক্ষন।
হুমায়ূন অাহমেদ এর এ গল্পটি অবলম্বনে একটি নাটকও নির্মিত হয়েছে,এটির লিংক-https://youtu.be/uvr3J_7VihE

No comments:

Post a Comment