Saturday, 1 September 2018

জনম জনম,হুমায়ূন অাহমেদ (রিভিউ-৫)

"অন্ধকারে তুমি সখী চলে গেলে কেন তবু হৃদয়ের গভীর বিশ্বাসে অশ্বত্থের শাখা ঐ দুলিতেছেঃঅালো অাসে ভোর হয়ে অাসে।"

ইদানিং কেমন যেন হুমায়ূন অাহমেদ এর লেখা বইগুলো পড়ার নেশা হয়ে গেছে,পড়ে ফেললাম তাঁর লেখা ‘জনম জনম’ বইটি।এটি তাঁর একটি ব্যতিক্রমধর্মী বই।

নিশিকন্যা চেনেন? এই গল্পের নায়িকা তিথি হচ্ছে নিশিকন্যা।
এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবনকাহিনী নিয়ে এই উপন্যাস এর মূল কাহিনী।তিথি তার দরিদ্র পরিবারকে সাহায্যের জন্যে নিজের সর্বস্ব বিসর্জন দিয়ে নামে পতিতাবৃত্তিতে। তার রোজগারেই সংসার চলে, কিন্তু তবু তাকে জীবনের পদে পদে হীনতার স্বীকার হতে হয়। তার পরিবারের সদস্যরা জানে সে কিভাবে উপার্জন করে, কিন্তু তবু পেটের দায়ে তাকে কেউ এই পথ থেকে সরে আসার জন্য অনুরোধ করে না। কারণ যেই পথেই উপার্জন করুক না কেন, তার আয়েই মূলত ছয় জনের সংসার চলে। অন্ধ বাবার চিকিৎসা, সংসার খরচ, ভাইবোনের খরচ, সব এই একা তিথিকেই সামলাতে হয়।

এই তিথি শুধু একাই নয়, আমাদের সমাজে আজও অনেক অসহায় নারীরা আছে, যারা অভাবের তাড়নায় নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু তাদের এই ভুমিকাকে অামরা মূল্যায়নতো করিই না, বরং সমাজের ঘৃণিত শ্রেণীর নাম উচ্চারণ করতে হলে তাদের নামই বোধহয় আগে আসে।
তিথিদের মতো মেয়েদের পতিতা,বেইশ্যা বলার আগে তাদের এ পথে অাসার গল্পটা শুনুন এবং বোন বলুন,দেখবেন সমাজ_বদলে_যাবে।

জনম জনম গল্পের অারও কিছু চরিত্র সম্পর্কে সংক্ষেপে বলছি,
তিথির মা #মিনুর চরিত্র দারিদ্রের তীব্র কষাঘাতে ভয়াবহ রকমের রুঢ় ও খিটিখিটে হয়ে পড়েছে। পরিবারের ছোট মেয়ে #অরু স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেড়ে শ্বশুরবাড়ি দুই সন্তানকে ফেলে, আরেক সন্তানকে গর্ভে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে এসেছে। জালালুদ্দিন সাহেবের বড় ছেলে #হীরু কোন কাজকর্ম করে না কিন্তু সারাদিন হয় #অ্যানা নামের এক মেয়ের পেছনে পেছনে ঘোরে নয়ত এক পীরের শিষ্যত্ব নিয়ে ভক্তিভরে তার কথা মত কাজ করে। আর ছোট ছেলে #টুকু পরিবারের অন্যতম অবহেলিত সন্তান যাকে নিয়ে কারো ভাবার কোন অবকাশ নেই। মাত্র ১৩ বছর বয়সের টুকুর জ্বর হলেও তাকে তার মা শাস্তিস্বরূপ অভুক্ত রাখে আবার টুকু বাড়ি না ফিরলেও তার পরিবারের কেউ খুব একটা চিন্তা করে না। অথচ তার যে একটা শিল্পী মন আছে সে খবর কেউ রাখে না। . তিথির এক চেনাজানা বড়ভাই আছে নাসিম নামে। তিনিই তিথির খদ্দের ঠিক করে দেন।এই নাসিম ভাইয়ের মাধ্যমেই তিথির সাথে দেখা হয় দবির সাহেবের। . #দবির সাহেবঃ একটি ছোটখাট কারখানার মালিক এক মেয়ে নাম অজান্তা ক্লাস সেভেনে পড়ে আর দবির  সাহেবের স্ত্রী ফরিদা অসুস্থ হয়ে বিছানায় পরে আছেন। এই দবির সাহেব আর তার অসুস্থ স্ত্রী ফরিদাকে নিয়ে উপন্যাসের বাকি ঘটনা। .

#পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে গল্পে সাজানো এই উপন্যাস। হুমায়ুন আহমেদের অন্যান্য উপন্যাসের মত "জনম জনম"-ও খুবই সুখপাঠ্য। উপন্যাসের কাহিনীতে একাধিকবার বাঁকবদল ঘটবে। তাই যেকোন পাঠককেই  উপন্যাসটি শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে সক্ষম হবে বলে আমার মনে হয়।
বইটা আমার পড়ে কেন জানি খুব ভাল্লাগলো। একজন বেশ্যার জীবন তিনি এতো সুন্দর করে গুছিয়ে বর্ণনা করেছেন যে আপনি একবারও তিথি কে খারাপ মেয়ে মনে করতে পারবেন না।অামি তো তিথির কিছুটা প্রেমেও পড়ে গেছি।এই জনম জনম গল্পটি নিয়ে #নিরন্তর নামে একটা সিনেমাও হয়েছে, শাবনূর অভিনয় করেছিল তিথির চরিত্রে, সিনেমাটিও ভাল লেগেছে।বইটি পড়ে সিনেমাটি দেখুন দেখবেন বইটি পড়ে অাপনার কল্পনায় অাঁকা চরিত্রগুলো ছবিটি দেখার সময় মনটা কেমন ব্যাকুল হয়ে দৃশ্য ও চরিত্রগুলো খুঁজে খুঁজে দেখতে ইচ্ছে হয়।
নিরন্তর ছবির লিংক-https://youtu.be/89i44WRBVwI

No comments:

Post a Comment