"হাসি মানুষের অাত্নারই প্রতিধ্বনি।যারা ভালো কথা বলতে পারে,তারা ভাল হাসতে ও পারে।"
আমরা বেশির ভাগ সময় মেকি হাসি মুখে লেপটে রাখি। কিন্তু অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে যে হাসি বা যে খুশি আসবে সেটা মহা মূল্যবান। আপনি পার্থিব সম্পদ দিয়ে সে হাসি কিনতে পারবেন না। যেমন পারেননি অামার অাজকের রিভিউ ক্রীতদাসের হাসি উপন্যাসের খলিফা হারুনুর রশীদ ক্রীতদাস তাতারীর থেকে।
এ বইটি কলেজের বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য হওয়ার পর অামার প্রথম পাঠিত বই।এ বইটি শেষ করার পর যে ভালোলাগা কাজ করে তারই তাড়নায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অন্যান্য বই পাঠ করার উৎসাহ পেয়েছিলাম।যাই হোক অার কথা না বাড়িয়ে এ বইটি নিয়ে সংক্ষিপ্ত রিভিউতে চলে যাই..
ক্রীতদাসের হাসি বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান রচিত একটি উপন্যাস। ১৯৬২ সালে তিনি এ উপন্যাসটি রচনা করেন। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন পাকিস্তানকে বর্বর স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে আবদ্ধ করলো। এ সময় সব ধরনের-বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল। তৎকালীন পাকিস্থানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের শাসন ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করে এ উপন্যাস রচিত হয়। এ উপন্যাসের মূল চরিত্র তাতারী। গণতান্ত্রিক চেতনাকে ভয় পায় স্বৈরাচারী শাসক। এই চেতনাকে দমন করার জন্যই আবার নেমে আসে সামরিক শাসন তবুও লেখকের প্রতিবাদ স্তব্ধ থাকেনি। রূপকের মধ্য দিয়ে তীব্র হয়ে উঠেছে এই প্রতিবাদ। প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে শওকত ওসমানের ‘ক্রীতদাসের হাসি’র তাতারী। খলিফা হারুনর রশীদ কোনো কিছুর বিনিময়েই তাতারীর হাসি শুনতে পান না। খলিফার নির্দেশে হাসার চেয়ে মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করেছে তাতারী।
অাপনাদের অারও ভালোভাবে ও স্পষ্টকরে বোঝার সুবিধার্থে এ উপন্যাসের কিছু ঘটনা সংক্ষেপে তুলে ধরছি।
ঘটনাটি মুসলিম খলিফা হারুন অর রশিদের অন্দর মহলের। খলিফার হাবসী ক্রীতদাস #তাতারী ও আরমেনীয় দাসী #মেহেরজান পরষ্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রেমে পড়ে। তাদের ভালবাসাকে স্বীকৃতি দেন রাজমহিষী। খলিফার অজান্তেই রাজমহিষী দুজনের বিয়ে দিয়ে দেন। তারা খলিফার স্ত্রীর অনুমতিক্রমে প্রতিরাতেই দাসদের বসবাসের নির্ধারিত স্থানে মিলিত হত। এ দুই প্রেমিক-প্রেমিকা মিলিত হয়ে প্রাণখোলা হাসি হাসত।এদিকে খলিফার মনে শান্তি নাই,তার ধন সম্পদ রাজ-ক্ষমতা সবই রয়েছে। কিন্তু তিনি মনের মধ্যে সব সময় একটি অস্থিরতাবোধ করেন। তিনি যেন হাসতেই ভুলে গেছেন। একদিন রাতের বেলায় বাগানে তার জল্লাদ-কাম সহচর মাশরুরসহ বেড়াতে গেলে সেখান থেকে ক্রীতদাসের হাসি শুনতে পান।খলিফা মাশরুরকে আদেশ দেন যে কে এমন প্রান খোলা হাসি হাসে তাকে খুজে বের করতে।মাশরুর সেই হাসির উৎস খুজে বার করে এবং খলিফাকে জানায়।পরের দিন তিনি গোপনে তাতারি ও মেহেরজান এর প্রেমলীলা প্রতক্ষ করেন। কিন্তু খলিফার অদ্ভূত খেয়াল হয় তিনি ক্রীতদাসকে মুক্ত করে দিয়ে তাকে প্রয়োজনীয় শানসাওকাত দিয়ে তার প্রাণখোলা হাসি শুনবেন।
ক্রীতদাস তাতারির প্রাণোচ্ছল হাসি শুনে বিমোহিত খলিফা হারুনুর রশীদ ভেবেছিল তিনি তাতারির হাসি কিনে নিতে পারবেন। যখন ইচ্ছে সেই হাঁসি শুনতে পাবেন যেন তাতারি চাবি দেওয়া পুতুল। যখন চাবিতে মোচড় দেবেন তখনি সে হাসতে শুরু করবে। সেই চেষ্টায় খলিফা তাতারি কে দাস থেকে মুক্ত করে অঢেল সম্পত্তি প্রদান করলেও কেড়ে নেন তাতারির হাসির মূল উৎস মেহেরজান কে। মেহেরজান থেকে আলাদা হয়ে তাতারি কি হাসতে পারে! না পারেনি তাতারি। ক্রুদ্ধ খলিফার নির্দেশে চাবুকের আঘাত তাতারির কালো চামড়া ফালি ফালি হয়েছে, রক্তাক্ত হয়েছে। কিন্তু হাসি ফিরে আসেনি। না আর দশটা মানুষের মতো তাতারি পারেনি মেকি হাসি মুখে লেপটে রাখতে। পারেনি অঢেল সম্পত্তি পেয়ে নিজের অস্তিত্ব ভুলে যেতে। "ক্রীতদাসের হাসি" দারুণ একটা উপন্যাস। সাইজে বেশ ছোট হলেও গভীরতায় সমুদ্রসম।অাশা করি বইটি পড়ে অাপনাদের সকলের ভালো লাগবে। তবে শেষাংশে তাতারীর কণ্ঠে "দিরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস কেনা যায়। বান্দি কেনা সম্ভব । কিন্তু-কিন্তু এ ক্রীতদাসের হাসি না-না-না। .... হাসি মানুষের আত্মারই প্রতিধ্বনি।" কথাগুলো পড়ে অামার মনে প্রতীবাদের তীব্র ধ্বনি বেজে উঠে।
এ বইটির ভিতরে অামায় অাকর্ষিত ও ভালোলাগা কিছু লাইন নিম্নে তুলে ধরছি,
*হাসি মানুষের অাত্নারই প্রতিধ্বনি।
*"যারা ভালো কথা বলতে পারে,তারা ভাল হাসতে ও পারে।"
ব্যাখ্যা:ভাল কথা হচ্ছে রুহের প্রতিধ্বনি-সেখানেই জমে থাকে,তারপর ঝর্ণার মত বেরোয়।অনাবিল হাসি হচ্ছে ভাল কথারই শারীরিক রুপ।হাসি অার কথার মূল উৎস এক জায়গায়।তাই যারা ভালো কথা বলতে পারে,তারা ভাল হাসতে ও পারে।
* ইরানী মেয়ের সীনা ভাল,
মিশরী মেয়ের উরু।
অারবী মেয়ের নাভীর নিচে
স্বর্গ ঠারে ভুরু।
-অাচ্ছা পাঠক বাঙালি মেয়ের কোন অঙ্গটি বেশি সুদর্শন ও ভালো সেটা জানা থাকলে কমেন্টে জানিয়েন...
*অনেক মানুষ অাছে যারা সুখ পায় না কিন্তু সুখের মর্ম বোঝে।মনুষ্যত্বহীন,কিন্ত মনুষ্যত্বের অাস্বাদ পায়।( ওরা হাসে)
ক্রীতদাসের হাসি গল্পটি অবলম্বনে বাংলায় রিয়াজ,হিমির একটা মুভিও রয়েছে,চাইলে দেখতে পারেন।মুভিটির লিংক-
https://youtu.be/_dP-b6UVbQA
লেখক শওকত ওসমান এর উপন্যস সমূহ থেকে প্রায় পরীক্ষাতেই কোনো না কোনো প্রশ্ন থাকেই। তাই লেখক শওকত ওসমান এর অধ্যায় হতে প্রস্তুতি নিতে জয়কলির বাংলা সাহিত্য বইয়ের ২৭৫ পৃষ্ঠা পড়ে দেখতে পারেন।
ReplyDelete