Saturday, 1 September 2018

বাংলাদেশের সম্পদ বরগুনার বিবিচিনি শাহী মসজিদ।

ইদের ছুটিতে ঘুরে এলাম,অামাদের বাসা থেকে ১৮-২০ কিলোমিটার দূরে বরগুনা জেলা,বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি শাহী মসজিদ এ,এটি দিগন্তজোড়া সবুজের বর্ণিল আতিথেয়তায় উদ্ভাসিত ভিন্ন এক ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যে উঁচু টিলার ওপর দাঁড়িয়ে আছে মোগল স্থাপত্যকর্ম এই ঐতিহাসিক মসজিদ। এ এক হূদয়ছোঁয়া পরিবেশ, যা ভুলবার নয়, নয় প্রকাশের।তাই তো তৃতীয়বারের মতো গেলাম।নিঃসন্দেহে দেশের অসংখ্য দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে বিবিচিনি মসজিদ অন্যতম।

বিকাল দুপুর ৩:০০ দিকে অামি ও অামার বন্ধু সাইফুল দুজনে বিবিচিনির উদ্দেশ্যে রয়না হই,পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকাল হয়ে যায়।শেষ বিকালের সোনালি আলো জড়িয়ে নতুন কংক্রিটের পথ পেরিয়ে মসজিদের ঠিক পাদদেশে দাঁড়ালাম। কালো কাঠ কয়লার আবরণে ঢাকা মেঘ আকাশে উঁকিঝুঁকি মারছে। এরই মধ্যে সূর্যের সোনালি আলো মেঘের ফাঁকফোকর দিয়ে মাঝে মধ্যে বেরিয়ে এসে আলোর ‘প্রকৃতি’ ছড়াচ্ছে। আমি সফরসঙ্গী সাইফুল দুজনে মিলে স্থানটি ঘুরে দেখলাম।এর অাগেও অামি এখানে অারও দুবার এলেও সাইফুলকে এই প্রথমবার নিয়ে এলাম।দুজনে অাসরের নামাজ অাদায় করে,বিবিচিনি মসজিদের বয়জেষ্ঠ  ইমাম ও খাদেম এর কাছ থেকে এ মসজিদের ইতিহাস সহ অনন্য বিষয়ে যা জানতে পারলাম তা হলো,
 এ মসজিদটি হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ (রঃ) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এসে বিবিচিনিতে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন ১৬৫৯ সালে।এবং তাঁর কন্যাদ্বয়ের নামানুসারে গ্রামের এবং মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে।মসজিদের এর পাশে রয়েছে ব্যতিক্রম ধর্মী তিনটি কবর। স্থানীয় ভাবে জানা যায় মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা এবং তার কন্যা চিনিবিবি এবং ইসাবিবির কবর।

ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এ মসজিদকে গোটা দক্ষিণ বাংলার ইসলাম প্রচারের কেন্দ্র হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই উজ্জ্বল নিদর্শনটি টিকে থাকলেও কালের বিবর্তনে আজ এর ঐতিহ্য অনেকটাই হারিয়ে গেছে। তবু এর ধ্বংসাবশেষ পুরনো ঐতিহ্য ও শৌর্য বীর্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
-মসজিদটিকে ঘিরে রয়েছে অনেক অলৌকিক ঘটনা ও নানা ইতিহাসঃ

জানা যায়, তখনকার সময় বিষখালী নদীর পানি ছিল লবণাক্ত। সুপেয় পানির অভাবে জনগণ বহু কষ্ট পেত। নেয়ামত শাহ মানুষের এই কষ্টের কথা অনুভব করে তার সাধকতার আশ্চর্য তসবিহটি বিষখালী নদীতে ধুয়ে দিলে পানি হয়ে যায় সুপেয়। আজো সেই পানি একই অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া সে যুগে সুন্দরবন-সংলগ্ন বিষখালী নদীতে অসংখ্য কুমির ছিল। তার অলৌকিক প্রচেষ্টায় বিবিচিনি-সংলগ্ন বিষখালী নদী এলাকায় কোনো কুমির আসত না। এ কাহিনী এখনো এ এলাকায় প্রচলিত।এছাড়াও কেউ কেউ মনে করেন এ মসজিদ জ্বিন পরীদের দ্বারা হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ রঃ নির্মাণ করেছেন,এ প্রসঙ্গে অামি মসজিদের খাদেমকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন-
এ মসজিদ পাঁচশ সাড়ে পাঁচশ বছর অাগে যখন নির্মিত হয় তখন এখনকার মতো রাস্তাঘাট তো ছিলই না এমনকি নদীপথেও কোন জাহাজ চলাচলও ছিলো না।ইটের ভাঁটা তো দূরের কথা।এ দিকে এ মসজিদের দেয়াল ৬ ফুট পুরো যার জন্যে অসংখ্য ইট ব্যাবহৃত হয়েছে,যা দিয়ে তিন-চারটি মসজিদ নির্মাণ করা যায়।এখন প্রশ্ন হলো এত ইট কোথা থেকে অাসল,অাবার ধরলাম হয়তো ঢাকা চট্টগ্রাম থেকে অাসলো,কিন্তু তখন তো কোন স্হল ও নদীবন্দরে কোন যানচলাচল ছিলো না।এ থেকে ধারণা করা হয় এ ইটগুলো হয়তো হযরত নেয়ামত উল্লাহ রঃ জ্বিন দ্বারা অানিয়েছেন।এটি হয়তো অাল্লাহর ওলী হিসেবে তাঁর কারামত।

মসজিদটি নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক বিস্ময়কর স্থান হিসেবে গুরুত্ব বহন করে আসছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বাংলার অন্যতম মোগল স্থাপত্যশিল্প এবং এলাকার পুরনো দিনের অতীত স্মৃতি ও ঐতিহ্য। সম্রাট শাহজাহানের সময় পারস্য থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে শাহ নেয়ামতউল্লাহ দিল্লিতে আসেন। এ সময় দিল্লির সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র বঙ্গদেশের সুবাদার শাহ সুজা তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং কতিপয় শিষ্যসহ বজরায় চড়ে তিনি ইসলাম প্রচার ও ইবাদতের জন্য ভাটির মুলুকে প্রবেশ করেন। শাহ নেয়ামতউল্লাহ বজরায় চড়ে দিল্লি থেকে রওনা হয়ে গঙ্গা নদী অতিক্রম করে বিষখালী নদীতে এসে পৌঁছলে বিবিচিনিতে শাহজাদা বাংলার সুবেদার মোহাম্মদ শাহ সুজার অনুরোধে একই গ্রামে এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। বিবিচিনি গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম নেয়ামতি। গ্রামটির নেয়ামত শাহের নামেই রাখা হয়েছে বলে জানা যায়।

দর্শনীয় ও শোভা বর্ধনকারী এ মসজিদ ঘিরে রয়েছে নানা ধরনের ঘটনা,যা মানুষের মনে কৌতূহল সৃষ্টি করে। শোনা যায়, পূর্বেকার সময় স্বপ্নে প্রাপ্ত দূরবর্তী অনেক লোকজন এ মসজিদ থেকে গুপ্তধন নিয়ে যেত। শুধু তাই নয়, যে যে ধরনের প্রত্যাশা নিয়ে এখানে আসে, তার অধিকাংশের আশাই নাকি পূর্ণ হয় বলে অসংখ্য মানুষের কাছে শোনা যায়।এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম যে মাজারের কোন অলৌকিক ঘটনা অাছে কি না,
-তিনি বলেন,অামরা ইতিহাস থেকে জানতে পেরেছি প্রথমদিকে মসজিদ সংস্কার করতে গিয়ে চারদিক খোঁজাখুঁজি করে একটা নলা পাওয়া গেছে যারা পুরত্ব সাড়ে তিন হাত তাহলে মানুষটি ১৫-২০ হাত হবে।সে অনুমানে মাটিতে খুড়াটি কবর দেওয়া হয়।এছাড়া অন্য কোন ইতিহাস তারা পায় নি।তবে এ মাজারকে ওসীলা করে মানত করে না কি কিছু মানুষের অাশা পূরণ হয়েছে বলে শুনেছেন তারা।

এছাড়াও মসজিদের কাছেই রয়েছে ছোট-বড় তিনটি পুরনো দীঘি। মোগল আমলের এ দীঘি থেকে মানুষ যা চাইত, তা পাওয়া যেত বলে শোনা যায়। মসজিদের নিকটবর্তী বড় দীঘিটি ইছাবিবির দীঘি নামে পরিচিত। তবে বর্তমানে এসব দীঘি বিপন্নপ্রায়।এর সত্যতা সঠিক জানতে পারি নি।

স্থাপত্যশৈলীঃ
সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৩৩ ফুট, প্রস্থ ৩৩ ফুট। দেয়ালগুলো ছয় ফুট চওড়া। দক্ষিণ ও উত্তর দিকে তিন-তিনটি দরজা রয়েছে। মসজিদের ইটগুলো বর্তমানের মতো নয়। ইটগুলো মোগল আমলের তৈরি ইটের মাপের ন্যায়। যার দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১০ ইঞ্চি এবং চওড়া ২ ইঞ্চি। সমতল ভূমি হতে মসজিদ নির্মিত স্থানটি আনুমানিক কমপক্ষে ৩০ ফুট সুউচ্চ টিলার ওপর অবস্থিত। তার ওপরে প্রায় ২৫ ফুট মসজিদ গৃহ।

বিবিচিনির ইতিহাসসমৃদ্ধ মসজিদটির ধ্বংসাবশেষ দীর্ঘদিন সংস্কারবিহীন থাকার পর প্রায় ১২ বছর পূর্বে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। যদিও সংস্কারের এই উদ্যোগ যথেষ্ট ছিল না। শুধু তাই নয়, নির্দশনটি দেখতে আসার জন্য উপযোগী রাস্তার অভাবে দর্শনার্থীদের ভোগান্তি হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি, অজু ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের ব্যবহারের ব্যবস্থা নেই।
এসব ব্যাপারে উক্ত মসজিদের খাদেমকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন-
সাম্প্রতিক পটুয়াখালী জেলার কৃতীসন্তান সচিব মালেক এ মসজিদের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষণ করবেন বলে অাশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান...

তারপরও অামি মনে করি,বিবিচিনি শাহী মসজিদের উন্নয়নে সরকারের আরো নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং অন্য সবার সচেষ্ট ও উদ্যোগী হওয়া দরকার।

সবশেষে বলবো বিবিচিনি মসজিদের সুন্দর মনোরম পরিবেশ সত্যি আকুল করে দেয়।টিলার উপরে উঠলে মনে হয় নদী বেষ্টিত এই জনপদের ছোটখাটো একটি পাহাড়ে উঠেছি, এমন পরিবেশ থেকে মন চায় না চলে যাই কিন্তু সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে তাই বাড়ি ফেরার তাড়া। এগিয়ে যাচ্ছি সাধনার তীর্থস্থান পেছনে ফেলে গুডবাই জানিয়ে, তবে মনেমনে ভাবে গেলাম আবার চতুর্থ বারের মতো এখানে অাবার আসব তখন তোমায় দেখব নতুন রূপে অন্য কোনোভাবে।

যেভাবে যাওয়া যায়ঃ

ঢাকা থেকে যেতে হলে আপনাকে বরগুনার বাসে করে আগে বরগুনা সদরে যেতে হবে। ঢাকা থেকে বরগুনায় চলাচলকারি বাসগুলোর মধ্যে আছেঃ

১। আবদুল্লাহ পরিবহন, ফোনঃ ০১৭০০৬২৫৮০৯, ০১৯১২৪২৮৭৯০, ০১৯২৮১৩৭১৪২, ০১৭১৪৬৬২৭৩২ (সায়েদাবাদ কাউনটার), ০১৯১৫৮৪৪৫২৬, ০১৯১৪৪২৪৬৮৭ (বরগুনা সদর কাউনটার)
২। শাকুরা পরিবহন, ফোনঃ ০১১৯০৬৫৮৭৭২ (গাবতলি কাউনটার), ০১৭২৫০৬০০৩৩ (সায়েদাবাদ কাউনটার)

এই বাসগুলোর ভাড়া ৩৫০/- টাকা থেকে ৬০০/- টাকার মধ্যে।

অথবা আপনি সরাসরি বেতাগীর / বরগুনার লঞ্চে করে বেতাগী / বরগুনা যেতে পারেন। প্রতিদিন বিকেল ৫-৬টার মধ্যে এসব লঞ্চ ছেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে আপনাকে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে চড়তে হবে।

বরগুনা পৌছানোর পরে বাসযোগে বেতাগি যাওয়ার পর মোটরসাইকেল অথবা রিক্সাযোগে গন্তব্যস্থলে পৌছে যেতে পারবেন। এমনকি বরিশাল হতে বাস যোগে সরাসরি এই দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন।
যেহেতু এ মসজিদটি অামাদের এলাকার সেহেতু যেকোন সমস্যা বা যেকোন প্রয়োজনে ফোন করতে পারেন-#01766482670 এই নাম্বারে।

#যেখানে থাকতে পারেনঃ

থাকার জন্যে আপনাকে বরগুনা সদরে ফিরতে হবে। বরগুনায় থাকার জন্য বেশকিছু আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউজ রয়েছে। আপনার সুবিধার্থে কিছু হোটেল ও রেস্ট হাউজের তথ্য সংগ্রহ করে নিম্নে দেওয়া হলঃ

১। জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৪১০)
২। খামারবাড়ি রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৪৪৯)
৩। পানি উন্নয়ন বোর্ড রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৫৫১)
৪। এভাগ্র সার্ভিস সেন্টার (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৭০৮)
৫। গণপূর্ত অধিদফতর (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৫০৫)
৬। ইলাজি ডি রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬০৫৪)
৭। সিয়ারাপি রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬০৫১)
৮। হোটেল আলম, ফোনঃ ০৪৪৮-৬২২৩৪
৯। বরগুনা রেস্ট হাউজ, ফোনঃ ০১৭১৮৫৮৮৮৫৬
১০। হোটেল তাজবিন, ফোনঃ ০৪৪৮-৬২৫০৩

এই মসজদটিকে কেন্দ্র করে অামরা একটি ভিডিও বা ব্লগও তৈরি করেছি,এডিটের কাজ চলছে খুব শিগ্রই ভিডিওটি অাপলোড দিবো,ইনশাআল্লাহ।

1 comment:

  1. Casinos - Drmcd
    No Deposit Bonus 경기도 출장안마 Codes · 1. Wild 용인 출장샵 Casino, 군산 출장안마 $2,000,000 · 2. 구리 출장샵 Bovada, $1,500,000 · 3. Mango Habanero, $1,000,000 · 4. Spin Palace, $1,000,000 당진 출장안마 · 5. Bovada Casino, $25,000

    ReplyDelete