Thursday, 31 May 2018

স্বপ্নের অপ্সরী(পর্ব-২)

ভার্সিটির প্রথম ক্লাসের পর থেকেই অাদনান অাজকের দেখা কিছু একটা মনে করতে চাইছে,ব্রেইন এর নিউরনে অতি পরিচিত কিছু একটা বার বার সিগন্যাল দিচ্ছে,কিন্তু অাদনান বিষয়টি কিছুতেই মনে করতে পাড়ছিলো না।তবে হ্যাঁ,ভাবনার বেড়াজালে নিমজ্জিত থাকতে অাদনানের বেশ ভালই লাগে,অার অাদনানের ভাবনার বড় অংশ জুড়েই রয়েছে ওর দেখা স্বপ্ন।যখন কিছুই মনে করতে পারছিলো তখন ঘুমাতে যাওয়ার অাগ মুহূর্তে গত রাতে দেখা স্বপ্নটি নিয়ে কাব্যিক ভাষায় ডায়রিতে লিখা শুরু করলো এরূপ-
"আমি তখন চোখে ঝাপসা দেখছিলাম,
সব কিছু ঠিকই ছিলো,কিন্তু শুধু তোমায় দেখেও দেখিনি,
স্বপ্নে আমি তোমায় দেখছি একটু অন্য রকম ভাবে।
নিস্তব্ধ নিঝুম কোলাহলমুক্ত দিগন্ত বিস্তৃত উন্মুক্ত উপত্তকায়....
সবুজের মাঝে একখন্ড তুমি।
একা তুমি ছিলে বসে।
লম্বা ঝর্ণাধারার মতো কেশ,
অপলকে চেয়ে ছিলে হয়তো মায়ার পাত্র নিয়ে!
আমি আজ মাতাল হয়েছি তোমার ছড়ানো কেশে!!
যাকে পিছু থেকে দেখতেই এতটা রূপসী ও মনোমুগ্ধকর হয়-
না জানি সে সামনে থেকে কতই না অপরূপ সুন্দরী...
অামি তোমায় স্বপ্নের মাঝেই দেখে নিবো,
এরপর পৃথিবীতে যে প্রান্তে,
যত দূরেই থাকো-
নিজেকে যদি আড়ালেও রাখো।
তোমায় অামি ঠিকই খুঁজে বের করবো,
মনে রেখো তুমি ছিলে আমার,
স্বপ্নের অস্পরী!!
এসব যা মাথায় অাসছিলো তা লিখতে লিখতে ঘুমিয়ে পড়লো,
অাজ কাটলো স্বপ্নহীন একটা রাত,কিছুই দেখলো না,তাই সকালে ঘুম থেকেও তাড়াতাড়ি উঠলো,স্বপ্ন দেখলেই অাদনানের ঘুম থেকে জাগতে বেলা বেজে যায়।
যাই হোক সকালে উঠে,নাস্তা করে রয়না হলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে কিন্তু অাজ অাদনান ভার্সিটিতে যেতে রাস্তায় জ্যামে অাটকা পড়ে,ভার্সিটির কাছাকাছি অাসায় সে গাড়ি ছেড়ে নেমে দৌড়ে গেল, হঠাৎ একটি মেয়ের সাথে তার ধাক্কা লাগলো।।
(কি ভাবছেন বাংলা ছবির মতো সুন্দরী মেয়ে বা নাইকার সাথে ধাক্কা খেয়েছে,অার প্রেমে পড়বে....)
-দেখে চলতে পারেন না??(তৃতীয়...)
(দেখতে বেশ রূপসী,স্লিম,ফর্সা,লম্বা চুল,চেহারার মধ্যে মায়াবী একটা ভাব,সব মিলিয়ে যেকোন ছেলের প্রথম দেখায়ই ভালো লাগার মতো মেয়ে।সহজে চোখ ফেরানো যায় না।কিন্তু যার সাথে ধাক্কা লেগেছে এ মেয়েটি সে নয়,তাঁর বান্ধবী পাশ থেকে এসে কথাটি বলেছে।)
-অাদনান ধাক্কা লাগা মেয়েটিকে বলে,"সরি সরি,,আসলে অনেক তাড়া ছিলো"।।
(এখন অাসি যার সাথে ধাক্কা লাগে সে মেয়েটি দেখতে কালো,জলহস্তির মতো মোটা)সে মিঠু মিঠু হেসে বলে...
-ইটস ওকে।ধক্কা লাগতেই পারে এতে সরি বলার কি অাছে।
*ওর সেই রূপসী বান্ধবী মটুর কথা শেষ হতে না হতেই টেনে নিয়ে গেল এবং বললো তাড়াতাড়ি চল ক্লাসের সময় হয়ে গেছে তো..
অামি পুরো ঘটনা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখি,সুন্দরী মেয়েটিকে কিছু একটা বলতে চেয়েও পারে নি,কিছু সময় দেখতে চেয়েও পারে নি,কারণ অাদনান এরও ক্লাসের সময় হয়ে গেছে...
অাজ কালকের সেই সুন্দরী ম্যাম ক্লাস নিচ্ছেন না,এক বয়স্ক স্যার ক্লাস নেওয়ায় ১৭ মিনিট দেরী হওয়া সত্ত্বেও দেরী হওয়ার কারণ বা এরূপ কোন প্রশ্ন না করেই ঢুকতে দায়...
অাদনান ক্লাসে প্রবেশ করার পরই দেখে এক বিস্ময়কর ঘটণা এবং অবাক হয়ে যায়,মটু অার রূপসী মেয়টি ওদেরই ক্লাসেরই...
অাজ অাদনানের দৃষ্টি বার বার কোন একটি নির্দিষ্ট  যায়গায় অাছড়ে পড়ে অার মনে পড়তে থাকে গত কালকের স্বপ্নগুলো,তা নিয়ে ভাবতে শুরু করে,অাস্তে অাস্তে ভাবনার জগৎ এ নিমজ্জিত হয়।বেঞ্চের উপর মাথা দিয়ে অাবারও হারিয়ে গেলো স্বপ্নের ভোরে অাবারও দেখলো কালকের সেই স্বপ্নে দেখা মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যময় মেয়েটিকে,সে পিছনের দিকে ফিরে অামার দিকে তাঁকায় তখন অামার প্রথমেই দৃষ্টি যায় তাহার ঘাড়ের তিলাটির দিকে যা সূর্যের অালোয় দেখা যাচ্ছিলো তারপর গালের তিলাটি যেটি সূর্যের অালোয় নয় চাঁদের অালোয় অাবছা দেখা যাচ্ছিলো তা প্রত্যক্ষ করলো......এরপর বহুল প্রতিক্ষিত,স্বপ্নের সেই রাজকণ্যাকে দেখবো ঠিক এমন সময়ে শুনি হাসির শব্দ চেয়ে দেখি স্যার বলছে এটি কি ঘুমাণোর যায়গা...
-অাদনান মাথা তুলে দাড়িয়ে বলে সরি স্যার....
চলবে--

সপ্নের অপ্সরী(পর্ব-১)

....নিস্তব্ধ নিঝুম কোলাহলমুক্ত দিগন্ত বিস্তৃত উন্মুক্ত উপত্তকায় বইছিলো বসন্তের হাওয়া,প্রকৃতির অপরূপ মনোরম নির্মল পরিবেশ একা একা উপভোগ করছিলো অাদনান,বেশ ভালই লাগছিলো ওর কিন্তু একজন সঙ্গীর বড়ই অভাব ও প্রয়োজনীয়তা বোধ করছিলো,খানিকখন পরই হঠাৎ দৃষ্টিগোচর হলো এক অচেনা মুগ্ধকর সৌন্দর্যময় মানবীর,পাতলা গড়ন,ফর্সা শরীর..সে পরিধাণ করেছিলো নীল শাড়ি,হাতে কাচের চুড়ি,লম্বা কেশগুলো ঝর্ণাধারা মত সেগুলো পৃথিবীর সুন্দরতম পতাকার মত বাতাসে উড়ছিলো,লালনা যেন অাদনান এর জন্যেই অপেক্ষায় রয়েছে,অাদনান গুটিগুটি পায়ে পিছন থেকে অঙ্গনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে,অার সম্মুখ ও কাছ থেকে মেয়েটির চেহারা দেখতে ও কথা বলতে ছেলেটি ব্যাকুল হয়ে উঠছে,মনের মধ্যে এক অজানা শিহরণ জাগানো রোমাঞ্চকর অনুভূতি কাজ করছিলো এবং অদ্ভুত এক ভালো লাগা শুরু করছিলো অাদনানের,যদিও অাদনান মেয়েটিকে পিছন থেকে তাহার সৌন্দর্যময় রূপ দেখেই মুগ্ধ হয়েছে,অবশেষে সম্মুখভাগ থেকে মেয়েটিকে দেখবার ও কথা বলবার রোমঞ্চকর অনুভূতির অবসান ঘটতে যাচ্ছে ঠিক এমন সময় নিস্তব্ধ নির্জন এলাকায় যেখানে অাদনান ও মেয়টি ছাড়া চারপাশে অন্য কেউ নেই সেখানে কোথা থেকে কে যেন চেঁচামেচি করছে,অাদনান মেয়েটিকে ওর দিকে ঢাক দিল এবং রূপসী প্রণয়িনী পিছনে ফিরে তাকাবে অাদনানও দেখবে দেখবে ঠিক এমন সময় এক ধাক্কা,সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি ভেনিস হয়ে গেল,চারপাশের পরিবেশ অাস্তে অাস্তে ঝাপসা হতে লাগলো এবং চোখ দুটো খুলে গেল,অাদনান তাকিয়ে দেখে মা এসে বলছে,এই অাদনান এখনও ঘুমাচ্ছিস,অাদনান উঠে বুঝতে পারলো ওটা তার স্বপ্ন ছিল।সে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে একটু হাসল,কয়েক মিনিট চোখ বুঝে স্বপ্নের মেয়েটিকে পুনরায় রিভিউ করার বিশেষ করে চেহারাটি দেখবার ব্যার্থ চেষ্টা করলো কিন্তু সে অার এলো না।তারপর সে তার মা কে বলল-
-উঠছি আম্মু।(অাদনান)
-তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আয়।।টেবিলে নাস্তা রাখা আছে।(মা)
-ওকে আম্মু।(অাদনান)
এই বলে অাদনান ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে চলে গেল।বিষন্ন মনে উঠে গেলো হাত মুখ ধুয়ে ওয়াশরুম এ গিয়ে স্বপ্নের রাজকুমারীকে নিয়ে কিছুখন ভাবলো,নীল শাড়ি,কাঁচের চুড়ি,পাঁতলা গড়ন,ফর্সা ত্বক এবং লম্বা চুল অার সেই রোমান্টিক পরিবেশ,এ শব্দগুলো ভাবনার জগৎ এ কিছুখন খেলা করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়।
-সে তার মায়ের পাসের চেয়ারে বসে নাস্তা করলো।
-বাবা,আজ ভার্সিটিতে যাবি না সময় হয়ে গেছে তো...
-যাবো আম্মু।
-কখন??
-এখনই নাস্তা করেই বের হবো।
নাস্তা করেই সে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে গেল।অনেক দেরি হয়ে গেছে তাই সে সিএনজি ভাড়া করে গেল,তারপরও ১৫ নিনিট দেরী হয়েছে ক্লাসে এসে দেখে,
লম্বা চওড়া ধবধবে ফর্সা কম বয়সী সুন্দরী এক ম্যাম ক্লাস নিচ্ছে,ম্যম টাইম সেন্স নিয়ে কথা বলছিলো,এদিকে অাদনান ক্লাস শুরুর ১৫ মিনিট পর পৌঁছালো.. ম্যাম অাদনানের দেরী করে অাসার কারণটি জানতে চাইলো,
-ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেছে,তাই দেরী হয়েছে।(অাদনান)
-তুমি যেহেতু টাইম মেইন্টেন করতে পারো নি সেহেতু তুমি ক্লাস থেকে বের হয়ে যাও..(ম্যাম)
-অাদনান বের হয়ে যেতে যেতে,ম্যামের কাছে এসে বলে ম্যাম টাইম সেন্স নিয়ে একটু কথা বলি।
-হ্যাঁ সিওর।(ম্যাম)
-একবার অামি ইদের ছুটিতে দেশের বাড়ি চট্টগ্রাম যাবো,গাড়ি ছিলো ৮:৩০ এ অামি সেখানে অাধ ঘন্টা লেইট করে যাই,তাই অার লঞ্চ গিয়ে পাইনি মিস করি।(অাদনান)
-ঠিক এই কথাটাই বলছিলাম,তুমি যেহেতু টাইম মেইনটেইন করো নি সে কারণেই তুমি গাড়ি গিয়ে পাওনি,লুজার।(ম্যাম)
-তারপর শুনেন না কি হয়েছে,অামি মন খারাপ করে বাসায় গিয়েছি টিভি ছেড়ে রাত ১০:০০ খবরে দেখি চট্টগ্রাম সড়কে একটি গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করে,হায় অাল্লাহ অামারও তো চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা ছিলো,যাই হোক একটু পর দেখি অামি যে গাড়িতে যেতে চেয়েছিলাম ওটিই অ্যাকসিডেন্ট করে অার অাহত ৩৫,নিহত ৫।এখন বলুন ম্যাম সেদিন যদি অামি সঠিক সময়ে গাড়ি ধরতাম তাহলে কত বড় একটা দুর্ঘটনার শিকার হতাম।সেদিন অামি টাইম মেন্টেইন না করার কারণেই সেই ৪০ জনের মতো অামি নিহত ও অাহত হই নাই....
-কিছুটা নাকানি চুবানি খেয়ে বিরক্তের সুরে বললো বসো গিয়ে,(ম্যাম)
অার এদিকে অাদনানের কথা শুনে এবং ম্যামের বোকা হয়ে যাওয়ার অবস্হা দেখে  সবাই খিলখিলিয়ে হাসি শুরু করে দিলো,কিন্তু অাদনানের ক্ষণিকের জন্যে চোখ যায় একজনের উপর যে কিনা সবার মত না হেসে নিশ্চুপে বসে রইলো,যেন তাঁর কাছে মনে হলো এটি হাসির এমন কি হলো এবং অামি কথাটি যে বানিয়ে বলেছি সেটিও যেন সে ধরে ফেলেছে!
চলবে----

Sunday, 27 May 2018

বাঙালি আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের চিরবৈরিতা বাকযুদ্ধ ও তর্ক-(পর্ব-২)

বর্তমানে ক্লাসে,চায়ের দোকানে,পথে-ঘাটে,খেলার মাঠে এবং সোশ্যাল মিডিয়া সহ সর্বদাই অধিকাংশ মানুষের মধ্যে রীতিমতো একটা যুদ্ধ বা তর্ক লেগে গেছে। যুদ্ধের টপিক ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা। দু’পক্ষের সমর্থকদের একে-অন্যকে নিয়ে ঠাট্টা,মশকারিতে ব্যাপারটা খুবই বিদঘুটে হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর্জেন্টিনা সমর্থকরা তাদের দু’বার বিশ্বকাপ জয় এবং নিকট অতীতে ফাইনালিস্ট হওয়ার গল্প ফাঁদতে ব্যস্ত। অন্যদিকে ব্রাজিল সমর্থকরা নিজেদের পাঁচবারের বিশ্বকাপ ট্রপি জয়ের গল্প বলে বিগত বছরগুলোর ব্যর্থতা লুকাতে মরিয়া।
নিজ পছন্দের দলের পক্ষে গোয়ের জোরে, কিংবা হাসি তামাশা সীমাহীন যুক্তি চলতেই থাকে। কেউ বলে ব্রাজিল ৫ বার বিশ্বকাপ নিয়েছে, তাই ব্রাজিলেই সেরা। আবার আর্জেন্টাইন সমর্থকদের যুক্তি, খেলা কেবল কাপ নেয়া ওপর নির্ভর করে না। একটি ভালো দল মানে, সেই দলের প্লেয়াররা কতটুকু গোছানো খেলা খেলে, ফাউলের সংখ্যা বা ফেয়ার প্লে’র সংখ্যা কেমন, সব কিছুর ওপরে। সেই বিচারে তারা দাবি করে থাকেন ফুটবলে আর্জেন্টিনাই পৃথিবীর সেরা।

কিছু আছে জার্মানী সমর্থক। এরা আকারে-ইঙ্গিতে আবার আর্জেন্টিনার দিকেও ঢলে পড়ে মাঝে মাঝে। অন্যদিকে হাতেগোনা কিছু পর্তুগাল সমর্থকরা যেন চোখমুখ বন্ধ করে ব্রাজিলকেই তাদের ‘সেকেন্ড হোম’ মনে করে। এই বিতর্ক মাঠ, ক্লাস আর চায়ের আড্ডা ছাপিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও এসে ভর করেছে। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে নিয়ে হাসি, ট্রল আর কৌতুক করে যেন একরকম পৈচাশিক আনন্দ পাচ্ছে।

ফেসবুকে সেলিব্রেটি থেকে অামজনতা চলছে ট্রল পাল্টা ট্রল।

যেমন ফেসবুকে রফিকুল রনি লিখেছেন, “অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ-বিএনপি বলতে কিছু নেই। সবই আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল।”

অন্যদিকে কাজী মাহতাব তানসেন গত বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ব্রাজিলের ৭ গোল খাওয়ার স্মৃতি মনে করিয়ে লিখেছেন, “ব্রজিলের সেভেন আপ মনে আছে বন্ধুরা?” এর সাথে তিনি একটি সেভেন আপের ছবির মধ্যে ব্রাজিলের পতাকা এডিট করে একটি ছবি পোস্ট করেছেন।

এসব ট্রল পাল্টা ট্রলে যোগ দিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন, “আর্জেন্টাইনরা ব্রাজিলের সাপোর্টার হয়া গেসে। চিলির বিপক্ষে তারা ফুটবল গ্রেটদের জয় চায়।”

অন্যদিকে সাঈদ আহমেদ লিখেছেন, “সবাই দোয়া করবেন যেন ২০১৮ সাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে।” সাথে তিনি একটি হাসপাতালের আইসিইউ রুমের ছবি পোস্ট করেছেন। যাতে বিছানার চাদর টা আর্জেন্টিনার পতাকা। আর বালিশটাতে ফুটবলের ছবি। আশেপাশে আইসিইউ-এর মেশিনারিতে ভরপুর।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল আর্জিন্টিনাকে ঘিরে বাংলাদেশের ভক্তদের আগ্রহ, তর্ক-বিতর্ক-আনন্দ করা নতুন নয়।কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের দেশের কিছু কিছু অার্জেন্টিনা ব্রাজিল ভক্তের উত্তেজনা মাত্রাটা এতটাই তিব্র হয় যে তর্ক বা বাকযুদ্ধে অনেক সময় আপন ভাইয়ে-ভাইয়ে, বোন-ভাই, আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুবান্ধবের মধ্যে মনমালিন্য হচ্ছে।এমনকি নিজের জীবন ও বউ তালাকের মতো ঘটনাও এমনকি উঁচু যায়গায় পতাকা টানাতে গিয়ে অথবা প্রিয় দলের ম্যাচ হারার শোকে প্রাণহানির ঘটনাও শোনা যায়।যা কখনো কাম্য হতে পারে না। খেলাকে নিতে হবে খেলা হিসেবেই। কিন্তু বাংলাদেশের দর্শক ও সমর্থকদের সে উত্তেজনা যেন শেষ না হয়ে আরো বেড়ে গেছে। এ উত্তেজনা কি চরমে ওঠেছে তা টের পাওয়া যায় ফেইসবুকে ঢুকলেই।

পরিঃশেষে বলবো ফুটবল বিশ্বকাপ এ অার্জেন্টিনা ব্রাজিল বা অন্য দল এর মধ্যে বাকযুদ্ধ এগুলো লিমিটে রাখা উচিৎ,এটির মাত্রা যাতে এমন না হয় যাতে করে অপরের সাথে মন মলিন্য হতে পারে,ফুটবল বিশ্বকাপকে নিছকই বিনোদন হিসেবে নেওয়া উচিৎ খেয়াল রাখতে হবে এটি জাতে অামাদের জীবনের সাথে গুলিয়ে না যায়।
যাই হোক অাজ তৃতীয় পক্ষ বা নিরপেক্ষ হয়ে কিছু নীতিমূলক কথা বললাম,পরবর্তি পর্বে অার্জেন্টিনার সমার্থক হয়ে রোস্টিং হবে ব্রাজিল সমার্থকদের যুক্তি ও তথ্য দিয়েই সাজাবো চোখ রাখেন অামার প্রোফাইলে.....

Saturday, 26 May 2018

উপহাস ও বিদ্রূপ করা বা পচানো...

এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَىٰ أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَىٰ أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ ۖ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ ۖ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ ۚ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٤٩:١١]

মুমিনগণ,কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। (সূরা হুজরাত, আয়াত-১১)

উক্ত আয়াতে “তাসখীর”-এর অর্থ হলো, কারো অসম্মান ও তাচ্ছিল্য করা। এমনভাবে কারো দোষ বর্ণনা করা,যাতে মানুষ তাকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করে,এতে ওই ব্যক্তির অন্তরে ব্যথা আসে। এ ধরনের কাজ অনেক রকম হতে পারে।

যেমন,কারো চলাফেরা,উঠাবসা,কথাবর্তা,অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি নিয়ে ব্যঙ্গ করা,কারো শারীরিক গঠন ও আকার-আকৃতি নিয়ে কটূক্তি করা তার কোনো কথা বা কাজের ওপর ঠাট্টা করা। চোখ, হাত-পা দ্বারা টিকা-টিপ্পনী মারা ইত্যাদি এ সকল জিনিস অন্তর্ভুক্ত।

মহানবী (সা.) উপহাসকারীদের সম্পর্কে বলেছেন : ‘একজন উপহাসকারীর জন্য বেহেশতের দরজা খুলে দেয়া হবে এবং তাকে বলা হবে : ‘এস।’ সে তার দুঃখ ওঅসহায়ত্ব নিয়ে সামনে অগ্রসর হবে এবং যখন সে ভেতরে প্রবেশ করতে চাইবে তখনই তার সামনে বেহেশতের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে।’(তথ্যসূত্র-কানজুল উম্মাল, হাদীস ৮৩২৮)

#কারো উপহাস করা উচিত নয় :

প্রয়োজনাতিরিক্ত কথাও অনর্থক কথার অন্তুর্ভুক্ত। সাধারণ কথা থেকে টেনে শয়তান গোনাহের দিকে কখন যে নিয়ে যাবে তা টেরও পাওয়া যাবে না। আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ রয়েছে সিধেসাদা ও সরল প্রকৃতির। তাদেরকে নিয়ে কিছু মানুষ হাসি-তামাশা করে থাকে,সেই যেন একটা কৌতুকের বিষয় বস্তু। সে কৌতুক যদি এই পরিমাণে সীমাবদ্ধ হয় যাতে সে খুশি থাকে তাহলে তো আপত্তিকর নয়।

তবে যদি কৌতুক ও ঠাট্টা এ পর্যায়ে পৌঁছে যায়,যা তার অন্তরে কষ্ট দেয়,তার খারাপ লাগে,তাহলে এমতাবস্থায় উক্ত কৌতুক ও রহস্য অনেক বড় গোনাহের কারণ হবে।

কেননা তা বান্দার হক্বের সাথে সম্পৃক্ত। আর যে আয়াতটি আমি শুরুতেই উল্লেখ করেছিলাম। সূরা হুজুরাতের আয়াত, যাতে আল্লাহ তাআলা মুআশারাতের দিকনির্দেশনামূলক বেশ কয়েকটি আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। ইরশাদ করেন

لا يسخر قوم من قوم

 “কেউ যেন কারো উপহাস না করে।”

 عسى ان يكونوا خيرا منهم

“হতে পারে যাদেরকে উপহাস ও তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে তারা (আল্লাহর নিকট) তোমাদের থেকে উত্তম।”

এরপর আল্লাহ তা’আলা বলেন, ولا نساء من نساء “অনুরূপ কোনো মহিলা অপর মহিলাকে তাচ্ছিল্য করবে না।” عسى ان يكن خيرا منهن “হতে পারে তাচ্ছিল্যকৃত মহিলা তোমাদের চেয়ে আল্লাহর নিকট উত্তম।”

কোরআনে কারীমের এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা সুস্পষ্টভাবে কাউকে নিয়ে উপহাস করতে শক্তভাবে নিষেধ করেছেন।

এই আয়াতে মহিলাদেরকে বিশেষভাবে দ্বিতীয়বার উল্লেখ করা হয়েছে,যদিও আয়াতের প্রথম অংশের দ্বারাই মহিলা-পুরুষ সকলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছে। তার পরও মহিলাদের ব্যাপারটা বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ আল্লাহ তা’আলাই বেশি জানেন।

তবে এর দুটি হিকমত বোঝা যায়।

এক.

সাধারণত মহিলাদের মধ্যে এ অভ্যাসটি বেশি পরিলক্ষিত হয়,তাই তাদেরকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে।

দুই.

যেহেতু পুরুষদের মজলিস ভিন্ন হবে এবং মহিলাদের মজলিস ভিন্ন হবে,তাই পৃথক পৃথক উল্লেখ করে বোঝানো হয়েছে যে পুরুষ-মহিলার মজলিস ও চলাফেরা ভিন্ন ভিন্ন হওয়া উচিত। আজকাল যেরূপ নারী-পুরুষের যে অবাধ মেলামেশা এ আয়াতে ইঙ্গিতে তা নিষেধ করা হয়েছে।

#কাউকে ঠাট্টা ও উপহাস করা কবীরা গোনাহ :

যা হোক! উক্ত আয়াতে কাউকে উপহাস করাকে সুস্পষ্ট গোনাহ সাব্যস্ত করা হয়েছে। বিশেষভাবে এ কথাও বোঝানো হয়েছে যে তোমরা অন্যকে যে তাচ্ছিল্য করছ এর দ্বারা তোমরা নিজেকে বড় ও উত্তম ভেবেই অপরকে তাচ্ছিল্য করছ। এ তো চরম অহংকার যে নিজেকে উত্তম ভেবে অপরকে তুচ্ছ ভাবা হচ্ছে।

তবে স্মরণ রেখো,আল্লাহ তা’আলা বলছেন,“ওই সহজ-সরল সিধেসাদা যে ব্যক্তিকে তুমি তাচ্ছিল্য করছ,সে আল্লাহ তা’আলার নিকট কতটুকু মর্যাদাশীল। কারো শুধু চেহারা দেখেই তো তুমি বলতে পারবে না যে আল্লাহ তা’আলার সাথে তার কতটুকু সম্পর্ক।

প্রত্যেক বান্দার সঙ্গেই আল্লাহ তা’আলার বিশেষ একটি সম্পর্ক থাকে,এর মাঝে অনুপ্রবেশ করার কি অধিকার তোমার? তুমি কি জানো,সে আল্লাহর সাথে কী সম্পর্ক গড়ে নিয়েছে, সে আল্লাহর কত প্রিয়? কারো শুধু বাহ্যিক অবয়ব দেখেই কোনো মন্তব্য করা যাবে না। কেননা মানুষ জানে না কার সাথে আল্লাহর সাথে আন্তরিকভাবে কতটুকু গভীর সম্পর্ক।

#হাস্য-কৌতুক বা মজা করা

ইসলাম ধর্ম কট্টর ও কঠোর ধর্ম নয়। এটি মানুষের নির্মল আনন্দ উপভোগের বিরোধিতা করে না এবং এগুলোকে বৈধ বলেই মনে করে। কিন্তু বল্গাহীন যে কোনকিছু করাকে ইসলাম নিষেধ করেছে।

মানুষ মাঝে মাঝে কৌতুক করে থাকে মজা পাওয়ার জন্য। এটি ইসলামের বৈধ বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। যদি কৌতুকের মধ্যে মিথ্যার সংমিশ্রণ না থাকে,অশ্লীলতা না থাকে ও অন্যকে অপমান করার বিষয় জড়িত না থাকে,তাহলে তা অনিষ্টকর নয়। এমনকি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনীতেও আমরা কদাচিৎ এ বিষয়টি দেখতে পাই। যেমন হযরত আনাস বর্ণনা করেছেন,একবার এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট এসে আরোহণের উপযোগী একটি উটের আবেদন করল। রাসূল (সা.) তাকে বললেন : ‘আমি তোমাকে একটি উটের বাচ্চা দেব।’ মহিলাটি বলল : ‘হে রাসূলাল্লাহ্! উটের বাচ্চা দিয়ে আমি কি করব?’ রাসূল জবাব দিলেন,‘বড় উটও তো উটের বাচ্চাই হয়ে থাকে।’(তথ্যসূত্র-মদীনা পাবলিকেশান্স কর্তৃক প্রকাশিত ইমাম গাযযালী প্রণীত এহইয়াউ উলুমিদ্দীন, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৩৭)

তবে যেহেতু কৌতুক বলার ক্ষেত্রে প্রায়শই মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয় এবং অন্যকে অপমান করার বিষয়টি চলে আসে,আর কৌতুককারীরও মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় তাই ইসলাম বেশি বেশি হাস্য-কৌতুক করাকে পরিহার করতে বলেছে।

ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন : ﹸ‘কৌতুক বলা পরিহার কর। কেননা,তা মানুষের মর্যাদাকে ধ্বংস করে।’

তিনি আরও বলেন : ﹺ‘মানুষ যেন তোমাকে তাচ্ছিল্য করতে না পারে সেজন্য কৌতুক বলা পরিহার কর।’(তথ্যসূত্র-উসূলে কাফী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৬৬৬)

অনেক সময় কৌতুক করার বিষয়টি মানুষ সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে না এবং ভুলবোঝার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি হয়। এমনকি এর কারণে শত্রুতারও সৃষ্টি হয়।

ইমাম আলী (আ.) বলেছেন : ‘কৌতুক করা পরিহার কর। যেহেতু এটি শত্রুতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ।’(তথ্যসূত্র-গুরারুল হিকাম)

সর্বক্ষণ কৌতুক করা বা হাসি-তামাশা করার ফলে মানুষ তার সত্যিকার পরিচয় ভুলে যায়। ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে সে উদাসীন হয়ে পড়ে এবং তার দায়িত্ব সম্পর্কে অসচেতন হয়ে পড়ে।

মহানবী (সা.) বলেন : ‘আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে তবে খুব কমই হাসতে ও খুব বেশি কাঁদতে।’(তথ্যসূত্র -আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ আল বুখারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, হাদীস ৬০৩৫)

হযরত আলী (আ.) বলেন : ‘যে ব্যক্তি অতিরিক্ত হাসে তার আত্মা মরে যায়।’(তথ্যসূত্র-গুরারুল হিকাম)

আর এজন্যই অতিরিক্ত হাস্য-কৌতুক থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।

#ইঙ্গিতেও কাউকে উপহাস করা বৈধ নয় :

কাউকে ইশারা-ইঙ্গিতে উপহাস করাও এর অন্তর্ভুক্ত। কারো কথাবার্তা,চালচলন বা গঠন-প্রকৃতি নিয়ে টিকা-টিপ্পনী মারা ও হাসাহাসি করা,যার কারণে সে কষ্ট পায়,তাও হারাম।

এক হাদীসে এসেছে,একদা উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনৈকা স্ত্রীর ব্যাপারে আলোচনা প্রসঙ্গে ঈঙ্গিতে তাঁর গঠন বেঁটে হওয়ার কথা বললেন,শুধুমাত্র হাতের ইশারায় তা বলেছিলেন। কিন্তু রাসূল (সা.) তাঁকে বললেন,আয়েশা! তুমি মারাত্মক ভুল করেছ। হযরত আয়েশা (রা.)-কে কঠোরভাবে নিষেধ করলেন যেন কখনো কারো কোনো বিষয় নিয়ে তাচ্ছিল্য না করা হয়। যেরূপ সামনাসামনি কারো কোনো বিষয় নিয়ে এমন কথা বলা,যাতে ওই লোক কষ্ট পায়,তা তো মারাত্মক গোনাহ। সাথে সাথে উক্ত ঠাট্টা ও উপহাস যদি তার সামনে না করে তার অনুপস্থিতিতে করা হয় তাহলে তাতে দ্বিগুণ গোনাহ। উপহাস করার গোনাহ এবং গীবত করার গোনাহ।

#হাসি-রহস্য ও উপহাসের মাঝে বিস্তর পার্থক্য :

কখনো কখনো বন্ধুদের মজলিসে পরস্পর হাসি-মশকরা হয়ে থাকে,যাতে এ কথা নিশ্চিত হয় যে এর দ্বারা কোনো সাথী মনে কষ্ট পায় না এবং ওই সব কথায় কেউ অপমান বোধ না করা নিশ্চিত হয় তাহলে তা বৈধ।

কিন্তু যদি এই সম্ভাবনা থাকে যে এর দ্বারা কারো মনে কষ্ট আসতে পারে কিংবা কেউ অপমান বোধ করবে তাহলে এ ধরনের হাসি-তামাশা কখনো বৈধ হবে না।

#কারো উপহাস করার ভয়ংকর পরিণতি :

একটি হাদীসে এসেছে,যারা অন্য কারো উপহাস করে,তারা তো এই উপহাস করে বসেই থাকে,কিন্তু তাদের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। আখিরাতে তাদের সাথেও এ ধরনের উপহাস করা হবে। জান্নাতের দরজা খুলে তাদেরকে জান্নাতের দিকে ডাকা হবে,কিন্তু তারা যখন এগিয়ে এসে দরজা দিয়ে ঢুকতে যাবে,অমনিই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং তারা ফিরে যাবে। এরপর পুণরায় দরজা খুলে তাদেরকে ডাকা হবে,আবার যেইমাত্র তারা এগিয়ে এসে ঢুকতে যাবে তখনই দরজা পুনরায় বন্ধ করে দেওয়া হবে। এভাবেই তার সাথে বারবার উপহাস করতে থাকবে। একপর্যায়ে সে নিরাশ হয়ে আর জান্নাতের দিকে যাবে না। এই শাস্তি এই জন্যই যে তুমি দুনিয়ায় তোমার কথাবার্তায় কাউকে উপহাস করে কষ্ট দিয়েছিলে এখন দেখো এর মজা কী রূপ।

এ জন্যই সাবধান হওয়া উচিত,যেকোনো কথা বলার আগে মেপেজুখেচিন্তাভাবনা করেই তবে বলতে হবে।

#রহস্য ও কৌতুকের সীমারেখা :

কেউ কেউ মানুষের উপহাস করাকে সাধারণ রহস্য ও কৌতুকের অন্তর্ভুক্ত মনে করে থাকে। অথচ উভয়ের মাঝে বিস্তর ব্যবধান।

হাসি-রহস্য হচ্ছে ওই সব কথাবার্তা,যার দ্বারা সকলের মনে প্রফুল্লতা আসে।

হযরত রাসূলে করীম (সা.) থেকেও তা প্রমাণিত। তবে শর্ত হলো, এ ক্ষেত্রে কোনো মিথ্যা ও অসারতার আশ্রয় নেওয়া যাবে না,কাউকে অপমান করা যাবে না। তাহলে তা বৈধ।

একটি হাদীসে এসেছে,জনৈকা বৃদ্ধা মহিলাকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,কোনো বৃদ্ধা জান্নাতে যাবে না। এতদশ্রবণে বৃদ্ধা মহিলা কান্না আরম্ভ করল। তখন রাসূল (সা.) সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,আসল কথা হলো বৃদ্ধ অবস্থায় কেউই জান্নাতে যাবে না। অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশের সময় আল্লাহ তা’আলা সকলকে যৌবন অবস্থা ফিরিয়ে দেবেন।

তো রাসূল (সা.) ওই বৃদ্ধার সাথে রহস্য করতে গিয়ে কথাটি একটু ঘুরিয়ে বলেছেন,যা বৃদ্ধা বুঝতে পারেনি। তবে রাসূল (সা.)-এর কথায় অসত্যের মিশ্রণ হয়নি এবং ওই বৃদ্ধার মনে কষ্ট বা সম্ভ্রমহানিও হয়নি।

অনুরূপ একটি হাদীসে এসেছে,জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, তোমাকে আমি একটি উটের বাচ্চা দেব তখন লোকটি বলল,হুজুর! আমি তো বাহনের উট চেয়েছি,বাচ্চা দিয়ে কী কাজ হবে? রাসূল (সা.) বললেন,বাহনের উপযুক্ত বড় উটটিও তো কোনো একটি উটনীর বাচ্চা হবে।

সামান্য সময়ের জন্য রাসূল (সা.) লোকটির সাথে রহস্য করলেন। কিন্তু এতে কোনো অসত্যের আশ্রয় নেওয়া হয়নি এবং কাউকে কষ্টও দেওয়া হয়নি। এসব অবশ্যই বৈধ।

তবে এমন বৈধ কৌতুকও মাঝেমধ্যে হয়ে গেলে মন্দ নয়,কিন্তু নিয়মিত এতে লিপ্ত হয়ে যাওয়াও কাম্য নয়। মাঝেমধ্যে হলে ভালো।

তবে অবশ্যই ধর্তব্য যে এসব কৌতুক রহস্যের মধ্য দিয়ে কোনো মিথ্যার প্রচার যেন না হয়,কারো প্রতি দোষারোপ বা গীবত না হয়। সর্বোপরি কেউ যেন কষ্ট না পায়। অন্যথায় তা মারাত্মক গোনাহ হিসেবে বিবেচিত হবে।

সারকথা হলো,সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের উঠাবসা, চলাফেরা ও কথাবার্তা লাগাতার চলতে থাকে। মুখ দিয়ে কী বের হচ্ছে এর প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ নেই,এতে কি কারো মনে কষ্ট দেওয়া হয়ে যাচ্ছে কি না,তারও খবর নেই। কী হবে এর পরিণতি।

পরিণতি সম্বন্ধে বেখবর হওয়া কখনো উচিত নয়। দুনিয়ার কাজকারবারে লিপ্ত হয়ে আখিরাতকে ভুলে যাওয়া অত্যন্ত বোকামি।

এ কথা স্মরণ রাখা উচিত,দুনিয়া থেকে আমার চলে যেতে হবে,আল্লাহর সামনে অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। প্রতিটি কাজ ও কথার জন্য আমার জবাবদিহি করতে হবে।

অসতর্কতা ও গাফিলতিতে আমার থেকে যেন এমন কোনো কথা ও কাজ প্রকাশ না পায়,যার ফলে আখিরাতে আমার পরিণতি খারাপ হয়। এ জন্য সর্বদা অন্তরে আল্লাহ তা’আলাকে স্মরণ রাখবে। আল্লাহর নিয়ামতসমূহের শুকরিয়া জ্ঞাপন করবে।

সকল প্রয়োজনীয়তা আল্লাহর কাছে চাওয়ার অভ্যাস করবে। সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জীবনাচরণ অধ্যায়ন করবে। যেমন-আম্বিয়ায়ে কেরাম,সাহাবায়ে কেরাম ও নেককার ওলী-বুজুর্গদের জীবনী পড়ার দ্বারাও আখিরাতের ফিকির ও আল্লাহর স্মরণ লাভ হয়ে থাকে। যেরূপ নেককার ওলী-বুজুর্গদের সংশ্রবে থাকার দ্বারা আখিরাতের ফিকির লাভ হয়, তদ্রুপ তাদের জীবনাচরণ পড়ার দ্বারাও তা অর্জিত হয়। আল্লাহর ভালোবাসাপ্রাপ্ত বান্দাদের জীবনী-কথাবার্তা অধ্যায়নের দ্বারা অন্তরে আল্লাহর ভালোবাসা গভীর হয়। অন্তরে ঈমান তাজা হয়,গাফিলতি দূর হয়ে আখিরাতের ফিকির পয়দা হয়। এতে অযথা ও মন্দ কথাবার্তা-কাজকর্ম থেকেও মুক্ত হওয়া যায়। আল্লাহ তা’আলা নিজ দয়ায় আমাদের সকলকে এর তাওফীক দান করুন।

[তথ্যসূত্র-মুফতী মুহাম্মদ তক্বী উসমান দা.বা. এর উপহাস ও বিদ্রূপ নিয়ে লেখা মুফতী মাহমুদ হাসান বাংলায় অনুবাদ করা লেখা পুরো পড়ে উপরে তা সংক্ষেপে কিছু অংশ উল্লেখ করেছি.....।।

এস এস সি তে জিপিএ-৫ না পেয়েও এইচ এসসি ও লেখাপড়ার ক্যারিয়ারে ছয় তরুণের সফলতার গল্প

জিপিএ-৫ না পেলেও যে জীবনে ভালো করা যায়, তার উদাহরণ আছে অনেক। সেসব উদাহরণ থেকে ছয়জনের গল্প শুনুন।৬ মে প্রকাশিত হলো মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল। যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে, অভিনন্দন তাদের। আর অামার যেসকল ছোট ভাইরা পায়নি,অাবার যারা পেয়েছে কিন্তু Golden A+ না পেয়ে হয় হুতাশ করছে তাদের ও তাদের অভিবাবক এর জন্যই আজকের অামার এই লেখা।
#GPA-5 না পেয়েও ২০১৬ সালে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে অাখতার 4.50 এবং ২০১৭ সিলেট এমসি কলেজ থেকে 4.67(HSC) পেয়েও ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য গামী একটি বিমানে চড়ে বসলেন,কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে তাঁরা "পিওর ম্যাথম্যাটিকস"স্নানতক পড়তে গেছে.............।এখন তাঁরা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে!!
-নিম্নে ৪ জনের নিজের মুখ থেকে বলা, SSC তে A+ না পেয়েও..............(পড়ুন)
#জেদের জোরেই SSC তে জিপিএ-৫ না পেয়েও HSC তে মিলি পেয়ে গেলো A+.....
মিলি আক্তার এর নিজের মুখে বলা,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমি ছিলাম মুন্সিগঞ্জের ব্রাহ্মণভিটা ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী। সে বছর আমাদের পুরো স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল একজন। আমি পেয়েছিলাম ৪.৮৮। প্রস্তুতি খুব ভালো ছিল সেটা বলব না, কিন্তু আমিও মনে মনে জিপিএ-৫ পাওয়ার প্রত্যাশা করছিলাম। ফল পেয়ে খুব ভেঙে পড়েছিলাম। কান্নাকাটি করেছিলাম।
আমি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলাম। ইচ্ছা ছিল ঢাকায় এসে ভালো কলেজে পড়ব, চিকিৎসক হব। অল্প কয়েকটা নম্বরের জন্য হঠাৎ মনে হলো স্বপ্নটা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। তার ওপর গ্রামের মেয়েদের একটা সমস্যা তো থাকেই। পড়ালেখায় একটু পিছিয়ে পড়লেই নানা দিক থেকে বিয়ের খবর আসতে থাকে। যেন আমাকে দিয়ে আর পড়ালেখা হবে না।
আমার মা ততটা পড়াশোনা করেননি। কিন্তু এ সময় আমাকে ভীষণ সাহস দিয়েছেন। তাঁর অনুপ্রেরণায় ভর্তি হলাম বিক্রমপুর টঙ্গিবাড়ী ডিগ্রি কলেজে, মানবিক বিভাগে। আমার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নটার মৃত্যু হয়েছিল ঠিকই, তবে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম। সবাই বলত, মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া আরও কঠিন। শুনে জেদ চেপে গিয়েছিল। সেই জেদের জোরেই বোধ হয়, উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে গেলাম।
এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি। যখন পেছনে ফিরে তাকাই, মনে হয় জিপিএ-৫ না পেয়েই হয়তো ভালো হয়েছিল। বিজ্ঞান বিভাগে থাকলে এত এত ভালো শিক্ষার্থীর ভিড়ে আমি হয়তো হারিয়েই যেতাম। মানবিক বিভাগে পড়ে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়েছি।

#ফজলুল হকউচ্চমাধ্যমিক না, বুয়েটের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম
(ফজলুল হক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়)
চট্টগ্রামের মুসলিম হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে যে অল্প কয়েকজন জিপিএ-৫ পায়নি, আমি ছিলাম তাদের একজন। আমার জিপিএ ছিল ৪.৮১। তখনো অতটা কষ্ট পাইনি। বেশি কষ্ট পেলাম তখন, যখন দেখলাম নটর ডেম কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতাও আমার নেই। ছোটবেলা থেকে বুয়েটে পড়ার ইচ্ছে। কিন্তু আব্বু বললেন, উচ্চমাধ্যমিকে ব্যবসায় শিক্ষা নিয়ে পড়তে। পলিটেকনিক্যালে ভর্তি হওয়ার কথাও বলেছিল অনেকে। কিন্তু আমি ভর্তি হলাম দিলওয়ারা জাহান মেমোরিয়াল কলেজে, ওই বিজ্ঞান বিভাগেই।
আমাদের কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পাস করেছিল ৯ জন। বুঝতেই পারছেন, উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পাওয়া সহজ ছিল না। আমি অবশ্য কলেজে উঠে জিপিএ-৫ পাওয়া নিয়ে মাথা ঘামাইনি। একটাই লক্ষ্য ছিল, বুয়েটে চান্স পেতেই হবে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য না, কলেজের পুরো দুটি বছর আমি প্রস্তুতি নিয়েছি বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার জন্য। এইচএসসিতে শুধু জীববিজ্ঞানে ‘এ’ পেয়েছিলাম। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান থেকে প্রশ্ন আসে না, তাই জীববিজ্ঞান সেভাবে পড়িনি। আমার সম্পূর্ণ ‘ফোকাস’ ছিল বুয়েট।
বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় আমি ৩৫৯তম হয়েছিলাম। এখন পড়ছি যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষে। বন্ধুদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েও এইচএসসিতে ভালো করতে পারেনি। আমার ভাগ্য ভালো ছিল। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাইনি বলেই হয়তো বুয়েটে পড়ার জোর পেয়েছিলাম।

#সায়মা আখতারকারও বাসায় মিষ্টি নিয়ে যেতে পারিনি
সায়মা আখতার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
মহেশখালীর ইউনুছখালী নছির উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলাম।
এসএসসি পরীক্ষার পর বেশ কয়েক দিন আমি ঘর থেকে বের হইনি। মা-বাবা-আত্মীয়স্বজন সবাই যখন জিপিএ-৫-এর প্রত্যাশা করে বসে আছে, আমি পেয়েছিলাম ৪.৮১। খুব লজ্জা লাগছিল। অনেকে আমাদের বাসায় মিষ্টি নিয়ে এসেছিল, আমি কারও বাসায় মিষ্টি নিয়ে যেতে পারিনি। কাউকে মুখ দেখাতেই ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু সে সময় আমার মা-বাবা আর স্বজনেরা পাশে ছিলেন। আমিও মনে মনে বলেছিলাম, উচ্চমাধ্যমিকে দেখিয়ে দেব।
অথচ উচ্চমাধ্যমিকে আমার ফলাফল হলো আরও খারাপ!
কক্সবাজার মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি। আমাদের কলেজে তখন পড়ালেখার মান খুব ভালো ছিল না। হোস্টেলে থাকতাম, সেখানকার পরিবেশ ভালো না। ৪.৪০ পেয়েও এইচএসসিতে দেখা গেল কলেজে আমার ফলাফলই সেরা। আমাদের মধ্যে তো তুলনা করার একটা প্রবণতা আছে, অন্যদের তুলনায় আমার ফল ভালো বলে সবাই বেশ খুশিই হয়েছিল। আমি যদিও খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারিনি।
আমরা দুই ভাই, দুই বোন। বড় মেয়ে হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে। বাসা থেকে খুব বেশি দূরে এসে পড়ালেখা করার অনুমতি ছিল না। তাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটা অনুষদে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। গণিত নিয়ে পড়ার সুযোগ ছিল। আমার ইচ্ছাও ছিল। কিন্তু কী ভেবে যেন অর্থনীতিতে ভর্তি হলাম। এখন তৃতীয় বর্ষে পড়ছি।
আমার বাবা চেয়েছিলেন মেয়ে ডাক্তার হবে। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি বলে একটু দুঃখ আছে। তবে আফসোস নেই। আমার যতটুকু যোগ্যতা ছিল, আমি যতখানি পরিশ্রম করেছি, তার ফল পেয়েছি। এতেই আমি খুশি।

#আজবিনুর ইসলামক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হবে না, সেই আত্মবিশ্বাস আছে
আজবিনুর ইসলাম, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি
শরীয়তপুরের জাজিরা মোহর আলী মডেল হাইস্কুলের টেস্ট পরীক্ষায় আমি পঞ্চম হয়েছিলাম। মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু আমি পেলাম ৪.৬৯।
আত্মীয়স্বজন অনেকে ধরেই নিয়েছিল, একে দিয়ে কিছু হবে না। বন্ধুদের বেশির ভাগ জিপিএ-৫ পেয়েছে। অনেকের অনেক কটু কথাও শুনতে হয়েছে। স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে পড়লেও কলেজে উঠে চলে গেলাম ব্যবসায় শিক্ষায়। ভর্তি হলাম কমার্স কলেজে। তখন খুব মন দিয়ে পড়েছি। তাই উচ্চমাধ্যমিকের ফল বেশ ভালো হয়েছিল। সব বিষয়ে এ প্লাস পেয়েছিলাম। ঢাকা বোর্ড থেকে বৃত্তিও পেয়েছি।
এখন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ছি। আমার সিজিপিএ ৩.৯০। ভালো ফলাফলের জন্য ২৫ শতাংশ ‘ওয়েভার’ পাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছি। পাস করার পর অন্তত ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হবে না, সেই আত্মবিশ্বাস আছে। এখন আর কোনো আফসোস নেই।
এছড়াও ঢাবিতে 3:50 এর মত পেয়েও খ ইউনিটে ইংরিজে বিভাগে চান্স পাওয়ার কথা অামরা সবাইই কম বেশি জানি।

সবশেষে বলবো,জিপিএ ৫ পেলে ভালো, না পেলেও ক্ষতি নেই,নিজেকে ব্যর্থ মনে করার কোন কারণ নেই।

কয়েকবছর পর কে ড্রপ-আউট ছিল, কে গোল্ডেন ৫ ছিল আর কে ফেল্টু ছিল তার কিছুই মনে থাকবে না |জীবনে বড় কিছু সফল ব্যক্তি হলে এসব ঘটনা হাসিমুখেই সভা সেমিনারে অন্যকে বলে অনুপ্রেরণা যোগানো যায়,যেমনটা বিলগেটস বলেছিলেন "আমার স্কুলের ভাল গ্রেড পাওয়া students রা আমার company এর ভাল ইঞ্জিনিয়ার আর আমি এই company এর মালিক "
জ্যাকমা বিশ্বের অন্যতম ধনী,অালীবাবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা,সে বলেছে নিজের মুখেই স্বীকার করেছে মাধ্যমিক পরিক্ষায় ৫ বার, উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষায় ৩ বার ফেল করার কথা।এরকম মণীষীদের অারও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।তাহলে বলা যায় শুধু সার্টিফিকেট দিয়ে মেধা যাচাই হয় না |

অামার এক বড় ভাই বলেছে,আমার জীবনে একটাই A+, তাও আমার রক্তের গ্রুপ..

তারাবির রাকাত সংখ্যা কত—বিশ, নাকি তারও কম?

তারাবির এর রাকাত সংখ্যা নিয়ে কথিত আহলে হাদিসদের মিথ্যাচার এবং কুরঅান ও হাদিস মোতাবেক দলিল ‎ভিত্তিক বিশ্লেষণ -

আমাদের দেশের কিছু আহলে হাদিস নামধারীরা তারাবীহের রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে দীর্ঘদিন যাবত। তাদের দাবী ‎সহীহ হাদিসের ভিত্তিতে কেবল ৮ রাকাত তারাবীহ নামায প্রমাণিত। দলিল হিসেবে কিছু হাদিস পেশ করে যার কোনটিই স্পষ্ট ‎তারাবীহকে বুঝায়না, বা হাদিসগুলি একেবারেই দুর্বল। এরপরও বিশ রাকাত তারাবীহ যা হাদিস ও সাহাবায়ে কিরামের সর্ব ‎সম্মত ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে প্রমাণিত একে অস্বীকার করে যায় নিতান্তই ঘাড়ত্যারামী করে। রামাযান মাসে জাতিকে সুন্নত ‎আমল থেকে বিরত রাখে এক নিকৃষ্ট পন্থায়। সেই সকল ভ্রান্ত অনুসারীদের দাবি-যুক্তি খন্ডনের নিমিত্তে আমার এই প্রয়াস।অাশা করি নিম্নের এ লেখাটি যিনি একবার পড়বেন, তাকে কথিত আট রাকাতি আহলে আল-বানী সম্প্রদায় কখনো ধোকায় ফেলতে পারবেনা, ইনশাআল্লাহ।

আহলে হাদিসদের তারাবি আট রাকাত হওয়ার দলিল ও অাহলে সুন্নত ওয়াল জামাত এর অালেমদের খন্ডন :

নবীজির (সা) প্রাণ প্রিয় খলিফা হযরত উমর (রা) এর আমলে তারাবির নামায বিশ রাকাত হওয়ার উপর সমস্ত সাহাবাদের ঐকমত বা ইজমাহ হয়েছে। এরপর হতে অদ্যাবধি মক্কার হারাম শরিফ এবং মদিনার মসজিদে নববীতে তারাবির নাম বিশ রাকাত পড়া হচ্ছে।

সমগ্র দুনিয়ায় চারো মাযহাবের অনুসারীরা বিশ রাকাত তারাবির উপর আমল করে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র আহলে হাদিস নামধারী বৃটিশ সৃষ্ট এ নতুন ফেরকার অনুসারীরা, যাদের উৎপত্তি- ইতিহাস গত ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের পরের; তারাই সহিহ হাদিসের চটকদার স্লোগানের অন্তরালে সম্প্রতি তারাবীহ আট রাকাত হওয়ার কথা বলে জনমনে চরম বিভ্রান্তি ছড়িয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছে। অথচ তারাবীহ আট রাকাত হওয়ার পক্ষে কোনো সহিহ হাদিস নেই, যা এখানে আপনাদের সম্মুখে বিশদভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।

কথিত আহলে হাদিসরা তারাবি আট রাকাত হওয়ার পক্ষে নিচের হাদিস দ্বারা দলিল (?) দিতে চায়।

হাদিস :

ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻠﻤﺔ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺃﻧﻪ ﺳﺄﻝ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻛﻴﻒ ﻛﺎﻧﺖ ﺻﻼﺓ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ؟ ﻓﻘﺎﻟﺖ : ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻻ ﻓﻲ ﻏﻴﺮﻩ ﻋﻠﻰ ﺇﺣﺪﻯ ﻋﺸﺮﺓ ﺭﻛﻌﺔ ﻳﺼﻠﻲ ﺃﺭﺑﻌﺎ ﻓﻼ ﺗﺴﻞ ﻋﻦ ﺣﺴﻨﻬﻦ ﻭﻃﻮﻟﻬﻦ ﺛﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﺃﺭﺑﻌﺎ ﻓﻼ ﺗﺴﻞ ﻋﻦ ﺣﺴﻨﻬﻦ ﻭﻃﻮﻟﻬﻦ ﺛﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﺛﻼﺛﺎ فقلت يا رسول الله أ تنام قبل أن توتر ؟ قال يا عائشة ان عيني تنامان ولا ينام قلبي.

অনুবাদ : আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করেন যে, রমযানে নবীজীর নামায কেমন হত? তিনি উত্তরে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযানের বাইরে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন।

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) [আরো] বলেন, আমি রাসূল (সা)- কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ’র রাসুল! আপনি কি বিতিরের নামায আদায়ের পূর্বে ঘুমিয়ে পড়েন? উত্তরে তিনি বললেন, হে আয়েশা, আমার চোখ ঘুমায়, কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায় না।” [এ পর্যন্ত হাদিসের অনুবাদ সমাপ্ত হল]

– {সহীহ বুখারী ১/১৫৪, হাদীস ১১৪৭; সহীহ মুসলিম ১/২৫৪, হাদীস ৭৩৮; সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮, হাদীস ১৬৯৭; সুনানে আবু দাউদ ১/১৮৯, হাদীস ১৩৩৫; মুসনাদে আহমদ ৬/৩৬, হাদীস ২৪০৭৩}

দলিলের অযুক্তিকতা ও খণ্ডন:

উল্লিখিত হাদিসকে কয়েকটি কারণে আট রাকাতের দলিল বানানো যুক্তিসংগত নয়। বিস্তারিত নিম্নরূপ –

১-“তারাবীহ” (تراويح) শব্দটি বহুবচন। তার একবচন হল “তারবীহ” (ترويح) । কিন্তু আভিধানিক অর্থে “তারবীহ” (ترويح) বলা হয় একবার বিশ্রাম নেয়াকে। শরিয়তের পরিভাষায় রামাদ্বানের রাতে তারাবীর প্রতি চার রাকাত বা’দ বিশ্রাম নেয়াকে (একবচনে) “তারবীহ” (ترويح) বলা হয়। পরবর্তীকালে এটিই তার আভিধানিক অর্থে রূপান্তরিত হয়ে যায়।

[সূত্র— মেসবাহুল লুগাত, পৃষ্ঠা ৩২২]

বুখারি শরিফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ “ফাতহুল বারী” কিতাবে আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার (রহ) তিনিও লিখেছেন :

ﺗﻌﺮﻳﻒ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻫﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﺘﻲ ﺗﺼﻠﻰ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻓﻲ ﻟﻴﺎﻟﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ، ﻭﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﺟﻤﻊ ﺗﺮﻭﻳﺤﺔ، ﺳﻤﻴﺖ ﺑﺬﻟﻚ ﻷﻧﻬﻢ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﺃﻭﻝ ﻣﺎ ﺍﺟﺘﻤﻌﻮﺍ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻳﺴﺘﺮﻳﺤﻮﻥ ﺑﻴﻦ ﻛﻞ ﺗﺴﻠﻴﻤﺘﻴﻦ، ﻛﻤﺎ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﺍﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﺗﻌﺮﻑ ﻛﺬﻟﻚ ﺑﻘﻴﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ

অনুবাদ : “তারাবীহ’র সংজ্ঞা হল, রামাদ্বানের রজনীতে জামাতে যে নামায আদায় করা হয়, তাই তারাবীহ। তারাবীহ বহুবচন, একবচনে তারবিয়াহ। তারাবীহ বলে নাম রাখার কারণ, মুসল্লিগণ প্রতি দুই সালামের মধ্যখানে বিশ্রাম নেয়।”

তাই বলা যায়, যেহেতু তারাবীহ (تراويح) বহুবচন শব্দ, তার একবচন “তারবীহ” (ترويح)। তার মানে হবে একবার বিশ্রাম নেয়া। সে হিসেবে দুই বার বিশ্রাম নেয়াকে “তারবিহাতান” বা “তারবিহাতাঈন” বলা হবে।

এখন বুঝুন, আরবীতে বচন হয় তিনটি। একবচন, দ্বিবচন ও বহুবচন। রামাদ্বানে প্রত্যেক চার রাকাত বা’দ আরাম করা হয়। যদি তারাবির নামায আট রাকাত হত, তাহলে ৪+৪= ৮ রাকাত তারাবির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র দুই বারই বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ থাকে। যা বচনের ক্ষেত্রে দ্বিবচন হয়। ফলে তাকে আরবী ভাষায় (বহুবচনে) তারাবীহ (تراويح) বলা যাবেনা, বরং দুই বার বিশ্রাম নেয়ার কারণে (দ্বিবচনে) “তারবিহাতান” বা “তারবিহাতাঈন” ترويحتان او ترويحتين বলা যেতে পারে।

অথচ আরবী ভাষায় (বহুবচনে) তারাবীহ (تراويح) হতে হলে তিনের অধিক বার বিশ্রাম নিতে হয়। তাই অভিধান অনুসারে তিনবার বা ততোধিক বার বিশ্রাম নিতে হলে তখন তারাবির রাকাত সংখ্যা আট রাকাত হওয়ার মোটেই সুযোগ থাকেনা, বরং তখন তারাবির রাকাত সংখ্যা বারো অথবা তার চেয়েও অধিক তথা বিশ রাকাতই হতে হয়, যা যুক্তিক ও বিবেকগ্রাহ্য।

অতএব তারাবির রাকাত সংখ্যা আট রাকাত নয়, বরং তার চেয়েও অধিক তথা বিশ রাকাত।

২-মূলত তাহাজ্জুদ নামাযের সাথেই উক্ত হাদিসটির সম্পর্ক। কারণ হযরত আয়েশা (রা) রামাদ্বান এবং অন্যান্য মাস তথা পুরো বছরের কথা উল্লেখ করেছেন।

উনার ভাষ্য হল : ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻻ ﻓﻲ ﻏﻴﺮﻩ অর্থাৎ “রামাদ্বান এবং অন্যান্য মাসে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না”। তার মানে রাসূল (সা) রামাদ্বান ছাড়াও পুরো বছর ব্যাপী এ এগার রাকাত আদায় করতেন। অথচ তারাবির সম্পর্ক তো শুধু মাহে রামাদ্বানের সাথে। যার বাহিরে অন্যান্য মাসে তা পড়া হয় না। ফলে বুঝা গেল, হাদিসটিতে উল্লিখিত বিতির সহ মোট এগার রাকাতের সম্পর্ক তারাবির সাথে নয়, বরং তাহাজ্জুদের নামাযের সাথেই সম্পর্ক। সুতরাং প্রমাণিত হল যে তারাবির রাকাত সংখ্যা আট নয়, বরং বিশ রাকাত।

৩-তারাবির নামায রাসূল (সা) থেকে এশার পর আদায় করার কথা যেমন উল্লেখ রয়েছে, তেমনি উল্লেখ রয়েছে শেষ রাতে বিতির সহ তাহাজ্জুদের নামায আদায় করার কথা।

হাদিসে এ বাক্যটি রয়েছে এরকম যে يا رسول الله ا تنام قبل أن توتر؟ অর্থাৎ হে আল্লাহ’র রাসূল! আপনি কি বিতির পড়ার আগেই ঘুমিয়ে পড়েন? এ বাক্যাংশটি দ্বারাও এ কথা প্রমাণ হল যে, উক্ত হাদিসটির সম্পর্ক তাহাজ্জুদের সাথে, তারাবির সাথে নয়। কারণ ঘুমিয়ে পড়লে তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত পেরিয়ে যাওয়ার আশংকা থাকতে পারে। তাই রাতের শেষাংশে রাসূলের বিতির পড়ার যে নিয়ম, তা উপেক্ষা করে রাতের প্রথমাংশে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন কিনা এ ব্যাপারে সতর্ক করাই উক্ত বাক্যাংশের প্রকৃত উদ্দেশ্য।

সামগ্রিক ভাবে প্রমাণ হল, উল্লিখিত হাদিসে বিতির সহ এগার রাকাতের সম্পর্ক তারাবির সাথে নয়। কেননা রাসূল (সা) তিনি রাত্রের প্রথমাংশে ঘুমাতেন এবং বিতিরের নামায তাহাজ্জুদের সাথে আদায় করতেন। বুখারি শরিফে এ কথার সমর্থনে গোটা এক খানা হাদিসই উল্লেখ রয়েছে। যেমন –

সহিহ বুখারির অপর আরেকটি হাদিসে এসেছে :

ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻋﻦ ﺍﻷﺳﻮﺩ ﻗﺎﻝ ﺳﺄﻟﺖ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻛﻴﻒ ﻛﺎﻧﺖ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﺎﻟﻠﻴﻞ؟ ﻗﺎﻟﺖ: ﻛﺎﻥ ﻳﻨﺎﻡ ﺃﻭﻟﻪ ﻭﻳﻘﻮﻡ ﺁﺧﺮﻩ ﻓﻴﺼﻠﻲ ﺛﻢ ﻳﺮﺟﻊ ﺇﻟﻰ ﻓﺮﺍﺷﻪ. ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ .

অনুবাদ : বিশিষ্ট তাবেয়ি হযরত আসওয়াদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হযরত আয়েশা (রা) -কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলের (সা) রাত্রিকালীন নামায কেমন ছিল? তিনি উত্তরে বললেন, রাসূল (সা) তিনি রাত্রের প্রথমাংশে ঘুমাতেন আর শেষাংশে কিয়ামুল লাইল করতেন তথা তাহাজ্জুদ পড়তেন। এরপর সালাত আদায় শেষে তিনি বিছানায় তাশরিফ নিতেন।

সূত্র— সহিহ বুখারি শরিফ।

৪-হাদিসটির খন্ডাংশ “ولا في غيره অর্থাৎ অন্য মাসেও” হযরত আয়েশা (রা) -এর এ জবাবটি দ্বারা রাসূলের পুরো বছর তাহাজ্জুদ পড়া প্রমাণিত।

প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উদ্দেশ্য ছিল, আল্লাহ’র রাসূল (সা) মাহে রামাদ্বানেও তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করেন, নাকি তারাবির কারণে তা ছেড়ে দেন?

প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তিনি জ্ঞানগর্ভ জবাব দিয়েছেন।

হযরত আয়েশা (রা)-এর জ্ঞানগর্ভ জবাবটি হল : “আল্লাহ’র রাসূল (সা) রামাদ্বান এবং রামাদ্বানের বাহিরে বিতিরের নামায সহ এগার রাকাত আদায় করতেন। চার চার রাকাত করে মোট আট রাকাত আর তিন রাকাত বিতিরের নামায আদায় করতেন।”

কথিত আহলে হাদিস নামধারী গায়রে-মুকাল্লিদরা মানুষকে ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশ্যে বুখারি শরিফের উক্ত হাদিসটি দ্বারা তারাবির আট রাকাতের পক্ষে দলিল (?) দেয়। এটি ছাড়া তাদের মেরুদণ্ডহীন মতবাদটির পক্ষে দ্বিতীয় আর কোনো দলিল নেই। মজার ব্যাপার হল, বুখারি শরিফের উক্ত হাদিসটিতে রাসূলেপাকের (সা) উক্ত আট রাকাত দু সালামে চার চার রাকাত করে পড়ার কথাই উল্লেখ পাওয়া যায়। বিতিরের নামাযের রাকাত সংখ্যা “তিন” হওয়ার কথাও প্রমাণিত।

৫-হযরত আয়েশা (রা)-এর উক্ত রেওয়ায়েত দ্বারা যদি তারাবিই বুঝানো উদ্দেশ্য হত, তাহলে হযরত উমর (রা)-এর খেলাফত আমলে যখন বিশ রাকাতের উপর উম্মাহ’র ইজমা হল, তখন হযরত আয়েশা (রা) তার বিরুধিতা করেননি কেন? হক্বকথা বলা থেকে তিনি চুপ ছিলেন কেন? অথচ তিনি তখনো জীবিত ছিলেন। হযরত আয়েশা (রা) নবীজি (সা) থেকে মোট ২২১১টি হাদিস রেওয়ায়েত করেছিলেন এবং ৫৭ বা ৫৮ হিজরীতে ইন্তিকাল করেছিলেন।

৬-আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন- “আর আমার কাছে এটি প্রকাশিত হয়েছে যে, ১১ রাকাতের থেকে না বাড়ানোর রহস্য এটি যে, নিশ্চয় তাহাজ্জুদ ও বিতরের নামায রাতের নামাযের সাথে খাস। আর দিনের ফরয যোহর ৪ রাকাত আর আসর সেটাও ৪ রাকাত আর মাগরীব হল ৩ রাকাত, যা দিনের বিতর। সুতরাং সমতা-বিধান হল রাতের নামায দিনের নামাযের মতই সংখ্যার দিক থেকে সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত হওয়া । আর ১৩ রাকাতের ক্ষেত্রে সমতা-বিধান হল, ফযরের নামায মিলানোর মাধ্যমে। কেননা এটি দিনের নামাযই তার পরবর্তী নামাযের মত।”

(ফাতহুল বারী শরহুল বুখারী-৩/১৭)

ইবনে হাজার (রহ) এর এই রহস্য বা হিকমত বর্ণনা কি বলছেনা, এই হাদিস দ্বারা তাহাজ্জুদ উদ্দেশ্য, কিন্তু তারাবীহ উদ্দেশ্য নয়? এই বক্তব্যে তাহাজ্জুদের কথা স্পষ্টই উল্লেখ করলেন ইবনে হাজার (রহ)।

 তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের মাঝে পার্থক্য :

কথিত আহলে হাদিসরা ইদানীং বুল পাল্টে বলেন, “তাহাজ্জুদ আর তারাবীহ একই”। নিম্নবর্ণিত কারণে তাদের এই দাবিটি ভুল ।

১- তাহাজ্জুদের মাঝে ডাকাডাকি জায়েজ নয়, কিন্তু তারাবীহতে জায়েজ।

২- তারাবীহের সময় ঘুমানোর আগে তাহাজ্জুদের সময় নির্ধারিত নয় তবে উত্তম ঘুমের পর।

৩- মুহাদ্দিসীনে কিরাম তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের অধ্যায় ভিন্ন ভিন্ন লিখেছেন।

৪- তাহাজ্জুদ নামাযের হুকুম কুরআন দ্বারা প্রমাণিত যথা সূরা ইসারার ৭৯ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ﻭَﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻓَﺘَﻬَﺠَّﺪْ ﺑِﻪِ ﻧَﺎﻓِﻠَﺔً ﻟَّﻚَ ﻋَﺴَﻰ ﺃَﻥ ﻳَﺒْﻌَﺜَﻚَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻣَﻘَﺎﻣًﺎ ﻣَّﺤْﻤُﻮﺩًﺍ অর্থাৎ আর রাতে তাহাজ্জুদ পড় এটি তোমার জন্য নফল, অচিরেই তোমাকে তোমার রব প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করবেন।

আর তারাবীহের ব্যাপারে আল্লাহর নবী বলেন-নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা রামযানের রোযা তোমাদের উপর ফরয করেছেন আর আমি তোমাদের উপর এতে কিয়াম করাকে সুন্নত করেছি। (সুনানে নাসায়ী-১/৩০৮) ।

সুতরাং বুঝা গেল তাহাজ্জুদ আল্লাহর আয়াত আর তারাবীহ নবীজীর বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত।

৫- তাহাজ্জুদের হুকুম মক্কায় হয়েছে আর তারাবীহের হুকুম মদীনায় হয়েছে।

৬- ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহঃ তিনিও তারাবীহ আর তাহাজ্জুদ আলাদা আলাদা বিশ্বাস করতেন। (মাকনা’-১৮৪) ।

৭- ইমাম বুখারী (রহ)- এর ক্ষেত্রে বর্ণিত আছে, তিনি রাতের প্রথমাংশে তার সাগরীদদের নিয়ে তারাবীহ পড়তেন আর শেষ রাতে একাকি তাহাজ্জুদ পড়তেন। (ইমাম বুখারী রহঃ এর জীবনী দ্রষ্টব্য )।

৮- যদি “সালাতুল-লাইল” দ্বারা তাহাজ্জুদ এবং তারাবীহ দুটি মিলে একই নামায উদ্দেশ্য হত, তাহলে হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত নিচের সহিহ হাদিসগুলোর জবাব কী?

যেমন—সহিহ বুখারীতে রয়েছে, হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, “রাসূল (সা)-এর “সালাতুল-লাইল” বা রাতের নামায ৭/৯/১১ রাকাত হতো, ফজরের সুন্নত ব্যতীত”। [সূত্র : সহিহ বুখারী ১/৩৪৫ হাদীস নং ১১৩৯] ৷

আয়েশা (রা) থেকে অপর আরেক বর্ণনায় রয়েছে, “রাসূল (সা) ফজরের সুন্নত ব্যতীতই ১৩ রাকাত পড়তেন ৷”

[ সূত্র : বুখারী ১/৩৫৪, হাদীস নং ১১৭০]৷

 এবার লামাযহাবি কথিত আহলে হাদিসের নিকট জবাব চাই, যদি “সালাতুল-লাইল” বা রাতের নামায দ্বারা তাহাজ্জুদ এবং তারাবীহ দুটি মিলে একটি উদ্দেশ্য হয়; তাহলে যেখানে হযরত আয়েশা (রা) থেকেই ৭/৮/৯/১১/১৩ রাকাত বর্ণিত, সেখানে তারাবীহ’র রাকাত সংখ্যা শুধুই আট রাকাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেন কেন? এটি কোন ধরণের সহিহ হাদিসের আমল! !

আফসোস! কথিত আহলে হাদিস নামধারীরা তারাবির নামায চার চার রাকাত করে মোট দুই সালামে আদায় করার বিপরীরে দুই দুই রাকাত করে মোট চার সালামে তা আদায় করে। বিতির আদায় করে শুধু এক রাকাত। যা সুস্পষ্টভাবে তাদেরই উদ্ধৃত সহিহ হাদিসের খেলাফ এবং চরম বিভ্রান্তিকর। অতএব আবারো প্রমাণিত হল, উক্ত হাদিসটি মোটেও কথিত আহলে হাদিসের দাবির পক্ষে নয়, বরং তদ্দারা বিতির সহ মোট এগার রাকাত তাহাজ্জুদের নামাযই প্রমাণিত।

আহলে হাদিস নামধারীরা মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য রামাদ্বানের বাহিরে এর নাম দিয়ে থাকে “তাহাজ্জুদ” আর মাহে রামাদ্বানের তারাবিকে কখনো “ক্বেয়ামে রামাদ্বান” আবার কখনো “ক্বেয়ামুল লাইল” নাম দিয়ে থাকে। আসলে তারা এরকম দোটানা আচরণ করে কি বুঝাতে চাচ্ছে যে, তারাবির নামায বলতে কিছুই নেই??

তারাবি নামায ২০ রাকাত :

তারাবি নামায ২০ রাকাতের পক্ষে যুক্তি হচ্ছে, প্রখ্যাত সাহাবায়ে কেরামগণ (রা:) তারাবি নামায ২০ রাকাতের পক্ষে বর্ণনা করেছেন। আর তাঁরা হলেন, খলিফা হযরত উমর ফারুক (রা:) ।

তাফসিরে ইবনে কাসির প্রণেতা উল্লেখ করেছেন –  রাসূল (সা:) এর চাচা

√ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:),

√ হযরত আবু যর গিফারী,

√ হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা:),

√ হযরত হাসান (রা:),

√ হযরত ইয়াজিদ ইবনে রুমান (রা:),

√ হযরত ইবনে আবিল হাসনা (রা:),

√ হযরত আবদুল আজিজ ইবনে রুফাহ (রা:) প্রমূখ সাহাবায়ে কেরামগণ (রা:)-ও তারাবি নামায ২০ রাকাতের পক্ষে বর্ণনা করেছেন ।

মোল্লা আলী ক্বারী (রা:) তাঁর পূর্বের ইমামগণ হতে সংগৃহীত একটি হাদিস মিরকাত শরহে মিশকাতের ২য় খণ্ডের ১৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। হাদিসটি হচ্ছে

“রাসূল (সা:)-এর এরশাদ হচ্ছে, সাহাবায়ে কেরামের (রা:) ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত শরয়ী বিধান নিঃশর্তভাবে অনুসরণ করা উম্মতের জন্য আবশ্যক”।

সুতরাং এরূপ ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করা ইমান নষ্ট হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

রাসূল (সা:) ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করতেন, এ সম্পর্কিত হাদিসসমূহ হচ্ছে

√ আল সুনানুল কুবরা বায়হাকীর ২য় খণ্ডের ৬৯৮ পৃষ্ঠার ৪২৮৬ নং হাদিস, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, রাসূল (সা:) রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবি ও বিতির নামাজ আদায় করতেন।

√ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ-এর ২য় খণ্ডের ১৬৩ পৃষ্ঠায় ৭৬৮০ নং হাদিসে হযরত শুতাইর ইবনে শাকাল (রা:) এবং হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:), তারীখু জুয়জান হামযাহ সাহমী (রা:) গ্রন্থের ১৩১৭ পৃষ্ঠায় ৫৫৭ নং হাদিসটিতেও একই রকম বর্ণনা রয়েছে।

এ ছাড়া হযরত আবু যার গিফারী (রা:) হতে বর্ণিত সুনান তিরমিজির ৩য় খণ্ডের ১৬১ ও ১৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত ৮০৬ নং হাদিসটিতে তিনি উল্লেখ করেন। তারাবির নামাজে রাসূল (সা:) কিয়ামুল লাইলও করতেন বলে উল্লেখ করেছেন।

খোলাফায়ে রাশেদা হযরত উমর ফারুক (রা:), হযরত উসমান (রা:), হযরত আলী (রা:), ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করতেন। আর এ সম্পর্কিত হাদিসসমূহ হলো:

√ ছিয়া-ছিত্তাহ হাদিস গ্রন্থসমূহের অন্যতম আবু দাউদ শরীফ-এর ২য় খণ্ডের ১৪২৯নং পৃষ্ঠায় হযরত হাসান (রা:) বলেন, হযরত উমর খাত্তাব (রা:) সকলকে হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:) এর পেছনে একত্র করলেন, তখন ইবনে কাআব (রা:) তাদের ইমামতি করে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করলেন।

√ সুনানু বাইহাকীর ২য় খণ্ডের ৬৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত ৪২৮৯ নং হাদিসে হযরত সায়ীব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বলেন, হযরত উসমান ইবনে আফকান (রা:) এর খিলাফতের সময়ে নামাজিরা দাঁড়ানোর কষ্টে লাঠিতে ভর দিতেন তবুও ২০ রাকাত তারাবির নামাজ কম পড়তেন না।

√ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাইর ২য় খণ্ডের ১৬৩ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত ৭৬৮১ নং হাদিসে হযরত ইবনে আবিল হাসনা (রা:) বলেন, হযরত আলী (রা:) এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন রমজানে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়তে।

এ প্রসঙ্গে আরো হাদীস:

২-জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৬।
৩-মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৭৬৮০, ৭৬৮১, ৭৬৮২, ৭৬৮৩, ৭৬৮৪, ৭৬৮৫।
৪-সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী, হাদীস নং ৪২৯০, ৪২৯১, ৪২৯২।
৫-মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৭৭৩৩।
৬-আল-মু’জামুল কাবীর লিত- তাবারানী, হাদীস নং ১২১০২।
৭-আল-মু’জামুল আওসাত লিত-তাবারানী, হাদীস নং ৭৯৮।
৮-কিতাবুল উম্ম ১/১৬৭। এ ছাড়াও আরো অসংখ্য দলীল রয়েছে। সংক্ষেপে অল্প কিছু সংখ্যক দলীল উল্লেখ করা হলো।
[বি: দ্র: হাদীস নাম্বার ও রেফারেন্সের ক্ষেত্রে “মাকতাবায়ে শামিলা” অনুসরণ করা হয়েছে।]

প্রিয় পাঠক! যে হাদিসের উপর তাদের নিজেদেরই আমাল নেই, সে হাদিসটি আমাদের আহলে সুন্নাহ’র মুসলিমদের বিপরীতে এবং তাদের স্বপক্ষে দলিল হতে পারে কিভাবে, তা কি একটু বলবেন? ?

অবশেষে বলা যায়, নবীজির (সা) প্রাণ প্রিয় খলিফা হযরত উমর (রা) এর আমলে তারাবির নামায বিশ রাকাত হওয়ার উপর সমস্ত সাহাবাদের ঐকমত বা ইজমাহ হয়েছে। এরপর হতে অদ্যাবধি মক্কার হারাম শরিফ এবং মদিনার মসজিদে নববীতে তারাবির নাম বিশ রাকাত পড়া হচ্ছে।

সমগ্র দুনিয়ায় চারো মাযহাবের অনুসারীরা বিশ রাকাত তারাবির উপর আমল করে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র আহলে হাদিস নামধারী বৃটিশ সৃষ্ট এ নতুন ফেরকার অনুসারীরা, যাদের উৎপত্তি- ইতিহাস গত ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের পরের; তারাই সহিহ হাদিসের চটকদার স্লোগানের অন্তরালে সম্প্রতি তারাবীহ আট রাকাত হওয়ার কথা বলে জনমনে চরম বিভ্রান্তি ছড়িয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছে। অথচ তারাবীহ আট রাকাত হওয়ার পক্ষে কোনো সহিহ হাদিস নেই, যা ইতিপূর্বে আপনাদের সম্মুখে বিশদভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কথিত আহলে হাদিসের ধোঁকা থেকে হেফাজত করুন, আমীন।

প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এর তারাবির রাকাত সংখ্যা কত এ সম্পর্কিত লেখা থেকে সংগ্রহ করেছি।

বিঃদ্রঃ আহলে হাদিস ভাইদের প্রতি আহবান-আমার সংগৃহীত লিখাটি পড়ুন ঠান্ডা মাথায়, তারপর বলুন উক্ত লেখায় কোথায় ভুল ‎আছে। পোষ্ট না পড়ে অযথা কপিপেষ্ট ও ফালতু প্যাচাল করে সময় নষ্ট না করতে অনুরোধ করছি। ‎

শহুরে সবজান্তার অতি দর্পে হাতে লংকা ধরিয়ে দিলো পটুয়াখালির গ্রামীণ ছড়াকাররা....

শহর থেকে অাগত মেধাবী শিক্ষিত জ্ঞানবান্ মনোভাবাপন্ন কিছু শিক্ষার্থী পটুয়াখালীর কোন এক গ্রামে তাদের আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে সেখানকার গ্রামের সহজ সরল ছেলেদের সামনে অনবড়ত ইংলিশ বলছে,শহরে থাকে এবং নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ে বলে তারা  নিজের মধ্যে একটু দাম্ভিকতা ও সবজাম্তা মনে করে এবং গ্রামের ছেলেগুলোকে হেয় করতে থাকে..

একসময় গ্রামের ছেলেগুলো ওদের এরূপ দাম্ভিকতা অার সহ্য করতে না পেরে,ওরা ওদের অাঞ্চলিক ভাষায় পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে শেখা জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সেই শহুরে সবজান্তাদের  প্রশ্ন করা শুরু করলো,
-পটুয়াখালিতে খুব সুপারী হয়।এই সুপারি নিয়ে একটি ধাঁধা অাছে।ওটি গ্রামের ছেলেরা ওদের  উদ্দেশ্য করে বললো,পারলে বলেন তো-
'এক থাল সুপারি
গুইন্যা কুলাইতে পারে
কোন ব্যাপারী।'
এটির উত্তর কি হবে..?শহরের ওরা মনে মনে ভাবলো বড়ই কঠিন প্রশ্ন।তবুও চেষ্টা করলো কিন্তু অাকাশ পাতাল হাতড়েও উত্তর খুঁজে পেলো না।
তখন গ্রামীণ ছেলেগুলো মিসকি করে একটু হাসি দিলো।।শিক্ষিত ছেলেগুলো উত্তর জানতে চাইলে,ওরা বললো উত্তর হবে #অাকাশে তারা ।তারা অাবারও মনে মনে ভাবলো অারে বাবা অাকাশের তারা!অাকাশে তারা কেউ গুণে শেষ করতে পারবে?নাহ ধাঁধাটি সত্যিই কঠিন ছিল!

পটুয়াখালিতে সুপারির মত প্রচুর অাখও উৎপন্ন হয়।তাই এ অাখ নিয়েও অারেকটি ধাঁধা রয়েছে,এখন গ্রামীণ ছেলেরা শহুরেদের অারেকটু বোকা বানাতে বললো অাগেরডা তো পারলেন না এহন পারলে কন দিহি,
'অাল্লাহর কি কুদরত
লাডির(লাঠি) মধ্যে শরবত।'
এইডার উত্তর কি হইবে...ছেলেদের এবার মাথা ঘুরছে তারা এবার অার চিন্তা না করেই ওদের কাছে জানতে চাইলো লাঠির মধ্যে অাবার শরবত হবে কি করে?
তখন ওরা একটু রহস্যজনক ভাঙ্গিতে মিঠু মিঠু হাসতে হাসতে বললো অাছে অাছে শরবত অাছে।অাখ ভাইঙ্গা দাহেন-মিষ্টি শরবত পাইবেন।
নিজের বুদ্ধির ঘাটতি দেখে এবার নামী স্কুলের দামী ছাত্ররা সত্যিই লজ্জায় পড়ে গেল।এত সহজ জিনিসও সে বুঝতে পারলো না.....
(পটুয়াখালিতে অারও একটি জনপ্রিয় ছড়া অাছে,যা এখান থেকে ছড়িয়ে এখন বোধহয় অনন্য অঞ্চলেও কম বেশি শোনা যায়।)
ওরা এবার শহুরেদের চূড়ান্ত পর্যায়ে অপদস্হ করতে ছোট ছোট প্রশ্ন করতে শুরু করলো,
একডা কথা'
-কী কথা
ব্যাঙের মাথা
-কি ব্যাঙ
সরু ব্যাঙ
-কী সরু
ছাও গরু
-কি ছাও
গু খাও।'
ছেলেরা একেবারে নাকানিচুবানি খেল।
তাদের একজন ছিলো  ট্যারা।ওদের মধ্যে একজন ছড়া কেটে বলে উঠল-
'চায় তুষখালি-দ্যাখে বিষখালি।'
কথাটি বলেই ওরা সবাই হা হা করে হাসতে রইলো।
তুষখালি একটি #গ্রামের নাম-বিষখালি একটি #নদীর নাম।ট্যারা মানুষ একদিকে তাকালে মনে হয় অারেক দিকে তাকিয়ে অাছে-তাই ওই ট্যারাকেও বিদ্রুপ থেকে রেহাই দিল না এই ছড়াকাররা।
যাই হোক শহুরে ছেলেরা ওদের কাছে এরকম অপদস্হ ও পঁচান খেয়ে এবং এরূপ বিদ্রুপ এর স্বীকার হয়ে তাঁরা   তৎক্ষণাৎ ওখান থেকে লেজ গুটিয়ে পালালো......

Friday, 25 May 2018

বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮: উন্মাদ হওয়ার আগে একটু ভাবুন(পর্ব-১) অাজকের টপিক#পতাকা সমাচার-

সমাচার খেলা শুরু হওয়ার বেশ আগে থেকেই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের পতাকায় গোটা দেশের বাসা-বাড়ি ও দোকানের ছাদগুলো ছেয়ে যায়। সম্ভবত বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী কোনো দেশেও অন্য দেশের পতাকার এমন ছড়াছড়ি হয় না।
নিষিদ্ধ করা হোক ভিনদেশীদের পাতাকা।
আপনার রক্তকেনা স্বাধিন দেশে ইসরায়েলি মার্কেনি  পতাকা কেনো.? আপনার লাল সবুজের পাতাকা কি অন্য দেশে উড্ডায়ন  হয়.,,,,,????(এখানে যুক্তিবিদরা কিছু সাধারণ যুক্তি দিবে হয়তো,দেওয়ার অাগে সার্বিক দিক দিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভেবে নিয়েন।)
যদি পাতাকা উড়াতেই হয় মাজলুমানের রক্ত খচিত পাতাকা উত্তলন করুন ছড়িয়ে যাবে এক প্রতিবাদি আওয়াজ। আজ ফিলিস্তিনি বার্মা আফগান রক্তাক্ত। আর্জেন্টিনা ব্রাজিল এরা ইসরায়েলি বংশের নাতি পুতি তাই এদের পতাকা উড্ডয়ন পরিহার করুন।তবে হ্যাঁ অার্জেন্টিনা,ব্রাজিল,জার্মানি... ইত্যাদি অামাদের এসব দলের খেলা ভালো লাগে তাই অামরা এসব দল সাপোর্ট করি,তাই বলে এদের জাতি হিসেবে নয়,যে কারণে অামরা বাঙালিরা তাদের দেশের পতাকা উড্ডায়ন করাটাকে জরুরী এবং এটি পছন্দের দলকে সাপোর্ট করারও একমাত্র বহঃপ্রকাশ নয়,যে কারণে পতাকা টানানোটা অামরা অাবশ্যক বলে মনে করবো......

বিদ্যমান দেশীয় আইনেও তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য? একটি জাতীয় দৈনিক থেকে একটি উদ্ধৃতি তুলে দিচ্ছি। বাংলাদেশ সংবিধানের ৪ নং অনুচ্ছেদের বিধি ৯-এর ৪ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, ‘কোনো বিদেশী পতাকা বাংলাদেশের কোনো ভবন বা গাড়িতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সুনির্দিষ্ট অনুমতি ছাড়া উত্তোলন করা যাবে না।’ ৪ নং অনুচ্ছেদের বিধি ৭-এর ৭ ধারায় আরো বলা হয়েছে, ‘অন্য কোনো পতাকা বাংলাদেশের পতাকার চেয়ে উঁচুতে উত্তোলন করা যাবে না।’ আইনে আরো আছে, ‘বাংলাদেশের পতাকা ভিন্ন দেশের পতাকার চেয়ে আকারে ছোট না হতে হবে।’ বলাবাহুল্য, বিশ্বকাপ উন্মাদনায় এসব আইনের কোনো তোয়াক্কা করা হয় না। অথচ গত আসরে যে দেশে খেলা হল, সেখানেও ভিন দেশীয় পতাকা উত্তোলনের ব্যাপারে সে দেশের সরকার হস্তক্ষেপ করেছিল। আইন করে পুলিশদের জন্য পতাকা উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। (সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক, ১৪ জুন ২০০৬)

পরিঃশেষে একটি মেসেজ দিতে চাই তা হলো,"আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিলের পতাকা নয়,আপনার টাকায় হোক অসহায় শিশুটির জন্য ঈদের একটি জামা।"
--- হাসুক প্রাণ, বাঁচুক আশা ---✌✌
অাল্লাহ অামাদের সহীহ বুঝ দন করুক।(অামিন)
#Writer-Md Abdul Qahhar Khan.

Thursday, 24 May 2018

তারাবির রাকাত সংখ্যা কত—বিশ, নাকি তারও কম?

তারাবির নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে কথিত আহলে হাদিসদের মিথ্যাচার এবং কুরঅান ও হাদিস মোতাবেক দলিল ‎ভিত্তিক বিশ্লেষণ -
আমাদের দেশের কিছু আহলে হাদিস নামধারীরা তারাবীহের রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে দীর্ঘদিন যাবত। তাদের দাবী ‎সহীহ হাদিসের ভিত্তিতে কেবল ৮ রাকাত তারাবীহ নামায প্রমাণিত। দলিল হিসেবে কিছু হাদিস পেশ করে যার কোনটিই স্পষ্ট ‎তারাবীহকে বুঝায়না, বা হাদিসগুলি একেবারেই দুর্বল। এরপরও বিশ রাকাত তারাবীহ যা হাদিস ও সাহাবায়ে কিরামের সর্ব ‎সম্মত ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে প্রমাণিত একে অস্বীকার করে যায় নিতান্তই ঘাড়ত্যারামী করে। রামাযান মাসে জাতিকে সুন্নত ‎আমল থেকে বিরত রাখে এক নিকৃষ্ট পন্থায়। সেই সকল ভ্রান্ত অনুসারীদের দাবি-যুক্তি খন্ডনের নিমিত্তে আমার এই প্রয়াস।অাশা করি নিম্নের এ লেখাটি যিনি একবার পড়বেন, তাকে কথিত আট রাকাতি আহলে আল-বানী সম্প্রদায় কখনো ধোকায় ফেলতে পারবেনা, ইনশাআল্লাহ।
আহলে হাদিসদের তারাবি আট রাকাত হওয়ার দলিল ও অাহলে সুন্নত ওয়াল জামাত এর অালেমদের খন্ডন :
নবীজির (সা) প্রাণ প্রিয় খলিফা হযরত উমর (রা) এর আমলে তারাবির নামায বিশ রাকাত হওয়ার উপর সমস্ত সাহাবাদের ঐকমত বা ইজমাহ হয়েছে। এরপর হতে অদ্যাবধি মক্কার হারাম শরিফ এবং মদিনার মসজিদে নববীতে তারাবির নাম বিশ রাকাত পড়া হচ্ছে।
সমগ্র দুনিয়ায় চারো মাযহাবের অনুসারীরা বিশ রাকাত তারাবির উপর আমল করে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র আহলে হাদিস নামধারী বৃটিশ সৃষ্ট এ নতুন ফেরকার অনুসারীরা, যাদের উৎপত্তি- ইতিহাস গত ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের পরের; তারাই সহিহ হাদিসের চটকদার স্লোগানের অন্তরালে সম্প্রতি তারাবীহ আট রাকাত হওয়ার কথা বলে জনমনে চরম বিভ্রান্তি ছড়িয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছে। অথচ তারাবীহ আট রাকাত হওয়ার পক্ষে কোনো সহিহ হাদিস নেই, যা এখানে আপনাদের সম্মুখে বিশদভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।
কথিত আহলে হাদিসরা তারাবি আট রাকাত হওয়ার পক্ষে নিচের হাদিস দ্বারা দলিল (?) দিতে চায়।
হাদিস :
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻠﻤﺔ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺃﻧﻪ ﺳﺄﻝ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻛﻴﻒ ﻛﺎﻧﺖ ﺻﻼﺓ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ؟ ﻓﻘﺎﻟﺖ : ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻻ ﻓﻲ ﻏﻴﺮﻩ ﻋﻠﻰ ﺇﺣﺪﻯ ﻋﺸﺮﺓ ﺭﻛﻌﺔ ﻳﺼﻠﻲ ﺃﺭﺑﻌﺎ ﻓﻼ ﺗﺴﻞ ﻋﻦ ﺣﺴﻨﻬﻦ ﻭﻃﻮﻟﻬﻦ ﺛﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﺃﺭﺑﻌﺎ ﻓﻼ ﺗﺴﻞ ﻋﻦ ﺣﺴﻨﻬﻦ ﻭﻃﻮﻟﻬﻦ ﺛﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﺛﻼﺛﺎ فقلت يا رسول الله أ تنام قبل أن توتر ؟ قال يا عائشة ان عيني تنامان ولا ينام قلبي.
অনুবাদ : আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করেন যে, রমযানে নবীজীর নামায কেমন হত? তিনি উত্তরে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযানের বাইরে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন।
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) [আরো] বলেন, আমি রাসূল (সা)- কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ’র রাসুল! আপনি কি বিতিরের নামায আদায়ের পূর্বে ঘুমিয়ে পড়েন? উত্তরে তিনি বললেন, হে আয়েশা, আমার চোখ ঘুমায়, কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায় না।” [এ পর্যন্ত হাদিসের অনুবাদ সমাপ্ত হল]
– {সহীহ বুখারী ১/১৫৪, হাদীস ১১৪৭; সহীহ মুসলিম ১/২৫৪, হাদীস ৭৩৮; সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮, হাদীস ১৬৯৭; সুনানে আবু দাউদ ১/১৮৯, হাদীস ১৩৩৫; মুসনাদে আহমদ ৬/৩৬, হাদীস ২৪০৭৩}
দলিলের অযুক্তিকতা ও খণ্ডন:
উল্লিখিত হাদিসকে কয়েকটি কারণে আট রাকাতের দলিল বানানো যুক্তিসংগত নয়। বিস্তারিত নিম্নরূপ –
১-“তারাবীহ” (تراويح) শব্দটি বহুবচন। তার একবচন হল “তারবীহ” (ترويح) । কিন্তু আভিধানিক অর্থে “তারবীহ” (ترويح) বলা হয় একবার বিশ্রাম নেয়াকে। শরিয়তের পরিভাষায় রামাদ্বানের রাতে তারাবীর প্রতি চার রাকাত বা’দ বিশ্রাম নেয়াকে (একবচনে) “তারবীহ” (ترويح) বলা হয়। পরবর্তীকালে এটিই তার আভিধানিক অর্থে রূপান্তরিত হয়ে যায়।
[সূত্র— মেসবাহুল লুগাত, পৃষ্ঠা ৩২২]
বুখারি শরিফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ “ফাতহুল বারী” কিতাবে আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার (রহ) তিনিও লিখেছেন :
ﺗﻌﺮﻳﻒ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻫﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﺘﻲ ﺗﺼﻠﻰ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻓﻲ ﻟﻴﺎﻟﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ، ﻭﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﺟﻤﻊ ﺗﺮﻭﻳﺤﺔ، ﺳﻤﻴﺖ ﺑﺬﻟﻚ ﻷﻧﻬﻢ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﺃﻭﻝ ﻣﺎ ﺍﺟﺘﻤﻌﻮﺍ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻳﺴﺘﺮﻳﺤﻮﻥ ﺑﻴﻦ ﻛﻞ ﺗﺴﻠﻴﻤﺘﻴﻦ، ﻛﻤﺎ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﺍﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﺗﻌﺮﻑ ﻛﺬﻟﻚ ﺑﻘﻴﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ
অনুবাদ : “তারাবীহ’র সংজ্ঞা হল, রামাদ্বানের রজনীতে জামাতে যে নামায আদায় করা হয়, তাই তারাবীহ। তারাবীহ বহুবচন, একবচনে তারবিয়াহ। তারাবীহ বলে নাম রাখার কারণ, মুসল্লিগণ প্রতি দুই সালামের মধ্যখানে বিশ্রাম নেয়।”
তাই বলা যায়, যেহেতু তারাবীহ (تراويح) বহুবচন শব্দ, তার একবচন “তারবীহ” (ترويح)। তার মানে হবে একবার বিশ্রাম নেয়া। সে হিসেবে দুই বার বিশ্রাম নেয়াকে “তারবিহাতান” বা “তারবিহাতাঈন” বলা হবে।
এখন বুঝুন, আরবীতে বচন হয় তিনটি। একবচন, দ্বিবচন ও বহুবচন। রামাদ্বানে প্রত্যেক চার রাকাত বা’দ আরাম করা হয়। যদি তারাবির নামায আট রাকাত হত, তাহলে ৪+৪= ৮ রাকাত তারাবির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র দুই বারই বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ থাকে। যা বচনের ক্ষেত্রে দ্বিবচন হয়। ফলে তাকে আরবী ভাষায় (বহুবচনে) তারাবীহ (تراويح) বলা যাবেনা, বরং দুই বার বিশ্রাম নেয়ার কারণে (দ্বিবচনে) “তারবিহাতান” বা “তারবিহাতাঈন” ترويحتان او ترويحتين বলা যেতে পারে।
অথচ আরবী ভাষায় (বহুবচনে) তারাবীহ (تراويح) হতে হলে তিনের অধিক বার বিশ্রাম নিতে হয়। তাই অভিধান অনুসারে তিনবার বা ততোধিক বার বিশ্রাম নিতে হলে তখন তারাবির রাকাত সংখ্যা আট রাকাত হওয়ার মোটেই সুযোগ থাকেনা, বরং তখন তারাবির রাকাত সংখ্যা বারো অথবা তার চেয়েও অধিক তথা বিশ রাকাতই হতে হয়, যা যুক্তিক ও বিবেকগ্রাহ্য।
অতএব তারাবির রাকাত সংখ্যা আট রাকাত নয়, বরং তার চেয়েও অধিক তথা বিশ রাকাত।
২-মূলত তাহাজ্জুদ নামাযের সাথেই উক্ত হাদিসটির সম্পর্ক। কারণ হযরত আয়েশা (রা) রামাদ্বান এবং অন্যান্য মাস তথা পুরো বছরের কথা উল্লেখ করেছেন।
উনার ভাষ্য হল : ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻻ ﻓﻲ ﻏﻴﺮﻩ অর্থাৎ “রামাদ্বান এবং অন্যান্য মাসে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না”। তার মানে রাসূল (সা) রামাদ্বান ছাড়াও পুরো বছর ব্যাপী এ এগার রাকাত আদায় করতেন। অথচ তারাবির সম্পর্ক তো শুধু মাহে রামাদ্বানের সাথে। যার বাহিরে অন্যান্য মাসে তা পড়া হয় না। ফলে বুঝা গেল, হাদিসটিতে উল্লিখিত বিতির সহ মোট এগার রাকাতের সম্পর্ক তারাবির সাথে নয়, বরং তাহাজ্জুদের নামাযের সাথেই সম্পর্ক। সুতরাং প্রমাণিত হল যে তারাবির রাকাত সংখ্যা আট নয়, বরং বিশ রাকাত।
৩-তারাবির নামায রাসূল (সা) থেকে এশার পর আদায় করার কথা যেমন উল্লেখ রয়েছে, তেমনি উল্লেখ রয়েছে শেষ রাতে বিতির সহ তাহাজ্জুদের নামায আদায় করার কথা।
হাদিসে এ বাক্যটি রয়েছে এরকম যে يا رسول الله ا تنام قبل أن توتر؟ অর্থাৎ হে আল্লাহ’র রাসূল! আপনি কি বিতির পড়ার আগেই ঘুমিয়ে পড়েন? এ বাক্যাংশটি দ্বারাও এ কথা প্রমাণ হল যে, উক্ত হাদিসটির সম্পর্ক তাহাজ্জুদের সাথে, তারাবির সাথে নয়। কারণ ঘুমিয়ে পড়লে তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত পেরিয়ে যাওয়ার আশংকা থাকতে পারে। তাই রাতের শেষাংশে রাসূলের বিতির পড়ার যে নিয়ম, তা উপেক্ষা করে রাতের প্রথমাংশে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন কিনা এ ব্যাপারে সতর্ক করাই উক্ত বাক্যাংশের প্রকৃত উদ্দেশ্য।
সামগ্রিক ভাবে প্রমাণ হল, উল্লিখিত হাদিসে বিতির সহ এগার রাকাতের সম্পর্ক তারাবির সাথে নয়। কেননা রাসূল (সা) তিনি রাত্রের প্রথমাংশে ঘুমাতেন এবং বিতিরের নামায তাহাজ্জুদের সাথে আদায় করতেন। বুখারি শরিফে এ কথার সমর্থনে গোটা এক খানা হাদিসই উল্লেখ রয়েছে। যেমন –
সহিহ বুখারির অপর আরেকটি হাদিসে এসেছে :
ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻋﻦ ﺍﻷﺳﻮﺩ ﻗﺎﻝ ﺳﺄﻟﺖ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻛﻴﻒ ﻛﺎﻧﺖ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﺎﻟﻠﻴﻞ؟ ﻗﺎﻟﺖ: ﻛﺎﻥ ﻳﻨﺎﻡ ﺃﻭﻟﻪ ﻭﻳﻘﻮﻡ ﺁﺧﺮﻩ ﻓﻴﺼﻠﻲ ﺛﻢ ﻳﺮﺟﻊ ﺇﻟﻰ ﻓﺮﺍﺷﻪ. ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ .
অনুবাদ : বিশিষ্ট তাবেয়ি হযরত আসওয়াদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হযরত আয়েশা (রা) -কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলের (সা) রাত্রিকালীন নামায কেমন ছিল? তিনি উত্তরে বললেন, রাসূল (সা) তিনি রাত্রের প্রথমাংশে ঘুমাতেন আর শেষাংশে কিয়ামুল লাইল করতেন তথা তাহাজ্জুদ পড়তেন। এরপর সালাত আদায় শেষে তিনি বিছানায় তাশরিফ নিতেন।
সূত্র— সহিহ বুখারি শরিফ।
৪-হাদিসটির খন্ডাংশ “ولا في غيره অর্থাৎ অন্য মাসেও” হযরত আয়েশা (রা) -এর এ জবাবটি দ্বারা রাসূলের পুরো বছর তাহাজ্জুদ পড়া প্রমাণিত।
প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উদ্দেশ্য ছিল, আল্লাহ’র রাসূল (সা) মাহে রামাদ্বানেও তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করেন, নাকি তারাবির কারণে তা ছেড়ে দেন?
প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তিনি জ্ঞানগর্ভ জবাব দিয়েছেন।
হযরত আয়েশা (রা)-এর জ্ঞানগর্ভ জবাবটি হল : “আল্লাহ’র রাসূল (সা) রামাদ্বান এবং রামাদ্বানের বাহিরে বিতিরের নামায সহ এগার রাকাত আদায় করতেন। চার চার রাকাত করে মোট আট রাকাত আর তিন রাকাত বিতিরের নামায আদায় করতেন।”
কথিত আহলে হাদিস নামধারী গায়রে-মুকাল্লিদরা মানুষকে ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশ্যে বুখারি শরিফের উক্ত হাদিসটি দ্বারা তারাবির আট রাকাতের পক্ষে দলিল (?) দেয়। এটি ছাড়া তাদের মেরুদণ্ডহীন মতবাদটির পক্ষে দ্বিতীয় আর কোনো দলিল নেই। মজার ব্যাপার হল, বুখারি শরিফের উক্ত হাদিসটিতে রাসূলেপাকের (সা) উক্ত আট রাকাত দু সালামে চার চার রাকাত করে পড়ার কথাই উল্লেখ পাওয়া যায়। বিতিরের নামাযের রাকাত সংখ্যা “তিন” হওয়ার কথাও প্রমাণিত।
৫-হযরত আয়েশা (রা)-এর উক্ত রেওয়ায়েত দ্বারা যদি তারাবিই বুঝানো উদ্দেশ্য হত, তাহলে হযরত উমর (রা)-এর খেলাফত আমলে যখন বিশ রাকাতের উপর উম্মাহ’র ইজমা হল, তখন হযরত আয়েশা (রা) তার বিরুধিতা করেননি কেন? হক্বকথা বলা থেকে তিনি চুপ ছিলেন কেন? অথচ তিনি তখনো জীবিত ছিলেন। হযরত আয়েশা (রা) নবীজি (সা) থেকে মোট ২২১১টি হাদিস রেওয়ায়েত করেছিলেন এবং ৫৭ বা ৫৮ হিজরীতে ইন্তিকাল করেছিলেন।
৬-আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন- “আর আমার কাছে এটি প্রকাশিত হয়েছে যে, ১১ রাকাতের থেকে না বাড়ানোর রহস্য এটি যে, নিশ্চয় তাহাজ্জুদ ও বিতরের নামায রাতের নামাযের সাথে খাস। আর দিনের ফরয যোহর ৪ রাকাত আর আসর সেটাও ৪ রাকাত আর মাগরীব হল ৩ রাকাত, যা দিনের বিতর। সুতরাং সমতা-বিধান হল রাতের নামায দিনের নামাযের মতই সংখ্যার দিক থেকে সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত হওয়া । আর ১৩ রাকাতের ক্ষেত্রে সমতা-বিধান হল, ফযরের নামায মিলানোর মাধ্যমে। কেননা এটি দিনের নামাযই তার পরবর্তী নামাযের মত।”
(ফাতহুল বারী শরহুল বুখারী-৩/১৭)
ইবনে হাজার (রহ) এর এই রহস্য বা হিকমত বর্ণনা কি বলছেনা, এই হাদিস দ্বারা তাহাজ্জুদ উদ্দেশ্য, কিন্তু তারাবীহ উদ্দেশ্য নয়? এই বক্তব্যে তাহাজ্জুদের কথা স্পষ্টই উল্লেখ করলেন ইবনে হাজার (রহ)।
তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের মাঝে পার্থক্য :
কথিত আহলে হাদিসরা ইদানীং বুল পাল্টে বলেন, “তাহাজ্জুদ আর তারাবীহ একই”। নিম্নবর্ণিত কারণে তাদের এই দাবিটি ভুল ।
১- তাহাজ্জুদের মাঝে ডাকাডাকি জায়েজ নয়, কিন্তু তারাবীহতে জায়েজ।
২- তারাবীহের সময় ঘুমানোর আগে তাহাজ্জুদের সময় নির্ধারিত নয় তবে উত্তম ঘুমের পর।
৩- মুহাদ্দিসীনে কিরাম তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের অধ্যায় ভিন্ন ভিন্ন লিখেছেন।
৪- তাহাজ্জুদ নামাযের হুকুম কুরআন দ্বারা প্রমাণিত যথা সূরা ইসারার ৭৯ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ﻭَﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻓَﺘَﻬَﺠَّﺪْ ﺑِﻪِ ﻧَﺎﻓِﻠَﺔً ﻟَّﻚَ ﻋَﺴَﻰ ﺃَﻥ ﻳَﺒْﻌَﺜَﻚَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻣَﻘَﺎﻣًﺎ ﻣَّﺤْﻤُﻮﺩًﺍ অর্থাৎ আর রাতে তাহাজ্জুদ পড় এটি তোমার জন্য নফল, অচিরেই তোমাকে তোমার রব প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করবেন।
আর তারাবীহের ব্যাপারে আল্লাহর নবী বলেন-নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা রামযানের রোযা তোমাদের উপর ফরয করেছেন আর আমি তোমাদের উপর এতে কিয়াম করাকে সুন্নত করেছি। (সুনানে নাসায়ী-১/৩০৮) ।
সুতরাং বুঝা গেল তাহাজ্জুদ আল্লাহর আয়াত আর তারাবীহ নবীজীর বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত।
৫- তাহাজ্জুদের হুকুম মক্কায় হয়েছে আর তারাবীহের হুকুম মদীনায় হয়েছে।
৬- ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহঃ তিনিও তারাবীহ আর তাহাজ্জুদ আলাদা আলাদা বিশ্বাস করতেন। (মাকনা’-১৮৪) ।
৭- ইমাম বুখারী (রহ)- এর ক্ষেত্রে বর্ণিত আছে, তিনি রাতের প্রথমাংশে তার সাগরীদদের নিয়ে তারাবীহ পড়তেন আর শেষ রাতে একাকি তাহাজ্জুদ পড়তেন। (ইমাম বুখারী রহঃ এর জীবনী দ্রষ্টব্য )।
৮- যদি “সালাতুল-লাইল” দ্বারা তাহাজ্জুদ এবং তারাবীহ দুটি মিলে একই নামায উদ্দেশ্য হত, তাহলে হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত নিচের সহিহ হাদিসগুলোর জবাব কী?
যেমন—সহিহ বুখারীতে রয়েছে, হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, “রাসূল (সা)-এর “সালাতুল-লাইল” বা রাতের নামায ৭/৯/১১ রাকাত হতো, ফজরের সুন্নত ব্যতীত”। [সূত্র : সহিহ বুখারী ১/৩৪৫ হাদীস নং ১১৩৯] ৷
আয়েশা (রা) থেকে অপর আরেক বর্ণনায় রয়েছে, “রাসূল (সা) ফজরের সুন্নত ব্যতীতই ১৩ রাকাত পড়তেন ৷”
[ সূত্র : বুখারী ১/৩৫৪, হাদীস নং ১১৭০]৷
এবার লামাযহাবি কথিত আহলে হাদিসের নিকট জবাব চাই, যদি “সালাতুল-লাইল” বা রাতের নামায দ্বারা তাহাজ্জুদ এবং তারাবীহ দুটি মিলে একটি উদ্দেশ্য হয়; তাহলে যেখানে হযরত আয়েশা (রা) থেকেই ৭/৮/৯/১১/১৩ রাকাত বর্ণিত, সেখানে তারাবীহ’র রাকাত সংখ্যা শুধুই আট রাকাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেন কেন? এটি কোন ধরণের সহিহ হাদিসের আমল! !
আফসোস! কথিত আহলে হাদিস নামধারীরা তারাবির নামায চার চার রাকাত করে মোট দুই সালামে আদায় করার বিপরীরে দুই দুই রাকাত করে মোট চার সালামে তা আদায় করে। বিতির আদায় করে শুধু এক রাকাত। যা সুস্পষ্টভাবে তাদেরই উদ্ধৃত সহিহ হাদিসের খেলাফ এবং চরম বিভ্রান্তিকর। অতএব আবারো প্রমাণিত হল, উক্ত হাদিসটি মোটেও কথিত আহলে হাদিসের দাবির পক্ষে নয়, বরং তদ্দারা বিতির সহ মোট এগার রাকাত তাহাজ্জুদের নামাযই প্রমাণিত।
আহলে হাদিস নামধারীরা মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য রামাদ্বানের বাহিরে এর নাম দিয়ে থাকে “তাহাজ্জুদ” আর মাহে রামাদ্বানের তারাবিকে কখনো “ক্বেয়ামে রামাদ্বান” আবার কখনো “ক্বেয়ামুল লাইল” নাম দিয়ে থাকে। আসলে তারা এরকম দোটানা আচরণ করে কি বুঝাতে চাচ্ছে যে, তারাবির নামায বলতে কিছুই নেই??
তারাবি নামায ২০ রাকাত :
তারাবি নামায ২০ রাকাতের পক্ষে যুক্তি হচ্ছে, প্রখ্যাত সাহাবায়ে কেরামগণ (রা:) তারাবি নামায ২০ রাকাতের পক্ষে বর্ণনা করেছেন। আর তাঁরা হলেন, খলিফা হযরত উমর ফারুক (রা:) ।
তাফসিরে ইবনে কাসির প্রণেতা উল্লেখ করেছেন – রাসূল (সা:) এর চাচা
√ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:),
√ হযরত আবু যর গিফারী,
√ হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা:),
√ হযরত হাসান (রা:),
√ হযরত ইয়াজিদ ইবনে রুমান (রা:),
√ হযরত ইবনে আবিল হাসনা (রা:),
√ হযরত আবদুল আজিজ ইবনে রুফাহ (রা:) প্রমূখ সাহাবায়ে কেরামগণ (রা:)-ও তারাবি নামায ২০ রাকাতের পক্ষে বর্ণনা করেছেন ।
মোল্লা আলী ক্বারী (রা:) তাঁর পূর্বের ইমামগণ হতে সংগৃহীত একটি হাদিস মিরকাত শরহে মিশকাতের ২য় খণ্ডের ১৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। হাদিসটি হচ্ছে
“রাসূল (সা:)-এর এরশাদ হচ্ছে, সাহাবায়ে কেরামের (রা:) ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত শরয়ী বিধান নিঃশর্তভাবে অনুসরণ করা উম্মতের জন্য আবশ্যক”।
সুতরাং এরূপ ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করা ইমান নষ্ট হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
রাসূল (সা:) ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করতেন, এ সম্পর্কিত হাদিসসমূহ হচ্ছে
√ আল সুনানুল কুবরা বায়হাকীর ২য় খণ্ডের ৬৯৮ পৃষ্ঠার ৪২৮৬ নং হাদিস, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, রাসূল (সা:) রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবি ও বিতির নামাজ আদায় করতেন।
√ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ-এর ২য় খণ্ডের ১৬৩ পৃষ্ঠায় ৭৬৮০ নং হাদিসে হযরত শুতাইর ইবনে শাকাল (রা:) এবং হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:), তারীখু জুয়জান হামযাহ সাহমী (রা:) গ্রন্থের ১৩১৭ পৃষ্ঠায় ৫৫৭ নং হাদিসটিতেও একই রকম বর্ণনা রয়েছে।
এ ছাড়া হযরত আবু যার গিফারী (রা:) হতে বর্ণিত সুনান তিরমিজির ৩য় খণ্ডের ১৬১ ও ১৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত ৮০৬ নং হাদিসটিতে তিনি উল্লেখ করেন। তারাবির নামাজে রাসূল (সা:) কিয়ামুল লাইলও করতেন বলে উল্লেখ করেছেন।
খোলাফায়ে রাশেদা হযরত উমর ফারুক (রা:), হযরত উসমান (রা:), হযরত আলী (রা:), ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করতেন। আর এ সম্পর্কিত হাদিসসমূহ হলো:
√ ছিয়া-ছিত্তাহ হাদিস গ্রন্থসমূহের অন্যতম আবু দাউদ শরীফ-এর ২য় খণ্ডের ১৪২৯নং পৃষ্ঠায় হযরত হাসান (রা:) বলেন, হযরত উমর খাত্তাব (রা:) সকলকে হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:) এর পেছনে একত্র করলেন, তখন ইবনে কাআব (রা:) তাদের ইমামতি করে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করলেন।
√ সুনানু বাইহাকীর ২য় খণ্ডের ৬৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত ৪২৮৯ নং হাদিসে হযরত সায়ীব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বলেন, হযরত উসমান ইবনে আফকান (রা:) এর খিলাফতের সময়ে নামাজিরা দাঁড়ানোর কষ্টে লাঠিতে ভর দিতেন তবুও ২০ রাকাত তারাবির নামাজ কম পড়তেন না।
√ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাইর ২য় খণ্ডের ১৬৩ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত ৭৬৮১ নং হাদিসে হযরত ইবনে আবিল হাসনা (রা:) বলেন, হযরত আলী (রা:) এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন রমজানে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়তে।
এ প্রসঙ্গে আরো হাদীস:
২-জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৬।
৩-মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৭৬৮০, ৭৬৮১, ৭৬৮২, ৭৬৮৩, ৭৬৮৪, ৭৬৮৫।
৪-সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী, হাদীস নং ৪২৯০, ৪২৯১, ৪২৯২।
৫-মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৭৭৩৩।
৬-আল-মু’জামুল কাবীর লিত- তাবারানী, হাদীস নং ১২১০২।
৭-আল-মু’জামুল আওসাত লিত-তাবারানী, হাদীস নং ৭৯৮।
৮-কিতাবুল উম্ম ১/১৬৭। এ ছাড়াও আরো অসংখ্য দলীল রয়েছে। সংক্ষেপে অল্প কিছু সংখ্যক দলীল উল্লেখ করা হলো।
[বি: দ্র: হাদীস নাম্বার ও রেফারেন্সের ক্ষেত্রে “মাকতাবায়ে শামিলা” অনুসরণ করা হয়েছে।]
প্রিয় পাঠক! যে হাদিসের উপর তাদের নিজেদেরই আমাল নেই, সে হাদিসটি আমাদের আহলে সুন্নাহ’র মুসলিমদের বিপরীতে এবং তাদের স্বপক্ষে দলিল হতে পারে কিভাবে, তা কি একটু বলবেন? ?
অবশেষে বলা যায়, নবীজির (সা) প্রাণ প্রিয় খলিফা হযরত উমর (রা) এর আমলে তারাবির নামায বিশ রাকাত হওয়ার উপর সমস্ত সাহাবাদের ঐকমত বা ইজমাহ হয়েছে। এরপর হতে অদ্যাবধি মক্কার হারাম শরিফ এবং মদিনার মসজিদে নববীতে তারাবির নাম বিশ রাকাত পড়া হচ্ছে।
সমগ্র দুনিয়ায় চারো মাযহাবের অনুসারীরা বিশ রাকাত তারাবির উপর আমল করে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র আহলে হাদিস নামধারী বৃটিশ সৃষ্ট এ নতুন ফেরকার অনুসারীরা, যাদের উৎপত্তি- ইতিহাস গত ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের পরের; তারাই সহিহ হাদিসের চটকদার স্লোগানের অন্তরালে সম্প্রতি তারাবীহ আট রাকাত হওয়ার কথা বলে জনমনে চরম বিভ্রান্তি ছড়িয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছে। অথচ তারাবীহ আট রাকাত হওয়ার পক্ষে কোনো সহিহ হাদিস নেই, যা ইতিপূর্বে আপনাদের সম্মুখে বিশদভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কথিত আহলে হাদিসের ধোঁকা থেকে হেফাজত করুন, আমীন।
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এর তারাবির রাকাত সংখ্যা কত এ সম্পর্কিত লেখা থেকে সংগ্রহ করেছি।
বিঃদ্রঃ আহলে হাদিস ভাইদের প্রতি আহবান-আমার সংগৃহীত লিখাটি পড়ুন ঠান্ডা মাথায়, তারপর বলুন উক্ত লেখায় কোথায় ভুল ‎আছে। পোষ্ট না পড়ে অযথা কপিপেষ্ট ও ফালতু প্যাচাল করে সময় নষ্ট না করতে অনুরোধ করছি। ‎

রোযার সেহরির নিয়ত বিষয়ক মুসলিমদের ভুল ধারণাগুলো নিয়ে জরুরি প্রশ্ন উত্তর(পর্ব-৪.১)

প্রশ্ন:জনৈক ব্যক্তি রমযানের প্রথম রোযার দিন এই নিয়ত করে যে, আমি পূর্ণ এক মাসের রোযা রাখার নিয়ত করলো।এখন বিষয় হল, উক্ত ব্যক্তির এই নিয়তের দ্বারা পূর্ণ এক মাসের রোযা আদায় হবে কি না? রমযান মাসে আমরা সেহরী খাই কিন্তু রোযার নিয়ত করি না। সেহরী খাওয়ার দ্বারাই কি রোযার নিয়ত হয়ে যাবে?

উত্তর:রমযান মাসের প্রত্যেক রোযার জন্য প্রতিদিন পৃথক পৃথক নিয়ত করা শর্ত। এক সাথে পুরো মাসের নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। তবে রোযার উদ্দেশ্যে সেহরী খাওয়াও রোযার নিয়তের অন্তর্ভুক্ত। মৌখিক নিয়ত করা জরুরি নয়।
-সহীহ বুখারী ১/২; ফাতাওয়া হিন্দিয় ১/১৯৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০০-২০১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৫৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৭৯

প্রশ্ন:কারও যদি খুব বমি হয় এবং এর ফলে শরীর প্রচন্ড দুর্বল হয়ে পড়লে। এ কারণে পরের দিন রোযা রাখার নিয়ত না করলে,এমনকি সাহরীও না খেলে।অানুমানিক সকাল ৮-৯ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে শরীর খুব হালকা বোধ হয়। তাই তখন রোযার নিয়ত করে ফেললে এখন প্রশ্ন হল, বিলম্বে নিয়ত করায় উক্ত ব্যক্তির রোযা কি সহীহ হবে? উল্লেখ্য, সুবহে সাদিক থেকে রোযার নিয়ত করা পর্যন্ত রোযা ভঙ্গের কোনো কাজ করা হয়নি।

উত্তর:রমযানের রোযার নিয়ত সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময়ের পূর্বে করলেও রোযা সহীহ হয়ে যায়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু আপনি এ সময়ের ভেতরেই রোযার নিয়ত করেছেন এবং এর মধ্যে রোযা ভঙ্গের কোনো কাজও করেননি তাই আপনার ঐ রোযা সহীহ হয়েছে। অবশ্য রাতেই রোযার নিয়ত করে নেওয়া উত্তম।
প্রকাশ থাকে যে, সাহরী খাওয়া সুন্নত। সাহরী না খেয়ে শুধু নিয়ত করে নিলেও রোযা সহীহ হয়ে যায়।
-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৪০১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৯, ২৬৬; ফাতহুল কাদীর ২/২৩৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫৯

প্রশ্ন:অধিকাংশ মুমিন মুসলিম নিয়মিত রমযানে রোযাগুলো রাখে। কিন্তু অধিকাংশ রোযাতেই মুখে রোযার নিয়ত উচ্চারণ করে না; বরং রোযা রাখার উদ্দেশ্যে সেহরীর জন্য উঠে সেহরী খেয়ে নায় এবং অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগী ঠিক মতো করতে থাকে। এমন করার দ্বারা উক্ত ব্যক্তির রোযাগুলো সহীহ হবে কি না? নাকি আবার কাযা করতে হবে?
উত্তর:প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির রোযা রাখার উদ্দেশ্যে ঘুম থেকে ওঠা ও সেহরী খাওয়াটাই রোযার নিয়তের শামিল। নিয়ত মনের ইচ্ছার নাম, এক্ষেত্রে মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। তাই উক্ত ব্যক্তির রোযাগুলো সহীহভাবে আদায় হবে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/৪৫২; আলজাওহারুতুন নাইয়্যিরাহ ১/১৭৬; রদ্দুল মুহতার ৩/৩৩৯, ৩৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫

প্রশ্ন:জনৈক ব্যক্তি ভোরে ঘুম থেকে উঠতে না পারায় সেহরী না খেয়েই সকালে নফল রোযা রাখার নিয়ত করেছে।তাহলে প্রশ্ন হল, সেহরী না খেয়ে রোযা রাখার দ্বারা রোযাটি হয়েছে কি?
উত্তর:
রোযার জন্য সেহরী খাওয়া জরুরি নয়; বরং মুস্তাহাব। সেহরী না খেলেও রোযা হয়ে যায়। রোযার কোন ক্ষতি হয় না।
-সহীহ বুখারী ১৯২৩; উমদাতুল কারী ১০/৩০০; রদ্দুল মুহতার ২/৪১৯

রোজা নিয়ে মুসলিমদের মনে কতিপয় ভুল ধারণা(পর্ব-৩)

#ইফতার আর সেহরি পার্টি!
পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার শিকার হয়ে আমরা অনেকেই এখন পণ্যদাস। পণ্য দিয়েই আমরা মাপি আমাদের স্ট্যাটাস, ভালো থাকা, খারাপ থাকা ইত্যাদি। এর এ প্রক্রিয়ারই নতুন সংযোজন হিসেবে এখন আমরা হয়ে উঠছি ভোজনদাস। বুফে ডিনার, বুফে লাঞ্চ, দামী আইসক্রিম শপ, পিজা আর ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টে বন্ধুবান্ধব পরিবারকে নিয়ে যাওয়া আর ফেসবুকে সে ছবি আপলোড করাই আমাদের কারো কারো স্ট্যাটাস বাড়ানোর উপায়!

ইফতার আর সেহরি পার্টি এই ভোজনদাসত্বেরই আরেকটি ধর্মীয় ভার্সন! অর্থাৎ ধর্মের নামে হলেও এ পার্টিগুলোতে খাবার-দাবার নিয়ে যে বিলাসিতা হয়, তার সাথে কি ধর্মের মিল আছে! নবীজী (স) কীভাবে ইফতার করতেন!

হযরত আনাস ইবনে মালিকের (রা) বর্ণনা থেকে জানা যায়, নবীজি (স) ইফতার করতেন তাজা খেজুর দিয়ে। যদি তাজা খেজুর না পাওয়া যেত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। আর যদি তাও না পাওয়া যেত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে। এরপর তিনি মাগরিবের নামাজ পড়ে নিতেন।

আর ভোজনদাসত্বের সাম্প্রতিক সংযোজন হলো সেহরি পার্টি। অভিজাত এলাকার হোটেলগুলো এখন সেহরির সময় খোলা থাকে! ব্যাপারটা এমন নয় যে, বাসায় রান্না করার সুবিধে নেই, তাই হোটেলে সেহরি খেতে বাধ্য হচ্ছেন, তাদের জন্যে এটা। বরং এটা তথাকথিত অভিজাত বিলাসবহুল হোটেল-রেস্টুরেন্টের কথা যেখানে দলবেঁধে সেহরি খাওয়ার নামে বিপুল অর্থ খরচ করে এসে একশ্রেণীর মানুষ তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন এই ভেবে যে, তার স্ট্যাটাস বাড়ানো গেছে!

হযরত আনাস ইবনে মালিকেরই আরেকটি বর্ণনা থেকে জানা যায়, একবার নবীজী (স) সেহরির সময় তাকে বললেন, আনাস আমি রোজা রাখার নিয়ত করেছি। আমাকে কিছু খাবার দাও। আনাস (রা) তখন তাকে কয়েকটি খেজুর আর একটা পাত্রে পানি দিলেন! নবীজী (স) তাই খেলেন।

#রোজার মাসে খাবারের কোনো হিসাব নাই

একটা ধারণা সাধারণভাবে প্রচলিত আছে যে, রোজার মাসে খাবারের কোনো হিসাব নাই। অর্থাৎ রোজা রাখার পর ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত একজন মুসলমান হালাল হলে যে-কোনো খাবার- যত খুশি খেতে পারে, আকণ্ঠ পান করতে পারে। ধর্মে তাকে এই ছাড় দেয়া হয়েছে। আর এই অবিদ্যাপ্রসূত ধারণারই ফসল হলো – অন্য সময় আমরা যা খাই, রোজার সময় তার চেয়ে বেশি খাই। অন্য সময় যদি দুবেলা খাই (কারণ অনেকেই নাশতা বা দুপুরের খাবার যে-কোনো একটা খুব হালকা করেন), তো রোজার মাসে খাই তিনবেলা। ইফতারে ভূরিভোজ, তারপর ডিনার এবং শেষরাতে ভরপেট সেহরি। রোজার মাসে আমাদের খরচ বেড়ে যায়, বাড়ে দ্রব্যমূল্য। আর ব্যবসায়ীরাও এ সুযোগে আয়োজন করেন রমজান ফেস্টিভাল, ইফতার ফেস্টিভাল (!) ইত্যাদি। অর্থাৎ খাদ্যসংযমের একটি পবিত্র ধর্মবিধানকে আমরা রূপান্তরিত করেছি খাদ্য উৎসবের আয়োজনে!

কিন্তু ধর্ম কি তা বলে? রমজানের যে আরবি প্রতিশব্দ ‘সিয়াম’- সেই সিয়ামের আক্ষরিক অর্থই হলো ‘সংযম’। এবং এ সংযম শুধু খাবার বা পানি থেকে সংযম নয়, এটা চিন্তায়, কথায়, আচরণে – সবক্ষেত্রেই। কাজেই যুক্তি বলে, রমজানের এই একমাসের সংযম চর্চা একজন মানুষের ভোজন প্রবণতাকে কমাবে, তার বাড়তি ওজন কমবে, কমবে খাওয়াবাবদ তার খরচ। যদি তা না হয়, তাহলে বুঝতে হবে রোজার মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গিতেই তার ভ্রান্তি আছে।

#ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যে রোজা ক্ষতিকর

ডায়াবেটিস রোগীদের যেহেতু নিয়ম করে খেতে হয়, তাই ডায়াবেটিস থাকলে রোজা রাখা যাবে কি না- এ নিয়ে অনেকেরই সংশয় আছে। কিন্তু গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা।

তার আগে আমাদের একটু বুঝতে হবে, ডায়াবেটিস মানে কী? খুব সহজ ভাষায় বললে, আপনার ডায়াবেটিস হওয়া মানে হলো, আপনার জন্যে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন আর আপনার দেহ তৈরি করতে পারছে না। আর এটা তখন হয়, যখন প্রচুর খাওয়া-দাওয়ার কারণে অতিরিক্ত ইনসুলিন তৈরি হতে থাকে এবং নিয়মিত তা পেতে পেতে অলস এবং তৃপ্ত কোষগুলো একসময় ইনসুলিন-রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায়।

কিন্তু আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এজিংয়ের নিউরো সায়েন্স ল্যাবরেটরির প্রধান ড. মার্ক ম্যাটসন তার এক গবেষণায় দেখেন উপবাস বা খাবার না খাওয়া এক্ষেত্রে চমকপ্রদ কিছু ফল দেখাচ্ছে। তার এ গবেষণায় তিনি ইঁদুর ব্যবহার করেছিলেন। ইঁদুরগুলোকে তিনি দুভাগ করেন। একভাগকে মাঝে মাঝে না খাইয়ে রাখতে লাগলেন। আর একভাগকে নিয়মিতভাবে উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার এবং চিনি মেশানো পানি দিয়ে গেলেন।

দেখা গেল মাঝে মাঝে না খেয়ে থাকার ফলে সংশ্লিষ্ট ইঁদুরগুলোর দেহে ইনসুলিনের সরবরাহ সীমিত হয়ে পড়ছে। আর এতে করে তাদের কোষগুলো সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে এবং বেড়েছে মেটাবলিজম। আর যে-দেহে এ অবস্থা বিরাজ করে, সে-দেহে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমে যায়।

রোজার ব্যাপারে কয়েকটি ভুল ধারণা(পর্ব-২)

ইসলামের যে নির্দেশনাগুলো শত শত বছর ধরে প্রতিপালিত হতে হতে একসময় সংস্কৃতিরও অংশ হয়ে গেছে, রোজা তার একটি। তবে সংস্কৃতিকরণের এই প্রক্রিয়ায় মাঝে মাঝে এখানে ঢুকে গেছে নানারকম অবিদ্যা বা ভুল ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি। ধর্মের মূল নির্যাস থেকে যেমন তা সরে গেছে, তেমনি আচারসর্বস্ব এই চর্চার ফলে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে রোজার শারীরিক মানসিক, আত্মিক উপকার থেকে। তেমনি কিছু ভুল ধারণা নিয়েই এ সংকলন-

#রোজা শরীরকে দুর্বল করে দেয়
সাধারণ একটি ধারণা হলো রোজা শরীরকে দুর্বল করে দেয়। দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন, এই ভয়ে কেউ কেউ রোজা রাখেন না, বিশেষ করে যারা নিজেদেরকে মনে করেন, শারীরিকভাবে দুর্বল। অনেকে হয়তো রমজানের প্রথম কয়েকদিন রাখেন। পরের দিকে আর রাখেন না। আবার বিরতি দিয়ে রোজা রাখার প্রবণতাও আছে কারো কারো।

অথচ বাস্তব সত্য হচ্ছে, রোজা এনার্জি লেভেলকে বাড়িয়ে দেয়। বরং এই যে সবসময় খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে থাকা- বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে নিজের অজান্তেই আপনি আপনার দেহকে ঠেলে দিচ্ছেন ভয়ঙ্কর কিছু শারীরিক ঝুঁকির দিকে! ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলা যাক।

আমাদের দেহে আইজিএফ-১ হরমোন নামে এক ধরনের গ্রোথ হরমোন আছে যার কাজ হচ্ছে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কোষ তৈরি করে দেহকে বাড়ন্ত রাখা। এসময় পুরনো কোষের মেরামত বা ক্ষয়পূরণের চেয়ে নতুন কোষ তৈরির প্রক্রিয়াই বেশি সক্রিয় থাকে।

আপনি যত বেশি খাবেন, বিশেষত প্রোটিন জাতীয় খাবার, তত বেশি আপনার দেহ আইজিএফ-১ তৈরি করবে। সবসময় যখন এমন একটা অবস্থা থাকে, অর্থাৎ কোনো বিরতি বা বিশ্রাম ছাড়া প্রতিনিয়ত নতুন কোষ তৈরির প্রক্রিয়া- এই সুযোগেই দেহে বাসা বাঁধে ডায়াবেটিস বা ক্যান্সারের মতো মারণব্যাধিগুলো। কয়েক ধরনের ক্যান্সার, যেমন, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সারের সাথে বিজ্ঞানীরা উচ্চমাত্রার আইজিএফ-১ এর যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন।

বিজ্ঞানীরা বলেন, এই অবস্থাকে পাল্টে দিতেই তাই মাঝে মাঝে খাবার থেকে দেহকে অব্যাহতি দেয়া দরকার। একটা পরীক্ষায় দেখা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় দেহে আইজিএফ-১ হরমোন আছে, এমন একজন মানুষ মাত্র তিন দিন উপবাস করে তা নামিয়ে ফেলেছেন অর্ধেকে! ডাক্তাররা তাকে সতর্ক করে বলেছিলেন, প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তার প্রবল। কিন্তু আইজিএফ-এর মাত্রা কমে যাওয়ায়, এখন কমে গেল সে ঝুঁকিও।

#সেহরিতে বেশি করে খেতে হবে

আমরা কেউ কেউ মনে করি, এত বড় একটা দিন রোজা রাখতে হবে! যত বেশি খেয়ে নেয়া যায়, তত ভালো! ফলে সেহরিতে রাখি ভূরিভোজের ব্যবস্থা – গরুর গোশত, মাছ, মুরগি, ভাত-সবজি, দুধ, ফল, চা-কফি, ডেজার্ট ইত্যাদি দিয়ে এলাহি কাণ্ড। অথচ সুস্থ রোজার চর্চায় এর চেয়ে ভ্রান্তির আর কিছু নেই।

প্রথমত, রোজা রেখে আপনি পানি খেতে পারছেন না। আর প্রোটিন জাতীয় খাবার প্রক্রিয়াজাত করতে দেহে লাগে প্রচুর পানি। ফলে সেহরিতে এসব খাবার যত বেশি খাবেন, আপনার তৃষ্ণা পাবে বেশি, অস্বস্তিবোধ হবে বেশি।

দ্বিতীয়ত, সুস্থ থাকার সাথে আসলে বেশি খাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। ১০৫ বছর বয়সী ফৌজা সিং। সবচেয়ে বেশি বয়সী ম্যারাথন দৌড়বিদ হিসেবে বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী। ২০১৩ সালে অবসর নেয়ার আগে হংকংয়ের যে ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় শেষবারের মতো ফৌজা সিং অংশ নেন, সেখানে ১০ কিমি দৌড়েছেন তিনি মাত্র ১ ঘণ্টা ৩২ মিনিটে, ১০২ বছর বয়সে! আজ পর্যন্ত তার দেহে কোনো অপারেশন হয় নি, হৃদরোগ নেই তার, কখনো তিনি কোনো ওষুধ খান নি।

এই সুস্থ দীর্ঘজীবনের রহস্য কী? কোনো বিশেষ খাবার-দাবার? না, বরং পাঞ্জাবের এক সাধারণ কৃষক পরিবার থেকে আসা ফৌজা সিংয়ের খাবার খুবই সাধারণ – কাঁচা ফল, সবজি, নিরামিষ। কিন্তু তার রহস্যটা হলো খাবারের পরিমাণ! একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ দিনে যে পরিমাণ খায়, ফৌজা সিং খান তার অর্ধেক। অর্থাৎ একটি শিশু যে পরিমাণ খায়, অনেকটা সে পরিমাণ!

#আলসার থাকলে রোজা রাখা যায় না

আলসার রোগীদের একটা ধারণা আছে যে, তারা রোজা রাখতে পারবেন না। কারণ রোজাতে দীর্ঘ না খাওয়া, তাদের আলসার বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু কোনো কোনো আলসার, যেমন, পেপটিক আলসারের সবচেয়ে ভালো চিকিৎসাই হলো রোজা। কারণ খাওয়ার পর একজন মানুষের পাকস্থলীতে যে এসিড নিঃসরণ হয়, রোজার সময় তা কমে যায়। কারণ তখন সে না খেয়ে থাকে। যে কারণে রোজা রাখলে পেপটিক আলসারের রোগীদের সমস্যাগুলো অনেক কমে যায়।
#সহায়তায়-sangbad24.net
#(১ম পর্বের লিংক)
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=240206949861793&id=100016174690023
#https://www.facebook.com/Md-Abdul-Qahhar-Khan-2063265550552673/

রোজা নিয়ে মুসলিমদের মনে #ছয়টি অতি পরিচিত ভুল ধারণা(পর্ব-১)

#'দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙ্গে যায়'
অনেক মানুষ মনে করেন পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙ্গে যায়।
কিন্তু ইসলামি চিন্তাবিদরা বলেন, দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভাঙ্গে না।
শাব্বির হাসান বলেন, অনেক মানুষ অতি সাবধানী।
তাদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তিনি,- "সবচেয়ে ভালো পরামর্শ অল্প পরিমাণ পেস্ট নিন। মিন্টের গন্ধ কম এরকম পেস্ট ব্যবহার করুন।"
ভয় পেলে, গাছের সরু ডাল থেকে তৈরি মিসওয়াক বা দাঁতন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
#'মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা থাকে না'
ব্রিটেনে অ্যাডভান্সড ইসলামি বিজ্ঞান এবং শারিয়া আইনের ছাত্র শাব্বির হাসান বলছেন, মুখের লালা পেটে ঢুকলে কোনো অসুবিধা নাই।
"মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা থাকে না- এই বিশ্বাসের কোনো ভিত্তি নেই, নিজের লালা গলাধঃকরণ করা খুব স্বাভাবিক একটি শারীরিক প্রক্রিয়া, এতে অবশ্যই রোজা ভাঙ্গে না।" তিনি বলেন, বরঞ্চ ইসলামে রোজার সময় মুখের লালা খাওয়া উৎসাহিত করা হয়েছে।
তবে, তিনি বলেন, অন্যের মুখের লালা নিজের মুখে ঢুকলে রোজা থাকবে না।
"রোজা পালনের সময় আপনি আপনার সঙ্গীকে চুম খেতে পারবেন না, অন্তরঙ্গ হওয়া যাবেনা। মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে আপনার আকাঙ্ক্ষাকে সংযত করা। সে কারণেই খাবার, পানীয় বা অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বন্ধ রাখতে হবে।"
লালা পেটে গেলে রোজা যাবে এ ধারণাটি অামারও ছোটবেলায় ছিলো,তখন রোজা রাখা অবস্হায় যেখানে যেতাম বা অবস্হান করতাম সেখানে মুখের লালা ফেলে চারপাশ নোংরা করে ফেলতাম এবং যখন দেখতাম অামার চারপাশ লালায় ভরে গেছে তখন কেউ যাতে এটি না দেখে বা ঢাক লইতে না পারে সেজন্যে পা দিয়ে অাবার সব লালা লেপ্টে দিতাম,অার এদিকে গলা শুকিয়ে শুকনো কাঠ হয়ে যেতো এবং তখন খুব কষ্টও হতো।অাশা করি অামার ছোটবেলার সেই বোকামি ও ভুল ধারণা নিয়ে এরূপ নিজেও করবেন না অন্যকেও এ বিষয়ে সচেতন করে তুলবেন।
#'শুধু খাবার অথবা পানি না খেলেই রোজা কবুল হয়ে যাবে'
শুধুমাত্র খাবার মুখে দিলে বা পানি পান করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে তাই নয়। আরো কিছু আচরণে রোজা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ইসলামি অালেম ওলামা ও দায়ী বিশেষজ্ঞদের মতে"কিছু অপরাধ জিহ্বা দিয়ে হয়...আপনি যদি দুর্নাম রটান, গুজবে অংশ নেন বা কাউকে গালিগালাজ করেন, তাহলে রোজা কবুল নাও হতে পারে।"
অামার জানা মতে এক লোক রয়েছে সে রোজা রেখে সিগারেট খায়,তাঁকে সিগারেট খেতে কেউ বারণ করলে সে বলে অামি তো কোন কিছু পান বা খাদ্য গ্রহণ করছি না,,কি অাজব....
অাবার কিছু মানুষ অাছে যারা রোজা রেখে টিভি বা মোবাইলে হিন্দি,ইংলিশ গান থেকে শুরু করে সবই দেখে....
এতে রোজা মাকরুহ অনেক ক্ষেত্রে রোজা কবুল নাও হতে পারে।
#'অসাবধানতা-বশত কিছু খেয়ে ফেললে রোজাভেঙ্গে যায় '
আপনি যদি সত্যিই একদম ভুলে কিছু খেয়ে ফেলেন, তাহলেও আপনার রোজা বৈধ থাকবে, যদিনা আপনি বোঝার সাথে সাথে খাওয়া বন্ধ করে দেন।
কিন্তু নামাজের আগে ওজুর সময় যদি আপনি অনিচ্ছাকৃত-ভাবে পানি খেয়ে ফেলেন তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কারণ এই ভুল এড়ানো সম্ভব।
"এ কারণে রোজা রেখে অজু করার সময় গারগল না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। আপনি শুধু কুলি করে পানি ফেলে দিন।"
এই ভুলটি ছোটবেলায় খুব হতো সারাদিন কষ্ট করে রোজা রাখতাম অার শেষ বিকালে মনের ভুলে কিছু খেয়ে ফেলতাম অার রোজা ভেঙ্গে গেছে এটি মনে করে অাফসোস ও মন খারাপ করে রোজা ভেঙ্গে খাবার খেতাম।
তাই যারা জানেন তাঁরা নিজেরা এবং অন্যকেও এ বিষয়ে অবগত করে উক্ত ভুল থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন।
#'ওষুধ খাওয়া যাবে না'
মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) আন্তর্জাতিক গ্লুকোমা সমিতির সাথে যৌথ একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে- রোজা রেখেও কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। যেমন, চোখের ড্রপ।
এমসিবি বলেছে, চোখের ড্রপ, কানের ড্রপ বা ইনজেকশনে রোজা ভাঙবে না।
তবে যেসব ওষুধ মুখে দিয়ে খেতে হয়, সেগুলো নিষিদ্ধ । সেহেরির আগে এবং ইফতারির পর তা খেতে হবে।
মি: হাসান বলেন, "প্রথম কথা আপনি যদি অসুস্থ থাকেন, তাহলে ভাবেতে হবে আপনি রোজা আদৌ রাখবেন কিনা?"
"কোরানে পরিস্কার বলা আছে, আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ মত চলুন।"
তাই বলে সামন্য সর্দি জ্বর এরূপ কিছু হলেই সুতো পেয়ে নিজ থেকে ইচ্ছে করে রোজা ভাঙ্গবেন না।
#'যে কোনো পরিস্থিতিতেই রোজা রাখতে হবে'
ইসলামে শুধু প্রাপ্তবয়স্ক (সাধারণত ১৫ বছর) এবং সুস্থ ব্যক্তির রোজা ফরজ বা আবশ্যিক করা হয়েছে।
এমসিবি বলছে - শিশু, অসুস্থ (শারীরিক এবং মানসিক), দুর্বল, ভ্রমণকারী, অন্তঃসত্ত্বা বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারীর জন্য রোজা আবশ্যিক নয়।
"যদি স্বল্প সময়ের জন্য কেউ অসুস্থ হন, তাহলে সুস্থ হওয়ার পর অন্য সময়ে তিনি ভাঙ্গা রোজাগুলো পূরণ করে দিতে পারেন, " মি হাসান বলেন।
"যদি দীর্ঘস্থায়ী কোনো অসুস্থতা থাকে এবং রোজা রাখা সম্ভব না হয়, তাহলে রোজার মাসের প্রতিদিন ফিদা অর্থাৎ গরীবকে কিছু দান করুন।" ব্রিটেনে এই ফিদার পরিমাণ নির্ধারিত করা হয়েছে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ পাউন্ড।
আফসোস
অধিকাংশ গার্ডিয়ান পড়ালেখার জন্য সন্তানদের রোযা রাখতে দেন না।
আর পরিক্ষা চললে তো কথাই নেই।অাফসোস.....

Wednesday, 23 May 2018

নামাজ(পর্ব-২)

নামাজ নিয়ে প্রথম পর্বের শেষে ১১ টি স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা বলেছি,অাজকের পর্বে অামি নামাজের নামাজের শ্রেষ্ঠতম অংশ হল সিজদা এর স্বাস্থ্যগত উপকারিতা গুলো নিয়ে-

তাই এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই যে পবিত্র কোরআনে সিজদা শব্দটি কম করে হলে ও ৯০ বার উল্লেখ করা হয়েছে। একবার ভেবে দেখুন কিভাবে সিজদা করি আমরা। স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা যখন দাড়িয়ে থাকি বা বসে থাকি তখন আমাদের ব্রেইনে রক্ত পৌছায় ঠিকই, কিন্তু তা একটা স্বাস্থ্যকর ব্রেইনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু আমরা যখন সিজদায় যাই তখন মস্তিষ্কে/ব্রেইনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্ত সঞ্চালিত হয়, যা একটা স্বাস্থ্যকর ব্রেইনের জন্য খুবই জরুরী। আর আমরা যখন সিজদা করি তখন ব্রেইনের ন্যায় আমাদের মুখমণ্ডলের ত্বকেও অতিরিক্ত রক্তসঞ্চালন হয়, যা আমাদের চিল্বলাইন(chilblain) নামক এক ধরনের চর্মরোগ এবং এজাতীয় আরও অনেক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
তাছাড়া সিজদা আমদেরকে সাইনুসাইটিস (sinusitis) থেকেও বাছিয়ে রাখে। কেননা যারা নিয়মিত সিজদা করে অর্থাৎ নামাজ পড়ে তাদের সাইনাসের (sinus) প্রদাহ হবার সম্ভাবনা অনেক কম।

এছাড়াও সিজদার আরও উপকার রয়েছে। যেমন, যারা নিয়মিত সিজদা করে তাদের ব্রঙ্কাইটিস (bronchitis) হবার সম্ভাবনাও অনেকাংশে কম। একটা লোক যখন স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস ছাড়ে করে তখন আমদের ফুসফুসে থাকা দূষিত বায়ুর কেবল দুই-তৃতীয়াংশ বের হয় বাকি একতৃতীয়াংশ ভিতরেই থেকে যায়। কিন্তু কেউ যখন সিজদায় অবনত হয় তার এবডমিনাল ভিসেরা(abdominal viscera) ডায়াফ্রামের(diaphragm) উপর চাপ প্রয়োগ করে, ফলে ডায়াফ্রাম ফুসফুসের নিছের দিকে (lower lobes) চাপ প্রয়োগ করে। ফলে কেউ যখন সিজদায় অবনত অবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাস নেয় তখন ফুসফুসের ভিতরে জমে থাকা এক তৃতীয়াংশ দূষিত বাতাসও বের হয়ে যায়, যা একটা সুস্থ ফুসফুসের জন্য খুবই দরকারি। এর ফলে আমদের ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ হবার সম্ভাবনাও কমে যায় অনেকাংশে।

যদি কেউ নিয়মিত সিজদা করে তবে সিজদার সময় করা অঙ্গভঙ্গি ও শরীরের বিভিন্নরকমের নাড়াচাড়ার কারণে তার অর্শ(hemorrhoid) বা পাইল্‌স(piles) এবং হার্নিয়া (hernia) হবার সম্ভাবনাও কমে যায় অনেকাংশে।

আবার আমরা যখন সিজদা থেকে উঠে দাড়াই তখন শরীরের পুরো ওজন আমদের পায়ের উপর পড়ে এবং আমদের পা আর রানের পেশীতে চাপ পড়ে। তখন সে পেশীগুলু সক্রিয় হয়ে উঠে যা আমাদের নিন্মাঙ্গে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে দে, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও নামাজে রুখু সিজদা বসা আর উঠে দাঁড়ানোর সময় আমরা বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করি যার কারণে আমাদের মেরুদণ্ডে ও বিভিন্ন রকমের নাড়াচাড়া হয়, যা আমদের মেরুদণ্ডের বিভিন্ন রকমের রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখে।

নামাজের এরকম হাজারো উপকারিতা আছে যা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু আমরা মুসলিমরা সালাত আদায় করি শুধুমাত্র আল্লাহকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য আর তার প্রশংসা করবার জন্য। তাই আমাদের মুসলিমদের জন্য উপরে উল্লেখ করা উপকারগুলু হল এক ধরনের সাইড ডিশ(side dishes)। বলতে পারেন ডেজার্ট(dessert), যা মূল খাবারের পরে সামান্য পরিমাণে খাওয়া হয়। একজন অমুসলিমকে নামাজের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য উপরোক্ত উপকারগুলুর কথা বলতে পারেন আপনি; তা হয়ত তাকে নামাজের দিকে আকৃষ্ট করবে, কিন্তু আমাদের মুসলিমদের জন্য প্রধান বা মূল খাবার অর্থাৎ নামাজের মূল উদ্দেশ্য হল আল্লাহকে ধন্যবাদ জানানো এবং আল্লাহ্‌ ও তার রসূলের বিধান মেনে চলা। আর একারণেই সালাত আদায় করি আমরা।

নামাজ(পর্ব-১)

এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়লে ৭০০০ বছর বা তারও বেশি এবং কিয়ামতের ময়দানে অাল্লাহ পাক অামাদের জাহান্নামে ফেলে দিবে।কিয়ামতের ময়দানে সর্বপপ্রথম নামাজের হিসাব চাইবে, যে ব্যাক্তি নামাজ পড়ে না তার অন্যান্য ইবাদাতও কবুল হয় না।এরকম অনেক ওয়াজ-নসীহত,মসজিদে খুৎবায়,তাবলিগ ভাইদের তালীমে সহ অন্যান্য ভাবে এ সম্পর্কে শুনি নাই এরকম মুসলিম কমই অাছে।যখন এসব নসীহত বা বয়ান শুনি তখন অামরা কিছুটা অনুতপ্ত হই,কেউ কেউ কাঁদে অাবার কেউ কাঁদার ভান করে,এখন অানার প্রশ্ন হলো তাই বলে কী সকল মুসলনানই নামাজ অাদায় করে?যদি করতই তাহলে পাড়া বা মহল্লায় পুরুষ মুসল্লি যদি থাকে ১০০-১৫০ তাহলে নামাজে পাওয়া যায় ৩০-৫০ জন অানুমানিক।অথচ শবে-বরাত,কদ্বর,দুই ইদের নামাজ,প্রথম কয়েক রোযায় এবং জুম্মার নামাজে মুসল্লিদের এতো সমাগম হয় যে মসজিদে তাদের বসার জায়গা থাকে না কিন্তু ওয়ক্তের নামাজে  মুসল্লিদের খুঁজেও পাওয়া যায় না।
অবস্থাটা এরকম অাপনি যদি যেকোন মুমিন মুসলমানকে প্রশ্ন করেন যে নামাজ পড়া ভাল না খারাপ সকলেই এক বাক্যে বলবে হ্যাঁ ভাল।তাই বলে কী সকলেই নামাজ পড়ে,না পড়ে না।
এখন অামাদের এরূপ অবস্থা হওয়ার কারনটা হল, অামদের দুনিয়ার প্রতি অাকর্ষন বেশি।দুনিয়ায় কিসে লাভ অার কিসে লোকসান সেদিকেই সর্বদা দৃষ্টি অামাদের।অামরা অখিরাতে জন্নাত পাবার চেয়ে দুনিয়ায় কীভাবে শান্তি পাব সে চিন্তাই বেশি।
অতএব ডাক্তার যেভাবে রোগ বুঝে চিকিৎসা করে,ঔষধ দায়।আমিও সেরকম অামাদের ব্যাধি অনুযায়ী ভিন্ন ভাবে নামাজের উপকারিতার কথা বলব।নামাজ পড়লে এবং না পড়লে পরকালে কী হবে অার না হবে সে কথা বলব না কারন সে ওয়াজ অামরা অনেক শুনেছি অার অামাদের পরিবর্তনও বা কতটুকু হয়েছে তা উপরেই বলেছি।
এখন অাপনাদের বলব নামাজ পড়লে দুনিয়ায় কী কী লাভ হবে সে সর্ম্পকে,তাহলে জানুন নামজের ১১ টি অসাধারন সাস্থ্য উপকারিতাঃ
১.নামাজে যখন সিজদা করা হয় তখন অমাদের মস্তিকের রক্ত দ্রুত প্রবাহিত হয়।ফলে আমাদের স্মৃতি শক্তি অনেক বৃদ্ধি পায়।
২.জায়নামাজে যখন অামরা দাড়াই তখন অামাদের চোখ জায়নামাজের সামনে একটি কেন্দ্রে স্থির  অবস্থানে থাকে ফলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
৩.নামাজের মাধ্যমে অামাদের একটি ব্যায়াম সাধিত হয়।এটি এমন একটি ব্যায়াম যা ছোট বড় সবাই করতে পারে।
৪.নামাজের মাধ্যমে অামাদের মনের অসাধারন পরিবর্তন অাসে।
৫.নানাজ সকল মানুষের দেহের কাঠামো বজায় রাখে।ফলে শারীরিক বিকলাঙ্গতা লোপ পায়।
৬.নামাজ মানুষের ত্বক পরিষ্কার রাখে যেমন অামাদের ওজুর সময় অামাদের দেহের মূল্যবান অংশগুলো পরিষ্কার করা হয় এর ফলে অামরা বিভিন্ন প্রকার জীবানু হতে নিরাপদ থাকি।
৭.নামাজে ওজুর সময় মুখমণ্ডল ৩ বার ধৌত করার ফলে অামাদের মুখের ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং মুখের দাগ কম দেখা যায়।
৮.ওজুর সময় মুখমণ্ডল যেভাবে পরিষ্কার করা হয় তাতে অামাদের মুখে এক প্রকার মেসেজ তৈরি হয় ফলে অামাদের মুখের রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং বলিরেখা কমে যায়।
৯.কিশোর বয়সে নামাজ অাদায় করলে মন পবিত্র থাকে এর ফলে নানা রকম অসামাজিক কাজ থেকে সে বিরত থাকে।
১০.নামাজ অাদায় করলে মানুষের জীবনি শক্তি বৃদ্ধি পায়।
১১.কেবল মাত্র নামাজ আদায়ের মাধ্যমেই চোখের নিয়মিত যত্ন নেওয়া হয়।ফলে অধিকাংশ নামাজ অাদায়কারী মানুষের দৃষ্টি শক্তি বজায় থাকে।

Saturday, 19 May 2018

মূর্খদের সাথে অার তর্ক নয়

●প্রথমেই অাসি মূর্খ কারা এটি নিয়ে,অামি মূর্খ বলতে আমি অক্ষর জ্ঞানহীনকে বুঝাচ্ছি না। বরং যারা নিজের ভ্রান্ত মতের ওপর অটল থাকে তাদের বুঝাচ্ছি।
মূর্খ কারা এ সম্পর্কে মহাশ্বেতা দেবী বলেছেন-"যারা লেখাপড়া জানে না তারাই শুধু মূর্খ নয়। যারা জানতে বুঝতে চায় না, প্রশ্ন করতে পারে না, যাদের জ্ঞানতৃষ্ণা নেই তারাও মূর্খ।" - মহাশ্বেতা দেবী
তবে মূর্খ কারা সে সম্পর্কে শেখ সাদী একটু ভিন্ন কথা বলেছেন,তাঁর মতে-
"তুমি যত বড় পণ্ডিতব্যক্তি হও না কেন, নিজের জীবনে তার প্রতিফলন ব্যতীত তুমি মূর্খ।"
●এখন অাসি মূর্খদের সাথে কেন তর্ক করা উচিৎ নয়,
এ নিয়ে হুমায়ূন অাহমেদের একটি উক্তি অাছে,তিনি বলেন-
" মূর্খদের সঙ্গে কখনো তর্ক
করতে যাবেনা। কারণ হলো মূর্খরা তোমাকে তাদের পর্যায়ে নামিয়ে নিয়ে এসে তর্কে হারিয়ে দিবে ''।
এছাড়াও মূর্খদের সাথে কেন অাড্ডা দেওয়াও উচিৎ নয় এ সম্পর্কে হযরত আলী (রা.) বলেন-
"মূর্খদের আড্ডা থেকে সব সময় দূরে থাকতে চেষ্টা করো, অন্যথায় তারা তোমাকেও মূর্খে পরিণত করে দেবে।"

তর্ক করার বদঅভ্যাসটি অামার মধ্যেও রয়েছে,আগে যে কারো সাথে তর্ক করতাম,অাস্তে অাস্তে এ কুঅভ্যাসটি পরিহার করার চেষ্টায় অাছি।কারণ ব্যাক্তি জীবনে দেখেছি মূর্খের সাথে তর্কে হতাশা বাড়ে।বন্ধুদের সাথে তর্কে বন্ধুত্বের মধ্যে ফাটল ধরে এবং ফাটল না ধরলেও তর্কের মধ্যে কোন কথায় এক বন্ধু অারেক বন্ধু দ্বারা কষ্ট পায়।তর্ক দ্বারা একে অন্যের প্রতি অনাস্থা বাড়ে। যার সাথে তর্ক করছি সে বয়েসে বড় হলে তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা কমে,অাবার আমার ছোট হলে আমার প্রতি তার শ্রদ্ধা বোধ কমবে, আমার
বয়সী হলে পরস্পরের ভালবাসা হ্রাস পায়।

তাই এসব কারণে নিজে থেকে আস্তে আস্তে বাদ দিতে থাকি এরূপ মূর্খদের সাথে তর্ক করা।কিন্তু পরে দেখি আল্লাহ্-তা'আলা কুরআনে এ ব্যাপারে আরও সুন্দর কথা বলেছেন। সুবহানাল্লাহ,আমাদের চলার কি অসাধারণ পথ
নির্দেশনা আল্লাহ নাজিল করেছেন। আল্লাহ সুরা ফুরকানের ৬৩ নাম্বার আয়াতে বলেন,
‎‏ "রহমান-এর বান্দা তারাই,যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে ,তখন তারা বলে, সালাম।"
অতএব বাকপটু ও নির্বোধের সাথে তর্কে  না যাওয়াই উত্তম। কারণ বাকপটু অামায় কথায় পরাজিত করবে আর নির্বোধ অামায় কষ্ট দিবে।তাই সবার সাথে তর্ক নয়!
এছাড়াও ছোটখাট বিষয়ে বিতর্ক করলে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। কারণ আমাদের মাঝে এমন অনেক লোক আছে যারা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের চেয়ে ছোটখাট বিষয়গুলো সম্পর্কে বেশি জ্ঞান রাখে।
সবশেষে এখন একটি গল্প দ্বারা বিষয়টি অারও পরিষ্কার করা যাক,
==========================
একটা গাধা এবং একটা শেয়াল বনের মাঝে ঝগড়া শুরু
করলো-
গাধা বললো- ঘাস হলুদ!
শিয়াল বললো- না, ঘাস সবুজ!
যখন তাদের বিতর্ক চরম আকার ধারণ করলো, তখন তারা
বিচারের জন্য বনের রাজা সিংহের কাছে গেলো।সিংহ
উভয়ের বক্তব্য শুনে শেয়ালকে পূর্ণ এক মাস কারাবন্দী
রাখার এবং গাধাকে মুক্তির আদেশ দিল।
শেয়াল এই বিচারে মনোক্ষুন্ন হয়ে সিংহকে প্রশ্ন
করলো, এটা কি ন্যায় বিচার হলো মহারাজ? আপনার মতে
ঘাস কি সবুজ নয়?
সিংহ উত্তর দিলো- ঘাস অবশ্যই সবুজ।আর সে কারনে
আমি তোমাকে শাস্তি দেইনি।আমি তোমাকে
কারাবন্দি রাখার আদেশ করেছি এই কারণে যে, তুমি
গাধার সাথে তর্ক করেছো!
বাস্তব শিক্ষাঃ
আজকাল আমরা অনেকেই এমন সব মানুষের সাথে অযথাই
তর্কে জড়িয়ে পড়ি, যাদেরকে তাদের মতের বিপক্ষে যুক্তিসহকারে,রেফারেন্সসহ প্রমাণ দিলেও তারা তাদের ভূল কখনোই স্বীকার করেনা বা সংশোধনও হয়না।অাল্লাহ অামাদের সহীহ বুঝ দান করুক।(অামিন)