জিপিএ-৫ না পেলেও যে জীবনে ভালো করা যায়, তার উদাহরণ আছে অনেক। সেসব উদাহরণ থেকে ছয়জনের গল্প শুনুন।৬ মে প্রকাশিত হলো মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল। যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে, অভিনন্দন তাদের। আর অামার যেসকল ছোট ভাইরা পায়নি,অাবার যারা পেয়েছে কিন্তু Golden A+ না পেয়ে হয় হুতাশ করছে তাদের ও তাদের অভিবাবক এর জন্যই আজকের অামার এই লেখা।
#GPA-5 না পেয়েও ২০১৬ সালে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে অাখতার 4.50 এবং ২০১৭ সিলেট এমসি কলেজ থেকে 4.67(HSC) পেয়েও ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য গামী একটি বিমানে চড়ে বসলেন,কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে তাঁরা "পিওর ম্যাথম্যাটিকস"স্নানতক পড়তে গেছে.............।এখন তাঁরা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে!!
-নিম্নে ৪ জনের নিজের মুখ থেকে বলা, SSC তে A+ না পেয়েও..............(পড়ুন)
#জেদের জোরেই SSC তে জিপিএ-৫ না পেয়েও HSC তে মিলি পেয়ে গেলো A+.....
মিলি আক্তার এর নিজের মুখে বলা,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমি ছিলাম মুন্সিগঞ্জের ব্রাহ্মণভিটা ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী। সে বছর আমাদের পুরো স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল একজন। আমি পেয়েছিলাম ৪.৮৮। প্রস্তুতি খুব ভালো ছিল সেটা বলব না, কিন্তু আমিও মনে মনে জিপিএ-৫ পাওয়ার প্রত্যাশা করছিলাম। ফল পেয়ে খুব ভেঙে পড়েছিলাম। কান্নাকাটি করেছিলাম।
আমি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলাম। ইচ্ছা ছিল ঢাকায় এসে ভালো কলেজে পড়ব, চিকিৎসক হব। অল্প কয়েকটা নম্বরের জন্য হঠাৎ মনে হলো স্বপ্নটা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। তার ওপর গ্রামের মেয়েদের একটা সমস্যা তো থাকেই। পড়ালেখায় একটু পিছিয়ে পড়লেই নানা দিক থেকে বিয়ের খবর আসতে থাকে। যেন আমাকে দিয়ে আর পড়ালেখা হবে না।
আমার মা ততটা পড়াশোনা করেননি। কিন্তু এ সময় আমাকে ভীষণ সাহস দিয়েছেন। তাঁর অনুপ্রেরণায় ভর্তি হলাম বিক্রমপুর টঙ্গিবাড়ী ডিগ্রি কলেজে, মানবিক বিভাগে। আমার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নটার মৃত্যু হয়েছিল ঠিকই, তবে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম। সবাই বলত, মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া আরও কঠিন। শুনে জেদ চেপে গিয়েছিল। সেই জেদের জোরেই বোধ হয়, উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে গেলাম।
এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি। যখন পেছনে ফিরে তাকাই, মনে হয় জিপিএ-৫ না পেয়েই হয়তো ভালো হয়েছিল। বিজ্ঞান বিভাগে থাকলে এত এত ভালো শিক্ষার্থীর ভিড়ে আমি হয়তো হারিয়েই যেতাম। মানবিক বিভাগে পড়ে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়েছি।
#ফজলুল হকউচ্চমাধ্যমিক না, বুয়েটের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম
(ফজলুল হক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়)
চট্টগ্রামের মুসলিম হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে যে অল্প কয়েকজন জিপিএ-৫ পায়নি, আমি ছিলাম তাদের একজন। আমার জিপিএ ছিল ৪.৮১। তখনো অতটা কষ্ট পাইনি। বেশি কষ্ট পেলাম তখন, যখন দেখলাম নটর ডেম কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতাও আমার নেই। ছোটবেলা থেকে বুয়েটে পড়ার ইচ্ছে। কিন্তু আব্বু বললেন, উচ্চমাধ্যমিকে ব্যবসায় শিক্ষা নিয়ে পড়তে। পলিটেকনিক্যালে ভর্তি হওয়ার কথাও বলেছিল অনেকে। কিন্তু আমি ভর্তি হলাম দিলওয়ারা জাহান মেমোরিয়াল কলেজে, ওই বিজ্ঞান বিভাগেই।
আমাদের কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পাস করেছিল ৯ জন। বুঝতেই পারছেন, উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পাওয়া সহজ ছিল না। আমি অবশ্য কলেজে উঠে জিপিএ-৫ পাওয়া নিয়ে মাথা ঘামাইনি। একটাই লক্ষ্য ছিল, বুয়েটে চান্স পেতেই হবে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য না, কলেজের পুরো দুটি বছর আমি প্রস্তুতি নিয়েছি বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার জন্য। এইচএসসিতে শুধু জীববিজ্ঞানে ‘এ’ পেয়েছিলাম। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান থেকে প্রশ্ন আসে না, তাই জীববিজ্ঞান সেভাবে পড়িনি। আমার সম্পূর্ণ ‘ফোকাস’ ছিল বুয়েট।
বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় আমি ৩৫৯তম হয়েছিলাম। এখন পড়ছি যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষে। বন্ধুদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েও এইচএসসিতে ভালো করতে পারেনি। আমার ভাগ্য ভালো ছিল। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাইনি বলেই হয়তো বুয়েটে পড়ার জোর পেয়েছিলাম।
#সায়মা আখতারকারও বাসায় মিষ্টি নিয়ে যেতে পারিনি
সায়মা আখতার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
মহেশখালীর ইউনুছখালী নছির উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলাম।
এসএসসি পরীক্ষার পর বেশ কয়েক দিন আমি ঘর থেকে বের হইনি। মা-বাবা-আত্মীয়স্বজন সবাই যখন জিপিএ-৫-এর প্রত্যাশা করে বসে আছে, আমি পেয়েছিলাম ৪.৮১। খুব লজ্জা লাগছিল। অনেকে আমাদের বাসায় মিষ্টি নিয়ে এসেছিল, আমি কারও বাসায় মিষ্টি নিয়ে যেতে পারিনি। কাউকে মুখ দেখাতেই ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু সে সময় আমার মা-বাবা আর স্বজনেরা পাশে ছিলেন। আমিও মনে মনে বলেছিলাম, উচ্চমাধ্যমিকে দেখিয়ে দেব।
অথচ উচ্চমাধ্যমিকে আমার ফলাফল হলো আরও খারাপ!
কক্সবাজার মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি। আমাদের কলেজে তখন পড়ালেখার মান খুব ভালো ছিল না। হোস্টেলে থাকতাম, সেখানকার পরিবেশ ভালো না। ৪.৪০ পেয়েও এইচএসসিতে দেখা গেল কলেজে আমার ফলাফলই সেরা। আমাদের মধ্যে তো তুলনা করার একটা প্রবণতা আছে, অন্যদের তুলনায় আমার ফল ভালো বলে সবাই বেশ খুশিই হয়েছিল। আমি যদিও খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারিনি।
আমরা দুই ভাই, দুই বোন। বড় মেয়ে হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে। বাসা থেকে খুব বেশি দূরে এসে পড়ালেখা করার অনুমতি ছিল না। তাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটা অনুষদে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। গণিত নিয়ে পড়ার সুযোগ ছিল। আমার ইচ্ছাও ছিল। কিন্তু কী ভেবে যেন অর্থনীতিতে ভর্তি হলাম। এখন তৃতীয় বর্ষে পড়ছি।
আমার বাবা চেয়েছিলেন মেয়ে ডাক্তার হবে। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি বলে একটু দুঃখ আছে। তবে আফসোস নেই। আমার যতটুকু যোগ্যতা ছিল, আমি যতখানি পরিশ্রম করেছি, তার ফল পেয়েছি। এতেই আমি খুশি।
#আজবিনুর ইসলামক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হবে না, সেই আত্মবিশ্বাস আছে
আজবিনুর ইসলাম, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি
শরীয়তপুরের জাজিরা মোহর আলী মডেল হাইস্কুলের টেস্ট পরীক্ষায় আমি পঞ্চম হয়েছিলাম। মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু আমি পেলাম ৪.৬৯।
আত্মীয়স্বজন অনেকে ধরেই নিয়েছিল, একে দিয়ে কিছু হবে না। বন্ধুদের বেশির ভাগ জিপিএ-৫ পেয়েছে। অনেকের অনেক কটু কথাও শুনতে হয়েছে। স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে পড়লেও কলেজে উঠে চলে গেলাম ব্যবসায় শিক্ষায়। ভর্তি হলাম কমার্স কলেজে। তখন খুব মন দিয়ে পড়েছি। তাই উচ্চমাধ্যমিকের ফল বেশ ভালো হয়েছিল। সব বিষয়ে এ প্লাস পেয়েছিলাম। ঢাকা বোর্ড থেকে বৃত্তিও পেয়েছি।
এখন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ছি। আমার সিজিপিএ ৩.৯০। ভালো ফলাফলের জন্য ২৫ শতাংশ ‘ওয়েভার’ পাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছি। পাস করার পর অন্তত ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হবে না, সেই আত্মবিশ্বাস আছে। এখন আর কোনো আফসোস নেই।
এছড়াও ঢাবিতে 3:50 এর মত পেয়েও খ ইউনিটে ইংরিজে বিভাগে চান্স পাওয়ার কথা অামরা সবাইই কম বেশি জানি।
সবশেষে বলবো,জিপিএ ৫ পেলে ভালো, না পেলেও ক্ষতি নেই,নিজেকে ব্যর্থ মনে করার কোন কারণ নেই।
কয়েকবছর পর কে ড্রপ-আউট ছিল, কে গোল্ডেন ৫ ছিল আর কে ফেল্টু ছিল তার কিছুই মনে থাকবে না |জীবনে বড় কিছু সফল ব্যক্তি হলে এসব ঘটনা হাসিমুখেই সভা সেমিনারে অন্যকে বলে অনুপ্রেরণা যোগানো যায়,যেমনটা বিলগেটস বলেছিলেন "আমার স্কুলের ভাল গ্রেড পাওয়া students রা আমার company এর ভাল ইঞ্জিনিয়ার আর আমি এই company এর মালিক "
জ্যাকমা বিশ্বের অন্যতম ধনী,অালীবাবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা,সে বলেছে নিজের মুখেই স্বীকার করেছে মাধ্যমিক পরিক্ষায় ৫ বার, উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষায় ৩ বার ফেল করার কথা।এরকম মণীষীদের অারও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।তাহলে বলা যায় শুধু সার্টিফিকেট দিয়ে মেধা যাচাই হয় না |
অামার এক বড় ভাই বলেছে,আমার জীবনে একটাই A+, তাও আমার রক্তের গ্রুপ..
No comments:
Post a Comment