Monday, 1 October 2018

গানের জন্য বাবার সঙ্গে অভিমান করে ঘর ছেড়েছিল এক কিশোর। এরপর গানকে লালন করেছেন মনের মধ্যে। একসময় সাফল্য নিজে এসে ধরা দিয়েছে তার কাছে। আজ ২ অক্টোবর সেই কিশোরের ৫৪ তম জন্মদিন।

ফারুক মাহফুজ আনামের জন্ম কবে হয়েছিল জানা নেই, তবে জেমস(গুরুর)
জন্ম ১৯৬৪ নওগাঁয়, তবে তিনি বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে। সেখানে থাকা অবস্থায় জেমস ব্যান্ড সংগীতের প্রেমে পড়েন। কিন্তু সরকারি কর্মচারী বাবার ছেলের সেই প্রেমে সাড়া ছিল না। ক্লাস নাইনে পড়া অবস্থায় বাবা যখন বুঝলো ছেলের দ্বারা পড়াশোনা সম্ভব নয় তখন ঘর থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয় জেমসকে।

এই জেমসের নতুন ঠিকানা হয় চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিং। আর এই আজিজ বোর্ডিং হয়ে ওঠে তার গানের জগত। সেখানে থেকেই তার সঙ্গীতের ক্যারিয়ার শুরু হয়। কিছু বন্ধুদের নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ফিলিংস নামক একটি ব্যান্ড।

ছিলো ব্যাচেলর সংসার আমার,
আগাছালো জীবন,
রাত করে ঘরে ফেরা,
বাউন্ডুলে দিনভর....।

ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট ও ভোকাল হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেন। চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া ব্যান্ডদল ফিলিংস এর মাধ্যমে তিনি প্রথমে খ্যাতি অর্জন করেন। বাংলা ভাষায় তিনিই প্রথম সাইকিডেলিক রক শুরু করেন।

যান্ত্রিক শহরে, এখন মাঝরাত পেরিয়ে গেছে,

কিছু জেগে থাকা প্রজাপতি আর প্রহরীর হুশিয়ারী,

আমি এক নগর বাউল, জেগে আছি বড় একা।

পরবর্তীতে জেমস ফিলিংস ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেন নগর বাউল। আর সেই নগর বাউল থেকেই জেমস বাংলা ব্যান্ড সংগীতে সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস। জন্ম দিয়েছেন বহু জন্মপ্রিয় অনেক গান।

চায়ের কাপে ঝড় তুলি,তুড়ি দিয়ে কথা বলি,মোরা সুন্দরী মেয়ে দেখে,বাজাই সিটি,দুষ্টু ছেলের দল, ছন্ন ছাড়ার দল,দে দে তালি,
২০০৬ সালে সবাইকে চমক লাগিয়ে এল গ্যাংস্টার সিনেমায় হিন্দী গান - ভিগি ভিগি। তারপর, ও লামহে সিনেমায় চল চলে, লাইফ ইন আ --- মেট্রো সিনেমায় আল বিদা আর রিশতে। এশিয়ান জিম মরিসন - নামে ডাকাও হল। খুব শীঘ্রই আবারও ঝড় তুলবেন ওয়ার্নিং সিনেমায় 'বেবাসী' ট্র্যাকের মাধ্যমে। অপেক্ষা করতে হবে আর অল্প কটা দিন। হিন্দী গান শুধু নয়, বাংলা রক গানেও বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট চলেছে। রক গানের সাথে অপেরা শিল্পী, বাঁশী আর হারমোনিয়ামের ফিউশন ঘটিয়েছেন।
জেমস সংগীত শিল্প হলেও করেছেন মডেলিং। ফটোগ্রাফার হিসাবেও রয়েছে তার খ্যাতি।

এছাড়া জেমস রেড ডট এন্টারটেইনমেন্ট নামক একটি প্রডাকশন হাউস পরিচালনা করেন।

ভক্তরা যদি তার মত করে হাতা গুটানো পাঞ্জাবী পড়ে, লম্বা চুল রাখে - তবে তিনি অনুপ্রাণিত হন। এই ভক্তদেরকে বন্ধু আর ভাইয়ের মর্যাদা এর আগে বোধহয় কোন শিল্পী দেয় নি। শুধু তার গলাতেই মানায় -

আমি তোমাদেরই লোক, আমি তোমাদেরই ভাই,
আমার আর কিছু নাই, কেহ নাই।।

গানের মত তারায় তারায় রটিয়ে যাক জেমসের জীবনের সফলতা। সেই সাথে এ প্রজন্মের গুরুর হাত ধরে বাংলা ব্যান্ড গান রটিয়ে যাক বিশ্বজুড়ে। সেই শুভ কামনা অামাদের সকল গুরু ভক্তের পক্ষ থেকে শুভ জন্মদিন গুরু,শুভ জন্মদিন জেমস।

Friday, 21 September 2018

ব্রাজিলের_কালো_বাঘ(রিভিউ) সত্যজিৎ রায় অনুদিত।

সাহিত্যে সত্যজিৎ রায়ের জনপ্রিয়তা নিয়ে নতুন করে কিছুই বলার নেই ।তাঁর অনুবাদকৃত এই বইয়ের প্রত্যেকটা গল্পের প্লট এবং সিকোয়েন্স সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র।এ বইয়ে ৫ টি গল্প রয়েছে।প্রতিটা গল্পই যে সমভাবে ভাল,তা বলব না।অার সেটা সম্ভবও না।কিন্তু অধিকাংশ গল্পের শেষেই মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে আসে,সব মিলিয়ে উত্তেজনায় টানটান লোমহর্ষক গল্পের এক ক্ষুদ্র সম্ভার। পড়ে দেখতে পারেন। :) :)
এ বইয়ের গল্প ৫ টির মধ্যে অামার কাছে ভালো লাগা গল্পগুলোর পর্যায়ক্রমে তালিকা এবং এর সাথে যাদের বইটি সংগ্রহ করে পরার সুযোগ হবে না তাঁরা অামার এ বইয়ের সবথেকে বেশি ভালো লাগা গল্পদুটোর অডিও বুক নিম্নের লিংক থেকে শুনতে পারেন-
১.মঙ্গলই স্বর্গ।
-https://youtu.be/7-u7cqxqeXE
২.ব্রাজিলের কালো বাঘ।
-https://youtu.be/HDF25jzKYTg
৩.ইহুদির কবচ।
৪.ব্লু-জন গহ্বরের বিভীষিকা।
৫.ঈশ্বরের ন' লক্ষ কোটি নাম।

Friday, 14 September 2018

মূল্যায়ন

জীবনে কাউকে অাপনি কখনও এভাবে ভালোবেসেছেন যে তার কথা কম বেশি সবসময় মনে পড়ে।কথায় অাছে,"যাকে যার যতবেশি ভালো লাগে,তার কথাও তত বেশি মনে পড়ে।"ঠিক এরকম....

না রোমান্টিক ভালবাসা বলতে অামরা যেটা বুঝি সে ধরণের ভালবাসার কথা অামি বলছি না।
অামি যে ভালবাসার কথা বলতে চাচ্ছি সেটি এমন এক ধরণের ভালবাসা যেখানে থাকবে প্রচন্ড সম্মান,অাকুলতা এক ধরণের তীব্রতা যা অাপনার চোখ ভিজিয়ে দেয়।

অামরা অনেকেই টিভি বা ইউটিউবে দেখেছি একসময়ে মাইকেল জ্যাকসন বর্তমান সময়ে জাস্টিন বেইবার সহ এরকম জনপ্রিয় সেলিব্রেটি যখন স্টেজে পারফর্ম করে তখন তাকে দেখে তার ফ্যানরা পাগলের মতো হয়ে যায়,খুশিতে চিৎকার করে,কেউ কেউ অাবার অাবেগে কেঁদেও ফেলে।অার যদি কোন ক্রমে এই পছন্দের তারকাদের একটু জড়িয়ে ধরতে পারতো তাহলে সে তাঁকে অাকড়েই থাকতো।
অাবার অামরা ফুটবল ফ্যানরা অামাদের প্রিয় খেলোয়াড় মেসি,ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোকে যদি সমনাসামনি দেখতাম, একটু জড়িয়ে ধরে একটা সেলফি তুলতে পারলে,ঐ সময়টা মনে হয় অামাদের অনেকের জীবনের সবচেয়ে দামী মুহুর্ত হবে।
কি অসাধারণ ভালবাসা যার কারণে অামাদের অনেকেই অদ্ভুত সব অাচরণ করে বসি।
অামরা অামাদের পছন্দের প্লেয়ারের জার্সি পড়ি,তার মতো হেয়ার কাট দেই,প্রিয় ব্যক্তিত্ত্বের পার্সোনালিটি ফলো করি।
কিন্তু এসব উদাহরণের মাঝে কিছু একটা নিষ্ক্রিয় রয়েছে....
অামরা অামাদের পছন্দের যে সকল সেলিব্রেটিদের জন্যে বিভিন্ন কারণে অাবেগে অাপ্লুত হয়ে যাই,যেমন-কিছুদিন অাগে চেস্টার এর মৃত্যুতে হাজারো লিংকিং পার্কের ফ্যানরা কেঁদেছিলো।২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ মিস করে মেসির চোখে পানি দেখে অামরা মেসি ভক্তরা কাঁদি।
অাচ্ছা অামাদের জন্যে তারা কখনও কি কেঁদেছে উত্তর অবশ্যই না।
অার এ ব্যাপারটা অামরা ফ্যানরাও অস্বিকার করতে পারবো না।
অামাদের জিজ্ঞেস করলে অামরাি বলবো অামাদের পছন্দের সেলিব্রেটিরা কেন অামার জন্যে কাঁদবে,মনে করবে।অামি এমন কে...!
অার যদি বলি এমন একজন মানুষ ছিলেন যে সত্যি সত্যিই অামাদের জন্যে কাঁদতেন।

যে ব্যক্তির মর্যাদা,সম্মান ও খ্যাতির দিক থেকে যেকোন সেলিব্রেটির থেকে অনেক অনেক উপরে।
সে হলো অামাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)।
তিনি রাত জেগে নামাজ পড়তো,তার নামাজ পড়তে পড়তে পা ফুলে যেতো।
অার এ নামাজের মধ্যেও সে শুধু অামাদের জন্যেই দোয়া করতেন যাতে অামরা ভালো থাকি,পরকালে শান্তি পাই।

অার এ কথা ভেবেই তার চোখে পানি অাসতো যে তার মৃত্যুর পরে অারও অনেক মানুষ অাসবে যারা তাঁকে দেখবে না কিন্তু তার দেখানো পথে চলবে।

প্রত্যেক নবীকেই একটা দোয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো যেটা অবশ্যই কবুল হবে।
অামাদের উম্নাতের দরদী,মায়ার নবী  হযরর মুহাম্মাদ (সঃ) সে দোয়াটিও রেখে গিয়েছিলেন অামাদের জন্যে।

একটু ভেবে দেখুন যে মানুষটি অামাদের জন্মেরও হাজার বছর পূর্বে অামাদের জন্যে কাঁদতো।
কিন্তু অামরা সেই মানুষটির চোখের জলের কতটুকু মূল্যায়ন করছি.....

এ প্রসঙ্গে অাল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِٱلْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ

অর্থঃ তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়।(সূরা আত-তাওবাহ্‌ (التوبة), আয়াত: ১২৮)

সবশেষে অামার চৈতা পীরসাহেব দাদুর মুখ থেকে শোনা ৩টি লাইন বলে শেষ করছি,
"বাবার চেয়েও যিনি অতি দরদী,
মায়ের চেয়েও যিনি অতি মায়াবী,
সে যে হলো মোদের উম্মাতের দরদী নবী"।

[এ লেখাটির কনসেপ্ট বা ভাবনাটা অাসে Be better production এর একটি ইউটিউব ভিডিও দেখে।]

Saturday, 1 September 2018

দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের মজিদবাড়িয়া শাহী জামে মসজিদ

ঘুরে এলাম দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের মজিদবাড়িয়া শাহী জামে মসজিদ।যদিও অামাদের বাসা থেকে এটি ৭-৮ কিলোমিটার পথ।

সাড়ে ৫শ বছর পূর্বে সুলতানি শাসন আমলে স্থাপিত এ মসজিদটি,যা অাজও স্মরণ করিয়ে দেয় মুসলিম স্হাপত্য ও ঐতিহ্যের কথা।পরে মজিদ নামে এক ইউপি চেয়ারম্যান মসজিদবাড়িয়ার পরিবর্তে ইউনিয়নের নাম মজিদবাড়িয়া করেন বলে জানা যায়। দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাবে মসজিদটির সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের কিছুটা হারলেও সম্প্রতিক নতুন সংস্কার হয়েছে।তা অামি নিজেই প্রত্যক্ষ করি কেননা এর অাগে ৩ বছর অাগে এসে যে অবস্হা দেখি তার থেকে এখন সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও কিছুটা নতুনত্ব পায়।
কোটি টাকা ব্যায়ে অাধুনিক চাকচিক্য মসজিদের মাঝেও এই পুরানো প্রত্যান্ত অঞ্চলে ছোট্ট করে ঐতিহাসিক এ মসজিদটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে শত শত নারী-পুরুষ আসেন এখানে। পটুয়াখালী শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও বরগুনা জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার পূর্বে মসজিদবাড়িয়া মসজিদ অবস্থিত।

স্হানীয় প্রবীন ও খাদেম এবং তার দেওয়া লিপিটি থেকে যা জানতে পারি তা হলো,ইলিয়াছ শাহী বংশের এক স্বাধীন সুলতান রুকনুদ্দীন শাহ বাকলা দখল করে ১৪৬৫ সালে মির্জাগঞ্জ থানার মজিদবাড়িয়া গ্রামে এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ করেন। এ মসজিদই চন্দ্রদ্বীপের (বর্তমান বরিশাল বিভাগের) প্রথম ইটের নির্মিত কীর্তি আর উজিয়ল নামে এক মিস্ত্রি মসজিদটির নির্মাণকাজ করেন। মসজিদে তিনটি দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যখচিত মেহরাব। পূর্ব দিকে তিনটি খিলান পথ, ছয়টি আট কোণার মিনার ও সুদৃশ্য পিলার রয়েছে। একটি বারান্দাযুক্ত মসজিসটির পূর্ব-উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দু’টি করে জানালা রয়েছে।
সবথেকে অাশ্চর্যের বিষয় হলো,
বিশাল এক গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটি রড ও সিমেন্ট ছাড়াই চুনা সুরকি ও পোড়ামাটির ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের দেয়াল প্রায় ৭৫ ইঞ্চি পুরো। আর মসজিদের ভেতরের দিকে রয়েছে বিভিন্ন কারুকার্যখচিত মুসলিম স্থাপত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন।
১৫৮৪ সালে ঘূর্ণিঝড়ে বাকলা চন্দ্রদ্বীপ বিশেষ করে বর্তমান পটুয়াখালী জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এরপর শুরু হয় মগ ও পর্তুগিজদের আক্রমণ। ফলে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের প্রায় অর্ধেক এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়ে এবং আস্তে আস্তে জনপদগুলো জঙ্গলে পরিণত হয়। প্রত্যন্ত ওই এলাকায় দীর্ঘ দিন জনবসতি না থাকায় মসজিদবাড়িয়া মসজিদটি অব্যবহৃত হয়ে পড়ে। বন জঙ্গল ঘিরে হয়ে যায় এক ভুতুড়ে এলাকা।
১৮৬০ সালে এ অঞ্চল জমিদারের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করে পরিষ্কার করে আবাদ করার সময় এ মসজিদটির সন্ধান পাওয়া যায়।
অাশা করি সময় পেলে অাপনারাও এরকম একটি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্হান ভ্রমণ করে অাসবেন।

বাংলাদেশের সম্পদ বরগুনার বিবিচিনি শাহী মসজিদ।

ইদের ছুটিতে ঘুরে এলাম,অামাদের বাসা থেকে ১৮-২০ কিলোমিটার দূরে বরগুনা জেলা,বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি শাহী মসজিদ এ,এটি দিগন্তজোড়া সবুজের বর্ণিল আতিথেয়তায় উদ্ভাসিত ভিন্ন এক ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যে উঁচু টিলার ওপর দাঁড়িয়ে আছে মোগল স্থাপত্যকর্ম এই ঐতিহাসিক মসজিদ। এ এক হূদয়ছোঁয়া পরিবেশ, যা ভুলবার নয়, নয় প্রকাশের।তাই তো তৃতীয়বারের মতো গেলাম।নিঃসন্দেহে দেশের অসংখ্য দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে বিবিচিনি মসজিদ অন্যতম।

বিকাল দুপুর ৩:০০ দিকে অামি ও অামার বন্ধু সাইফুল দুজনে বিবিচিনির উদ্দেশ্যে রয়না হই,পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকাল হয়ে যায়।শেষ বিকালের সোনালি আলো জড়িয়ে নতুন কংক্রিটের পথ পেরিয়ে মসজিদের ঠিক পাদদেশে দাঁড়ালাম। কালো কাঠ কয়লার আবরণে ঢাকা মেঘ আকাশে উঁকিঝুঁকি মারছে। এরই মধ্যে সূর্যের সোনালি আলো মেঘের ফাঁকফোকর দিয়ে মাঝে মধ্যে বেরিয়ে এসে আলোর ‘প্রকৃতি’ ছড়াচ্ছে। আমি সফরসঙ্গী সাইফুল দুজনে মিলে স্থানটি ঘুরে দেখলাম।এর অাগেও অামি এখানে অারও দুবার এলেও সাইফুলকে এই প্রথমবার নিয়ে এলাম।দুজনে অাসরের নামাজ অাদায় করে,বিবিচিনি মসজিদের বয়জেষ্ঠ  ইমাম ও খাদেম এর কাছ থেকে এ মসজিদের ইতিহাস সহ অনন্য বিষয়ে যা জানতে পারলাম তা হলো,
 এ মসজিদটি হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ (রঃ) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এসে বিবিচিনিতে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন ১৬৫৯ সালে।এবং তাঁর কন্যাদ্বয়ের নামানুসারে গ্রামের এবং মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে।মসজিদের এর পাশে রয়েছে ব্যতিক্রম ধর্মী তিনটি কবর। স্থানীয় ভাবে জানা যায় মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা এবং তার কন্যা চিনিবিবি এবং ইসাবিবির কবর।

ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এ মসজিদকে গোটা দক্ষিণ বাংলার ইসলাম প্রচারের কেন্দ্র হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই উজ্জ্বল নিদর্শনটি টিকে থাকলেও কালের বিবর্তনে আজ এর ঐতিহ্য অনেকটাই হারিয়ে গেছে। তবু এর ধ্বংসাবশেষ পুরনো ঐতিহ্য ও শৌর্য বীর্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
-মসজিদটিকে ঘিরে রয়েছে অনেক অলৌকিক ঘটনা ও নানা ইতিহাসঃ

জানা যায়, তখনকার সময় বিষখালী নদীর পানি ছিল লবণাক্ত। সুপেয় পানির অভাবে জনগণ বহু কষ্ট পেত। নেয়ামত শাহ মানুষের এই কষ্টের কথা অনুভব করে তার সাধকতার আশ্চর্য তসবিহটি বিষখালী নদীতে ধুয়ে দিলে পানি হয়ে যায় সুপেয়। আজো সেই পানি একই অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া সে যুগে সুন্দরবন-সংলগ্ন বিষখালী নদীতে অসংখ্য কুমির ছিল। তার অলৌকিক প্রচেষ্টায় বিবিচিনি-সংলগ্ন বিষখালী নদী এলাকায় কোনো কুমির আসত না। এ কাহিনী এখনো এ এলাকায় প্রচলিত।এছাড়াও কেউ কেউ মনে করেন এ মসজিদ জ্বিন পরীদের দ্বারা হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ রঃ নির্মাণ করেছেন,এ প্রসঙ্গে অামি মসজিদের খাদেমকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন-
এ মসজিদ পাঁচশ সাড়ে পাঁচশ বছর অাগে যখন নির্মিত হয় তখন এখনকার মতো রাস্তাঘাট তো ছিলই না এমনকি নদীপথেও কোন জাহাজ চলাচলও ছিলো না।ইটের ভাঁটা তো দূরের কথা।এ দিকে এ মসজিদের দেয়াল ৬ ফুট পুরো যার জন্যে অসংখ্য ইট ব্যাবহৃত হয়েছে,যা দিয়ে তিন-চারটি মসজিদ নির্মাণ করা যায়।এখন প্রশ্ন হলো এত ইট কোথা থেকে অাসল,অাবার ধরলাম হয়তো ঢাকা চট্টগ্রাম থেকে অাসলো,কিন্তু তখন তো কোন স্হল ও নদীবন্দরে কোন যানচলাচল ছিলো না।এ থেকে ধারণা করা হয় এ ইটগুলো হয়তো হযরত নেয়ামত উল্লাহ রঃ জ্বিন দ্বারা অানিয়েছেন।এটি হয়তো অাল্লাহর ওলী হিসেবে তাঁর কারামত।

মসজিদটি নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক বিস্ময়কর স্থান হিসেবে গুরুত্ব বহন করে আসছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বাংলার অন্যতম মোগল স্থাপত্যশিল্প এবং এলাকার পুরনো দিনের অতীত স্মৃতি ও ঐতিহ্য। সম্রাট শাহজাহানের সময় পারস্য থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে শাহ নেয়ামতউল্লাহ দিল্লিতে আসেন। এ সময় দিল্লির সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র বঙ্গদেশের সুবাদার শাহ সুজা তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং কতিপয় শিষ্যসহ বজরায় চড়ে তিনি ইসলাম প্রচার ও ইবাদতের জন্য ভাটির মুলুকে প্রবেশ করেন। শাহ নেয়ামতউল্লাহ বজরায় চড়ে দিল্লি থেকে রওনা হয়ে গঙ্গা নদী অতিক্রম করে বিষখালী নদীতে এসে পৌঁছলে বিবিচিনিতে শাহজাদা বাংলার সুবেদার মোহাম্মদ শাহ সুজার অনুরোধে একই গ্রামে এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। বিবিচিনি গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম নেয়ামতি। গ্রামটির নেয়ামত শাহের নামেই রাখা হয়েছে বলে জানা যায়।

দর্শনীয় ও শোভা বর্ধনকারী এ মসজিদ ঘিরে রয়েছে নানা ধরনের ঘটনা,যা মানুষের মনে কৌতূহল সৃষ্টি করে। শোনা যায়, পূর্বেকার সময় স্বপ্নে প্রাপ্ত দূরবর্তী অনেক লোকজন এ মসজিদ থেকে গুপ্তধন নিয়ে যেত। শুধু তাই নয়, যে যে ধরনের প্রত্যাশা নিয়ে এখানে আসে, তার অধিকাংশের আশাই নাকি পূর্ণ হয় বলে অসংখ্য মানুষের কাছে শোনা যায়।এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম যে মাজারের কোন অলৌকিক ঘটনা অাছে কি না,
-তিনি বলেন,অামরা ইতিহাস থেকে জানতে পেরেছি প্রথমদিকে মসজিদ সংস্কার করতে গিয়ে চারদিক খোঁজাখুঁজি করে একটা নলা পাওয়া গেছে যারা পুরত্ব সাড়ে তিন হাত তাহলে মানুষটি ১৫-২০ হাত হবে।সে অনুমানে মাটিতে খুড়াটি কবর দেওয়া হয়।এছাড়া অন্য কোন ইতিহাস তারা পায় নি।তবে এ মাজারকে ওসীলা করে মানত করে না কি কিছু মানুষের অাশা পূরণ হয়েছে বলে শুনেছেন তারা।

এছাড়াও মসজিদের কাছেই রয়েছে ছোট-বড় তিনটি পুরনো দীঘি। মোগল আমলের এ দীঘি থেকে মানুষ যা চাইত, তা পাওয়া যেত বলে শোনা যায়। মসজিদের নিকটবর্তী বড় দীঘিটি ইছাবিবির দীঘি নামে পরিচিত। তবে বর্তমানে এসব দীঘি বিপন্নপ্রায়।এর সত্যতা সঠিক জানতে পারি নি।

স্থাপত্যশৈলীঃ
সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৩৩ ফুট, প্রস্থ ৩৩ ফুট। দেয়ালগুলো ছয় ফুট চওড়া। দক্ষিণ ও উত্তর দিকে তিন-তিনটি দরজা রয়েছে। মসজিদের ইটগুলো বর্তমানের মতো নয়। ইটগুলো মোগল আমলের তৈরি ইটের মাপের ন্যায়। যার দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১০ ইঞ্চি এবং চওড়া ২ ইঞ্চি। সমতল ভূমি হতে মসজিদ নির্মিত স্থানটি আনুমানিক কমপক্ষে ৩০ ফুট সুউচ্চ টিলার ওপর অবস্থিত। তার ওপরে প্রায় ২৫ ফুট মসজিদ গৃহ।

বিবিচিনির ইতিহাসসমৃদ্ধ মসজিদটির ধ্বংসাবশেষ দীর্ঘদিন সংস্কারবিহীন থাকার পর প্রায় ১২ বছর পূর্বে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। যদিও সংস্কারের এই উদ্যোগ যথেষ্ট ছিল না। শুধু তাই নয়, নির্দশনটি দেখতে আসার জন্য উপযোগী রাস্তার অভাবে দর্শনার্থীদের ভোগান্তি হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি, অজু ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের ব্যবহারের ব্যবস্থা নেই।
এসব ব্যাপারে উক্ত মসজিদের খাদেমকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন-
সাম্প্রতিক পটুয়াখালী জেলার কৃতীসন্তান সচিব মালেক এ মসজিদের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষণ করবেন বলে অাশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান...

তারপরও অামি মনে করি,বিবিচিনি শাহী মসজিদের উন্নয়নে সরকারের আরো নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং অন্য সবার সচেষ্ট ও উদ্যোগী হওয়া দরকার।

সবশেষে বলবো বিবিচিনি মসজিদের সুন্দর মনোরম পরিবেশ সত্যি আকুল করে দেয়।টিলার উপরে উঠলে মনে হয় নদী বেষ্টিত এই জনপদের ছোটখাটো একটি পাহাড়ে উঠেছি, এমন পরিবেশ থেকে মন চায় না চলে যাই কিন্তু সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে তাই বাড়ি ফেরার তাড়া। এগিয়ে যাচ্ছি সাধনার তীর্থস্থান পেছনে ফেলে গুডবাই জানিয়ে, তবে মনেমনে ভাবে গেলাম আবার চতুর্থ বারের মতো এখানে অাবার আসব তখন তোমায় দেখব নতুন রূপে অন্য কোনোভাবে।

যেভাবে যাওয়া যায়ঃ

ঢাকা থেকে যেতে হলে আপনাকে বরগুনার বাসে করে আগে বরগুনা সদরে যেতে হবে। ঢাকা থেকে বরগুনায় চলাচলকারি বাসগুলোর মধ্যে আছেঃ

১। আবদুল্লাহ পরিবহন, ফোনঃ ০১৭০০৬২৫৮০৯, ০১৯১২৪২৮৭৯০, ০১৯২৮১৩৭১৪২, ০১৭১৪৬৬২৭৩২ (সায়েদাবাদ কাউনটার), ০১৯১৫৮৪৪৫২৬, ০১৯১৪৪২৪৬৮৭ (বরগুনা সদর কাউনটার)
২। শাকুরা পরিবহন, ফোনঃ ০১১৯০৬৫৮৭৭২ (গাবতলি কাউনটার), ০১৭২৫০৬০০৩৩ (সায়েদাবাদ কাউনটার)

এই বাসগুলোর ভাড়া ৩৫০/- টাকা থেকে ৬০০/- টাকার মধ্যে।

অথবা আপনি সরাসরি বেতাগীর / বরগুনার লঞ্চে করে বেতাগী / বরগুনা যেতে পারেন। প্রতিদিন বিকেল ৫-৬টার মধ্যে এসব লঞ্চ ছেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে আপনাকে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে চড়তে হবে।

বরগুনা পৌছানোর পরে বাসযোগে বেতাগি যাওয়ার পর মোটরসাইকেল অথবা রিক্সাযোগে গন্তব্যস্থলে পৌছে যেতে পারবেন। এমনকি বরিশাল হতে বাস যোগে সরাসরি এই দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন।
যেহেতু এ মসজিদটি অামাদের এলাকার সেহেতু যেকোন সমস্যা বা যেকোন প্রয়োজনে ফোন করতে পারেন-#01766482670 এই নাম্বারে।

#যেখানে থাকতে পারেনঃ

থাকার জন্যে আপনাকে বরগুনা সদরে ফিরতে হবে। বরগুনায় থাকার জন্য বেশকিছু আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউজ রয়েছে। আপনার সুবিধার্থে কিছু হোটেল ও রেস্ট হাউজের তথ্য সংগ্রহ করে নিম্নে দেওয়া হলঃ

১। জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৪১০)
২। খামারবাড়ি রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৪৪৯)
৩। পানি উন্নয়ন বোর্ড রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৫৫১)
৪। এভাগ্র সার্ভিস সেন্টার (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৭০৮)
৫। গণপূর্ত অধিদফতর (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৫০৫)
৬। ইলাজি ডি রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬০৫৪)
৭। সিয়ারাপি রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬০৫১)
৮। হোটেল আলম, ফোনঃ ০৪৪৮-৬২২৩৪
৯। বরগুনা রেস্ট হাউজ, ফোনঃ ০১৭১৮৫৮৮৮৫৬
১০। হোটেল তাজবিন, ফোনঃ ০৪৪৮-৬২৫০৩

এই মসজদটিকে কেন্দ্র করে অামরা একটি ভিডিও বা ব্লগও তৈরি করেছি,এডিটের কাজ চলছে খুব শিগ্রই ভিডিওটি অাপলোড দিবো,ইনশাআল্লাহ।

ক্রীতদাসের হাসি,শওকত ওসমান (রিভিউ-৭)

"হাসি মানুষের অাত্নারই প্রতিধ্বনি।যারা ভালো কথা বলতে পারে,তারা ভাল হাসতে ও পারে।"
আমরা বেশির ভাগ সময় মেকি হাসি মুখে লেপটে রাখি। কিন্তু অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে যে হাসি বা যে খুশি আসবে সেটা মহা মূল্যবান। আপনি পার্থিব সম্পদ দিয়ে সে হাসি কিনতে পারবেন না। যেমন পারেননি অামার অাজকের রিভিউ ক্রীতদাসের হাসি উপন্যাসের খলিফা হারুনুর রশীদ ক্রীতদাস তাতারীর থেকে।

এ বইটি কলেজের বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য হওয়ার পর অামার প্রথম পাঠিত বই।এ বইটি শেষ করার পর যে ভালোলাগা কাজ করে তারই তাড়নায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অন্যান্য বই পাঠ করার উৎসাহ পেয়েছিলাম।যাই হোক অার কথা না বাড়িয়ে এ বইটি নিয়ে সংক্ষিপ্ত রিভিউতে চলে যাই..

ক্রীতদাসের হাসি বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান রচিত একটি উপন্যাস। ১৯৬২ সালে তিনি এ উপন্যাসটি রচনা করেন। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন পাকিস্তানকে বর্বর স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে আবদ্ধ করলো। এ সময় সব ধরনের-বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল। তৎকালীন পাকিস্থানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের শাসন ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করে এ উপন্যাস রচিত হয়। এ উপন্যাসের মূল চরিত্র তাতারী। গণতান্ত্রিক চেতনাকে ভয় পায় স্বৈরাচারী শাসক। এই চেতনাকে দমন করার জন্যই আবার নেমে আসে সামরিক শাসন তবুও লেখকের প্রতিবাদ স্তব্ধ থাকেনি। রূপকের মধ্য দিয়ে তীব্র হয়ে উঠেছে এই প্রতিবাদ। প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে শওকত ওসমানের ‘ক্রীতদাসের হাসি’র তাতারী। খলিফা হারুনর রশীদ কোনো কিছুর বিনিময়েই তাতারীর হাসি শুনতে পান না। খলিফার নির্দেশে হাসার চেয়ে মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করেছে তাতারী।
অাপনাদের অারও ভালোভাবে ও স্পষ্টকরে বোঝার সুবিধার্থে এ উপন্যাসের কিছু ঘটনা সংক্ষেপে তুলে ধরছি।

ঘটনাটি মুসলিম খলিফা হারুন অর রশিদের অন্দর মহলের। খলিফার হাবসী ক্রীতদাস #তাতারী ও আরমেনীয় দাসী #মেহেরজান পরষ্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রেমে পড়ে। তাদের ভালবাসাকে স্বীকৃতি দেন রাজমহিষী। খলিফার অজান্তেই রাজমহিষী দুজনের বিয়ে দিয়ে দেন। তারা খলিফার স্ত্রীর অনুমতিক্রমে প্রতিরাতেই দাসদের বসবাসের নির্ধারিত স্থানে মিলিত হত। এ দুই প্রেমিক-প্রেমিকা মিলিত হয়ে প্রাণখোলা হাসি হাসত।এদিকে খলিফার মনে শান্তি নাই,তার ধন সম্পদ রাজ-ক্ষমতা সবই রয়েছে। কিন্তু তিনি মনের মধ্যে সব সময় একটি অস্থিরতাবোধ করেন। তিনি যেন হাসতেই ভুলে গেছেন। একদিন রাতের বেলায় বাগানে তার জল্লাদ-কাম সহচর মাশরুরসহ বেড়াতে গেলে সেখান থেকে ক্রীতদাসের হাসি শুনতে পান।খলিফা মাশরুরকে আদেশ দেন যে কে এমন প্রান খোলা হাসি হাসে তাকে খুজে বের করতে।মাশরুর সেই হাসির উৎস খুজে বার করে এবং খলিফাকে জানায়।পরের দিন তিনি গোপনে তাতারি ও মেহেরজান এর প্রেমলীলা প্রতক্ষ করেন। কিন্তু খলিফার অদ্ভূত খেয়াল হয় তিনি ক্রীতদাসকে মুক্ত করে দিয়ে তাকে প্রয়োজনীয় শানসাওকাত দিয়ে তার প্রাণখোলা হাসি শুনবেন।

ক্রীতদাস তাতারির প্রাণোচ্ছল হাসি শুনে বিমোহিত খলিফা হারুনুর রশীদ ভেবেছিল তিনি তাতারির হাসি কিনে নিতে পারবেন। যখন ইচ্ছে সেই হাঁসি শুনতে পাবেন যেন তাতারি চাবি দেওয়া পুতুল। যখন চাবিতে মোচড় দেবেন তখনি সে হাসতে শুরু করবে। সেই চেষ্টায় খলিফা তাতারি কে দাস থেকে মুক্ত করে অঢেল সম্পত্তি প্রদান করলেও কেড়ে নেন তাতারির হাসির মূল উৎস মেহেরজান কে। মেহেরজান থেকে আলাদা হয়ে তাতারি কি হাসতে পারে! না পারেনি তাতারি। ক্রুদ্ধ খলিফার নির্দেশে চাবুকের আঘাত তাতারির কালো চামড়া ফালি ফালি হয়েছে, রক্তাক্ত হয়েছে। কিন্তু হাসি ফিরে আসেনি। না আর দশটা মানুষের মতো তাতারি পারেনি মেকি হাসি মুখে লেপটে রাখতে। পারেনি অঢেল সম্পত্তি পেয়ে নিজের অস্তিত্ব ভুলে যেতে। "ক্রীতদাসের হাসি" দারুণ একটা উপন্যাস। সাইজে বেশ ছোট হলেও গভীরতায় সমুদ্রসম।অাশা করি বইটি পড়ে অাপনাদের সকলের ভালো লাগবে। তবে শেষাংশে তাতারীর কণ্ঠে "দিরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস কেনা যায়। বান্দি কেনা সম্ভব । কিন্তু-কিন্তু এ ক্রীতদাসের হাসি না-না-না। .... হাসি মানুষের আত্মারই প্রতিধ্বনি।" কথাগুলো পড়ে অামার মনে প্রতীবাদের তীব্র ধ্বনি বেজে উঠে।
এ বইটির ভিতরে অামায় অাকর্ষিত ও ভালোলাগা কিছু লাইন নিম্নে তুলে ধরছি,

*হাসি মানুষের অাত্নারই প্রতিধ্বনি।

*"যারা ভালো কথা বলতে পারে,তারা ভাল হাসতে ও পারে।"
ব্যাখ্যা:ভাল কথা হচ্ছে রুহের প্রতিধ্বনি-সেখানেই জমে থাকে,তারপর ঝর্ণার মত বেরোয়।অনাবিল হাসি হচ্ছে ভাল কথারই শারীরিক রুপ।হাসি অার কথার মূল উৎস এক জায়গায়।তাই যারা ভালো কথা বলতে পারে,তারা ভাল হাসতে ও পারে।

*      ইরানী মেয়ের সীনা ভাল,
           মিশরী মেয়ের উরু।
      অারবী মেয়ের নাভীর নিচে
               স্বর্গ ঠারে ভুরু।
-অাচ্ছা পাঠক বাঙালি মেয়ের কোন অঙ্গটি বেশি সুদর্শন ও ভালো সেটা জানা থাকলে কমেন্টে জানিয়েন...

*অনেক মানুষ অাছে যারা সুখ পায় না কিন্তু সুখের মর্ম বোঝে।মনুষ্যত্বহীন,কিন্ত মনুষ্যত্বের অাস্বাদ পায়।( ওরা হাসে)

ক্রীতদাসের হাসি গল্পটি অবলম্বনে বাংলায় রিয়াজ,হিমির একটা মুভিও রয়েছে,চাইলে দেখতে পারেন।মুভিটির লিংক-
https://youtu.be/_dP-b6UVbQA

কপালকুন্ডলা,বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (রিভিউ-৬)

“তুমি অধম — তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?”

“পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ?”

দুটো লাইনই অবিস্মরণীয় উক্তি যা বাংলা ভাষায় সুভাষিত উক্তি রূপে বহুল ব্যবহৃত ও চর্চিত হয়।
প্রথম লাইনটা শোনেনি,এমন বাঙালি বোধহয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল।আর দ্বিতীয় লাইনটাকে বাংলা সাহিত্যে সর্বপ্রথম ও শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক ডায়লগের স্বীকৃতি দেয়া হয়।দুটো লাইনই বঙ্কিমচন্দ্রের এক উপন্যাসের অংশ — কপালকুণ্ডলা।
ছোটবেলা থেকেই বাংলা পঠ্যবইয়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর গদ্যগুলো পড়ার সময় কবিপরিচিতিতে কপালকুন্ডলা,বিষবৃক্ষ,কৃষ্ণকান্তের উইল পরীক্ষায় জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অবজেক্টটিভ এর জন্যে এসব উপন্যাসের নাম পড়ে পড়ে এবং প্রথম লাইনটি শুনে শুনে বড় হয়েছি।অবশেষে অাজ সাহিত্য সম্রাট এর রচিত বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক রোমান্টিক উপন্যাস কপালকুন্ডলা পড়ে শেষ করলাম এবং সাথে সাথেই রিভিউ লিখতে শুরু করলাম,অাশা করি সময় হলে ধৈর্য ধরে পুরো লেখাটি পড়লে যারা কপালকুন্ডলা বইটি পড়েন নি তাদের হয়তো এ বইটি পড়ার ইচ্ছে জাগবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। স্থানীয় মন্দিরের অধিকারীর সহায়তায় নবকুমার কপালকুণ্ডলাকে বিয়ে করে নিজের বাড়ি সপ্তগ্রামে ফিরে আসেন। পথে মতিবিবি বা লুৎফউন্নিসা নামে এক বিদেশী রমণীর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয়।

কপালকুণ্ডলা বাল্যকাল থেকে জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে কাপালিকের কাছে বড় হওয়ায় স্বাভাবিক সামাজিক রীতিনীতির সঙ্গে অপরিচিত ছিলেন। নবকুমারের বাড়িতে তিনি ধীরে ধীরে সমাজের মানুষজন ও তাদের আচারআচরণ সম্পর্কে ধারণা পেলেন। কপালাকুণ্ডলা নাম বদলে তার নাম রাখা হল মৃন্ময়ী।

মতিবিবি বা লুৎফউন্নিসা আসলে নবকুমারের প্রথমা স্ত্রী পদ্মাবতী ছিলেন। পরে সপরিবারে মুসলমান হয়ে আগ্রা চলে যান। পথে নবকুমারকে দেখে তিনি পুনরায় তাকে স্বামীরূপে লাভ করতে উৎসুক হন এবং সপ্তগ্রাম চলে আসেন। পদ্মাবতীর পরিচয় জানার পর নবকুমার তাকে প্রত্যাখ্যান করেন।

এদিকে কাপালিক কপালকুণ্ডলাকে বধ করতে সপ্তগ্রাম চলে আসে। তার হাত ভেঙে যাওয়ায় সে পদ্মাবতীর সাহায্য চায়।

পদ্মাবতী ব্রাহ্মণবেশ ধারণ করে কপালকুণ্ডলাকে সব খুলে বলে এবং নবকুমারকে ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করে। ব্রাহ্মণবেশী পদ্মাবতীর সাথে কপালকুণ্ডলাকে দেখতে পেয়ে নবকুমার তাকে ভুল বুঝে খুব কষ্ট পান। আর কাপালিক সুযোগ বুঝে সুরাপান করিয়ে নবকুমারকে উস্কে দিতে থাকেন।

শেষপর্যন্ত নবকুমার আর কপালকুণ্ডলার মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব সংঘাতের মধ্য দিয়ে উভয়েই জীবনের চরম উপসংহারে উপনীত হয়।

হুমায়ূন অাহমেদ এর বই যেরকম চোখবুলিয়ে এক বসায় পড়ে উঠে যায়,কিন্তু বঙ্কিম এর লেখা বিশেষ করে কপালকুন্ডলা বইটি পড়তে অাপনার মনোযোগ ধরে রাখতে হবে।

অধিকাংশ পাঠকই পড়তে গিয়ে অামার মতো—চন্দ্ররশ্মিবর্ণাভা বা বারিধারাপরিসিঞ্চিত ঘরানার মতো বেশ কিছু শব্দের অর্থ বুঝতে সমস্যায় পড়বেন হয়তো।আবার বাটী অর্থ যে বাড়ি —সেটা আমার জানা থাকলেও আগে বাটির কথাই মনে আসে।

বানানের ক্ষেত্রেও কিছুটা সমস্যায় পড়েছি যেমন ধরুণ ধর্ম্ম বা কর্ত্তার মত বানান দেখলে একটু ভিরমি খেতে হয় বৈ কি! তবে বিশ শতকে কলকাতা আর অামাদের ঢাকার উচ্চারণ পার্থক্যহেতু পেয়েছে এর মাধ্যমেই।ওরা কালের বিবর্তনে পরের অংশ নিয়ে উচ্চারণ করেছে — ধম্ম বা কত্তা। আর আমরা শুরুর অংশ নিয়ে ধর্ম বা কর্তা এসবই ব্যাবহার করছি।

অার হ্যাঁ,এসব শব্দ ও বানানের সমস্যার কথা শুনে ভয় পাইয়েন না,বইটি সংগ্রহ করে অথবা গুগল থেকে পিডিএফ ফাইল নামিয়ে ধৈর্য ধরে প্রথম কয়েকটা পাতা পড়ুন এবং পুরো বই পড়ার সময়ে মনোযোগ ধরে রাখুন,যেসব শব্দের অর্থ না বুঝবেন সেগুলো রেখেই পড়ুন,অাশা করি গল্পের কাহিনী বুঝতে পারবেন।
সবশেষে,বঙ্কিমের মত হয়তো অাপনাদেরও প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করবে — আকাশে চন্দ্রসূর্য্য থাকিতে জল অধোগামী কেন?

যদি কপালকুন্ডলা বইটি সংগ্রহ করে পড়ার সময় না হয় অথবা গল্পটি পড়েও কাহিনী বুঝতে অসুবিধে হয় তাহলে এ গল্পটি অবলম্বনে ১৯৩৩ সনে প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর পরিচালনায় কপালকুণ্ডলা চলচ্চিত্রটি নিম্নের লিংক এ দেখতে পারেন। এতে অভিনয় করেন উমাশশী, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, মলিনা দেবী, নিভাননা দেবী, অমর মল্লিক, অমূল্য মিত্র প্রমুখ।
https://youtu.be/EUvScRPVpUM

জনম জনম,হুমায়ূন অাহমেদ (রিভিউ-৫)

"অন্ধকারে তুমি সখী চলে গেলে কেন তবু হৃদয়ের গভীর বিশ্বাসে অশ্বত্থের শাখা ঐ দুলিতেছেঃঅালো অাসে ভোর হয়ে অাসে।"

ইদানিং কেমন যেন হুমায়ূন অাহমেদ এর লেখা বইগুলো পড়ার নেশা হয়ে গেছে,পড়ে ফেললাম তাঁর লেখা ‘জনম জনম’ বইটি।এটি তাঁর একটি ব্যতিক্রমধর্মী বই।

নিশিকন্যা চেনেন? এই গল্পের নায়িকা তিথি হচ্ছে নিশিকন্যা।
এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবনকাহিনী নিয়ে এই উপন্যাস এর মূল কাহিনী।তিথি তার দরিদ্র পরিবারকে সাহায্যের জন্যে নিজের সর্বস্ব বিসর্জন দিয়ে নামে পতিতাবৃত্তিতে। তার রোজগারেই সংসার চলে, কিন্তু তবু তাকে জীবনের পদে পদে হীনতার স্বীকার হতে হয়। তার পরিবারের সদস্যরা জানে সে কিভাবে উপার্জন করে, কিন্তু তবু পেটের দায়ে তাকে কেউ এই পথ থেকে সরে আসার জন্য অনুরোধ করে না। কারণ যেই পথেই উপার্জন করুক না কেন, তার আয়েই মূলত ছয় জনের সংসার চলে। অন্ধ বাবার চিকিৎসা, সংসার খরচ, ভাইবোনের খরচ, সব এই একা তিথিকেই সামলাতে হয়।

এই তিথি শুধু একাই নয়, আমাদের সমাজে আজও অনেক অসহায় নারীরা আছে, যারা অভাবের তাড়নায় নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু তাদের এই ভুমিকাকে অামরা মূল্যায়নতো করিই না, বরং সমাজের ঘৃণিত শ্রেণীর নাম উচ্চারণ করতে হলে তাদের নামই বোধহয় আগে আসে।
তিথিদের মতো মেয়েদের পতিতা,বেইশ্যা বলার আগে তাদের এ পথে অাসার গল্পটা শুনুন এবং বোন বলুন,দেখবেন সমাজ_বদলে_যাবে।

জনম জনম গল্পের অারও কিছু চরিত্র সম্পর্কে সংক্ষেপে বলছি,
তিথির মা #মিনুর চরিত্র দারিদ্রের তীব্র কষাঘাতে ভয়াবহ রকমের রুঢ় ও খিটিখিটে হয়ে পড়েছে। পরিবারের ছোট মেয়ে #অরু স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেড়ে শ্বশুরবাড়ি দুই সন্তানকে ফেলে, আরেক সন্তানকে গর্ভে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে এসেছে। জালালুদ্দিন সাহেবের বড় ছেলে #হীরু কোন কাজকর্ম করে না কিন্তু সারাদিন হয় #অ্যানা নামের এক মেয়ের পেছনে পেছনে ঘোরে নয়ত এক পীরের শিষ্যত্ব নিয়ে ভক্তিভরে তার কথা মত কাজ করে। আর ছোট ছেলে #টুকু পরিবারের অন্যতম অবহেলিত সন্তান যাকে নিয়ে কারো ভাবার কোন অবকাশ নেই। মাত্র ১৩ বছর বয়সের টুকুর জ্বর হলেও তাকে তার মা শাস্তিস্বরূপ অভুক্ত রাখে আবার টুকু বাড়ি না ফিরলেও তার পরিবারের কেউ খুব একটা চিন্তা করে না। অথচ তার যে একটা শিল্পী মন আছে সে খবর কেউ রাখে না। . তিথির এক চেনাজানা বড়ভাই আছে নাসিম নামে। তিনিই তিথির খদ্দের ঠিক করে দেন।এই নাসিম ভাইয়ের মাধ্যমেই তিথির সাথে দেখা হয় দবির সাহেবের। . #দবির সাহেবঃ একটি ছোটখাট কারখানার মালিক এক মেয়ে নাম অজান্তা ক্লাস সেভেনে পড়ে আর দবির  সাহেবের স্ত্রী ফরিদা অসুস্থ হয়ে বিছানায় পরে আছেন। এই দবির সাহেব আর তার অসুস্থ স্ত্রী ফরিদাকে নিয়ে উপন্যাসের বাকি ঘটনা। .

#পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে গল্পে সাজানো এই উপন্যাস। হুমায়ুন আহমেদের অন্যান্য উপন্যাসের মত "জনম জনম"-ও খুবই সুখপাঠ্য। উপন্যাসের কাহিনীতে একাধিকবার বাঁকবদল ঘটবে। তাই যেকোন পাঠককেই  উপন্যাসটি শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে সক্ষম হবে বলে আমার মনে হয়।
বইটা আমার পড়ে কেন জানি খুব ভাল্লাগলো। একজন বেশ্যার জীবন তিনি এতো সুন্দর করে গুছিয়ে বর্ণনা করেছেন যে আপনি একবারও তিথি কে খারাপ মেয়ে মনে করতে পারবেন না।অামি তো তিথির কিছুটা প্রেমেও পড়ে গেছি।এই জনম জনম গল্পটি নিয়ে #নিরন্তর নামে একটা সিনেমাও হয়েছে, শাবনূর অভিনয় করেছিল তিথির চরিত্রে, সিনেমাটিও ভাল লেগেছে।বইটি পড়ে সিনেমাটি দেখুন দেখবেন বইটি পড়ে অাপনার কল্পনায় অাঁকা চরিত্রগুলো ছবিটি দেখার সময় মনটা কেমন ব্যাকুল হয়ে দৃশ্য ও চরিত্রগুলো খুঁজে খুঁজে দেখতে ইচ্ছে হয়।
নিরন্তর ছবির লিংক-https://youtu.be/89i44WRBVwI

প্রীয়তমেষু,হুমায়ূন অাহমেদ (রিভিউ-৪)

ফাগুণের ফুল যায় ঝরিয়া ফাগুণের অবসানে,
ক্ষণিকের মুঠি দেয় ভরিয়া অার কিছু নাহি জানে!

অামি আমার খুব প্রিয় একজন লেখকের বই হাতে নিয়ে বসলাম এবং বইটি পড়া শেষ করে মনে হয়েছে এটি আমি এতদিন চোখের সামনে থাকতেও কেন ফেলে রেখেছি,পড়িনি কেন?দুদিন ধরে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে ও টিফিন টাইমে পড়ে ফেললাম হুমায়ূন আহমেদের প্রিয়তমেষু বইটি এবং এ বইটি পড়ে অামার অনুভূতি,চিন্তাগুলো এবং বইটির সারমর্ম অাপনাদের সাথে শেয়ার করতে অাজকের এ লেখা-

প্রিয়তমেষু বইটির প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা খানিকটা কষ্ট করে পড়ে যাবার পর রীতিমত গোগ্রাসে গিলেছি বলা চলে।বিশেষ করে বইয়ের একদম শেষ প্যারাটা পড়ে মনে হয়েছে আসলেই পুরা কাহিনীর মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য বা কারো মনে আজীবন ছাপ রেখে যাওয়ার জন্য খুব অল্প কিছু শব্দের প্রয়োজনীয়তাই যথেষ্ট, তার জন্য আবার আলাদা করে আরেকটা উপন্যাস লিখবার দরকার হয়না।

প্রীয়তমেষু গল্পে নিশাত জহির, পুষ্প রকিবকে নিয়ে লেখা উপন্যাসে ব্যাক্তিগত সুখ এর সাথে সাথে প্রধান বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে বর্তমানে ডালভাতের মতো গা সয়ে যাওয়া ধর্ষণ নামক অত্যাচারের কথা।ধর্ষিতার লড়াই, তার নিজস্ব অনুভূতি, ফাটল ধরা সংসারে মোমের প্রলেপ লাগিয়ে সারিয়ে তোলার চেষ্টা, মানসিক অস্থিরতার মতো জটিল ব্যাপারগুলোকে এত সহজে প্রকাশ করার ক্ষমতা যে হুমায়ূন আহমেদের লেখনীতেই প্রকাশ পাওয়া সম্ভব তাতো জানা কথাই।

তবে যাদের আমার মতো খানিকটা মনে অশান্তি লেগে থাকেই এই ভেবে যে হুমায়ূন আহমেদ তার বেশিরভাগ লেখায় স্পষ্ট সমাপ্তি আঁকেন না তাদের জন্য এই বইটা ম্যাজিকের মতো কাজ করবে সেই ক্ষোভ দূর করতে। বিশেষ করে নিশাত কে নিয়ে লেখা বইটির শেষের প্যারাগ্রাফ পড়ে পাঠকের মনে আবারও ফিরে আসবে সেই একি প্রশ্ন যে স্বাধীনতার যুগেও কেন একটা মেয়েকে মুখ বুজে সব অত্যাচার সহ্য করে যেতে হবে, আর কবেই বা মেয়েরা নিজেদের গলা খুলে নিজেদের সব কথাগুলো কোন লোকলজ্জা-অপমান এর তোয়াক্কা না করে বলতে পারবে।

সংকীর্ণমনারা যদি শুধু মাত্র ধর্ষণকেই যৌননিপীড়ন মনে করে এবং ধর্ষণের পিছনে মেয়েদের পোষাককেই দায়ী করে তবে অামি বলবো এটা তাদের একটা বড় ভুল।অাচ্ছা বোরকা পড়া পর্দাশীল মেয়েরাও কি ধর্ষণের হাত থকে রেহাই পায়।এখনে যুক্তিবাদীরা বলবে পর্দাশীল নারীরা কম হয় এক্ষেত্রে অামিও একমত।কিন্তু বাবা-দাদার বয়সী যে লোকটা আদর করার ছলে কোন অবুঝ পাঁচ-সাত বছরের শিশুর গায়ে হাত বুলিয়ে দেয় সেটা কি নিপীড়ন না?
খবরের কাগজ খুললে প্রায়ই দেখা যায় বড় ভাই তার বোনকে,দুলাভাই তার শালিকে,শিক্ষক তার ছাত্রীকে এমনকি জন্মদাতা পিতাও তার নিজ মেয়েকে ধর্ষণ করে।ভাবুন তো একবার কতটা বর্বর,অবাক করা ঘটনা।যুক্তিবাদীরা এ ক্ষেত্রেও কি পর্দা বা এরূপ কিছু টেনে অানবেন?
যখন এরূপ অপ্রত্যাশিত কারও কাছ থেকে কোন নারী ধর্ষিত হয় তখন এরকম লজ্জা,অপমান ও কষ্টের কথা অধিকাংশ নারীই তাঁর অাশেপাশের কাউকে বলার মুখ থাকে না,কাছের বান্ধবী এমনকি নারির সম্পর্কের মায়ের কাছেও সেসব কথা বলতে গিয়ে মেয়েরা আটকে যায়।ভোগে মানসিক অশান্তিতে যা বছরের পর বছর মনের মধ্যেই লুকিয়ে রাখে।প্রীয়তমেষু গল্পেও শেষ প্যারাতে এরূপ ঘটনা অাপনারা নিশাতের মধ্যে দেখতে পাবেন।
এই যে বাঁধাটা, এই বাঁধাটা দূর করে দাঁড়ানোর স্বপ্ন,হাতে গোনা কয়েকজন পুষ্প দেখতে পারে এবং নিশাত এর মতো অল্প কয়েকজন সেই স্বপ্ন পূরণ করার সময় পুষ্পদের হাত ধরে দাঁড়ায়।কিন্তু নিশাত- পুষ্পদের বিরুদ্ধেও যে কতজন হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে আছে তাঁদেরও তো দেখতে হবে নাকি?পুষ্পরা কি পারে নিজেদের কথা সবার মাঝখানে তুলে ধরতে? পুষ্পদের প্রিয়তমেষুরা কি তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হলে বইটি অাপনাকে পড়তে হবে এবং পড়া শেষ হলে হয়তো অাপনিও অামাদের সমাজ ব্যাবস্হা এবং সেখানে নারীদের অবস্হা নিয়ে ভাবনায় পড়ে যাবেন,মনটা কেমন কেমন.... করা নিয়ে বসে থাকতে হবে ক্ষানিকক্ষন।
হুমায়ূন অাহমেদ এর এ গল্পটি অবলম্বনে একটি নাটকও নির্মিত হয়েছে,এটির লিংক-https://youtu.be/uvr3J_7VihE

ফেরা (সিহিন্তা শরীফা,নাইলাহ অামাতুল্লাহ)রিভিউ-৩

বইটি ২০১৮ এবারের একুশে বই মেলা থেকে কিনে রেখেছি এবং ঈদের পর ৬ জুন পড়ে শেষ করি।
-ফেরা বইটিতে দুই বোনের দুটি গল্প,তাদের ফিরে অাসার গল্প।সত্যি গল্প।এ গল্পদুটো পড়ে অানন্দের পাশাপাশি পাওয়া যাবে ভাবনার খোরাক।

দু-বোন কি কষ্ট করে ধর্ম পালন করতে তা পড়লে বিবেক থাকলে যেকেউ ইসলাম ধর্মের প্রতি অারও বেশি অণুরাগী এবং অাল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বাড়বে..

অামি এ বইটি পড়তে বেশি অনুরোধ করবো প্রথমে-ক্রিস্টানদের,দ্বিতীয়ত-অামার তরুণী বোনদের এরপর সবাইকে।

এ বইটি পড়ে যেসকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা ইনফরমেশন পেয়েছি তা নিম্নে উল্লেখ করলাম-

-ইসলামের দৃষ্টিতে পরকালে দেহ ও অাত্না উভয়ের ওপরেই শাস্তি অথবা শান্তি অাপতিত হবে।'অাত্নার শান্তি' বা রুহের মাগফিরাত' কথাগুলো মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত একটু ভুল।
-খোদা শব্দটাকে মুসলিমরা ব্যবহার করলেও কুরঅান এবং সুন্নাহর কোথাও এ শব্দটির অস্তিত্ব নেই।ইংরেজি গড কিংবা বাংলা ইশ্বর/ভগবান এর মতো খোদা শব্দটা ফরাসি ভাষার একটি শব্দমাত্র।শব্দটির উৎস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে,যে খুদ অর্থাৎ নিজ থেকে এসেছে তাকে খুদা বা খোদা বলে।ইসলামী বিশ্বাস মতে অাল্লাহর কোন শুরু নেই,তিনি অাল-অাউয়াল।অাল্লাহ সময়ের বাঁধনে বাধ্য নন বরং সব কিছুর মতো তিনি সময়কে সৃষ্টি করেছেন।তাই কোন একটি সময়ে তিনি ছিলেন না,তারপর নিজে নিজে অাসলেন,খুদা শব্দটির অর্থের এই দিকটিকে ইসলাম অস্বীকার করে।এজন্য মুসলিমদের উচিৎ অাল্লাহ নিজে যে নামগুলো নিজের জন্য ব্যবহার করেছেন সেগুলো দিয়েই তাঁকে ডাকা।
(অতএব এখন থেকে অামরা নিজেরাও অাল্লাহকে খোদা বলে ডাকবো না অন্যকেও নিষেধ করবো)
-মুসলিমদের শুক্রবারের নামাজের মতো রোববার গির্জার জামায়েতকে মিশা বলে।

-ডেথ মেটাল টাইপের স্যাটানিক গান যা ইসলামের সাথে সংঘর্ষিক এবং নাস্তিকদের কাছে জনপ্রিয়।(এ ধরণের গানশোনা থেকে অামরা অবশ্যই বিরত থাকবো,অামরা অবশ্যই বুঝে শুনে নাস্তিকদের অনুরূপ কোন কার্যকলাপ করবো না।)
-নাস্তিক মনোভাবের একটি বই, দি দ্য ভিঞ্চি কোড।(এ ধরণের বই থেকে যেন   প্রভাবিত না হন সেদিকে খেয়াল রাখবেন)

-নামাজ শব্দটির চেয়ে সালাত শব্দটি উত্তম কারণ এটি ইসলামি পরিভাষা।

-অনেক অালিম তসবীহ ব্যবহার মুসলিমদের জন্য নিরুৎসাহিত করে বলেছেন অাঙুলের করে তসবিহ গণনা করা উত্তম।(কেউ ভুল বুঝবেন না কোন অালেম তসবীহ ব্যাবহার করতে নিষেধ করেন নি বরং কিছু অালেম নিরুৎসাহিত করেছেন,তবে অামরা পীর বুজুর্গদের হাতে সর্বদাই সচারচর তসবীহ দেখে থাকি।)

#ফেরা বইয়ে সিহিন্তার মুসলিম হওয়ার পিছনে অবদান ও তখনকার কিছু ঘটনা ও তথ্য নিম্নে তুলে ধরলাম-

-সিহিন্তার মুসলিম হওয়ার পিছনে ও ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জনে ডাঃ জাকির নায়েক ও তাঁর  PC Tv bangla এর অবদান রয়েছে,যা সিহিন্তা তার ফেরা বইতে উল্লেখ করেছে।(যার টিভি চ্যানেল পিস টিভি দ্বারা হাজার হাজার পরিবারের নারীরা ঘরে বসে ইসলাম সম্পর্কে জানতে ও জ্ঞান অর্জন করছে,সিহিন্তার মতো অাড়ালে কত বিধর্মি মেয়ে ইসলাম সম্পর্কে জানছে সঠিক জ্ঞান পেয়ে হয়তো এরূপ অারও মুসলিম হচ্ছিলো যা অাল্লাহই ভালো জানে।কিন্তু পরিতাপের বিষয় এ ডাঃ জাকির নায়েককে অপবাদ দিয়ে এ Pc tv কে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে,অারও খারাপ লাগে যখন এদেশের কিছু মৌলভী অালেমরা একে সমার্থনও করছে,এ বিষয়ে বলতে গেলে অনেক কথা চলে অাসবে যারা জানতে চান তাঁরা কমেন্টে অথবা অামার ইনবক্সে নক করতে পারেন।)
-Opera Notes নামের একটা plug-in এখানে লেখা নোট করে রাখা যায়।
-Kalamullah.com বই,লেকচার ইত্যাদি ডাউলোড করার সাইট।(এখান থেকে সিহিন্তা ইসলামিক বই ডাউনলোড করে নিজে নিজে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছিলো।)
-মাউন্টহীরা এটি থেকে খুব সহজেই শুনে শুনে সূরাহ শেখা যায়।(সিহিন্তা পরিবার সহ কাউকে না হানিয়ে মুসলিম হওয়ার পরে সালাত অাদায় করতে সূরাগুলো এখান থেকে শিখে নায় এবং চুপুসাড়ে অাল্লাহর ইবাদত করতো।)
সিহিন্তা ইসলাম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ যা শিখতো তা-
--Opera Notes নামের একটা plug-in এখানে লিখে রাখতো।(অামরাও দৈনন্দিন ফেবু সহ অনলাইনের লেখা ও বাস্তবে বই পড়ে গুরুত্বপূর্ণ যেসব অামাদের কাজে লাগবে সেগুলো play store  থেকে পছন্দ মতো যেকোন note download করে তাতে লিখে রাখতে পারি।
-IloveAllaah.com ফেরা গল্পের সিন্তিহার ইসলামিক পেইজ।যে পেইজে অনেক অমুসলিম এসে ইসলাম গ্রহণ করেছে।
-www.quraneralo.com বাঙালি মুসলিমদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় ওয়েবসাইট।(এখান থেকে সিহিন্তা অনেক দ্বিনি শিক্ষা লাভ করেছিলো।)

তুমি অামায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে,হুমায়ূন অাহমেদ।(রিভিউ-২)

"বনের ছায়া মনের সাথি,বাসনা নাহি কিছু
পথের ধারে অাসন পাতি,না চাহি ফিরে পিছু।"

২১ তারিখ রাত ৩:০০ দিকে হুমায়ূন অাহমেদ এর "তুমি অামায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে" বইটি পড়ে শেষ করলাম,তাই বইটির সংক্ষিপ্ত রিভিউ অাপনাদের পাঠকদের সাথে নিম্নে শেয়ার করলাম,রিভিউ পড়ে ভালো লাগলে বইটি সংগ্রহ করে অাপনিও পড়তে পারেন।

মন্ত্রীর মেয়ে দুই মেয়ে,বড় মেয়ের নাম নবনী সে দেখতে খুবই রূপসী,কিন্তু বুদ্ধিকম।অন্যদিকে ছোট মেয়ে  শ্রাবণী শ্যামবর্ণের হলেও,সে খুবই বুদ্ধিমান মেয়ে।

এই শ্রাবণীর বুদ্ধির পরিচয় পাবেন গল্পের শেষ অংশে,যা অাপনাকে তাক লাগিয়ে দিবে।গল্পের শেষ ভাগে মন্ত্রী মহাশয়কে নিয়ে এমন একটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে যেটি উক্ত ঘটনা পড়ার অাগ অবধি অাপনার মাথায়ও অাসবে না।তবে গল্পের শেষ ভাগে এসে জাহানারা নামে এক মহিলার জন্যে খারাপ লাগবে।

গল্পটি পড়ার ফাঁকে ফাঁকে মন চাইবে সকল ব্যাস্ততা ফেলে কোন নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে গিয়ে কিছুদিন অবসর সময় কাটিয়ে অাসি এবং এরূপ কিছু গল্পের বই পড়ি অার উপভোগ করি প্রকৃতির অদ্ভত সুন্দর্যগুলো অস্বাভাবিক ভাবে।

গল্পটির ভিতরে অামার কাছে ভালোলাগা কিছু লেখা বা লাইন-

'The bells will ring
The birds will sing.'
['রিং-এর সাঙ্গে সিং-এর সহজ মিল'।

#অরুন্ধতী হোমের গলায় এক অপূর্ব গান-
ওকে ধরিলে তো ধরা দিবে না-
ওকে দাও ছেড়ে দাও ছেড়ে
একি খেলা মোরা খেলেছি,শুধু নয়নের জল ফেলেছি-

কবি,তারাশঙ্কর বন্ধোপাধ্যায়(রিভিউ-১)

আমার পড়া বইয়ের তালিকায় সেরা এবং সবথেকে ভালো লাগা বই #কবি,এ বইটি অামি কলেজের বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করে পড়েছি।
এ বইটি পড়ার পর আমার ব্রেনে,মনের গহীনে অন্য পৃথিবীর এক দুঃখের জন্ম হয়েছিল।বইটা পড়ার পর কয়েকদিন যে ভয়াবহ বিষাদের অনুভূতি আমার পৃথিবী নীল করে রেখেছিল, আজকেও সেই কথা মনে পড়লে মন খারাপ হয়ে যায়।অার এ সর্বপ্রথম এ বইটি পড়েই তারাশঙ্করের লেখার প্রেমে পড়ে গেলাম।

যাই হোক,শুধুমাত্র আমার এ বইটি পড়ার গল্প জানাতে এই লেখা না,বরং জানাতে এসেছি নিতাই চরণের গল্প বলতে।নিতাই চরণের কবি হওয়ার গল্প বলতে।

তারাশঙ্করের কবি গল্পের বেশ কিছু লাইন যা যে কাউকে গল্পের সাথে আটকে থাকতে বাধ্য করবে যেমনটা অামাকে করেছে। গল্পের শুরুতেই লেখক বলেছেন...

“শুধু দুস্তরমত একটা বিস্ময়কর ঘটনাই নয়, রীতিমত এক সংঘটন। চোর ডাকাতের বংশের ছেলে হঠাৎ কবি হইয়া উঠিলো”।
উপরোক্ত লাইনে পাঠক ভাবানায় ঠেই হারাতে বাধ্য। চরিত্রের ঘাত প্রতি ঘাত এখানে বাধ্যতামূলক।

নিচু বংশে জন্মানো নিতাইচরণ গ্রামের সবাইকে চমকে দিয়ে কবি হয়ে ওঠে। সে কবিয়ালদের দোহার হিসেবে কাজ করছিল। কিন্তু গ্রামের পালাগানের আসরে এক প্রতিষ্ঠিত কবিয়ালের অনুপুস্থিতিতে তার সামনে সুযোগ খুলে যায় নিজের কবিয়াল পরিচয় গ্রামবাসীকে জানিয়ে দেয়ার। অভিজ্ঞ কবিয়াল মহাদেবের কাছে সেই দফায় হেরে গেলেও তার উদ্দেশ্য সফল হয়। বাবুরা রীতিমত অবাক- 'ডোমের ছেলে পোয়েট!' নিতাইচরণের পারিবারিক পেশা ছিল ডাকাতি; কিন্তু সে হল অন্যরকম। এমনকি মায়ের অনুরোধ বা মামার শাসনের পরেও সে পড়াশুনো ছেড়ে ডাকাতির দলে নাম লেখায়নি। ঘরবাড়ি ছেড়ে স্টেশনে গিয়ে থাকে। এখানেই তার সাথে বন্ধুত্ব হয় স্টেশনের মুটে রাজার সাথে। নিতাইয়ের ওপর রাজা'র ভক্তি ও বিশ্বাস ছিল অগাধ। নিতাইকে সে ডাকত 'ওস্তাদ' বলে। এদিকে রাজারই এক আত্মীয়কে ঠাকুরঝি বলে ডাকত সে। বিবাহিত ঠাকুরঝি রোজ এসে দুধ বিক্রি করে যেত। মেয়েটার গায়ের রং কাল ছিল বলে গ্রামের লোকজন তো বটেই, রাজা-ও নানা কথা শোনাত। কিন্তু এই মেয়েটার জন্যই নিতাই এর মাথায় একটা পদ তৈরি হয়- 'কাল যদি মন্দ তবে চুল পাকিলে কান্দ কেনে?' জীবনের সব জায়গায় অপমান পাওয়া ঠাকুরঝি এই পদ শুনে আন্দোলিত হয়। আর নিতাই এর মনে, অসম্ভব জেনেও, ঠাকুরঝির জন্য গভীর প্রেম জন্মায়। একপর্যায়ে বিষয়টা জানাজানি হলে নিতাই গ্রামছেড়ে চলে যায়।

নিতাই যুক্ত হয় ঝুমুরদলের সাথে। এই দল অশ্লীল গান-বাজনা করে এবং নারীরা গানের গানের সাথে নাচ করলেও তারা মূলত দেহোপজীবিনী। সে ক্রমশ তার নিজের ভিতরকার কবিয়ালের সত্ত্বাকে চেপে রেখে এই দলের মত করেই গান রচনা করে। এখানে সে বেশ জনপ্রিয় হয়ে যায়। সেখানে তার সাথে পরিচয় হয় বসন্ত (বা বসন) এর সাথে। বসনের মধ্যে সে ঠাকুরঝির ছায়া দেখতে পায়। দুজনের মাঝে সখ্যতা গড়ে ওঠে।

এই ব্যবসায় থাকলে নানা ধরণের রোগ হয়ে থাকে, এবং তারই এক রোগে রোগাক্রান্ত হয়ে একসময়ে বসন্তও মারা যায়। শোকে কাতর হয়ে ঝুমুরদল ছেড়ে দে নিতাই। সে কাশীসহ অন্যান্য স্থান ঘোরে। কিন্তু তার মন না টেকায় একসময় আবারও সে নিজের আগের গ্রামে ফিরে আসে।

রাজা'র কাছ থেকে জানতে পারে ঠাকুরঝি আর বেঁচে নেই, নিতাই গ্রামছাড়ার পরে সে উন্মাদ হয়ে মারা যায়। গভীর হতাশায় নিতাই প্রশ্ন করে- 'জীবন এত ছোট ক্যানে?'

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,"অলৌকিক আনন্দের ভার বিধাতা যাহারে দেন,তার বক্ষে বেদনা অপার।"
নিতাইয়ের ক্ষেত্রেও তাই ঘটল।

ভাবতে পারেন,কি ঘটেছিল নিতাইয়ের জীবনে?
যদিও অামি কবি গল্পের মূল থিম বলেছি,তবুও যদি পারেন তাহলে সংগ্রহ করে পড়তে পারেন বাংলা সাহিত্যের এই অমূল্য রত্নটি।অার পড়ার সময় বা সংগ্রহ করতে না পারলে দেখতে পারেন নিম্নের লিংক থেকে উনিশ দশকের সাদাকালো পর্দায় তারাশঙ্করের কবি গল্পের সিনেমাটি,
https://youtu.be/BhRJYI-cuLI
পড়া বা দেখা শেষ হলে যা আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক ভূবনে, হয়তো আপনার মনেও বেজে উঠবে,জীবন এত ছোট কেনে?এ ভুবনে?'

এছাড়াও তারাশঙ্করের “কবি” গল্পের ভিতরে অাপনি পাবেন দু-চার লাইনের ছন্দ অাকারে কবিতার লাইন যা অাপনাকে ভাবনার জগৎ এ নিমজ্জিত করবে এমন কিছু লাইন নিম্নে তুলে ধরছি।
*“আমি ভালোবেসে এই বুঝেছি
সুখের সার সে চোখের জল রে”।
*“কালো যদি মন্দ হবে কেশ পাকিলে কাঁদ কেন?? কেন কাঁদ”?
*“চাঁদ দেখে কলঙ্ক হবে বলে কে দেখেনা চাঁদ?
তার চেয়ে যাওয়াই ভালো ঘুচুক আমার দেখার সাধ।
ওগো চাঁদ তোমার নাগি-
ওগো চাঁদ তোমার নাগি-না হয় আমি হব বৈরাগী
পথ চলিব রাত্রি জাগি সাধবে না কেউ আর তো বাদ”।
*‘এই খেদ আমার মনে
ভালোবেসে মিটল না এ সাধ, কুলাল না এ জীবনে!
হায়- জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে?'
এ লাইনগুলোর প্রেক্ষাপট জানতে যে অাপনাকে গল্পটি পড়তেই হবে-
অামার পড়া বইগুলোর রিভিউ নিয়ে পেইজে ধারাবাহিক পোস্ট ছাড়ার চেষ্টা করবো,ইনশাঅাল্লাহ।

অামার পাঠিত অনন্য বইয়ের রিভিউগুলো পড়তে ভিজিট করতে পারেন এখানে

Tuesday, 12 June 2018

লাইলাতুল কদর : অাজকের রাতে আমাদের করণীয়-

#কুরআন অধ্যয়ন : এ রাতে পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছে। মানব জাতির এ বিরাট নিয়ামতের কারণেই এ রাতের এত মর্যাদা ও ফজিলত। এ কুরআনকে ধারণ করেলেই মানুষ সম্মানীত হবে, দেশ ও জাতি মর্যাদাবান হবে; গোটা জাতির ভাগ্য বদলে যাবে। কাজেই এ রাতে অর্থ বুঝে কুরআন পড়তে হবে। কুরআনের শিক্ষাকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠার শপথ গ্রহণ করতে হবে। বাছাইকৃত কিছু আয়াত এ রাতে মুখস্তও করা যেতে পারে। যাদের কুরআনের উপর প্রয়োজনীয় জ্ঞান রয়েছে তাঁরা এ রাতে একটি দারসও প্রস্তুত করতে পারেন।
#নামাজ,পড়ার নিয়ম : ন্যুনতম ৮ রাকাত থেকে যত সম্ভব পড়া যেতে পারে। এজন্য সাধারণ সুন্নতের নিয়মে ‘দু’রাকাত নফল পড়ছি’ এ নিয়তে নামাজ শুরু করে শেষ করতে হবে। এ জন্য সূরা ফাতিহার সাথে আপনার জানা যেকোনো সূরা মিলালেই চলবে। বাজারে প্রচলিত কিছু বইতে ৩৩ বার সূরা আল্ কদর, ৩৩ বার ইখলাস ইত্যাদি উল্লেখ করে অহেতুক জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে।
এছাড়া সালাতুল তাওবা, সালাতুল হাজত, সালাতুল তাসবিহ নামাজও আপনি পড়তে পারেন। এগুলোর নিয়ম আপনি মাসয়ালার বইগুলোতে পাবেন। রাতের শেষভাগে কমপক্ষে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ার চেষ্টা আমরা অবশ্যই করব। কারণ এ নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ নফল নামাজ। আর রাতের এ অংশে দোয়া কবুল হয়। নফল নামাজের সংখ্যার হিসাবের চেয়ে নামাজের গুণগত দিকটির দিকে আমাদের বেশি লক্ষ্য রাখতে হবে।
-এছাড়াও #কাযানামাজ পড়া,কেননা এ মাস হাজার মাসে চেয়ে উত্তম। এটা আল্লাহ তাআলার ঘোষণা। সে মতে, মানুষ দুনিয়ার জীবনে অসংখ্য নামাজ কাযা করে থাকেন। যারা নামাজ কাযা করেছেন বা পড়তে পারেননি তারাসহ সকল মুমিন বান্দার জন্য কাযা আদায় করার সুবর্ণ সময় হলো লাইলাতুল কদরে বিগত জীবনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ অন্তত একবার কাযা আদায় করা।
#জিকির ও দোয়া : হাদিসে যে দোয়া ও জিকিরের অধিক ফজিলতের কথা বলা হয়েছে সেগুলো থেকে কয়েকটি নির্বাচিত করে অর্থ বুঝে বার বার পড়া যেতে পারে। ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) ও দরুদ আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। কমপক্ষে ১০০ বার ইস্তেগফার ও ১০০ বার দরুদ পড়া যেতে পারে। হযরত আয়েশা রা: বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা: কে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ- যদি কোনো প্রকারে আমি জানতে পারি রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে কি দোয়া করব? জবাবে নবী সা: বলেন, এ দোয়া পড়বে- আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুব্বুন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।” অর্থাৎ ‘আয় আল্লাহ তুমি বড়ই মাফ করণেওয়ালা এবং বড়ই অনুগ্রহশীল। মাফ করে দেয়াই তুমি পছন্দ কর। অতএব তুমি আমাদেরা গুনাহগুলো ক্ষমা করে দাও।’
#আত্মসমালোচনা : আত্মসমালোচনা অর্থ আত্মবিচার। অর্থাৎ আপনি নিজেই নিজের পর্যালোচনা করুন।। জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোতে আল্লাহর কতগুলো হুকুম অমান্য করেছেন, আল্লাহর ফরজ ও ওয়াজিবগুলো কতটা পালন করেছেন এবং তা কতটা নিষ্ঠার সাথে করেছেন, ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় কি কি বড় গুনাহ আপনি করে ফেলেছেন, আল্লাহর গোলাম হিসাবে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় আপনি কতটুকু ভূমিকা রেখেছেন- এগুলো ভাবুন, যা কিছু ভালো করেছেন তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন, আর যা হয়নি তার জন্য আল্লাহর ভয় মনে পয়দা করুন, সত্যিকার তওবা করুন। এ রাতে নিরবে নিভৃতে কিছুটা সময় এ আত্মসমালোচনা করুন, দেখবেন আপনি সঠিক পথ খুঁজে পাবেন। আত্মসমালোচনা আমাদের বিবেককে জাগিয়ে তুলবে। আত্মসমালোচনা আত্মশুদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। মহান আল্লাহ বলেন- ‘হে ঈমানদার লোকেরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামীকালের জন্য (পরকাল) সে কি প্রেরণ করেছে তা চিন্তা করা’(সূরা হাশর : ১৮)
#মুনাজাত : মুনাজাতের মাধ্যমে বান্দার বন্দেগি ও আল্লাহর রবুবিয়াতের প্রকাশ ঘটে। বান্দাহ তার প্রভূর কাছে চায়। প্রভূ এতে ভীষণ খুশি হন। মহন আল্লাহ তার বান্দার প্রতি এতটাই অনুগ্রহশীল যে, তিনি তার কাছে না চাইলে অসস্তুষ্ট হন। ‘যে আল্লাহর নিকট কিছু চায় না আল্লাহ তার উপর রাগ করেন’- (তিরমিযি)। ‘দোয়া ইবাদতের মূল”- (আল হাদিস)।’ যার জন্য দোয়ার দরজা খোলা তার জন্য রহমতের দরজাই খোলা রয়েছে’- (তিরমিযি)। কাজেই আমরা কায়মনোবাক্যে আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করব, ক্ষমা চাইব, রহমত চাইব, জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাইব।
উপরোক্ত আমলের মাধ্যমে আমরা এ পবিত্র রাতগুলো কাটাতে পারি। লাইলাতুল কদর পাওয়ার তামান্না নিয়ে নিষ্ঠার সাথে অনুসন্ধান করলে আল্লাহ আমাদের বঞ্চিত করবেন না ইনশাআল্লাহ। অবশ্য নফল ইবাদত নিরবে নিভৃতে ঘরে আদায় করাই মাসনুন। এতে আমাদের ইবাদত রিয়া (প্রদর্শন ইচ্ছা) দোষে দুষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। এ পবিত্র রাতে কিছু অনাকাঙ্খিত কাজ হতে দেখা যায়। এগুলো বন্ধ করার জন্য গঠনমূলক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
সর্বোপরি আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজ, জিকির-আজকার, কুরআন তিলাওয়াত, হাদিস অধ্যয়ন, দান-খয়রাত, মা-বাবার খেদমতসহ ভালো কাজের মাধ্যমে কদরের রাতটি আতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Friday, 8 June 2018

সালাত/নামায আাদায় করতেই হবেঃ(পর্ব-৩)

#অযু করে নামায পড়তে হয়,পানি নেই…তায়াম্মুম করে নামায পড়তে হবে। #মাটি নেই…বিনা অযুতে বিনা তায়াম্মুমে নামায পড়তে হবে। #পশ্চিম দিকে মুখ করে নামায পড়তে হয়…পশ্চিম বোঝা যায়না,বিনা পশ্চিমে নামায পড়তে হবে। #দাড়িয়ে থেকে নামায পড়তে হয়…দাড়িয়ে থাকা যায়না,বসে থেকে নামায পড়তে হবে। #বসে থেকে নামায পড়া যায়না…শুয়ে থেকে নামায পড়তে হবে। #পরিষ্কার কাপড় পড়ে নামায পড়তে হয়…পরিষ্কার কাপড় নেই,যেই প্যান্টে-যেই লুজ্ঞিতে পেশাব লেগে আছে,পায়খানা লেগে আছে...এই কাপড় পড়েই নামায পড়তে হবে। ***কারনবশত:কোন কাপড়ই নেই…উলজ্ঞ অবস্থাতেই তাকে নামায পড়তে হবে,পড়তেই হবে।
-বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেন :তোমরা দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে,তাতে সামর্থ্য না হলে বসে। যদি তাতেও সক্ষম না হও তাহলে কাত হয়ে শুয়ে।
সহিহ বুখারী হাদীস নং- ১১১৭ ।
#নামাযই একটা ইবাদাত …যার মাফ নেই,যার বিকল্প কোন পথ ঘাট নেই!... *হজ্বের বদল চলে,নামাযের বদল চলে না। হজ্বের কিভাবে বদল চলে?? আমি অসুস্থ আপনাকে টাকা দিলাম,আপনি হজ্ব করলেন হজ্ব আমার হয়ে গেল,,,হজ্বের বদল চলে, নামাযের বদল চলে না। *রোযার বদল চলে…আপনি অসুস্থ-সিয়াম পালন করতে পারছেন না,সকাল সন্ধা আর একজনকে খাওয়ালেন…রোযা আপনার হয়ে গেল…..গেল,,,রোযার বদল চলে, নামাযের বদল চলে না। ***তাই, বহুদিন র্পুবে-ইমাম আহমদ বিন (রাহঃ)বলেছেন, কেউ যদি অলসতা করে এক ওয়াক্ত নামায ছেড়ে দেয়…তাহলে,তাকে কুরবানী(হত্যা) করতে হবে!...
***বহুদিন র্পুবে-ইমাম আবু হানিফা (রাহঃ)বলেছেন, অলসতা করে কেউ যদি এক ওয়াক্ত নামায ছেড়ে দেয়…তাহলে,তাকে জেলখানায় বন্দি করতে হবে…বাহিরে থাকার সে সুযোগ রাখেনা!...
#নামায, এমন একটা ইবাদাত-পড়তেই হবে…
[অাব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ বক্তব্য থেকে নেওয়া।]
অাসুন অামরা ৫ ওয়াক্ত সালাত নির্ধারিত সময়ে অাদায় করি।মনে রাখবেন যারা সালাত অাদায় করে তাঁরা মুসলমান।অার যারা সালাত অাদায় করে না তাঁরা কাফের।

Thursday, 7 June 2018

এক খ্রিষ্টান পাদ্রী হযরত বায়েজীদ বোস্তামি (রহ.) কে অাশ্চর্যজন কঠিন থেকে কঠিনতর একগাধা প্রশ্ন করেছিলো এবং বলেছিলো উত্তর দিতে পারলে প্রাদ্রীসহ অসংখ্য খ্রিষ্টান মুসলিম হয়ে যাবে অার না পারলে বায়েজিদকে হত্যা করবে।বায়েজিদ তখন পাদ্রীকে প্রশ্ন করার অনুমতি দিয়েছিলো।
বায়েজীদ বোস্তামির জীবনী পড়ছিলাম সেখানে নিম্নের প্রশ্ন উত্তর গুলো বেশ ভালো লেগেছে কারণ প্রতিটি উত্তরগুলোই জ্ঞানগর্ভ কুরঅান এর অায়াত থেকে।তাই মনে হল ফেবুর বন্ধুদের সাথেও এ বিষয়টি শেয়ার করি একাসাথে ভালো কিছু জানি ও জ্ঞানলাভ করি।যাই হোক পাদ্রী ও বায়েজীদ এর প্রশ্ন উত্তরগুলো ৩ পর্বে সাজিয়েছি, অাজকের প্রথম পর্বে থাকছে প্রাদ্রির করা সংখ্যাতাত্ত্বিক প্রশ্ন ও বায়েজিদের দেওয়া তাঁর উত্তরগুলো।
১.পাদ্রী-এমন একক কে,যার ২য় নেই?
বায়েজিদ-অাল্লাহ তায়ালা।
২.পাদ্রী-এমন ২টি বস্তু কি?যার ৩য় নেই?
বায়েজীদ-রাত এবং দিন।[অাল্লাহ তায়ালা বলেন,অামি রাত ও দিনকে দুটি নিদর্শন করেছি।(সূরা বনী ইসরাঈল,অায়াত-২২)]
৩.পাদ্রী-এমন ৩টি বস্তু কি?যার ৪র্থ নাই।
বায়েজীদ-অারশ,কুরসী এবং কলম।
৪.পাদ্রী-এমন ৪টি বস্তু কি?যার ৫ম নাই।
বায়েজীদ-অাসমানী ৪টি কিতাব।
৫.পাদ্রী-এমন ৫টি বস্তু কি?যার ৬ষ্ঠ নাই।
বায়েজীদ-পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ।
৬.পাদ্রী-এমন ৬ষ্ঠ বস্তু কি?যার ৭ম নাই।
বায়েজীদ-যে ছয়টি দিনে অাল্লাহ্ তায়ালা অাসমান,যমীন তদস্হিত বস্তু সৃষ্টি করেছেন।[অাল্লাহ তায়ালা বলেন,যিনি অাসমান ও যমীন এবং যা কিছু অাছে সেগুলোর মধ্যখানে রয়েছে ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন।(সূরা ফোরক্বান,অায়াত-৫৯)]
৭.পাদ্রী-এমন ৭ বস্তু কি?যার ৮ম নাই।
বায়েজীদ-সাত অাসমান।[অাল্লাহ তায়ালা বলেন,যিনি সপ্ত অাসমান সৃষ্টি করেছেন একটার উপর অপরটা।(সূরা মূলুক,অায়াত-৩০)]
৮.পাদ্রী-এমন ৮টি বস্তু কি?যার ৯ম নাই।
বায়েজীদ-অারশ বহনকারী অাটজন ফেরেস্তা।[অাল্লাহ তায়ালা বলেন,এবং সে দিন অাপনার প্রতি পালকের অাটজন ফিরিশতা তাদের উপর বহন করবে।(সূরা হাক্বক্বাহ্,অায়াত-১৭)]
৯.পাদ্রী-এমন ৯টি বস্তু কি?যার ১০ম নাই।
বায়েজীদ-নয়জন যমীনে ফ্যাসাদ সৃষ্টকারী।[অাল্লাহ তায়ালা বলেন,এবং শহরের মধ্যে নয়জন লোকছিল,যার ভূপৃষ্টে অশান্তি সৃষ্টি করত।(সূরা নাম্ল,অায়াত-৪৮)]
১০.পাদ্রী-এমন ১০টি বস্তু কি?যার ১১তম নাই।
বায়েজীদ-তামাত্তুকারী দম দিতে অক্ষম হলে যে দশটি রোজা রাখবে।[অাল্লাহ তায়ালা বলেন,অতঃপর যার জন্যে সম্ভবপর না হয়,তবে সে ৩টি রোজা হজ্জের দিনগুলোতে রাখবে এবং সাতটা যখন অাপন গৃহে ফরি যাবে।এ পূর্ণ দশটা হল।(সূরা বাক্বরা,অায়াত-১৯৬)]
১১.পাদ্রী-১১ সম্পর্কে বলুন।
বায়েজীদ-হযরত ইউসুফ অা. এগারজন ভাই।[অাল্লাহ তায়ালা বলেন,নিশ্চয়ই অামি এগারটি নক্ষত্র দেখেছি।(সূরা ইউসুফ,অায়াত-৪)]
১২.পাদ্রী-১২ সম্পর্কে বলুন,
বায়েজীদ-বারমাস।[অাল্লাহ তায়ালা বলেন,নিশ্চয় মাসগুলোর সংখ্যা অাল্লাহর নিকট বারো মাস।(সূরা তওবা,অায়াত-৩৬)]
১৩.পাদ্রী-১৩ সম্পর্কে বলুন-
বায়েজীদ-হযরত ইউসুফ অা. যেই তেরজনকে তাঁকে সম্মান করতে স্বপ্নে দেখলেন।[অাল্লাহ তায়ালা বলেন,অামি এগারটি নক্ষত্র,সূর্য এবং চন্দ্রকে অামার জন্য সিজদা করতে দেখি।(সূরা ইউসুফ,অায়াত-৪)]
১৪.পাদ্রী-এমন ১৪টি বস্তু কি,যাদের সাথে অাল্লাহ তায়ালা কথা বলেছেন?
বায়েজীদ-সাত অাসমান এবং সাত যমীন।[অাল্লাহ তায়ালা অাসমান ও পৃথিবীকে বললেন,উভয়ে হাজির স্বেচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়।(সূরা হা-মীম,সাজদাহ্,অায়াত-১১)]

স্বপ্নের অপ্সরী(পর্ব-৩)

স্বপ্নের অপ্সরী অাদনানের স্বপ্নেই রয়ে গেলো,
তাহাকে সে দেখেও দেখলো না।দেখলোনা বললে ভুল হবে, তাকে দেখতে দিলোনা।
অাজ ক্লাসের অফ টাইমে অাদনান ভার্সিটির লেকের পাড়ে গিয়ে এ দুদিনে ঘটে যাওয়া পুরো বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করলো,
ভার্সিটির প্রথম দিনের ক্লাসে ওর জোকস শুনেও এক মাত্র যে মেয়েটি হাসলো না,সেদিনকার মোটা মেয়েটার সাথে ধাক্কা লাগায় যে মেয়েটি ওকে ঝাড়ি দিয়েছিলো,অাসলে উক্ত দুটো ঘটনা একটি মেয়ের সাথেই ঘটে প্রথম দিন অাদনানের দৃষ্টি ঐ মেয়েটির দিকে গেলেও তার চেহারার দিকে ক্ষণিকের জন্যে কিন্তু তৃতীয় কোন একটা বিষয় যা মেয়েটাকে দেখার অাকর্ষণ কেড়ে নেয় এবং যা অাদনান সেদিনকে বারং বার মনে করতে চেয়েও ব্যার্থ হয়,যার ফলে দ্বিতীয় দিনে মেয়েটিকে চিনতে পারে নি।
অাদনান প্রথম দিনের স্বপ্ন,ঐ দিনের ক্লাসে বিশেষ কিছুর প্রতি দৃষ্টি অাকর্ষণ এবং যেটি ও ভুলে যায় এবং মনে করতে চেয়েও পারে না সেটি,দ্বিতীয় দিনে ধাক্কা তৃতীয় কোন এক সুন্দরী মেয়ে এসে ওকে ঝাঁড়ি এসকল ঘটনা ও ডাইরিতে লিখে রাখে ও প্রতি রাতে ঘুমানোর অাগে তা নিয়ে ভাবে এবং অাজকের ক্লাসে দেখা অসামাপ্ত স্বপ্ন নিয়ে ভাবে,তারপর গত দুদিনের ঘটণাগুলোর সাথে সংযুক্ত করে সমীকরণ অাকারে মিলাতে শুরু করে।সমীকরণ মেলাতে মেলাতে একসময় আদনান ক্লান্ত হয়ে যায়, যার ফলে আদনানের চোখ লেগে আসে।চোখের সামনে আবারো সেই চেনা অপ্সরী। আর,এইবার পালাতে পারেনি।ঠিকি ধরা পড়েছে।আরে! এতো সেই মেয়ে...পরক্ষনেই আদনান চোখ মেলে তাকালো।এবং ভার্সিটিতে দৌড়ে গেলো।কারণ,তার সব সমীকরণ মিলে গিয়েছে।এখন তার সাথে কথা বলাই বাকি।
অাদনান ক্যাম্পাসে গিয়ে তাকে খুঁজতে শুরু করলো,অতঃপর তাকে পেলো,সে মোটু মেয়েটা সহ অারও বেশ কয়েকজন বান্ধবীর সাথে ক্যান্টিনে বসে গল্প করছে।
অাদনান মোটা মেয়েটিকে ডাকলো বললো-
-তুমি তোমার ঐ ফ্রেন্ডকে একটু লেকের পাড়ে আসতে বলো।
:কেনো?
-একটু কথা ছিল।প্লিজ ওকে যেভাবেই হোক লেকের পাড়ে পাঠাও।
:ওকে,পাঠাচ্ছি।
-ধন্যবাদ আপুনি।
:ঠিক আছে।
লেকের পাড়ে গিয়ে অাদনান অপেক্ষায় রইলো,অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘঠিয়ে সে এলো,
:অাপনি এখানে অামায় ডাকার কারণ-
-তেমন কিছু নয়,কয়েকটি প্রশ্ন করবো শুধু তাঁর উত্তরগুলো দিলেই হবে...
:সম্ভবপর ও দেওয়ার মতো হলে দিবো...
-তোমার নাম?
:নীলা,
-কলেজে প্রথম দিনে তুমি কি কালার এর ড্রেস পড়ে এসেছিলে?
:নীল একটা (সেলোয়ার কামিজ)
-তোমার ঘাড়ে কি কোনো তিলা আছে?..
: হুম,কিন্তু.....(নীলা কিছু একটা বলতে যাবে, তার আগেই আদনান বলে)
- আর,মুখের পাশে মেকাপ করে কৃত্রিম তিলাটি দেওয়ার কারণ কি?
-এবার নীলা বিস্মিত হয়ে গেলো,সে বললো অাপনি কি করে জানলেন অামার ঘাড়ে একটি তিলা অাছে অার এটি তো চুলের অাড়ালে থাকে এটি তো অাপনার জানার কথা নয়,সবথেকে বড় কথা হলো অামার গালের তিলাটি তো তেমন কেউই ধরতে পারে না অাপনি কি করে ধরলেন,,
এবার অাদনান কিছুখন স্তব্ধ হয়ে গেলো এরপর ও নীলাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
"প্রেম আমার প্রথম দিনের আলো
শেষ বিকেলের পথ
প্রেম আমার স্বপ্নে দেখা রাজকুমারী
তেপান্তরের মাঠ
প্রেম যেন স্বপ্নে পাওয়া তুমি
প্রেম যেন স্বপ্নে দেখা তুমি........
এই নীলা তুমি কি জানো?
তুমি হলে আমার স্বপ্নে দেখা অপ্সরী,"
এরপর অাদনান হাঁটু গেড়ে নীলাকে প্রথমে একটা কৃত্রিম নীল ফুল এরপর প্রাকৃতিক টকটকে লাল ফুল দিলো বললো,তোমায় স্বপ্নেই ভালবেসেছি আর, বাস্তবে তোমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি।আমায় ফিরিয়ে দিওনা।
নীলা হতবাক হয়ে গেলো,বিস্মিত হয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অাদনান এর দিকে,কোন কিছুই ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারছিলোনা....কারন,এইদুটো ফুল যে নীলার খুব পছন্দের।আর,আদনান সেইটা কিভাবে জানলো।অনেক প্রশ্ন নীলার মাথায় ঘুরছিলো।
অাদনান নীলাকে একটা চিঠি দিলো সেখানে অাদনানের দেখা গত দুদিনের স্বপ্ন লেখা ছিলো।আর
সেই চিঠি পড়েই নীলা সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায়।
নীলা কিছুটা অবাক হয় যে এটা কিভাবে সম্ভব! পরক্ষনেই ভাবে, নীলা তো এমন কাওকেই চেয়েছিল যে কিনা তাকে না দেখেই ভালবাসবে, খুব ভালবাসবে।
নীলা আদনানের হাত থেকে ফুল গুলো নিয়ে বললো,
-তোমার স্বপ্নে দেখা অপ্সরীকে সারাজীবন ভালবাসবে তো?
: হুম,বাসবো।
-সারাজীবন পাশে থাকবেতো?
: হুম,মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকবো।তোমায় যে খুব ভালবেসে ফেলেছি।
-তাহলে চলো দুজন মিলে ভালবাসাময় রাজ্য গড়ি।
এর পর আদনান আর নীলা পায়ে পা মিলিয়ে চলে তাদের ভালবাসাময় রাজ্য গড়তে সেই চেনা পথটায়।
(সমাপ্ত)

Thursday, 31 May 2018

স্বপ্নের অপ্সরী(পর্ব-২)

ভার্সিটির প্রথম ক্লাসের পর থেকেই অাদনান অাজকের দেখা কিছু একটা মনে করতে চাইছে,ব্রেইন এর নিউরনে অতি পরিচিত কিছু একটা বার বার সিগন্যাল দিচ্ছে,কিন্তু অাদনান বিষয়টি কিছুতেই মনে করতে পাড়ছিলো না।তবে হ্যাঁ,ভাবনার বেড়াজালে নিমজ্জিত থাকতে অাদনানের বেশ ভালই লাগে,অার অাদনানের ভাবনার বড় অংশ জুড়েই রয়েছে ওর দেখা স্বপ্ন।যখন কিছুই মনে করতে পারছিলো তখন ঘুমাতে যাওয়ার অাগ মুহূর্তে গত রাতে দেখা স্বপ্নটি নিয়ে কাব্যিক ভাষায় ডায়রিতে লিখা শুরু করলো এরূপ-
"আমি তখন চোখে ঝাপসা দেখছিলাম,
সব কিছু ঠিকই ছিলো,কিন্তু শুধু তোমায় দেখেও দেখিনি,
স্বপ্নে আমি তোমায় দেখছি একটু অন্য রকম ভাবে।
নিস্তব্ধ নিঝুম কোলাহলমুক্ত দিগন্ত বিস্তৃত উন্মুক্ত উপত্তকায়....
সবুজের মাঝে একখন্ড তুমি।
একা তুমি ছিলে বসে।
লম্বা ঝর্ণাধারার মতো কেশ,
অপলকে চেয়ে ছিলে হয়তো মায়ার পাত্র নিয়ে!
আমি আজ মাতাল হয়েছি তোমার ছড়ানো কেশে!!
যাকে পিছু থেকে দেখতেই এতটা রূপসী ও মনোমুগ্ধকর হয়-
না জানি সে সামনে থেকে কতই না অপরূপ সুন্দরী...
অামি তোমায় স্বপ্নের মাঝেই দেখে নিবো,
এরপর পৃথিবীতে যে প্রান্তে,
যত দূরেই থাকো-
নিজেকে যদি আড়ালেও রাখো।
তোমায় অামি ঠিকই খুঁজে বের করবো,
মনে রেখো তুমি ছিলে আমার,
স্বপ্নের অস্পরী!!
এসব যা মাথায় অাসছিলো তা লিখতে লিখতে ঘুমিয়ে পড়লো,
অাজ কাটলো স্বপ্নহীন একটা রাত,কিছুই দেখলো না,তাই সকালে ঘুম থেকেও তাড়াতাড়ি উঠলো,স্বপ্ন দেখলেই অাদনানের ঘুম থেকে জাগতে বেলা বেজে যায়।
যাই হোক সকালে উঠে,নাস্তা করে রয়না হলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে কিন্তু অাজ অাদনান ভার্সিটিতে যেতে রাস্তায় জ্যামে অাটকা পড়ে,ভার্সিটির কাছাকাছি অাসায় সে গাড়ি ছেড়ে নেমে দৌড়ে গেল, হঠাৎ একটি মেয়ের সাথে তার ধাক্কা লাগলো।।
(কি ভাবছেন বাংলা ছবির মতো সুন্দরী মেয়ে বা নাইকার সাথে ধাক্কা খেয়েছে,অার প্রেমে পড়বে....)
-দেখে চলতে পারেন না??(তৃতীয়...)
(দেখতে বেশ রূপসী,স্লিম,ফর্সা,লম্বা চুল,চেহারার মধ্যে মায়াবী একটা ভাব,সব মিলিয়ে যেকোন ছেলের প্রথম দেখায়ই ভালো লাগার মতো মেয়ে।সহজে চোখ ফেরানো যায় না।কিন্তু যার সাথে ধাক্কা লেগেছে এ মেয়েটি সে নয়,তাঁর বান্ধবী পাশ থেকে এসে কথাটি বলেছে।)
-অাদনান ধাক্কা লাগা মেয়েটিকে বলে,"সরি সরি,,আসলে অনেক তাড়া ছিলো"।।
(এখন অাসি যার সাথে ধাক্কা লাগে সে মেয়েটি দেখতে কালো,জলহস্তির মতো মোটা)সে মিঠু মিঠু হেসে বলে...
-ইটস ওকে।ধক্কা লাগতেই পারে এতে সরি বলার কি অাছে।
*ওর সেই রূপসী বান্ধবী মটুর কথা শেষ হতে না হতেই টেনে নিয়ে গেল এবং বললো তাড়াতাড়ি চল ক্লাসের সময় হয়ে গেছে তো..
অামি পুরো ঘটনা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখি,সুন্দরী মেয়েটিকে কিছু একটা বলতে চেয়েও পারে নি,কিছু সময় দেখতে চেয়েও পারে নি,কারণ অাদনান এরও ক্লাসের সময় হয়ে গেছে...
অাজ কালকের সেই সুন্দরী ম্যাম ক্লাস নিচ্ছেন না,এক বয়স্ক স্যার ক্লাস নেওয়ায় ১৭ মিনিট দেরী হওয়া সত্ত্বেও দেরী হওয়ার কারণ বা এরূপ কোন প্রশ্ন না করেই ঢুকতে দায়...
অাদনান ক্লাসে প্রবেশ করার পরই দেখে এক বিস্ময়কর ঘটণা এবং অবাক হয়ে যায়,মটু অার রূপসী মেয়টি ওদেরই ক্লাসেরই...
অাজ অাদনানের দৃষ্টি বার বার কোন একটি নির্দিষ্ট  যায়গায় অাছড়ে পড়ে অার মনে পড়তে থাকে গত কালকের স্বপ্নগুলো,তা নিয়ে ভাবতে শুরু করে,অাস্তে অাস্তে ভাবনার জগৎ এ নিমজ্জিত হয়।বেঞ্চের উপর মাথা দিয়ে অাবারও হারিয়ে গেলো স্বপ্নের ভোরে অাবারও দেখলো কালকের সেই স্বপ্নে দেখা মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যময় মেয়েটিকে,সে পিছনের দিকে ফিরে অামার দিকে তাঁকায় তখন অামার প্রথমেই দৃষ্টি যায় তাহার ঘাড়ের তিলাটির দিকে যা সূর্যের অালোয় দেখা যাচ্ছিলো তারপর গালের তিলাটি যেটি সূর্যের অালোয় নয় চাঁদের অালোয় অাবছা দেখা যাচ্ছিলো তা প্রত্যক্ষ করলো......এরপর বহুল প্রতিক্ষিত,স্বপ্নের সেই রাজকণ্যাকে দেখবো ঠিক এমন সময়ে শুনি হাসির শব্দ চেয়ে দেখি স্যার বলছে এটি কি ঘুমাণোর যায়গা...
-অাদনান মাথা তুলে দাড়িয়ে বলে সরি স্যার....
চলবে--

সপ্নের অপ্সরী(পর্ব-১)

....নিস্তব্ধ নিঝুম কোলাহলমুক্ত দিগন্ত বিস্তৃত উন্মুক্ত উপত্তকায় বইছিলো বসন্তের হাওয়া,প্রকৃতির অপরূপ মনোরম নির্মল পরিবেশ একা একা উপভোগ করছিলো অাদনান,বেশ ভালই লাগছিলো ওর কিন্তু একজন সঙ্গীর বড়ই অভাব ও প্রয়োজনীয়তা বোধ করছিলো,খানিকখন পরই হঠাৎ দৃষ্টিগোচর হলো এক অচেনা মুগ্ধকর সৌন্দর্যময় মানবীর,পাতলা গড়ন,ফর্সা শরীর..সে পরিধাণ করেছিলো নীল শাড়ি,হাতে কাচের চুড়ি,লম্বা কেশগুলো ঝর্ণাধারা মত সেগুলো পৃথিবীর সুন্দরতম পতাকার মত বাতাসে উড়ছিলো,লালনা যেন অাদনান এর জন্যেই অপেক্ষায় রয়েছে,অাদনান গুটিগুটি পায়ে পিছন থেকে অঙ্গনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে,অার সম্মুখ ও কাছ থেকে মেয়েটির চেহারা দেখতে ও কথা বলতে ছেলেটি ব্যাকুল হয়ে উঠছে,মনের মধ্যে এক অজানা শিহরণ জাগানো রোমাঞ্চকর অনুভূতি কাজ করছিলো এবং অদ্ভুত এক ভালো লাগা শুরু করছিলো অাদনানের,যদিও অাদনান মেয়েটিকে পিছন থেকে তাহার সৌন্দর্যময় রূপ দেখেই মুগ্ধ হয়েছে,অবশেষে সম্মুখভাগ থেকে মেয়েটিকে দেখবার ও কথা বলবার রোমঞ্চকর অনুভূতির অবসান ঘটতে যাচ্ছে ঠিক এমন সময় নিস্তব্ধ নির্জন এলাকায় যেখানে অাদনান ও মেয়টি ছাড়া চারপাশে অন্য কেউ নেই সেখানে কোথা থেকে কে যেন চেঁচামেচি করছে,অাদনান মেয়েটিকে ওর দিকে ঢাক দিল এবং রূপসী প্রণয়িনী পিছনে ফিরে তাকাবে অাদনানও দেখবে দেখবে ঠিক এমন সময় এক ধাক্কা,সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি ভেনিস হয়ে গেল,চারপাশের পরিবেশ অাস্তে অাস্তে ঝাপসা হতে লাগলো এবং চোখ দুটো খুলে গেল,অাদনান তাকিয়ে দেখে মা এসে বলছে,এই অাদনান এখনও ঘুমাচ্ছিস,অাদনান উঠে বুঝতে পারলো ওটা তার স্বপ্ন ছিল।সে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে একটু হাসল,কয়েক মিনিট চোখ বুঝে স্বপ্নের মেয়েটিকে পুনরায় রিভিউ করার বিশেষ করে চেহারাটি দেখবার ব্যার্থ চেষ্টা করলো কিন্তু সে অার এলো না।তারপর সে তার মা কে বলল-
-উঠছি আম্মু।(অাদনান)
-তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আয়।।টেবিলে নাস্তা রাখা আছে।(মা)
-ওকে আম্মু।(অাদনান)
এই বলে অাদনান ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে চলে গেল।বিষন্ন মনে উঠে গেলো হাত মুখ ধুয়ে ওয়াশরুম এ গিয়ে স্বপ্নের রাজকুমারীকে নিয়ে কিছুখন ভাবলো,নীল শাড়ি,কাঁচের চুড়ি,পাঁতলা গড়ন,ফর্সা ত্বক এবং লম্বা চুল অার সেই রোমান্টিক পরিবেশ,এ শব্দগুলো ভাবনার জগৎ এ কিছুখন খেলা করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়।
-সে তার মায়ের পাসের চেয়ারে বসে নাস্তা করলো।
-বাবা,আজ ভার্সিটিতে যাবি না সময় হয়ে গেছে তো...
-যাবো আম্মু।
-কখন??
-এখনই নাস্তা করেই বের হবো।
নাস্তা করেই সে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে গেল।অনেক দেরি হয়ে গেছে তাই সে সিএনজি ভাড়া করে গেল,তারপরও ১৫ নিনিট দেরী হয়েছে ক্লাসে এসে দেখে,
লম্বা চওড়া ধবধবে ফর্সা কম বয়সী সুন্দরী এক ম্যাম ক্লাস নিচ্ছে,ম্যম টাইম সেন্স নিয়ে কথা বলছিলো,এদিকে অাদনান ক্লাস শুরুর ১৫ মিনিট পর পৌঁছালো.. ম্যাম অাদনানের দেরী করে অাসার কারণটি জানতে চাইলো,
-ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেছে,তাই দেরী হয়েছে।(অাদনান)
-তুমি যেহেতু টাইম মেইন্টেন করতে পারো নি সেহেতু তুমি ক্লাস থেকে বের হয়ে যাও..(ম্যাম)
-অাদনান বের হয়ে যেতে যেতে,ম্যামের কাছে এসে বলে ম্যাম টাইম সেন্স নিয়ে একটু কথা বলি।
-হ্যাঁ সিওর।(ম্যাম)
-একবার অামি ইদের ছুটিতে দেশের বাড়ি চট্টগ্রাম যাবো,গাড়ি ছিলো ৮:৩০ এ অামি সেখানে অাধ ঘন্টা লেইট করে যাই,তাই অার লঞ্চ গিয়ে পাইনি মিস করি।(অাদনান)
-ঠিক এই কথাটাই বলছিলাম,তুমি যেহেতু টাইম মেইনটেইন করো নি সে কারণেই তুমি গাড়ি গিয়ে পাওনি,লুজার।(ম্যাম)
-তারপর শুনেন না কি হয়েছে,অামি মন খারাপ করে বাসায় গিয়েছি টিভি ছেড়ে রাত ১০:০০ খবরে দেখি চট্টগ্রাম সড়কে একটি গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করে,হায় অাল্লাহ অামারও তো চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা ছিলো,যাই হোক একটু পর দেখি অামি যে গাড়িতে যেতে চেয়েছিলাম ওটিই অ্যাকসিডেন্ট করে অার অাহত ৩৫,নিহত ৫।এখন বলুন ম্যাম সেদিন যদি অামি সঠিক সময়ে গাড়ি ধরতাম তাহলে কত বড় একটা দুর্ঘটনার শিকার হতাম।সেদিন অামি টাইম মেন্টেইন না করার কারণেই সেই ৪০ জনের মতো অামি নিহত ও অাহত হই নাই....
-কিছুটা নাকানি চুবানি খেয়ে বিরক্তের সুরে বললো বসো গিয়ে,(ম্যাম)
অার এদিকে অাদনানের কথা শুনে এবং ম্যামের বোকা হয়ে যাওয়ার অবস্হা দেখে  সবাই খিলখিলিয়ে হাসি শুরু করে দিলো,কিন্তু অাদনানের ক্ষণিকের জন্যে চোখ যায় একজনের উপর যে কিনা সবার মত না হেসে নিশ্চুপে বসে রইলো,যেন তাঁর কাছে মনে হলো এটি হাসির এমন কি হলো এবং অামি কথাটি যে বানিয়ে বলেছি সেটিও যেন সে ধরে ফেলেছে!
চলবে----

Sunday, 27 May 2018

বাঙালি আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের চিরবৈরিতা বাকযুদ্ধ ও তর্ক-(পর্ব-২)

বর্তমানে ক্লাসে,চায়ের দোকানে,পথে-ঘাটে,খেলার মাঠে এবং সোশ্যাল মিডিয়া সহ সর্বদাই অধিকাংশ মানুষের মধ্যে রীতিমতো একটা যুদ্ধ বা তর্ক লেগে গেছে। যুদ্ধের টপিক ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা। দু’পক্ষের সমর্থকদের একে-অন্যকে নিয়ে ঠাট্টা,মশকারিতে ব্যাপারটা খুবই বিদঘুটে হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর্জেন্টিনা সমর্থকরা তাদের দু’বার বিশ্বকাপ জয় এবং নিকট অতীতে ফাইনালিস্ট হওয়ার গল্প ফাঁদতে ব্যস্ত। অন্যদিকে ব্রাজিল সমর্থকরা নিজেদের পাঁচবারের বিশ্বকাপ ট্রপি জয়ের গল্প বলে বিগত বছরগুলোর ব্যর্থতা লুকাতে মরিয়া।
নিজ পছন্দের দলের পক্ষে গোয়ের জোরে, কিংবা হাসি তামাশা সীমাহীন যুক্তি চলতেই থাকে। কেউ বলে ব্রাজিল ৫ বার বিশ্বকাপ নিয়েছে, তাই ব্রাজিলেই সেরা। আবার আর্জেন্টাইন সমর্থকদের যুক্তি, খেলা কেবল কাপ নেয়া ওপর নির্ভর করে না। একটি ভালো দল মানে, সেই দলের প্লেয়াররা কতটুকু গোছানো খেলা খেলে, ফাউলের সংখ্যা বা ফেয়ার প্লে’র সংখ্যা কেমন, সব কিছুর ওপরে। সেই বিচারে তারা দাবি করে থাকেন ফুটবলে আর্জেন্টিনাই পৃথিবীর সেরা।

কিছু আছে জার্মানী সমর্থক। এরা আকারে-ইঙ্গিতে আবার আর্জেন্টিনার দিকেও ঢলে পড়ে মাঝে মাঝে। অন্যদিকে হাতেগোনা কিছু পর্তুগাল সমর্থকরা যেন চোখমুখ বন্ধ করে ব্রাজিলকেই তাদের ‘সেকেন্ড হোম’ মনে করে। এই বিতর্ক মাঠ, ক্লাস আর চায়ের আড্ডা ছাপিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও এসে ভর করেছে। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে নিয়ে হাসি, ট্রল আর কৌতুক করে যেন একরকম পৈচাশিক আনন্দ পাচ্ছে।

ফেসবুকে সেলিব্রেটি থেকে অামজনতা চলছে ট্রল পাল্টা ট্রল।

যেমন ফেসবুকে রফিকুল রনি লিখেছেন, “অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ-বিএনপি বলতে কিছু নেই। সবই আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল।”

অন্যদিকে কাজী মাহতাব তানসেন গত বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ব্রাজিলের ৭ গোল খাওয়ার স্মৃতি মনে করিয়ে লিখেছেন, “ব্রজিলের সেভেন আপ মনে আছে বন্ধুরা?” এর সাথে তিনি একটি সেভেন আপের ছবির মধ্যে ব্রাজিলের পতাকা এডিট করে একটি ছবি পোস্ট করেছেন।

এসব ট্রল পাল্টা ট্রলে যোগ দিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন, “আর্জেন্টাইনরা ব্রাজিলের সাপোর্টার হয়া গেসে। চিলির বিপক্ষে তারা ফুটবল গ্রেটদের জয় চায়।”

অন্যদিকে সাঈদ আহমেদ লিখেছেন, “সবাই দোয়া করবেন যেন ২০১৮ সাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে।” সাথে তিনি একটি হাসপাতালের আইসিইউ রুমের ছবি পোস্ট করেছেন। যাতে বিছানার চাদর টা আর্জেন্টিনার পতাকা। আর বালিশটাতে ফুটবলের ছবি। আশেপাশে আইসিইউ-এর মেশিনারিতে ভরপুর।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল আর্জিন্টিনাকে ঘিরে বাংলাদেশের ভক্তদের আগ্রহ, তর্ক-বিতর্ক-আনন্দ করা নতুন নয়।কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের দেশের কিছু কিছু অার্জেন্টিনা ব্রাজিল ভক্তের উত্তেজনা মাত্রাটা এতটাই তিব্র হয় যে তর্ক বা বাকযুদ্ধে অনেক সময় আপন ভাইয়ে-ভাইয়ে, বোন-ভাই, আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুবান্ধবের মধ্যে মনমালিন্য হচ্ছে।এমনকি নিজের জীবন ও বউ তালাকের মতো ঘটনাও এমনকি উঁচু যায়গায় পতাকা টানাতে গিয়ে অথবা প্রিয় দলের ম্যাচ হারার শোকে প্রাণহানির ঘটনাও শোনা যায়।যা কখনো কাম্য হতে পারে না। খেলাকে নিতে হবে খেলা হিসেবেই। কিন্তু বাংলাদেশের দর্শক ও সমর্থকদের সে উত্তেজনা যেন শেষ না হয়ে আরো বেড়ে গেছে। এ উত্তেজনা কি চরমে ওঠেছে তা টের পাওয়া যায় ফেইসবুকে ঢুকলেই।

পরিঃশেষে বলবো ফুটবল বিশ্বকাপ এ অার্জেন্টিনা ব্রাজিল বা অন্য দল এর মধ্যে বাকযুদ্ধ এগুলো লিমিটে রাখা উচিৎ,এটির মাত্রা যাতে এমন না হয় যাতে করে অপরের সাথে মন মলিন্য হতে পারে,ফুটবল বিশ্বকাপকে নিছকই বিনোদন হিসেবে নেওয়া উচিৎ খেয়াল রাখতে হবে এটি জাতে অামাদের জীবনের সাথে গুলিয়ে না যায়।
যাই হোক অাজ তৃতীয় পক্ষ বা নিরপেক্ষ হয়ে কিছু নীতিমূলক কথা বললাম,পরবর্তি পর্বে অার্জেন্টিনার সমার্থক হয়ে রোস্টিং হবে ব্রাজিল সমার্থকদের যুক্তি ও তথ্য দিয়েই সাজাবো চোখ রাখেন অামার প্রোফাইলে.....

Saturday, 26 May 2018

উপহাস ও বিদ্রূপ করা বা পচানো...

এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَىٰ أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَىٰ أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ ۖ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ ۖ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ ۚ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٤٩:١١]

মুমিনগণ,কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। (সূরা হুজরাত, আয়াত-১১)

উক্ত আয়াতে “তাসখীর”-এর অর্থ হলো, কারো অসম্মান ও তাচ্ছিল্য করা। এমনভাবে কারো দোষ বর্ণনা করা,যাতে মানুষ তাকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করে,এতে ওই ব্যক্তির অন্তরে ব্যথা আসে। এ ধরনের কাজ অনেক রকম হতে পারে।

যেমন,কারো চলাফেরা,উঠাবসা,কথাবর্তা,অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি নিয়ে ব্যঙ্গ করা,কারো শারীরিক গঠন ও আকার-আকৃতি নিয়ে কটূক্তি করা তার কোনো কথা বা কাজের ওপর ঠাট্টা করা। চোখ, হাত-পা দ্বারা টিকা-টিপ্পনী মারা ইত্যাদি এ সকল জিনিস অন্তর্ভুক্ত।

মহানবী (সা.) উপহাসকারীদের সম্পর্কে বলেছেন : ‘একজন উপহাসকারীর জন্য বেহেশতের দরজা খুলে দেয়া হবে এবং তাকে বলা হবে : ‘এস।’ সে তার দুঃখ ওঅসহায়ত্ব নিয়ে সামনে অগ্রসর হবে এবং যখন সে ভেতরে প্রবেশ করতে চাইবে তখনই তার সামনে বেহেশতের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে।’(তথ্যসূত্র-কানজুল উম্মাল, হাদীস ৮৩২৮)

#কারো উপহাস করা উচিত নয় :

প্রয়োজনাতিরিক্ত কথাও অনর্থক কথার অন্তুর্ভুক্ত। সাধারণ কথা থেকে টেনে শয়তান গোনাহের দিকে কখন যে নিয়ে যাবে তা টেরও পাওয়া যাবে না। আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ রয়েছে সিধেসাদা ও সরল প্রকৃতির। তাদেরকে নিয়ে কিছু মানুষ হাসি-তামাশা করে থাকে,সেই যেন একটা কৌতুকের বিষয় বস্তু। সে কৌতুক যদি এই পরিমাণে সীমাবদ্ধ হয় যাতে সে খুশি থাকে তাহলে তো আপত্তিকর নয়।

তবে যদি কৌতুক ও ঠাট্টা এ পর্যায়ে পৌঁছে যায়,যা তার অন্তরে কষ্ট দেয়,তার খারাপ লাগে,তাহলে এমতাবস্থায় উক্ত কৌতুক ও রহস্য অনেক বড় গোনাহের কারণ হবে।

কেননা তা বান্দার হক্বের সাথে সম্পৃক্ত। আর যে আয়াতটি আমি শুরুতেই উল্লেখ করেছিলাম। সূরা হুজুরাতের আয়াত, যাতে আল্লাহ তাআলা মুআশারাতের দিকনির্দেশনামূলক বেশ কয়েকটি আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। ইরশাদ করেন

لا يسخر قوم من قوم

 “কেউ যেন কারো উপহাস না করে।”

 عسى ان يكونوا خيرا منهم

“হতে পারে যাদেরকে উপহাস ও তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে তারা (আল্লাহর নিকট) তোমাদের থেকে উত্তম।”

এরপর আল্লাহ তা’আলা বলেন, ولا نساء من نساء “অনুরূপ কোনো মহিলা অপর মহিলাকে তাচ্ছিল্য করবে না।” عسى ان يكن خيرا منهن “হতে পারে তাচ্ছিল্যকৃত মহিলা তোমাদের চেয়ে আল্লাহর নিকট উত্তম।”

কোরআনে কারীমের এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা সুস্পষ্টভাবে কাউকে নিয়ে উপহাস করতে শক্তভাবে নিষেধ করেছেন।

এই আয়াতে মহিলাদেরকে বিশেষভাবে দ্বিতীয়বার উল্লেখ করা হয়েছে,যদিও আয়াতের প্রথম অংশের দ্বারাই মহিলা-পুরুষ সকলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছে। তার পরও মহিলাদের ব্যাপারটা বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ আল্লাহ তা’আলাই বেশি জানেন।

তবে এর দুটি হিকমত বোঝা যায়।

এক.

সাধারণত মহিলাদের মধ্যে এ অভ্যাসটি বেশি পরিলক্ষিত হয়,তাই তাদেরকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে।

দুই.

যেহেতু পুরুষদের মজলিস ভিন্ন হবে এবং মহিলাদের মজলিস ভিন্ন হবে,তাই পৃথক পৃথক উল্লেখ করে বোঝানো হয়েছে যে পুরুষ-মহিলার মজলিস ও চলাফেরা ভিন্ন ভিন্ন হওয়া উচিত। আজকাল যেরূপ নারী-পুরুষের যে অবাধ মেলামেশা এ আয়াতে ইঙ্গিতে তা নিষেধ করা হয়েছে।

#কাউকে ঠাট্টা ও উপহাস করা কবীরা গোনাহ :

যা হোক! উক্ত আয়াতে কাউকে উপহাস করাকে সুস্পষ্ট গোনাহ সাব্যস্ত করা হয়েছে। বিশেষভাবে এ কথাও বোঝানো হয়েছে যে তোমরা অন্যকে যে তাচ্ছিল্য করছ এর দ্বারা তোমরা নিজেকে বড় ও উত্তম ভেবেই অপরকে তাচ্ছিল্য করছ। এ তো চরম অহংকার যে নিজেকে উত্তম ভেবে অপরকে তুচ্ছ ভাবা হচ্ছে।

তবে স্মরণ রেখো,আল্লাহ তা’আলা বলছেন,“ওই সহজ-সরল সিধেসাদা যে ব্যক্তিকে তুমি তাচ্ছিল্য করছ,সে আল্লাহ তা’আলার নিকট কতটুকু মর্যাদাশীল। কারো শুধু চেহারা দেখেই তো তুমি বলতে পারবে না যে আল্লাহ তা’আলার সাথে তার কতটুকু সম্পর্ক।

প্রত্যেক বান্দার সঙ্গেই আল্লাহ তা’আলার বিশেষ একটি সম্পর্ক থাকে,এর মাঝে অনুপ্রবেশ করার কি অধিকার তোমার? তুমি কি জানো,সে আল্লাহর সাথে কী সম্পর্ক গড়ে নিয়েছে, সে আল্লাহর কত প্রিয়? কারো শুধু বাহ্যিক অবয়ব দেখেই কোনো মন্তব্য করা যাবে না। কেননা মানুষ জানে না কার সাথে আল্লাহর সাথে আন্তরিকভাবে কতটুকু গভীর সম্পর্ক।

#হাস্য-কৌতুক বা মজা করা

ইসলাম ধর্ম কট্টর ও কঠোর ধর্ম নয়। এটি মানুষের নির্মল আনন্দ উপভোগের বিরোধিতা করে না এবং এগুলোকে বৈধ বলেই মনে করে। কিন্তু বল্গাহীন যে কোনকিছু করাকে ইসলাম নিষেধ করেছে।

মানুষ মাঝে মাঝে কৌতুক করে থাকে মজা পাওয়ার জন্য। এটি ইসলামের বৈধ বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। যদি কৌতুকের মধ্যে মিথ্যার সংমিশ্রণ না থাকে,অশ্লীলতা না থাকে ও অন্যকে অপমান করার বিষয় জড়িত না থাকে,তাহলে তা অনিষ্টকর নয়। এমনকি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনীতেও আমরা কদাচিৎ এ বিষয়টি দেখতে পাই। যেমন হযরত আনাস বর্ণনা করেছেন,একবার এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট এসে আরোহণের উপযোগী একটি উটের আবেদন করল। রাসূল (সা.) তাকে বললেন : ‘আমি তোমাকে একটি উটের বাচ্চা দেব।’ মহিলাটি বলল : ‘হে রাসূলাল্লাহ্! উটের বাচ্চা দিয়ে আমি কি করব?’ রাসূল জবাব দিলেন,‘বড় উটও তো উটের বাচ্চাই হয়ে থাকে।’(তথ্যসূত্র-মদীনা পাবলিকেশান্স কর্তৃক প্রকাশিত ইমাম গাযযালী প্রণীত এহইয়াউ উলুমিদ্দীন, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৩৭)

তবে যেহেতু কৌতুক বলার ক্ষেত্রে প্রায়শই মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয় এবং অন্যকে অপমান করার বিষয়টি চলে আসে,আর কৌতুককারীরও মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় তাই ইসলাম বেশি বেশি হাস্য-কৌতুক করাকে পরিহার করতে বলেছে।

ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন : ﹸ‘কৌতুক বলা পরিহার কর। কেননা,তা মানুষের মর্যাদাকে ধ্বংস করে।’

তিনি আরও বলেন : ﹺ‘মানুষ যেন তোমাকে তাচ্ছিল্য করতে না পারে সেজন্য কৌতুক বলা পরিহার কর।’(তথ্যসূত্র-উসূলে কাফী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৬৬৬)

অনেক সময় কৌতুক করার বিষয়টি মানুষ সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে না এবং ভুলবোঝার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি হয়। এমনকি এর কারণে শত্রুতারও সৃষ্টি হয়।

ইমাম আলী (আ.) বলেছেন : ‘কৌতুক করা পরিহার কর। যেহেতু এটি শত্রুতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ।’(তথ্যসূত্র-গুরারুল হিকাম)

সর্বক্ষণ কৌতুক করা বা হাসি-তামাশা করার ফলে মানুষ তার সত্যিকার পরিচয় ভুলে যায়। ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে সে উদাসীন হয়ে পড়ে এবং তার দায়িত্ব সম্পর্কে অসচেতন হয়ে পড়ে।

মহানবী (সা.) বলেন : ‘আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে তবে খুব কমই হাসতে ও খুব বেশি কাঁদতে।’(তথ্যসূত্র -আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ আল বুখারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, হাদীস ৬০৩৫)

হযরত আলী (আ.) বলেন : ‘যে ব্যক্তি অতিরিক্ত হাসে তার আত্মা মরে যায়।’(তথ্যসূত্র-গুরারুল হিকাম)

আর এজন্যই অতিরিক্ত হাস্য-কৌতুক থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।

#ইঙ্গিতেও কাউকে উপহাস করা বৈধ নয় :

কাউকে ইশারা-ইঙ্গিতে উপহাস করাও এর অন্তর্ভুক্ত। কারো কথাবার্তা,চালচলন বা গঠন-প্রকৃতি নিয়ে টিকা-টিপ্পনী মারা ও হাসাহাসি করা,যার কারণে সে কষ্ট পায়,তাও হারাম।

এক হাদীসে এসেছে,একদা উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনৈকা স্ত্রীর ব্যাপারে আলোচনা প্রসঙ্গে ঈঙ্গিতে তাঁর গঠন বেঁটে হওয়ার কথা বললেন,শুধুমাত্র হাতের ইশারায় তা বলেছিলেন। কিন্তু রাসূল (সা.) তাঁকে বললেন,আয়েশা! তুমি মারাত্মক ভুল করেছ। হযরত আয়েশা (রা.)-কে কঠোরভাবে নিষেধ করলেন যেন কখনো কারো কোনো বিষয় নিয়ে তাচ্ছিল্য না করা হয়। যেরূপ সামনাসামনি কারো কোনো বিষয় নিয়ে এমন কথা বলা,যাতে ওই লোক কষ্ট পায়,তা তো মারাত্মক গোনাহ। সাথে সাথে উক্ত ঠাট্টা ও উপহাস যদি তার সামনে না করে তার অনুপস্থিতিতে করা হয় তাহলে তাতে দ্বিগুণ গোনাহ। উপহাস করার গোনাহ এবং গীবত করার গোনাহ।

#হাসি-রহস্য ও উপহাসের মাঝে বিস্তর পার্থক্য :

কখনো কখনো বন্ধুদের মজলিসে পরস্পর হাসি-মশকরা হয়ে থাকে,যাতে এ কথা নিশ্চিত হয় যে এর দ্বারা কোনো সাথী মনে কষ্ট পায় না এবং ওই সব কথায় কেউ অপমান বোধ না করা নিশ্চিত হয় তাহলে তা বৈধ।

কিন্তু যদি এই সম্ভাবনা থাকে যে এর দ্বারা কারো মনে কষ্ট আসতে পারে কিংবা কেউ অপমান বোধ করবে তাহলে এ ধরনের হাসি-তামাশা কখনো বৈধ হবে না।

#কারো উপহাস করার ভয়ংকর পরিণতি :

একটি হাদীসে এসেছে,যারা অন্য কারো উপহাস করে,তারা তো এই উপহাস করে বসেই থাকে,কিন্তু তাদের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। আখিরাতে তাদের সাথেও এ ধরনের উপহাস করা হবে। জান্নাতের দরজা খুলে তাদেরকে জান্নাতের দিকে ডাকা হবে,কিন্তু তারা যখন এগিয়ে এসে দরজা দিয়ে ঢুকতে যাবে,অমনিই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং তারা ফিরে যাবে। এরপর পুণরায় দরজা খুলে তাদেরকে ডাকা হবে,আবার যেইমাত্র তারা এগিয়ে এসে ঢুকতে যাবে তখনই দরজা পুনরায় বন্ধ করে দেওয়া হবে। এভাবেই তার সাথে বারবার উপহাস করতে থাকবে। একপর্যায়ে সে নিরাশ হয়ে আর জান্নাতের দিকে যাবে না। এই শাস্তি এই জন্যই যে তুমি দুনিয়ায় তোমার কথাবার্তায় কাউকে উপহাস করে কষ্ট দিয়েছিলে এখন দেখো এর মজা কী রূপ।

এ জন্যই সাবধান হওয়া উচিত,যেকোনো কথা বলার আগে মেপেজুখেচিন্তাভাবনা করেই তবে বলতে হবে।

#রহস্য ও কৌতুকের সীমারেখা :

কেউ কেউ মানুষের উপহাস করাকে সাধারণ রহস্য ও কৌতুকের অন্তর্ভুক্ত মনে করে থাকে। অথচ উভয়ের মাঝে বিস্তর ব্যবধান।

হাসি-রহস্য হচ্ছে ওই সব কথাবার্তা,যার দ্বারা সকলের মনে প্রফুল্লতা আসে।

হযরত রাসূলে করীম (সা.) থেকেও তা প্রমাণিত। তবে শর্ত হলো, এ ক্ষেত্রে কোনো মিথ্যা ও অসারতার আশ্রয় নেওয়া যাবে না,কাউকে অপমান করা যাবে না। তাহলে তা বৈধ।

একটি হাদীসে এসেছে,জনৈকা বৃদ্ধা মহিলাকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,কোনো বৃদ্ধা জান্নাতে যাবে না। এতদশ্রবণে বৃদ্ধা মহিলা কান্না আরম্ভ করল। তখন রাসূল (সা.) সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,আসল কথা হলো বৃদ্ধ অবস্থায় কেউই জান্নাতে যাবে না। অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশের সময় আল্লাহ তা’আলা সকলকে যৌবন অবস্থা ফিরিয়ে দেবেন।

তো রাসূল (সা.) ওই বৃদ্ধার সাথে রহস্য করতে গিয়ে কথাটি একটু ঘুরিয়ে বলেছেন,যা বৃদ্ধা বুঝতে পারেনি। তবে রাসূল (সা.)-এর কথায় অসত্যের মিশ্রণ হয়নি এবং ওই বৃদ্ধার মনে কষ্ট বা সম্ভ্রমহানিও হয়নি।

অনুরূপ একটি হাদীসে এসেছে,জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, তোমাকে আমি একটি উটের বাচ্চা দেব তখন লোকটি বলল,হুজুর! আমি তো বাহনের উট চেয়েছি,বাচ্চা দিয়ে কী কাজ হবে? রাসূল (সা.) বললেন,বাহনের উপযুক্ত বড় উটটিও তো কোনো একটি উটনীর বাচ্চা হবে।

সামান্য সময়ের জন্য রাসূল (সা.) লোকটির সাথে রহস্য করলেন। কিন্তু এতে কোনো অসত্যের আশ্রয় নেওয়া হয়নি এবং কাউকে কষ্টও দেওয়া হয়নি। এসব অবশ্যই বৈধ।

তবে এমন বৈধ কৌতুকও মাঝেমধ্যে হয়ে গেলে মন্দ নয়,কিন্তু নিয়মিত এতে লিপ্ত হয়ে যাওয়াও কাম্য নয়। মাঝেমধ্যে হলে ভালো।

তবে অবশ্যই ধর্তব্য যে এসব কৌতুক রহস্যের মধ্য দিয়ে কোনো মিথ্যার প্রচার যেন না হয়,কারো প্রতি দোষারোপ বা গীবত না হয়। সর্বোপরি কেউ যেন কষ্ট না পায়। অন্যথায় তা মারাত্মক গোনাহ হিসেবে বিবেচিত হবে।

সারকথা হলো,সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের উঠাবসা, চলাফেরা ও কথাবার্তা লাগাতার চলতে থাকে। মুখ দিয়ে কী বের হচ্ছে এর প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ নেই,এতে কি কারো মনে কষ্ট দেওয়া হয়ে যাচ্ছে কি না,তারও খবর নেই। কী হবে এর পরিণতি।

পরিণতি সম্বন্ধে বেখবর হওয়া কখনো উচিত নয়। দুনিয়ার কাজকারবারে লিপ্ত হয়ে আখিরাতকে ভুলে যাওয়া অত্যন্ত বোকামি।

এ কথা স্মরণ রাখা উচিত,দুনিয়া থেকে আমার চলে যেতে হবে,আল্লাহর সামনে অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। প্রতিটি কাজ ও কথার জন্য আমার জবাবদিহি করতে হবে।

অসতর্কতা ও গাফিলতিতে আমার থেকে যেন এমন কোনো কথা ও কাজ প্রকাশ না পায়,যার ফলে আখিরাতে আমার পরিণতি খারাপ হয়। এ জন্য সর্বদা অন্তরে আল্লাহ তা’আলাকে স্মরণ রাখবে। আল্লাহর নিয়ামতসমূহের শুকরিয়া জ্ঞাপন করবে।

সকল প্রয়োজনীয়তা আল্লাহর কাছে চাওয়ার অভ্যাস করবে। সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জীবনাচরণ অধ্যায়ন করবে। যেমন-আম্বিয়ায়ে কেরাম,সাহাবায়ে কেরাম ও নেককার ওলী-বুজুর্গদের জীবনী পড়ার দ্বারাও আখিরাতের ফিকির ও আল্লাহর স্মরণ লাভ হয়ে থাকে। যেরূপ নেককার ওলী-বুজুর্গদের সংশ্রবে থাকার দ্বারা আখিরাতের ফিকির লাভ হয়, তদ্রুপ তাদের জীবনাচরণ পড়ার দ্বারাও তা অর্জিত হয়। আল্লাহর ভালোবাসাপ্রাপ্ত বান্দাদের জীবনী-কথাবার্তা অধ্যায়নের দ্বারা অন্তরে আল্লাহর ভালোবাসা গভীর হয়। অন্তরে ঈমান তাজা হয়,গাফিলতি দূর হয়ে আখিরাতের ফিকির পয়দা হয়। এতে অযথা ও মন্দ কথাবার্তা-কাজকর্ম থেকেও মুক্ত হওয়া যায়। আল্লাহ তা’আলা নিজ দয়ায় আমাদের সকলকে এর তাওফীক দান করুন।

[তথ্যসূত্র-মুফতী মুহাম্মদ তক্বী উসমান দা.বা. এর উপহাস ও বিদ্রূপ নিয়ে লেখা মুফতী মাহমুদ হাসান বাংলায় অনুবাদ করা লেখা পুরো পড়ে উপরে তা সংক্ষেপে কিছু অংশ উল্লেখ করেছি.....।।

এস এস সি তে জিপিএ-৫ না পেয়েও এইচ এসসি ও লেখাপড়ার ক্যারিয়ারে ছয় তরুণের সফলতার গল্প

জিপিএ-৫ না পেলেও যে জীবনে ভালো করা যায়, তার উদাহরণ আছে অনেক। সেসব উদাহরণ থেকে ছয়জনের গল্প শুনুন।৬ মে প্রকাশিত হলো মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল। যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে, অভিনন্দন তাদের। আর অামার যেসকল ছোট ভাইরা পায়নি,অাবার যারা পেয়েছে কিন্তু Golden A+ না পেয়ে হয় হুতাশ করছে তাদের ও তাদের অভিবাবক এর জন্যই আজকের অামার এই লেখা।
#GPA-5 না পেয়েও ২০১৬ সালে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে অাখতার 4.50 এবং ২০১৭ সিলেট এমসি কলেজ থেকে 4.67(HSC) পেয়েও ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য গামী একটি বিমানে চড়ে বসলেন,কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে তাঁরা "পিওর ম্যাথম্যাটিকস"স্নানতক পড়তে গেছে.............।এখন তাঁরা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে!!
-নিম্নে ৪ জনের নিজের মুখ থেকে বলা, SSC তে A+ না পেয়েও..............(পড়ুন)
#জেদের জোরেই SSC তে জিপিএ-৫ না পেয়েও HSC তে মিলি পেয়ে গেলো A+.....
মিলি আক্তার এর নিজের মুখে বলা,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমি ছিলাম মুন্সিগঞ্জের ব্রাহ্মণভিটা ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী। সে বছর আমাদের পুরো স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল একজন। আমি পেয়েছিলাম ৪.৮৮। প্রস্তুতি খুব ভালো ছিল সেটা বলব না, কিন্তু আমিও মনে মনে জিপিএ-৫ পাওয়ার প্রত্যাশা করছিলাম। ফল পেয়ে খুব ভেঙে পড়েছিলাম। কান্নাকাটি করেছিলাম।
আমি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলাম। ইচ্ছা ছিল ঢাকায় এসে ভালো কলেজে পড়ব, চিকিৎসক হব। অল্প কয়েকটা নম্বরের জন্য হঠাৎ মনে হলো স্বপ্নটা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। তার ওপর গ্রামের মেয়েদের একটা সমস্যা তো থাকেই। পড়ালেখায় একটু পিছিয়ে পড়লেই নানা দিক থেকে বিয়ের খবর আসতে থাকে। যেন আমাকে দিয়ে আর পড়ালেখা হবে না।
আমার মা ততটা পড়াশোনা করেননি। কিন্তু এ সময় আমাকে ভীষণ সাহস দিয়েছেন। তাঁর অনুপ্রেরণায় ভর্তি হলাম বিক্রমপুর টঙ্গিবাড়ী ডিগ্রি কলেজে, মানবিক বিভাগে। আমার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নটার মৃত্যু হয়েছিল ঠিকই, তবে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম। সবাই বলত, মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া আরও কঠিন। শুনে জেদ চেপে গিয়েছিল। সেই জেদের জোরেই বোধ হয়, উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে গেলাম।
এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি। যখন পেছনে ফিরে তাকাই, মনে হয় জিপিএ-৫ না পেয়েই হয়তো ভালো হয়েছিল। বিজ্ঞান বিভাগে থাকলে এত এত ভালো শিক্ষার্থীর ভিড়ে আমি হয়তো হারিয়েই যেতাম। মানবিক বিভাগে পড়ে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়েছি।

#ফজলুল হকউচ্চমাধ্যমিক না, বুয়েটের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম
(ফজলুল হক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়)
চট্টগ্রামের মুসলিম হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে যে অল্প কয়েকজন জিপিএ-৫ পায়নি, আমি ছিলাম তাদের একজন। আমার জিপিএ ছিল ৪.৮১। তখনো অতটা কষ্ট পাইনি। বেশি কষ্ট পেলাম তখন, যখন দেখলাম নটর ডেম কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতাও আমার নেই। ছোটবেলা থেকে বুয়েটে পড়ার ইচ্ছে। কিন্তু আব্বু বললেন, উচ্চমাধ্যমিকে ব্যবসায় শিক্ষা নিয়ে পড়তে। পলিটেকনিক্যালে ভর্তি হওয়ার কথাও বলেছিল অনেকে। কিন্তু আমি ভর্তি হলাম দিলওয়ারা জাহান মেমোরিয়াল কলেজে, ওই বিজ্ঞান বিভাগেই।
আমাদের কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পাস করেছিল ৯ জন। বুঝতেই পারছেন, উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পাওয়া সহজ ছিল না। আমি অবশ্য কলেজে উঠে জিপিএ-৫ পাওয়া নিয়ে মাথা ঘামাইনি। একটাই লক্ষ্য ছিল, বুয়েটে চান্স পেতেই হবে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য না, কলেজের পুরো দুটি বছর আমি প্রস্তুতি নিয়েছি বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার জন্য। এইচএসসিতে শুধু জীববিজ্ঞানে ‘এ’ পেয়েছিলাম। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান থেকে প্রশ্ন আসে না, তাই জীববিজ্ঞান সেভাবে পড়িনি। আমার সম্পূর্ণ ‘ফোকাস’ ছিল বুয়েট।
বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় আমি ৩৫৯তম হয়েছিলাম। এখন পড়ছি যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষে। বন্ধুদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েও এইচএসসিতে ভালো করতে পারেনি। আমার ভাগ্য ভালো ছিল। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাইনি বলেই হয়তো বুয়েটে পড়ার জোর পেয়েছিলাম।

#সায়মা আখতারকারও বাসায় মিষ্টি নিয়ে যেতে পারিনি
সায়মা আখতার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
মহেশখালীর ইউনুছখালী নছির উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলাম।
এসএসসি পরীক্ষার পর বেশ কয়েক দিন আমি ঘর থেকে বের হইনি। মা-বাবা-আত্মীয়স্বজন সবাই যখন জিপিএ-৫-এর প্রত্যাশা করে বসে আছে, আমি পেয়েছিলাম ৪.৮১। খুব লজ্জা লাগছিল। অনেকে আমাদের বাসায় মিষ্টি নিয়ে এসেছিল, আমি কারও বাসায় মিষ্টি নিয়ে যেতে পারিনি। কাউকে মুখ দেখাতেই ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু সে সময় আমার মা-বাবা আর স্বজনেরা পাশে ছিলেন। আমিও মনে মনে বলেছিলাম, উচ্চমাধ্যমিকে দেখিয়ে দেব।
অথচ উচ্চমাধ্যমিকে আমার ফলাফল হলো আরও খারাপ!
কক্সবাজার মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি। আমাদের কলেজে তখন পড়ালেখার মান খুব ভালো ছিল না। হোস্টেলে থাকতাম, সেখানকার পরিবেশ ভালো না। ৪.৪০ পেয়েও এইচএসসিতে দেখা গেল কলেজে আমার ফলাফলই সেরা। আমাদের মধ্যে তো তুলনা করার একটা প্রবণতা আছে, অন্যদের তুলনায় আমার ফল ভালো বলে সবাই বেশ খুশিই হয়েছিল। আমি যদিও খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারিনি।
আমরা দুই ভাই, দুই বোন। বড় মেয়ে হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে। বাসা থেকে খুব বেশি দূরে এসে পড়ালেখা করার অনুমতি ছিল না। তাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটা অনুষদে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। গণিত নিয়ে পড়ার সুযোগ ছিল। আমার ইচ্ছাও ছিল। কিন্তু কী ভেবে যেন অর্থনীতিতে ভর্তি হলাম। এখন তৃতীয় বর্ষে পড়ছি।
আমার বাবা চেয়েছিলেন মেয়ে ডাক্তার হবে। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি বলে একটু দুঃখ আছে। তবে আফসোস নেই। আমার যতটুকু যোগ্যতা ছিল, আমি যতখানি পরিশ্রম করেছি, তার ফল পেয়েছি। এতেই আমি খুশি।

#আজবিনুর ইসলামক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হবে না, সেই আত্মবিশ্বাস আছে
আজবিনুর ইসলাম, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি
শরীয়তপুরের জাজিরা মোহর আলী মডেল হাইস্কুলের টেস্ট পরীক্ষায় আমি পঞ্চম হয়েছিলাম। মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু আমি পেলাম ৪.৬৯।
আত্মীয়স্বজন অনেকে ধরেই নিয়েছিল, একে দিয়ে কিছু হবে না। বন্ধুদের বেশির ভাগ জিপিএ-৫ পেয়েছে। অনেকের অনেক কটু কথাও শুনতে হয়েছে। স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে পড়লেও কলেজে উঠে চলে গেলাম ব্যবসায় শিক্ষায়। ভর্তি হলাম কমার্স কলেজে। তখন খুব মন দিয়ে পড়েছি। তাই উচ্চমাধ্যমিকের ফল বেশ ভালো হয়েছিল। সব বিষয়ে এ প্লাস পেয়েছিলাম। ঢাকা বোর্ড থেকে বৃত্তিও পেয়েছি।
এখন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ছি। আমার সিজিপিএ ৩.৯০। ভালো ফলাফলের জন্য ২৫ শতাংশ ‘ওয়েভার’ পাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছি। পাস করার পর অন্তত ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হবে না, সেই আত্মবিশ্বাস আছে। এখন আর কোনো আফসোস নেই।
এছড়াও ঢাবিতে 3:50 এর মত পেয়েও খ ইউনিটে ইংরিজে বিভাগে চান্স পাওয়ার কথা অামরা সবাইই কম বেশি জানি।

সবশেষে বলবো,জিপিএ ৫ পেলে ভালো, না পেলেও ক্ষতি নেই,নিজেকে ব্যর্থ মনে করার কোন কারণ নেই।

কয়েকবছর পর কে ড্রপ-আউট ছিল, কে গোল্ডেন ৫ ছিল আর কে ফেল্টু ছিল তার কিছুই মনে থাকবে না |জীবনে বড় কিছু সফল ব্যক্তি হলে এসব ঘটনা হাসিমুখেই সভা সেমিনারে অন্যকে বলে অনুপ্রেরণা যোগানো যায়,যেমনটা বিলগেটস বলেছিলেন "আমার স্কুলের ভাল গ্রেড পাওয়া students রা আমার company এর ভাল ইঞ্জিনিয়ার আর আমি এই company এর মালিক "
জ্যাকমা বিশ্বের অন্যতম ধনী,অালীবাবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা,সে বলেছে নিজের মুখেই স্বীকার করেছে মাধ্যমিক পরিক্ষায় ৫ বার, উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষায় ৩ বার ফেল করার কথা।এরকম মণীষীদের অারও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।তাহলে বলা যায় শুধু সার্টিফিকেট দিয়ে মেধা যাচাই হয় না |

অামার এক বড় ভাই বলেছে,আমার জীবনে একটাই A+, তাও আমার রক্তের গ্রুপ..